মোরগের সুতীক্ষ্ণ চিৎকারে ঘুম ভাঙল। নাহ, ঢাকা শহরের ইট পাথরের জঙ্গলে সত্যিকারের মোরগ পাব কোথায়, মোবাইল ফোনের ভার্চুয়াল মোরগ। জানালা দরজা সব হাট করে খুলে ঘুমিয়েছিলাম, একটু ঠাণ্ডাই বোধহয় লেগে গেল। সকালের আলসেমি ভেঙ্গে নেমে পড়লাম রাস্তায়। আজ কেন জানি রোজকার হাঁটার পথ বা পার্কের একঘেয়ে চক্করে মন টানছিল না একেবারেই। শুধু দূর থেকে দেখা ছিল, এরকম এক অচেনা কাঁচা পথে নেমে পড়লাম।
ক’দিন হল টুকটাক বৃষ্টি পড়ছে। আশেপাশের জলাশয়গুলো জলে ভরে উঠছে। পথের বাঁ ধারে একটা লেক। একটা মাছ ধরার নৌকা নোঙ্গর পেতে বসে আছে, বাতাসে দুলছে ইতিউতি। একটা কানি বক খপ করে পুঁটি মাছ ধরে সেই নৌকার গলুইয়ে বসেই পেটে চালান করে দিল। মাছ ধরার নৌকা বলে কথা, নামকরণের সার্থকতা হবে হয়ত। পথের ডান ধারে সর্বগ্রাসী ঢাকা তার বাহু বাড়িয়েছে। পরস্পর পাল্লা দিয়ে উঠে যাচ্ছে বহুতল ভবন। একশ গজের ব্যবধানে কি দারুণ বৈপরীত্য।
পথের এখানে ওখানে জমে আছে খাবলা খাবলা কাদা। পায়ের জগিং এর জুতা আর পরনের ট্রাউজার বাঁচিয়ে পথ চলছিলাম। নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য আছে থেকে থেকে চায়ের টং দোকান। তখনও দিনের ব্যস্ততা শুরু হয়নি, দোকানি বেঞ্চে শুয়ে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে। এবারে উঁচু জায়গা থেকে নেমে পড়লাম নিচু জলাভুমির দিকে। ঢাকা শহরের ভেতরের ঘেরাটোপেও এতো জমি পড়ে আছে জানা ছিল না। একটু এগিয়ে জলাভূমির ধারে সারি সারি বক, সকালের নাস্তায় ব্যস্ত। একজন আধবুড়ো মানুষ তিনটা গরু নিয়ে চলেছে ঘাসজমিতে।
খানিক এগিয়ে আমাকে অবাক করে চোখে পড়ল বিশাল চওড়া এক নির্মাণাধীন রাস্তা। ইটের খোয়া ফেলা হয়ে গেছে কোথাও, কোথাও বা শুধুই বালি। তারপরেও বোঝা যাচ্ছে বিশাল এক রাস্তাই বটে। রাস্তার দুই ধারে সারি সারি ইটের পাঁজা। এতো নির্জন আর শান্ত, সত্যি বলতে গা ছমছম করছিল। আমার আগমনে বিরক্ত হয়ে সশব্দে উড়ে গেল একজোড়া হুটটিটি। ঢাকা শহরে এই পাখি আজ প্রথম দেখলাম। জলমহালে ভাসছে নৌকা, জাল, বাঁশের বেড়া। দুই জায়গায় দেখলাম ধূধূ মাঠ চিরে বাঁশের খুঁটিতে ভর দিয়ে চলে গেছে বালি ভরাটের গোবদা গোবদা পাইপ।
বালির মধ্যে কোথাও কোথাও গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে নেড়ি কুকুর। একটা গ্রামের মত চোখে পড়ল। তার ধারে জলাশয়। সকালে হাতমুখ ধুতে তার ধারে নেমেছে নানান বয়সী মানুষ। এক যুবতী গোসল করতে নেমেছে। গলাপানিতে নেমে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সূর্য উঠে গেল, এক ভাঙ্গা নৌকার খোলে জমে থাকা পানিতে আলো ঠিকরে পড়ছে, ফেরার সময় হল।
মূল রাস্তায় উঠে পড়বার মুখে এক শালিকের সাথে দেখা। খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, তবু উড়ে গেল না। ঘাড় বাঁকিয়ে যেন জিজ্ঞেস করল, কেমন দেখলে হে?
ঢাকার কোথায় এই জায়গা? পড়তে পড়তে একদম চলে গিয়েছিলাম!
তোমার সাথে সাথে আমাদেরও দেখিয়ে আনার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাই, কিছুমাত্র যদি মন টেনে থাকে, সেখানেই আমার লেখা সার্থক। জায়গাটা মিরপুর ডি ও এইচ এস এর উত্তর পাশে।
দুর্দান্ত ছবি!
তোমার এই ছবিগুলো দারুণ হচ্ছে।
অনেক ধন্যবাদ ভাই, আপনাদের উৎসাহেই কলম ধরছি.........
নুপুর ভাই ছবির কথা বলল কিন্তু ওগুলো কই। যাই হোক অনেক সুন্দর একটা জায়গার বর্ণনা দিসো। আরে এই জায়গাটা হয়ত একদিন নস্ত হয়ে যাবে। মিরপুর ডিওএইচএস সত্যি সুন্দর।
ছবি তো এখানে দেই নাই ভাই, এই লিঙ্ক এ একটা ছবি আছে, চাইলে দেখতে পারেনঃ
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10153392067690337&set=gm.842745672427460&type=1&theater
উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই............
খুব সুন্দর লেখা। ভাষার গুনে সাধারন জিনিসও অসাধারন হয়ে উঠেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই, উৎসাহ পেলাম............
অসাধারণ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
অনেক ধন্যবাদ ভাই.........
চমৎকার একটা মর্ণিং ওয়াক হয়ে গেলো আমাদেরও, মানে পাঠকদেরও, প্রাঞ্জল লেখার গুনে।
"একটা মাঝ ধরার নৌকা" - এখানে 'মাঝ' বোধহয় 'মাছ' হবে।
ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই, শুধরে নিয়েছি। আপনাদের ভালো লেগে থাকলেই আমার লেখাটা সার্থক.........
ভাল লেগেছে।
ওদিকেও তো শুনেছি কি একটা বসতি গড়ে উঠছে।
তাই না?
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ধন্যবাদ ভাই, বসতি গড়ে তো উঠছেই, যদিও নামটা আমার ঠিক জানা নেই......... আর চারদিকে হেলিক্স ব্রিজ বানানোর ধুম পড়ে গেছে.........