পূর্বকথনঃ দেশে থাকাকালীন সময়ে কাঁচা মাছ-গোস্ত ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। পড়াশোনা, কবিতা, ডিবেট, অথবা প্রেম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে হেঁশেলে যাওয়ার ফুরসত মেলেনি কখনো। খাবারদাবারে মন ছিলনা বলেই হয়তো দেখতে প্যাকাটি ছিলাম। মা চিরকাল বলে এসেছেন আমার চড়ুই পাখির আহার!
পশ্চিমে এসে চারদিকে সব গুণী মানুষের ভীড়ে দেখলাম আমি একটা লেবু অবধি কাটতে পারিনা ভাল করে। বন্ধু সুদীপা সসারে আমার কাটা লেবু দেখে বলেছিল, ওর শাশুড়ি যদি এই কিম্ভুত আকারের লেবুর টুকরো দেখতেন তবে তার সাত পাকে ঘোরা হতোনা এই জীবনে। সুখের বিষয় এই যে, উদার শ্বশুরকূলের কাছে আমার লেবু কাটা বিদ্যা প্রদর্শন করে বিয়ের গ্রিন সিগনাল পেতে হয়নি!
মোহনগঞ্জ থেকে ভোরবেলা মাছ আসতো আমাদের বাড়ি। হাওরের সব লাফানো ঝাঁপানো টাটকা মাছ। মুড়োঘণ্ট তো মাছ ভুনা, মাছের ডিম, অথবা মাছের ঝোল ছিল সবার প্রতিদিনকার খাবারে। এতো খাবার তবুও আমার মুখে রুচতোনা কিছুই। আমার খাবার বলতে ছিল সামান্য মুরগীর ঝোলে আধা চামচ ভাতের টপিং! সত্যি কথা বলতে কি আমি খেতে শিখেছি পশ্চিমে এসে। আগে কেউ মুঘলাই খানা সামনে এনে দিলেও তিনবার ভাবতে বসতাম খাবো কি খাবো না আর এখন কেউ সামান্য ধোঁয়া ওঠা ভাত আর লাউ চিংড়ির নেমন্তন্ন করলে আধা ডজন গোলাপ আর তিন হালি ফেরেরো রসার হাতে এক ঘণ্টা ড্রাইভ করে ছুটে যাই তার বাড়ি!
সিসিবিতে আমি গডের স্টেকের গল্প বলেছি এর আগে। আজ গডের স্টেকের রেসিপি লিখছি আহসান আকাশের প্ররোচনায়। লিখতে বসে মনে হলো, রান্নার ব্লগ লেখার চাইতে চুলোয় আগুন জ্বেলে রান্না করাটা সহজ। আবার রান্না করার চাইতেও সুখকর হলো ভোজনরসিক বন্ধুদের পরিতৃপ্তির আহার গ্রহণ অথবা যখন কেউ যখন আহ্লাদের আতিশয্যে বলে বসে, তুমি আমার মায়ের চাইতেও ভাল রাঁধো!
গডের স্টেকের উপকরণঃ
যে কোন কাঁটাবিহীন অথবা অল্প কাঁটার মাছের স্টেকঃ দুই পাউন্ড
লেবুর জেস্টঃ এক চা চামচ
লেবুর রসঃ এক টেবিল চামচ
গালাঙ্গা কুচি (কচি আদা বিশেষ)ঃ এক চা চামচ
কোকোনাট ক্রিমঃ এক কাপ
ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, তেঁতুল, কাঁচা মরিচ, রসুনের পেস্টঃ আধা কাপ
টমেটো পেস্টঃ দুই টেবিল চামচ
ফুড কালারঃ অপশনাল
লবণঃ স্বাদ মত
তেলঃ দুই চা চামচ
পেস্ট বানানোর প্রক্রিয়াঃ এক কাপ ধনে পাতা, আটটি পুদিনা পাতা, ছয়টি কাঁচা মরিচ, দশ কোয়া রসুন, দুই চা চামচ তেঁতুল আর পরিমাণ মত লবণ নিয়ে ব্লেন্ডারে চড়ালেই সুপার চনমনে পেস্ট তৈরি হয়ে গেল। আমি ক্যানের টমেটো পেস্ট ব্যবহার করেছি।
শুরু করে দিন যজ্ঞঃ আঁশ ছাড়িয়ে মাছের স্টেক ভাল করে ধুয়ে মুছে বেকিং ট্রেতে রাখুন। এক টেবিল চামচ লেবুর রসে মাছের টুকরো মাখিয়ে রাখুন ত্রিশ মিনিট। এবার যাবতীয় মশলার পেস্ট, নারকোল ক্রিম, টমেটোর পেস্ট, গালাঙ্গা, লেবুর জেস্ট আর তেল দিয়ে স্টেক মাখিয়ে ফ্রিজে চালান করে দিন তিন ঘণ্টার জন্য। নির্ধারিত সময়ের পর দুশো ডিগ্রিতে দশ মিনিট ওভেন প্রিহিট করার পর তিনশো পঞ্চাশ ডিগ্রিতে মাছ সহ বেকিং ট্রে ওভেনে পাচার করুন আধা ঘণ্টার জন্য।
এবার খানিক অবসর পাওয়া গেল। এই ফাঁকে বিটোভেনের মুনলাইট সোনাটা চাপিয়ে আপনি ইয়োগায় মন দিতে পারেন। মাছ উলটে দেবার কথা ভুলেও ভাববেন না, ভেঙ্গে যেতে পারে। পদ্মাসন করার ফাঁকে মাছের চনমনে সুবাস টের পাচ্ছেন তো? না পেলে বুঝতে হবে আরো মিনিট পাঁচেক বেইক করা যেতে পারে। পাড়া জুড়ে মম সুবাস টের না পাওয়া গেলেও বাড়ি জুড়ে আপনার গডের স্টেকের সুবাস যে ছড়াবে আমি নিশ্চিত। এবার সাবধানে মাছ নামিয়ে গারনিশ করে নিন আপনার রুচি মত। তাজা ফল অথবা কাঁচা সব্জির স্যালাদ কেটে নিন সাথে খাবার জন্য।
বিহাইন্ড দা সিন আত্মকথনঃ বড় মাছের স্টেক গুলোতে বেশ একটা রাজকীয় ভাব থাকে। ইন্টারন্যাশনাল ফারমারস মার্কেট থেকে এক একটা রুই মাছের স্টেক আমি কিনেছি দুই পাউন্ড ওজনের। বেইক করার পর দেখতে যেমন ভাল দেখায় তেমনি খেতেও বেশ মজাদার এই পাকা রুই। হ্যালিবাট, বাসা, বিগ হেড এমনকি স্যামনেও এটি করা যেতে পারে। আমার ধারণা বড় টুকরোর তেলাপিয়াতেও মন্দ হবেনা এটি।
দেশী কাগজী লেবুর সুবাস জগতজোড়া হলেও এখানে সেটি দুর্লভ। কাগজী লেবুর অভাবে আমি হলুদ লেবুর জেস্ট বানিয়ে নিয়েছি হাতে। ফ্রেশ গালাঙ্গা (কচি আদা) কেটে নিয়েছি ধারালো ছুরিতে। গালাঙ্গার সুবাস মাছে বেশ একটা চনমনে স্বাদ এনে দেয়। ফাঁকিবাজি করে আমি সুপারমার্কেটের কোকোনাট ক্রিম ব্যবহার করেছি। ফ্রেশ বাটা নারকোল অথবা নারকোলের দুধ রান্নার স্বাদ আরো বাড়াবে বলেই আমার বিশ্বাস।
সবশেষে, একখানা লাল গোলাপ থাকুক না আজ টেবিলে! বহুদিন পর সাররাউন্ড সিস্টেমে বাজুক না কেনী রজারসের মাতাল করা সুর। রজারস দরাজ গলায় যখন গাইছেন, For so many years I thought I’d never find you সেই অবসরে আপনার রুচিমাফিক হোয়াইট জিনফিনডেল ঢেলে নিন সুরার পাত্রে অথবা অতটা এডভেঞ্চারাস না হলে কোক জিরো গ্লাসে ঢেলে তাতে এক টুকরো লেবু ভাসিয়ে দিন সোনার তরীর মত। তার চেয়ারখানা এগিয়ে দিন বসবার জন্য। মোমের আলোয় দেখুন কী মায়াময়ই না লাগছে তার চিরচেনা মুখখানি!
আপা, বরাবরের মতই :gulli2:
পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো, আমিই এখন রান্না করে ফেলতে পারবো 😀
আমাকে খাওয়াচ্ছেন কবে??
আর ব্লগ এডজুট্যান্ট এর কাছে আবদার...... রান্নাব্লগ/রেসিপি নামে একটা বিভাগ খুলে ফেলেন প্লিজ।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
🙂 🙂 🙂 🙂
আমার কারিগরী উপদেষ্টা সজীব অনেক ধন্যবাদ তোমাকে! অপেক্ষা করছি তোমার জন্য! কবে আসবে বলো এখুনি!
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া!
রান্নার সাথে ভালোবাসার না হোক, অন্ততঃ মায়ার বোধহয় একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। আর পরিবেশনার সাথে তো মনে হয় দুটোরই আছে।
The hands that cook, are guided by a heart that loves.
🙂 🙂 🙂 🙂
আমরা যাকে মায়া বলি, সে তো এক রকম ভালবাসাই, ভাইয়া! নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফুড এডিটর ক্রেইগ ক্লেইবর্ণ একবার বলেছিলেন, 'রান্না হলো শিশুদের খেলা বিশেষ আর বড়দের জন্য আনন্দ। আর যে রান্না যত্নের সাথে করা হয় সেটা ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই নয়!"
লেখার শিরোনামটাকে প্রথমে ভালোভাবে খেয়াল করিনি, যা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। আমি সবসময় আগে শিরোনামটা ভালোভাবে খেয়াল করে পড়ি, এবং আমার মন্তব্যেও প্রায়শঃ শিরোনামের প্রসঙ্গ থাকে। এই মন্তব্যটা পোস্ট করার পর যখন পুনরায় লেখাটা স্ক্রীনে ভেসে উঠলো, তখন শিরোনামটা পড়ে মনে হলো, আমি ইংরেজীতে যে কথাটা লিখেছি, তুমিও বোধহয় শিরোনামটাতেই সে রকমই একটা কিছু বলে দিয়েছো।
🙂 🙂 🙂 🙂
খুব ভালো লেগেছে আপু। এটাই বুঝলাম খাবার বানানো এবং পরিবেশনেও ভালবাসার স্পর্শের ব্যাপার আছে, তুমি সবকিছু অনেক বেশি ভালবাসা নিয়ে কর। সিসিবিতে এরকম একটি পরিবেশনা নিঃসন্দেহে বৈচিত্র্যতা আনবে। অনেক শুভকামনা আপু। :clap: :clap:
🙂 🙂 🙂 🙂
সিসিবির সদ্যোজাত রাঁধুনিরা এবার তাদের রন্ধনশৈলী নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হবেন আশা করি। শুরু হোক আড্ডা উইথ গুড ফুড। ওমম নম নম নম!
অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য, জিয়া!
আমার মেয়েরা আমার হাতের খিঁচুড়ি পছন্দ করে। বলা যায় বউ এর রান্নার গুরু আমি। তবু আমার রান্না ঘরে যাওয়া বারণ। রান্না আর হেঁসেল সামলানো এক কথা নয়।কিচেন পরিপাটি রাখা কঠিন কাজ। তোমার রেসিপিটা এবার হাতে ধরিয়ে দিতে হবে, আমি নিশ্চিত সে বলবে,
নাহ, মেয়ে চুলও বাঁধে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
🙂 🙂 🙂 🙂
কেবলই চুল বাঁধে, ভাইয়া? মেয়ে একাধারে জেনিটরিয়াল জব থেকে চণ্ডীপাঠ সবই একা করে, জানো।
ধুমায়িত খাবার টেবিলে ভালবাসা রঙধনু হয়ে দ্যুতি ছড়াক সবার জীবনে! অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপু ব্লগটার জন্য, আর আপনার লেখায় নিজের নাম দেখতে পেয়ে যারপরনাই আহ্লাদিত 😀
সামনের কোন ছুটিতে চেষ্টা চালাতে হবে 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
🙂 🙂 🙂 🙂
প্রোফাইল ছবিতে আকাশ আর নক্ষত্রের বৈশাখী আউটফিট দারুণ লাগলো দেখতে। অনেক ধন্যবাদ আমার বাড়ি ঘুরে যাবার জন্য!
ধন্যবাদ আপু 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
চমৎকার! হেইলবাট কিংবা টুনা দিয়ে ট্রাই করে দেখতে হবে।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
🙂 🙂 🙂 🙂
যেকোন মাছের স্টেক দিয়েই করা যেতে পারে, রকিব! জানিও কেমন হলো, অথবা লিখেই ফেলো একটা ব্লগ আমাদের জন্য।
হৃদয় দিয়ে না রাঁধলে, হৃদয়বান না হলে সিদ্ধিলাভ করা অসম্ভব। একটা দুটো টানে ছবি আঁকার মতোই তো। রান্নার ব্লগ লেখা চাট্টিখানি কথা নয় আপা। ঠিকই বলেছ, এর থেকে রান্না বোধ করি আরো সহজ। তোমার বাড়ি গেলে কী কী খাবো (এবং পান করবো) তার একটা লিস্টি বানাতে হয় এবারে।
🙂 🙂 🙂 🙂
আমার বাড়ি আসার এক সপ্তাহ আগে একটা নোটিশ পাঠিও, নূপুর! কি কি খাবে তার লিস্টিও সাথে পাঠিও। ভোজন শেষে খিলি পানও যেন প্রস্তুত থাকে সেটিও নিশ্চিত করবো। আটকে গেলাম কেবল ব্র্যাকেটের মাঝে লেখা তোমার পান করার প্রশ্নে। জলপান করতে পারো, লেবু জলও মন্দ নয়। প্যাটেল ব্রাদার্সে গেলে চিরতার জলও মেলে এখানে। এলোভেরার জুসও ট্রাই করা যেতে পারে চিয়ার্স বলে। আমার বানানো লেবুর সরবতের খ্যাতি বন্ধুরা হামেশাই করেন। ফ্রুট পাঞ্চ বানাতে পারি খুব ভাল। চাইলে রুহ আফজাও। লাচ্ছি খেতে পারো, তাজা ফলের রস তো কোন ছার! আটলান্টার কোকা কোলা ফ্যাক্টরিতে গেলে গ্যালন গ্যালন কোকও ট্রাই করতে পারবে ফ্রি! আর কি বাকী থাকলো তবে, বলো?? এর পরও যদি খাই খাই করো তবে মোড়ের শুঁড়িখানায় পৌঁছে দিয়ে আসতে পারি আমার বন্ধু লরির সাথে!
হোয়াইট জিনফিডেল বড় ভালো পাই 😛
আর ড্রিংকস এর ছবিটা নিয়ে কিউরিয়াস। মার্গারিটা গ্লাস দেখা যাচ্ছে একটা। কিন্তু মনে হচ্ছেনা ঐটা মার্গারিটা। কোনটা কি সেটা বলা যায় কি আপা?
🙂 🙂 🙂 🙂
স্কুল জীবনে জলপানি পেতে পছন্দ করলেও আমি নিজে জল ছাড়া অন্য কিছু পান করিনা সচরাচর। আমি জানি আমি খুবই বোরিং টাইপের মানুষ! কিন্তু কি আর করা, বলো?
ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে মাসে একবার ওয়াইন এন্ড চিজ পার্টি হতো, জানো! ভাল ভাল সব পানীয় আর পনির ফ্রি ছিল আমাদের জন্য। সবার সাথে আমিও যেতাম সাজপোশাক পরে। ফ্রি খাবার আর পানিয়ের এই পার্টিতে বন্ধুরা নাক ডুবিয়ে খেতো সব। জলের বোতল না থাকাতে আমাকে সোডা নিতে হতো। ডায়েট কোক হাতে আমার চিজ খাওয়া দেখে বন্ধুরা খেপাতো হামেশাই। পার্টি শেষে কার খোঁজ পরত জানোতো বাড়ি ফিরবার সময়ে? আমার। এক একজন বন্ধুকে আমিই পৌঁছে দিয়েছি বাড়ি কারণ ড্রাঙ্ক হয়ে সব করা গেলেও ড্রাইভিং তো করতে পারবে না।
আমার গুণীজন বন্ধু রুমকি মাছের সাথে সাদা জিনফিনডেল পান করতে ভালবাসেন, নাফিস! তার থেকেই আমার শেখা মাছের সাথে কি পান করতে হয় তো মাংশের সাথে কি অথবা কড়া পানিয়েরো যে জাত কুজাত আছে সেইসব তো তিনি বলেন হামেশাই।
গ্লাসে কী আছে? ডানে ছোট গ্লাসে ডাবের জল উইথ পাল্প, মাঝেরটিতে কোক জিরো, বাঁয়ে ডাবের জলের সাথে হলুদ লেবুর টুইস্ট। পেছনে স্ট্রবেরী-ক্ল্যামেন্টাইন ফ্রুট পাঞ্চ, আর সবশেষে পেছনে ডানে বরফ জলে শশা আর গালাঙ্গা ইনফিউসড ওয়াটার।
নাও ইউ নো আমি কত বোরিং একজন মানুষ!
১৪ তারিখ দৌড়ের উপর ছিলাম বলে ব্লগটা দেখেও পড়া হয় নাই।
গতকাল পড়ি নাই ইচ্ছা করে।
ছবি দেখে আর স্ক্যান করেই বুঝেছিলাম, এটা পড়ার পর এক ধরনের হাহাকার জাগবে বুকে।
অনেক না না করেও আজ লাঞ্চের পর পড়লাম।
আর যা ভাবা, সেই খালি খালি করা ফিলিংটা এসে ভর করলো।
যে বর্ননা দিয়েছো, না চাইলেও সুরুৎ করে ঢুকে গেলাম দৃশ্যপটে। তারপর শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভালোই কাটলো সময়টা।
কিন্তু শেষ করেই বাধলো বিপত্তি।
তাকিয়ে দেখি কোথাও কোন স্টেক নাই, নাই স্টেক প্রস্তুত বা পরিবেশনকারী।
আমার দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হাসছে ল্যাপ্টপের কীবোর্ড আর ফ্যাকাশে স্ক্রিন।
যাই রেডি হই, জীমে যেতে হবে আবার.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
আমার গেল পোস্টে সোনালী মধুতে রূপবতী চিকেনের গল্প বলে কী চমৎকার একটা প্রেমকাহানী বলেছো, ভাইয়া! এইবার মাছের প্রেপে তোমার অন্য একটা গল্প শুনবো বলে অপেক্ষায় ছিলাম, জানো! দেশে কি আজকাল মাছের চাষ আর হয়না, নাকি প্রেমিকারা মাছ রাঁধতে ভুলেছে??
মাছ, বিশেষ করে বড় মাছের মাথা আমি খুবই আগ্রহ নিয়ে দীর্ঘ্য সময় ধরে খাই।
তবে ব্যাপারটা কাছের মানুষরা পছন্দের চেয়ে অপছন্দই করে বেশী।
তাই মাছ খাওয়া নিয়ে তেমন কোন সুখ স্মৃতি যে নেই, কি করি?
আর এই দেশে আনুষ্ঠানিক খাবার হিসাবে মাছের চলন কেন যে এত ম্রিয়মান, সেটাও ভাবি?
মাছে-ভাতে যে বাঙ্গালির কথা বলে সে বাঙ্গালি বোধ হয় বেশ গরিব।
তাই তাঁকে মনেহয় কেউ প্রকাশ্যে আনতে চায় না। (সম্পাদিত)
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
তোমার কথা বেশ ভাবিয়ে তুলল, ভাইয়া! আমি আর তারা কতবার যে ভেজেটারিয়ান হতে চেয়েছি, জানো বড়জোর সপ্তাহ চারেক টিকতে পারি সবজি, সালাদ আর ফলমূল খেয়ে। এরপর হয়তো একদিন ফুডকোর্ট থেকে আসা থাই বা জাপানিজ খাবারের সুবাসে পাগল হয়ে যাই! এদেশের লোকজনও তুলনামূলক ভাবে মাছের চাইতে গোস্ত পছন্দ করে। আমি নিজে বিশিষ্ট জেলে, ভাইয়া! এখানে দশ ডলারে লাইসেন্স নিয়ে তুমি লেকের ধারে বসে যেতে পারো মাছ ধরতে। আমার ছিপে প্রতি মিনিটে না হলেও প্রতি পাঁচ মিনিটে একটা বোকা মাছ ধরা পরে! সাদা আটা মেখে মাছ কাটতেও শিখে গেছি কাঁচি দিয়ে। এরপর কেবল কড়কড়ে মাছ ভাজো আর খাও!
রান্না করাটা যাঁরা করেন তাঁদের জন্য হয়তো সোজা । যদিও শ্রমসাধ্য ।
রেসিপি লেখাটা সেই তুলনায় উলটো, অনেক বেশী বোরিং কিছুই হবার কথা ।
কিন্তু কোথায় কি ! তরতাজা গল্প উপন্যাসের মতোন টেনে নিয়ে গেলো !
দুর্দান্ত !
রান্নাটা না জানি . . . . . .
মনে হয় না খেয়েই অলরেডী কিছুটা জানি !
মুগ্ধ হলাম ।
🙂 🙂 🙂 🙂
আমাদের সিসিবিতে সুস্বাগতম, ভাইয়া! আশা করি আপনাকে আমাদের সাথে নিয়মিত পাবো।
আপনার মন্তব্য পড়ে নিজেকে আমার পাখি পাখি মনে হচ্ছে, জানেন! প্রায় মধ্যরাতে ঘুম হারাম হলো বলে! !
অসাধারণ! কাজী আহমেদ পারভেজ স্যার এই লেখাটার একটা লিঙ্ক দিয়েছেন আমার গ্রুপ ‘‘নুনেতে ভাতেতে’’ এ। প্রথমে কিছু একটা জটিলতার কারণে লিঙ্কটা ওপেন করতে পারছিলাম না। রাতে ট্রাই করলাম, ওপেন হলো। পড়লাম। চমৎকার।
বিষয় হচ্ছে, খাবার নিয়ে লেখার বিষয়টা বাংলাদেশের সাহিত্যে তেমন জায়গা করে নিতে পারেনি। খাবার অতি আবশ্যক এবং চমৎকার একটা বিষয়। কিন্তু আমাদের সাহিত্যিকরা কেন যে এই বিষয়টা নিয়ে লিখলেন না, সেটা বুঝলাম না। সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছিলেন সোনা মুগের ডাল আর উচ্ছে ভাজার গল্প! আহা! ভাবলেও জিভে জল আসে। বিদেশ বিভুইয়ে তাঁর ঝান্ডুদা তো পুলিশের নাকে রসগোল্লা থেবড়ে দিয়েও এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন, যেটা তার পাবার কথা নয়। অসাধারণ সেইসব গল্প। কিংবা মুজতবা আলী তাঁর “দেশে বিদেশে” বইয়ে যা লিখেছেন তার উল্লেখযোগ্য একটা অংশে আফগানিস্তানের খাবারের কথা আছে। মধ্যযুগের সাহিত্যগুলোতেও বাঙ্গালীর খাবারের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। আমাদের জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সাহেবও বলেছিলেন,“কোন জাতীকে জানতে হলে দুটি জায়গায় যাও- একটা তার লাইব্রেরী আর একটা কাঁচা বাজার।” মানে সে ব্যাটা কী খায় সেটা খোঁজ! কী সাংঘাতিক কথা! কিন্তু আমাদের তারকা সাহিত্যিকরা খাবারের ধারের কাছ দিয়ে হাঁটেন না। কিন্তু মজার বিষয় বিদেশের ৫ তারকা হোটেলে তারা ২টাকা দিয়ে যা খান সেটাও খুব গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করেন। কিন্তু দেশী খাবার নিয়ে? নৈব নৈব চ।
পারভেজ স্যারের মন্তব্যের জন্য এত্তবড় ভূমিকাটা করতে হলো। না, মাছের ঝোল খুব গরীবদের খাবার নয়। এবারের পয়লা বৈশাখের আগের ইলিশের দাম দেখে সেটা বোঝা যায়। অথচ আমি আমার ছোটবেলায়> কিশোর বেলায় মাত্র ২৫ টাকায় ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ কিনেছি। ইলিশ নিয়ে বয়জ্যেষ্ঠরা যে গল্প করেন সেটাতো রীতিমতো রূপকথা! যাইহোক, বিষয়টা মনে হয় টাকাপয়সার সাথে জড়িত নয়। বাড়িতে প্রতিদিনই মানুষ মাছ খায়। এই প্রাত্যহিকতার সাথে যুক্ত বলেই হয়তো মাছ আর খুব গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত হয় না- এমনটাই মনে হয় আমার। কিন্তু একবেলা বাসায় মাছ না থাকুক, নিজেকে গরীব গরীব মনে হয়। মনে হয়, মাছও নাই বাসায়? এইটা কিছু হইলো? এই যে মাছও নাই, এই চিন্তাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মোদ্দা কথা, মাছ আমাদের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে প্রাত্যহিকতার প্রেক্ষাপটে।
আর একটা গুরুত্বপর্ণ তথ্য শেয়ার করে রাখি। ইউনেস্কো ঢাকা বাংলাদেশের ইনটেনজিব্যাল কালচারাল হেরিটেজের উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে মাছের ঝোলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের মতো (আসলে উভয় বাংলা) পৃথিবীর আর কোন দেশে এত বৈচিত্র্যময় মাছের ঝোল রান্না হয় না!
লেখিকার কাছে অনুরোধ, পারলে এই ব্লগে লেখার পাশাপাশি আপনি নুনেতে ভাতেতে গ্রুপেয় লিখুন। এই গ্রুপটা শুধুমাত্র খাবার নিয়ে। খাবারের গল্প নিয়ে। রেসিপি নিয়ে। খাবার আর আড্ডা নিয়ে। সুন্দর কিছু লেখা আছে আমাদের। আপনার সুন্দর লেখা দিয়ে আপনিও আমাদের সাথে থাকুন না।
ও হ্যাঁ, খাবার নিয়ে আর একটা সুন্দর বই আছে ঢাকা পচাশ সাল পহেলে (ঢাকা: পঞ্চাশ বছর আগে), লেখক হাকিম হাবিবুর রহমান। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের সানেনুজুল পাওয়া যাবে।
আমাদের খাওয়া দাওয়ার পদ্ধতিগত এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে যা খাওয়া টাকে উৎসবের পর্যায়ে নেয়ার বড় ধরনের অন্তরায়। যেমনঃ
১) হাত দিয়ে খাওয়া। (হাত শুখিয়ে যাবে তাই একবার শুরু করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, শেষ করার একটা তাড়া থাকে)
২) ছোট বেলার গৎ "খাওয়ার সময় কথা কলি গুনা হয়"। নিঃশব্দ ভোজনই উতকৃষ্ট ভোজন। (দ্রুত ভোজনের আরেক কমপ্লিমেন্টারি অনুষঙ্গ)
৩) মাখিয়ে খাওয়া। (এমন ভাবে সব কিছু হাতে জড়িয়ে যাবে যে দ্রুত ও নিঃশব্দ ভোজন ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না)
এইসব কারনে খাওয়াটা উপভোগের বিষয় থেকে কর্তব্যই হয়ে ওঠে বেশী। কেউ নতুন কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতে খুব একটা এগিয়ে আসেন না। এলেও সাকসেসের চেয়ে ফ্লপ করার সম্ভবনাই থাকে বেশী।
আমি লেখকদের খুব একটা দোষ দেব না। তাঁদের পাঠকরা যে জিনিষকে ফেস্টিভ মুডে নেবেন না, তা তাঁরা সেল করতে যে এগিয়ে আসবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। আফটার অল পাঠক বই কেনে নতুন এমন কিছু পেতে যা তাঁদের না পাওয়াটা মেটায়। রিজলভড বিষয় তাঁরা পড়বেন কেন? খাওয়ার মত ব্যক্তিগত একটা বিষয় তাঁরা মনেহয় কড়ি ফেলে জানতে চাইতেন না।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂 🙂 🙂
প্রথমেই পারভেজ ভাইয়াকে ধন্যবাদ আমার লেখাটি 'নুনেতে ভাতেতে' শেয়ার করার জন্য।
তাপস, আপনার লেখার সাথে আমি সহমত। সত্যি তো সৈয়দ মুজতবা আলী ছাড়া অন্য লেখকেরা রান্নার গল্প কম করেছেন। বুদ্ধদেব গুহ মাঝেমধ্যে একজন মুসলমান বাবুর্চির গল্প বলেছেন তাঁর লেখায় কিন্তু উল্লেখযোগ্য লেখকেরা প্রায় তেমন কিছুই লেখেননি। অথচ আমার দেশের মত এমন ফ্লেভারফুল আর মজাদার খাবার জগত জুড়ে মেলা ভার।
আপনার পেইজে লিখবার আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ, দাদা! ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
:tuski:
সুনদর রেসিপির সংগে চমকপ্রদভাবে পরিবেশনা।অপূবর্ হয়েছে। :clap: :clap:
রান্না চাপিয়ে "মুন লাইট সোনাটা " সত্যি সত্যিই ব্যাপক ভাবে মুগ্ধ ... এই ভাবে জীবনকে এক্সপ্লোর করার আইডিয়া শুধু তোমার কাছ থেকেই আসতে পারে। মুগ্ধ মুগ্ধ মুগ্ধ ............
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার
🙂 🙂 🙂 🙂
অরূপ দা তোমার কথা শুনে আমার হামেশাই পাখী হয়ে যেতে মন চায়, জানো! নিতান্তই পাখা নেই বলে মানুষের মত বেঁচে থাকা!
:boss: :boss: :boss: :boss: