আমার বিশালবপু ছোট মামা ভোজনরসিক মানুষ। বলা বাহুল্য রোজার মাসে বিকেল চারটের পর থেকে তার মেজাজ টং হয়ে থাকে। এসময়ে তার মুখোমুখি হতে মামী পর্যন্ত তিনবার ভাবতে বসেন। পাঁচটার পর থেকে তিনি নিজে হেঁশেলের আশেপাশে উঁকিঝুঁকি দেবেন খাবারের তদারকি করতে। এরপর ঘরে তিনখানা পাখা ছেড়ে দিয়ে তিনি শয্যাশায়ী। দিন ফুরোলে ইফতারের দশ মিনিট আগে সাদা নকশাদার পাঞ্জাবীর সাথে জরি চুমকির একখানা গোল টুপি পরে খাবার টেবিলে তিনি হাজির। দুই গ্লাস লেবুর সরবত সামনে নিয়ে মিনিটে তিনবার ঘড়ি দেখবেন তিনি ভুরু কুঁচকে। ভুনা খিচুরির সাথে গরুর গোস্ত থাকা চাই তার ইফতারে, সাথে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনী বা হালিমের মত মামুলী সাইড ডিশ তো থাকবেই। টানটান উত্তেজনা বাড়িতে। পেট মোটা ফিলিপস টেলিভিশনের সাউন্ড বাড়ানো হয়েছে ইতোমধ্যে। মামা বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, রোজা রাইখা হুজুর বেটা এত্তো কথা কয় ক্যামনে!
ছোট মামার ভাগ্নীটির রোজা রাখতে তেমন কোন কষ্ট হয়না বলতে গেলে। এখানে গাড়িতে, বাড়িতে, শপিং মল অথবা পাড়ার মুদির দোকান সবখানেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে। ঘরের বাইরে প্রকৃতিতে উত্তাপ আছে বটে কিন্তু সেটি নিজের গায়ে এসে না লাগা অবধি মানুষ বোধকরি অভিযোগ করেনা। তাছাড়া আমি সারা বছর বিভিন্ন উপলক্ষে রোজা রাখা ছাড়াও নানান রকমের উপবাস করে অভ্যস্ত, আত্মার শুদ্ধির কথা বাদ দিলেও এতে শরীরের শুদ্ধি কম হয়না!
আমাদের বাড়ীর আশেপাশে কোন মসজিদ নাই। উত্তরে বা দক্ষিনে যেদিকেই যাই না কেন মিনিট চল্লিশেক ড্রাইভ না করলে কেবল মসজিদ নয় বাংলা বলা সখীদেরও দেখা মেলে না। রোজা শুরু হয়েছে অবধি বন্ধুদের কেউ না কেউ ইফতারের নিমন্ত্রন জানিয়েছেন সপ্তাহান্তে। তারা বাড়ি নেই বলে আমার যাওয়া হয় নাই কারোর বাড়ীতেই। ইফতারের আগে আমি দিব্যি ভাল মানুষ থাকলেও ইফতারের পরে আমাকে খুঁজে পেতে খানিক সমস্যা হয়। দীর্ঘ দিনের শেষে আহারবিহারের পর অবসাদ এসে ভর করে শরীরে। খেয়েদেয়ে আয়েশী বেড়ালছানার মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকি নিচতলার কাউচে। তাই দূরে কোথাও ইফতারে যেতে মন চায়না ফিরে আসবার কথা ভেবে। বাড়িতে শোফার বলতে একজনই আছেন যে!
গত বছর ফোরথ অব জুলাইতে তল্পিতল্পা নিয়ে ইফতার করেছি অনেক লোকের ভীড়ে। জুলাই এর চার তারিখ এদেশের ইন্ডিপেনডেন্টস ডে। দেশের সব ছোট বড় শহর জুড়ে আতশবাজি পোড়ানোর উৎসব চলে সন্ধ্যা থেকেই। সেই হট্টগোলের মাঝে বহু দূরে গাড়ি পার্ক করে চাদর বিছিয়ে খাবারের আয়োজন নিয়ে বসেছিলাম মা মেয়েতে মিলে। আশেপাশে একে ওকে নিমন্ত্রণ জানালে বছর পঁচিশের ক্ষুধার্ত একটি সাদা ছেলে জুটে যায় আমাদের ইফতার পার্টিতে। তারপর সব আলো নিভে গেলে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আতশবাজি পোড়ানো দেখতে দেখতে নিজেকেও অই দূর আকাশে মিশে যাওয়া আলোকবিন্দুর মত মনেহয়!
গতকাল আমার বন্ধু শিউলির সাথে মসজিদে গিয়েছিলাম। সারা বছর মসজিদের সাথে আমার যোগাযোগ নেই বলতে গেলে। রোজার মাসে দু’ একবার সেখানে যাবার কারণ ওদের ইফতার আর ডিনারটা জমাটি হয়, সেই সাথে বাঙ্গালি বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়াটা বোনাস। সারাদিন আমি দিলখুশ থাকলেও ইফতারের আগে আগে চোখে খানিক সর্ষেফুল দেখি তাই বন্ধুর ডাকাডাকিতে বেড়িয়ে পড়ি একটু আগেই। প্রায় ন’টায় ইফতার এখানে। ডিনার শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত সমাগত হবে জানি তবুও ফ্রি ইফতারের টানে হাত রাখি স্টিয়ারিং এ।
ওমর বিন আবদুল আজিজ মসজিদের কাছাকাছি পৌঁছুতেই উৎসব মুখরতা চোখে পড়ে, কত রঙের মানুষ যে আছে পৃথিবীতে! কলেজ পড়ুয়া যে মেয়েটি সারা বছর শর্টস পরে ঘুরে বেড়ায়, তাকে মসজিদের চত্বরে হিজাব পরতে দেখে খানিক অচেনা লাগে! যে ইন্ডিয়ান দিদিমণিটি অপরের হাঁড়িতে মুখ ডুবিয়ে রাখেন সরস গসিপ করতে, তাকেও পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে দেখে আমার মন্দ লাগেনা। যে ভাইটি চুল মোহক স্টাইল মেরে ঘুরে বেড়ান হামেশাই, তাকে গোল টুপিতে দেখে আমার চোখও যে খানিক গোল হয়ে যায়না তা’ নয়! তবুও ভাল লাগে সবই, উৎসবের ছুতোয় হলেও বিনি সুতোর এই বন্ধনটুকু উপভোগ করি।
বাড়িতে আমাদের ইফতার মোটামুটি বোরিং টাইপের হয়। তারা ভাজাপোড়া খেতে শেখে নাই বলতে গেলে তাই একা একা পেঁয়াজু, বেগুনী অথবা ফুলুরী খাওয়ার মত বিলাসিতা করা হয়না প্রায়। ওটমিল বা গ্রিটসের সাথে গ্রিক দই আর ফলাহার চলে বেশীর ভাগ সময়ে, সাথে লেবুর সরবত অথবা তরমুজের স্লাশি, ডাবের পানি বা লাচ্ছি। হেইটি থেকে আমদানী করা আমগুলো খেতে খুব মিষ্টি হয় সামারে। চটকানো আমের সাথে বিস্তর নিডো আর খানিক চিনি মিশিয়ে চিড়ার সাথে মহাভোজ হয়ে যায় কদাচিৎ। চিক পির সাথে ফলের সালাদও মন্দ লাগেনা খেতে।
দেশে কোনদিন নামাজ পড়তে বা ইফতার খেতে মসজিদে যাইনি। তাই এদেশে এসে মেয়েদের মসজিদে যেতে দেখে মন্দ লাগেনা। আমাদের জন্য আলাদা বসার এবং খাবারের ব্যবস্থা আছে। ভলান্টিয়াররা ঘুরে ঘুরে তদারক করছেন সবার। স্ট্রবেরি ফ্লেভারড দুধে কেওড়া জলটল ছিটিয়ে কী একটা ড্রিঙ্কস এলো প্রথমে স্টাইরোফোমের কাপে, সাথে এক বোতল পানিও ধরিয়ে দিলেন একজন। একটু পর খেজুর, আপেল, মেলন আর নানান রকমের পাকোড়া টাইপের খাবার এলো। আমরা বন্ধুরা একসাথে বসেছি। আমার থালা থেকে সব ফলমূল বন্ধুদের প্লেটে সরিয়ে দিয়ে নিজে তাদের সব পাকোড়া পাকড়ে সাবাড় করলাম মহা আনন্দে! ইফতার শেষ হতে না হতেই নামাজের ডাক পড়লো। কতোদিন পর মসজিদে এসেছি, মনটাই ভালো হয়ে যায় সবার সাথে এক কাতারে নামাজে বসে।
নামাজ শেষে চায়ের নেমন্তন্ন বাইরে। হলওয়েতে চায়ের আয়োজন রাখা আছে। শিউলি অনেক যত্ন করে তিন চামচ চিনি দিয়ে আমাকে পায়েশ টাইপ একটা চা বানিয়ে দেয়। এই মেয়েটি আমাকে এত্তো ভালবাসে যে সবাই বলে আমরা কি দুই বোন নাকি। আমরা দু’জনি প্রবলবেগে মাথা ঝাঁকিয়ে বলি, হুমম!
বাইরে দেশী বিদেশী আপা, ভাবী আর খালাম্মাদের সম্মিলিত কিচিরমিচির চলছে। দেশের বর্ষা, ঈদের ফ্যাশন থেকে শাশুড়ির হৃদয়হীনতার গল্প চলছে একের পর এক। জাঁদরেল এক আন্টি তার পাশের বাড়ীর বিচ্ছু এক বাচ্চার গল্প বলছেন রসিয়ে রসিয়ে। বিপাশা টানটান উত্তেজনায় ওর বন্ধুর প্রনয় কাহিনী শুনছে এদিক ওদিক তাকিয়ে। চিরচেনা গল্প গুলো আবার নতুন করে শোনা যেন! বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে এদিক সেদিক। ছেলেরাও যে যার মত বন্ধু বা আত্মীয়ের সাথে চায়ের কাপে রাজা উজির মারছেন একটু দূরেই। আলাদা কুঠুরীতে ঠেলে না দিয়ে এই মসজিদে ছেলেদের আশেপাশেই মেয়েরা আছেন দেখছি। কেউ কেউ চায়ের কাপ হাতে হাঁটতে হাঁটতে গল্পও করছেন সঙ্গিনীর সাথে। নামাজ শেষে বারাক হুসেন ওবামার চোদ্দগুস্টি উদ্ধার করে বয়ান দিতেও কেউ এলেন না দেখি। হায়! এ কেমন মসজিদ? ইহুদী নাসারাদের পিন্ডিই যদি চটকাতে না পারলাম তবে আর মুসলমান কিসের!
রাতের খাবারে এলো সাদা পোলাউ, এক টুকরো ভেড়ার গোস্তের লম্বা ঝোল, ডাল আর সালাদ সাথে খরখরে তান্দুরি রুটিও। খাবারের স্বাদ তেমন সুবিধার নয় বটে কিন্তু সবাই মিলে গল্প করে খেয়েছি বলে তেল, নুন ঝালের বাড়তি কামড়টুকু টের পাইনি মোটে। আজ আবার কোন ডেসার্টও নেই দেখি, হায়! সবাই দেখি দিনদিন স্বাস্থ্যরক্ষা প্রকল্পে মনোযোগী হচ্ছেন, নবীজীর সুন্নত কেউ দেখি আর মানছে না এখন। মিষ্টান্নবিহীন ডিনার আমার কাছে কোকিলবিহীন বসন্তকালের মত মনে হয়!
তারা নেই তাই সারাদিন মন খারাপের আলোয়ান জড়িয়ে হুকো মুখো হ্যাঙলার মত বসেছিলাম একা, বারো রকমের মানুষ দেখে মনের মেঘটুকু কেটে গেলো সহসাই। আমি লুকিয়ে চুড়িয়ে ছবি তুলছিলাম ব্লগের জন্য। লুকোনোর কিছু নেই বোধকরি, কেউ কিছু মনে করছেন বলে মনে হলো না। একটি শিশুতো বলেই ফেললো, ক্যান ইউ প্লিজ টেক মাই পিকচার টু?
ঘড়িতে প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই তখন, আকাশে গোলগাল একখানা চাঁদ উঠেছে। সবাই তারাবীর নামাজের জন্য তোড়জোড় করছেন দেখতে পাচ্ছি। এবার ফেরার পালা। বন্ধুরা গালে গাল ছুঁইয়ে বিদায় জানালেন। আই এইটি ফাইভ সাউথ ধরে বাড়ি ফিরছি সোনার থালার মত চাঁদটিকে সাথে নিয়েই। এদেশের হাইওয়েতে কোন আলো থাকেনা। নিজের গাড়ির হেডলাইট আর সামনের গাড়ির টেইল লাইটই ভরসা। আমি মুহূর্তের জন্য হাই-বিম জ্বালিয়ে চকিতে দেখে নিই এদিক ওদিক। ঘোরঘুট্টি অন্ধকার ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনা। ঘনঘোর সেই আঁধারে দেশ থেকে আমার কবি বন্ধুর পাঠানো কোন রাতের পাখি গায় একাকী শুনতে মন্দ লাগেনা আমার!
আপনার ঘরে-বাইরে ইফতারের বিবরণ সুন্দর হয়েছেআপা।
মসজিদের বাড়োয়াড়ি ইফতারগুলোতে খাবারের স্বাদ যেমনই হোক, এই মানুষ দেখাটা মজাই লাগে। তবে নিজের কিচেনে চেয়ারে পা তুলে বসে সময় নিয়ে ইফতার সারতেই আমার বেশী পছন্দ।
🙂 🙂 🙂 🙂
নানান রঙের মানুষ দেখতে আমারও ভাল লাগে। কালো, ধূসরাভ , সবুজ অথবা বাদামী চোখের দ্যুতি দেখবার জন্য পাবলিক প্লেসে চুপচাপ বসে থাকি। অনেকদিন পর বন্ধুদের আড্ডাটাও উপভোগ করেছি সেদিন। যদিত্ত যে খাবারের কারণে পিপড়ের মত সারি বেঁধে বন্ধুদের সাথে যাওয়া সেটি ভাল লাগেনি বলতে গেলে। ভাল যেটি লেগেছে সেটি হলো মসজিদের বদলে যাওয়া পরিবেশ।
ছোট ছোট ডিটেলসগুলোর নিখুঁত বর্ণনা তোমার গল্পগুলোকে খুবই সমৃদ্ধ করে তোলে। এখানেও তার অনেক সমাহার। এ ধরণের সমাবেশে কি কি হতে পারে তার প্রায় সবই জানা থাকলেও লেখার গুনে তা পড়ার জন্য খুব আকর্ষণীয় হয়, তোমারটাও হয়েছে। শেষ ছবি আর শেষ অনুচ্ছেদটা খুব ভালো লেগেছে। আর গানটা ষোলকলা পূর্ণ করেছে।
🙂 🙂 🙂 🙂
অনেক ছবি তুলেছিলাম। নামাজের, ওজুর, চায়ের কাপে সবার আড্ডা অথবা বিল্ট ইন জুতোর বাকসোর পাশে বসে স্টিলেটো পরার ছবি! লেখাটিকে ভারাক্রান্ত করতে পারে বলে বেশী ছবি দিতে চাইনি।
কতদিন পর শুনলাম আমি কান পেতে রই, জানেন! অনেক ধন্যবাদ, পড়বার জন্য!
ওই মুলুকে ইফতারের গল্পটা দারুণ হয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয়েছে
'ক্যান ইউ প্লিজ টেক আওয়ার পিকচার টু?'
আমি কান পেতে রই আমার প্রিয় গানগুলির একটি, অনেকের কন্ঠে শুনেছি, তবে কেন যেন আমার কাছে আবিদেরটা সেরা মনে হয়। এই গানটি শুনলেই আবিদের কথা মনে হয়, কত কম বয়সে চলে গেল!
আমার কাছে শাদাসিধে নিরাভরণ লেখা ভালো লাগে। এই লেখাটা সেরকম। ধন্যবাদ, চমৎকার লেখাটির জন্যে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
🙂 🙂 🙂 🙂
আমি সাদামাটা মানুষ বলেই হয়তো লেখাতে সেই আবহ চলে আসে। চারপাশে ভারিক্কী ভাবনার মানুষের আনাগোনা জগত জুড়ে। তাদের ভীড়ে রংহীন লেখাটি আপনার নজর এড়ায়নি বলে ভাল লাগলো!
এই মুলূকে রোজা অথবা ঈদের আমেজ টের পাওয়া যায়না বলতে গেলে বিশেষত আমি যেদিকটাতে থাকি।
পুরো ডিসেম্বর জুড়ে কৃসমাসের আয়োজন দেখতে বেশ লাগে এখানে। তারা বাড়িতে কৃসমাস ট্রি সাজায় ঘটাপটা করে।আমেরিকার রক্ষনশীল কৃশ্চান সমাজে ধর্মহীনতা এখনো ফ্যাশন হয়ে ওঠেনি।
অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া!
রোজা রেখে বেশিরবভাগ মানুষের মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে। বিশেষ করে আসররের ওয়াক্তের পর থেকে।
বাঙলাদেশের রাস্তাঘাটেও এই আওময়ে মারামারি হয় বেশি।
যাদের রোজা রাখতে কষ্ট হয় তাদের না রাখাটাই ভালো।
এই বিষয়ে কিছু ধর্মীয় বিধান থাকা উচিত ছিলো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
অসুস্থতার কারণে আমার বাবা রোজা রাখতে পারেননি বেশ কটি বছর। তাঁর মন খারাপ হতো এতে। দুজন মানুষকে বাবা পুরো রোজার মাসে খাবারের টাকা দিতেন সাথে ঈদের উপহারও।
যাদের রোজা রাখতে কষ্ট হয় তাদেরও কি এমন বিধান আছে নাকি আমি ঠিক জানিনা। গ্যাস্টি্রক আলসারের রোগী, ডায়াবেটিক, অথবা যারা বিভিন্ন রকম অসুস্থতার কারণে দিনে একাধিকবার মেডিসিন নিয়ে থাকেন তারা হয়তো রোজা রাখেন না। দেশের গরমে রোজা রাখা সত্যি কঠিন বৈকি।
আমার নানীর বয়স প্রায় ৭০ বছর। ডায়াবেটিস আছে। প্রতি রোজার আগে ডাক্তারের কাছে দৌড়ান ডায়েট ঠিক করতে। তারপর ও রোজা মিস করবেন না। বহুবার বলেছি রোজা না করতে। লাভ হয়নি 🙁
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
আমাদের চারপাশের অনেকের কাছেই রোজা রাখাটা একটা রিচুয়াল বৈ অন্য কিছু নয়। মা রোজা রাখেন তাই আমিও রাখি এইতো! এর বিপরীত চিত্রও যে নেই তা নয়। আমার একজন বন্ধু জানালেন তিনি রোজা রেখে পনের পাউন্ড ওজন কমাতে চান।
ধমর্ীয় রীতিদুষ্টতা নিয়ে কথা বলবার মত পান্ডিত্য আমার নেই বলতে গেলে। আমি ধমর্াচরণ মেনে চলি ব্যক্তিগত প্রশান্তি অন্বেষণ করতে। স্পিরিচুয়ালিটি টানছে খুবই। বনি রেইটকে কোট করে বলি, Religion is for people who are scared to go to hell. Spirituality is for people who have already been there.
ভাল থেকো।
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমি যতদূর জানি এদের ক্ষেত্রে রোজা রাখার দরকার নাই।
কোন কোন ক্ষেত্রে নবী নিজেও রোজা ভেংগেছেন সফরে। এবং যারা ভাংগেনি তাদের উপর বিরক্ত হয়েছেন।
আবার রোজাদারেরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে নন রোজাদারেরা বেশ কিছু এক্সট্রা কায়িক শ্রম করে। নবী তাদের উপর খুশি হন।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂 🙂 🙂 🙂
খুব চমৎকার! বিশেষ করে এই জায়গাটা,
কি আশ্চর্য! আমারও!
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
এমিলি ডিকেনসনের মত আসলে আমি একজন নোবডি, কেউনা! সবাই কত কী দাবী করেন, কত অহংকার, কত আয়োজনের ঘনঘটা চারপাশে! বাজী পুড়ানো দেখতে দেখতে এই যে আলোকবিন্দুর উল্লেখ এটিও হয়তো বেশী বলা, আসলে I'm nobody! Who are you?
Are you nobody, too?
সিসিবিতে আপনি ছিলেন না গত কয়েকদিন। আপনাকে মিস করেছি।
:boss:
🙂
কি যাদুর পরশে লেখো তুমি !!! এতদিন কোথা ছিলে ?????? যা লিখতে চাই তাই যদি পাঠ করি তাহলে ভাষাহীন বনে যাই।
🙂 🙂 🙂 🙂
হায়! হায়! বলো কি হে! আমি অকপটে মানুষের প্রশংসা করতে শিখেছি কিন্তু কারো প্রশংসা পেলে কি বলবো বুঝে উঠতে পারিনা। তোমার প্রশংসাপত্র পেয়ে যারপরনাই কুন্ঠিত হয়ে আছি, ভাইয়া। অনেক তো মন্তব্য করলে সিসিবিতে, এখন লগ ইন করে আমাদের জন্য কিছু লিখো, প্লিজ।
কি নেই ! একলা আকাশ । মানুষের মিছিল সখ্যতা ।
দেশের গন্ধে আর ভোজন বিলাসে ছোটো মামা ।
ঘরের সহজ ইফতার, বাহারী খাবারের দফাদার আয়োজন।
ওই মুল্লুকের সমাজ দর্পণ কি ব্যবচ্ছেদ ।
রোজার কতো কি আবহ আর ইফতার শেষের জমাটি আলস্য ।
অনবদ্য কথার বাগানে ক্যামেরার জানালায় আহলাদী শিশু,
চিকপি সালাদ, থালার মতোন চাঁদ কিংবা নক্ষত্রের চাদরে
বিকশিত আতসবাজির বিন্দুর মাঝে হারিয়ে যাওয়া ...
- অনবদ্য । বরাবরের মতোন। ভিন্ন বিষয়ে ও স্বাদে ।
সেই চেনা মুনশিয়ানায় ।
🙂 🙂 🙂 🙂
আমার এই লেখাটিতে এতো কিছু যে ছিল আমি নিজেই জানতাম না, ভাইয়া। জহুরির চোখ আপনার তাই কর গুনে একটি একটি বলে দিলেন। জীবনের ছোটখাট ডিটেইলগুলো বরাবর আমার চোখে পড়ে। মানুষের রেনডম এ্যাক্টস অব কাইন্ডনেস থেকে শুরু করে অকারণ হুল্লোড়ও চোখ এড়ায়না। বাহিরের চোখ যতটুকু দেখে ভেতরকার চোখও তার চাইতে কম দেখতে পায়না, ভাইয়া!
:hatsoff: :hatsoff:
কি সুন্দর লেখা আপু, সাবলীল বর্ণনা। সমস্যা হল ছবিগুলোতে । রোজা অবস্থায় এমন সব খাবার এর পিকচার দেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার করাই এখন মুশকিল 🙂
এমন আরও লেখা চাই, তবে পিকচার ছাড়া (during Ramadan) :p
সাহেদ (৬০৫) ১২ তম ব্যাচ পিসিসি
🙂 🙂 🙂 🙂
কেউ একজন কেবলমাত্র আমার লেখা পড়তে সিসিবিতে কেবল আসেন না, লগ ইন করে তার মুগ্ধতার দ্যুতি ছড়িয়ে যান; এই ভাবনাটি কী যে ভাললাগায় ডুবিয়ে রাখে যদি তুই জানতিস!
তুই এতো পেটুক হলি কবে, বল? খাস তো সেই ফ্যাট ফ্রি ইয়োগাটর্ কেবল।
একটা নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হলাম।
"মার্কিন মুলুকে মসজিদে আয়োজিত যৌথ ইফতার"
এরচেয়ে ভাল ভাবে পরিচিতি হওয়া সম্ভব হতো বলে মনে হয় না।
কেন যেন মনে হচ্ছে, ব্লগে লিখার জন্য ডিটেইলস গুলো মনে রাখতে গিয়ে নিজের উপভোগটা বুঝিবা কমিয়ে ফেলেছো।
কি বা আর ক্ষতি তাতে, বলো?
আমরা এত জনে মুগ্ধ বিস্ময়ে যে পড়ছি, সেই প্রাপ্তিটা তো ঐ ত্যাগটুকু স্বীকার করার জন্যই।
একখানা সার্থক ব্লগ।
কারন নিজের অভিজ্ঞতাটূকু খুবই সফলভাবে সবার মাঝে বিতরন করতে পেরেছো কেবলই এই লিখা (ও ছবি)-র মধ্য দিয়ে...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂 🙂 🙂
তথ্যভারাক্রান্ত হবে বলে যে প্রসংগটি এখানে বলা হয়নি সেটি হলো, মসজিদে প্রতিদিনের ইফতার স্পন্সর করেন এক একজন ব্যক্তি। রোজার মাস শুরু হওয়ায় আগেই মানুষজন হুটোপুটি করে কে কবে খাবার দেবেন তার বুকিং দিয়ে রাখেন। ইফতার এবং ডিনারের জন্য আমাদের মহাদেশীয় রেস্টুরেন্টগুলো ক্যাটেরিং করে থাকে। উইকেন্ডে জমজমাট থাকে পুরো এলাকা।
রোজার চতুথর্ সপ্তাহের প্রতিদিন মসজিদের পাকর্িং লটে ঈদের পোশাকের স্টল বসে। চাঁদরাতে ফ্রি মেহেদি পরতে পারে মেয়েরা।
ঈদ, পূজো, দিওয়ালি অথবা বড়দিনকে এখন আর ধমর্ীয় উৎসবের ঘেরাটোপে বন্দী করে রাখেন না বহু মানুষ। সেলিব্রেশন অব লাইফ বোধকরি এটিই!
"মসজিদে প্রতিদিনের ইফতার স্পন্সর করেন এক একজন ব্যক্তি"
এটা না বললেও কিন্তু বুঝে নিয়েছিলাম।
আর ঐ সব মহৎ ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে মনে মনে একটি ::salute:: দিয়ে রেখেছিলাম।
এখন বললে, আমিও তা প্রকাশ্য করলাম।
জানো, আমার কাছেও না "সেলিব্রেশন অব লাইফ"-এর চেয়ে উপভোগ্য আর কিছু কেই মনে হয় না।
এই যে অতি ক্ষুদ্র আর একটাই জীবন আমাদের, একে উদযাপন না করে অযথা কালক্ষয় কি যে বিরক্তিকর আর করুনা উদ্রেককারী - বলার না......
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
"সেলিব্রেশন অব লাইফ বোধকরি এটিই!" - স্মল রিপলস অফ লাইফ, আর ক্যারিড এয়োয়ে টু শোরস ফার আপার্ট, বাই দ্য অফারিংস অফ এ্যান অবজারভ্যান্ট আই এ্যন্ড এ ফ্লুয়েন্ট পেন।
এই ধরনের ইফতারের গল্প যদিও আগে শুনেছি, এবার তার ডকুমেন্টেশন হল। অনেক সুন্দর। ইসলাম আসলে অনেক সুন্দর। ভালো থেকো আপু। :clap: :clap: