‘‘ রাস্তায় পড়ে থাকা অভুক্ত কুকুরকে আশ্রয় ও খাবার দিয়ে সবল করে তোলার পর সে পাল্টা কামড় দেবে না। মানুষ ও কুকুরের মাঝে এটাই মূল পার্থক্য। ’’
– মার্ক টোয়েন
১।
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় একটা গল্প পড়েছিলাম । তীব্র শীতে দিনের পর দিন না খেয়ে ধুঁকতে থাকা এক কুকুর আর এক শিয়াল খিদের জ্বালা সইতে না পেরে অবশেষে বেরিয়ে আসে বন থেকে। লোকালয়ের কাছাকাছি আসতেই তারা দেখে সরগরম এক গৃহস্থ বাড়িতে কি একটা উপলক্ষে ভোজ চলছে। আগুন পোহাতে আর সুস্বাদু খাবারের লোভে চোরের মত ঢুকে পড়ে বাড়ির ভেতর। পেটপুরে খাওয়া শেষে শিয়াল বুদ্ধি দেয় দ্রুত কেটে পড়ার, কিন্তু গৃহস্থের প্রতি কৃতজ্ঞ কুকুর পালানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ঋণ শোধের কথা ভেবে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বনের স্বাধীন জীবন ছেড়ে মানুষের অধীনতা বেছে নেয়ায় বন্ধুকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করে বনে ফিরে যায় শিয়াল। কুকুর ও শিয়াল সেই থেকে আজন্ম শত্রু। ধীরে ধীরে কুকুর হয়ে উঠল মানুষের বিশ্বস্ত সহচর।
সত্যিই কি এমনটাই ঘটেছিল? পারস্পরিক নির্ভরতার গল্পটার শুরু কোথায়? ইতিহাস কিন্তু ধোঁয়াশায় ঢাকা !
২।
গবেষকদের নানামুখী তত্ত্বের ফুলঝুরি আর ভারি ভারি কিতাবের ফলে রহস্যের জট তো খোলেইনি বরং আরো তালগোল পাকিয়ে বেশ একটা জগা খিচুড়ি তৈরি হয়েছে। কোথায় প্রথম কুকুরকে পোষ মানানো হয়? চীনে, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা নাকি ইউরাল পর্বতের ধারে ? কেনইবা আদিম মানব পোষ মানানোর চেষ্টা করেছিল? পশুর পাল পাহারা নাকি শিকারে সাহায্য করার জন্যে? সঠিক উত্তর মেলে না কোন প্রশ্নেরই। তবে ফ্রান্সের শ্যঁভেত গুহায় ৫০ মিটার দীর্ঘ একটা trail পাওয়া গেছে। এই গুহা বেশ প্রাচীন গুহাচিত্রের জন্য বিখ্যাত। গমনপথটি দশ বছরের এক বালক ও তার সঙ্গী আধা নেকড়ে-আধা কুকুর জাতীয় এক প্রাণীর। পুরাতত্ত্ববিদদের অনুসন্ধান বলে অন্তত ২৬০০০ বছর পুরনো এই trail। মোটামুটি ২০,০০০ বছর ধরে কুকুর মানুষের সঙ্গী।* বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই পোষা কুকুরের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। মার্কিনীরা কুকুরের উদরপূর্তিতে ব্যয় করে ৫৬০ কোটি ডলার। চিকিৎসার পেছনে আরও ৭০০ কোটি ডলার।
কৌতূহল জাগে, কুকুরকে নিয়ে এই প্রবল মাতামাতির কারণ কি। আর কুকুরই বা কেন মানুষের আশেপাশে থাকতে ভালবাসে? মনোবিজ্ঞানীদের উদ্ভট তত্ত্বকথার ঝুলি থেকে নিয়মিতই কিছু না কিছু বেরোয়। আমার মত আমজনতার সেদিকে মাথা না ঘামানোই উত্তম। তবে কুকুর-মালিকরা নাকি পোষা প্রাণীটিকে পরিবারের সদস্য বলেই মনে করে।
৩।
কুকুর কি শুনতে পারে? অরহান পামুক ‘ My Name is Red’ বইয়ে বলছেন, ‘কুকুর কথা বলে। তবে শুধু তাদের সাথে যারা জানে কিভাবে শুনতে হয়।’ ফরাসি বিপ্লবের চিন্তানায়ক ভলতেয়ার কুকুরকে বুদ্ধিমান প্রাণী বলেছেন। এমনকি দার্শনিকদের গুরু Plato-র মতে কুকুর নাকি জ্ঞানপিপাসু প্রাণী । কুকুরের প্রভুভক্তি ও আনুগত্য নিয়ে হাজারো কাহিনী আছে। বিশেষত কমলকুমার মজুমদারের না-লেখা একটা গল্প আছে; শিরদাঁড়ায় স্রোত বইয়ে দেবার মত গল্প বটে ।**
গল্পটা ডুয়ার্সের এক চা-বাগানের ইংরেজ ম্যানেজার ও তার হোয়াইট টেরিয়ারকে নিয়ে।
৪।
সাহেবের হোয়াইট টেরিয়ার একদা শিকারি কুকুর ছিল। কিংবদন্তি বলে, এই কুকুর স্পেনে একদা ক্রীতদাসদের বেশ হেনস্থা করত। সদাব্যস্ত সাহেব বাংলোয় থাকত কম। প্রাতঃরাশ করে বাগানে যেত আটটায়। ফিরত বেলা দুটোয়, লাঞ্চে। একঘণ্টা পর ফের বাগানে। রাত দশটায়। এছারা ফোন অথবা বাগানের অ্যালার্ম তো ছিলই। নিশিপ্রহর, যখন তস্কর জাগে তখনও ছুটতে হত বাগানে। স্ত্রীর সাথে দেখা-সাক্ষাত ছিল বড় কম। স্ত্রীর সময় কাটতো একা রেডিও শুনে বা ম্যাগাজিন। কখনো আয়াদের সাথে গল্প করে।
বালক পুত্রের গৃহশিক্ষক আসতেন অপরান্নে। যেতেন ডিনারের আগে। পুত্র যথারীতি আলালের ঘরের দুলাল। দাসদাসীর সঙ্গেই সময় কাটত তার। শিক্ষকেরও ছাত্রের প্রতি মনোযোগ ছিল না। তার কেবল মেমসাহেবেই রুচি, মেমসাহেবেই মতি। সবাই যখন ব্যস্ত, যুবক তখন ফালতু ঘরে যুবতীর সাথে মশগুল। বন্ধুত্ব ক্রমে প্রণয়ে, প্রণয় ক্রমে কামলীলায়।
এমনি অবস্থায় চা কারখানায় সাহেবের মাথায় পড়ে বোলিং মেশিনে বাঁধা ট্রে। ঘটনা স্থলেই মৃত্যু।
সব ওলটপালট হয়ে যায়। সাহেবের গৃহে সূচপতনেরও শব্দ হয় নতুবা স্তব্ধতা। চিরনিস্তব্ধতা ।
সাহেবের কুকুর নির্বাক, নিস্পন্দ, নিষ্কম্প তথা বাক্যহীন মনিবশোকে। তার জন্য নির্দিষ্ট কক্ষে সে নিঝুম। শৃঙ্খলহীন। অনশনরত। কেউ তার দিকে দৃষ্টিপাত করে না। কেবল সেই পুত্র তার নিকটে যায়। খাদ্যবস্তু সামনে রাখে। বারবার তার নাম ধরে ডাকে। সে তবু নিরুত্তর।
ক্রমে তাকে ভুলে যায় সকলে। পুত্রটিও আর কাছে যায় না। সে বালক গৃহশিক্ষকের মুখোমুখি হয় না। মার মুখদর্শন করে না। তফাতে থাকে।
দিন যায়, রাত যায়। গৃহশিক্ষক এ বাড়িতেই বেশি অবস্থান করে। এবং সেই ফালতু ঘরে বিধবা রমণীর সঙ্গে। একদিন শোক সহনশীল হয়ে আসে। গৃহশিক্ষক অই ফালতু ঘরে রমণীসহ এক বর্ষামুখর রাতে অবস্থান করে। সারারাত।
ঐ কুকুর টের পায়। দরজার কাছে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে থাকে।
দাসদাসীরা ওদের খাবার পৌঁছে দিতে উপস্থিত হলে সে তাড়িয়ে দেয়। ওরা ক্ষুৎকাতরতায় দরজা খোলে। উচ্চকণ্ঠে দাসদাসীকে ডাকে। কিন্তু কুকুর কাউকে ঢুকতে দেয় না। যুবক-যুবতীকেও বের হতে দেয় না।
একদিন যায়। দুদিন যায়। তিন্দিন যায়। ওরা ঘরে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় মুমূর্ষু। কিন্তু কুকুর খোলা দরজা জুড়ে থাকে।
এভাবে চতুর্থ দিন আসে। যুবক- যুবতী শয্যাশায়ী হয়।
এভাবে পঞ্চম দিন আসে। যুবক- যুবতী স্পন্দনহীন হয়।
এভাবে ষষ্ঠ দিন কাটে। যুবক- যুবতী শ্বাসরুদ্ধ হয়।
এভাবে সপ্তম দিন কাটে। যুবক- যুবতী শ্বাসশূন্য হয়।
কুকুরটি অতঃপর দরজা খোলা রেখে ঐস্থলে শুয়ে পড়ে। ধর্ম এসে তাকে মহাপ্রস্থানের পথে নিয়ে যায়।
৫।
এই ব্লগটা লিখতে বসেছিলাম Richard Gere অভিনীত Hachi: A Dog’s Tale সিনেমাটি দেখার পর। হৃদয়ের গভীরে কোথায় যেন নাড়া দেয় Hachi-র গল্পটা। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উয়েনোর অভ্যাস ছিল ক্লাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যখন বেরোতেন তার পোষা কুকুর হাচিকোকেও স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। আবার বিকেলে তার বাড়ি ফেরার সময় হলেই হাচিকো স্টেশনে গিয়ে অপেক্ষা করত। ১৯২৫ সালে উয়েনো মারা যান। বেচারা কুকুর জানতে পারে নি। প্রভুর মৃত্যুর পরদিনও হাজির হয় স্টেশনে। কিন্তু উয়েনো তো না ফেরার দেশে ! পরবর্তী ৯ টি বছর, প্রতিটি দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করত মালিকের জন্য। তুষারপাত- ঝড়- প্রখর রোদ কোনোকিছুই তাকে আটকাতে পারে নি। ১৯৩৪ সালে হাচিকো মারা যায়। স্টেশন কর্তৃপক্ষ শিবুইয়া স্টেশনে হাচিকোর ব্রোঞ্জ মূর্তি স্থাপন করে। অনেকটা রূপক। মনে হয় মৃত্যুর পরও যেন সে অপেক্ষা করতে পারে মালিকের প্রতীক্ষায়।
এক অতন্দ্র প্রহরী। ২০০০০ বছর ধরে যে মানুষের বিশ্বস্ত সহচর।
*তথ্যসুত্রঃ National Geographic Magazine
** কমলকুমার মজুমদার এই গল্পটা খালাসীটোলায় মদ খেতে খেতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উদয়ন ঘোষদের বলেছিলেন। যারা মূল পাঠ পড়তে আগ্রহী উদয়ন ঘোষের ‘খালাসীটোলায় কমলকুমার’ শীর্ষক প্রবন্ধে পাবেন
১ম 😀
আমাকে আমার মত থাকতে দাও...
:clap: ভাল্লাগছে। তুই নিয়মিত লিখিস না কেন??
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
সিসিবির এত অসাধারণ সব লেখা পড়তে পড়তেই সময় কেটে যায় । লিখব কখন? 🙂 🙂
কলেজে থাকতে তো কোপায়া লিখতি। আবার শুরু করে দে। ব্লগে এখন আমাদের ব্যাচের বেশ কয়েকজন আছে।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
অ্যান্ড হি ইজ ব্যাক উইথ কুকুর নামা। :grr: কলেজ কেন্দ্রিক কনফেশন করি একটা। তোর লেখা দেখে ব্যাপক হিংসা লাগত। তাই হিংসাটা উস্কে দেয়ার আর কিছু রসদ দে। তোর লেখা পড়তে চাই। 😀
আমি সিগারেটের ছাই, জানালার ধুলো। চাইলেই ফু দিতে পার। ঊড়ে যাব।
ওরে কৌশিক দোস্ত ! তোরে কয় বছর পর দেখলাম আল্লাহ ই জানে। ফেবু তেও খুঁজে পাইলাম না... এখন ব্লগে দেখে খুব ভালো লাগলো। লিখতে থাক নিয়মিত।
দারুন লেখা। নিয়মিত লিখতা থাকো :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
মনে হচ্ছে অনেক পড়াশোনা তোমার। কুকুর বিষয়ক একটা অন্যরকম লেখা।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
খুবই সুন্দর। অন্যরকম।
১৯৯৩ সালের আগে দুই বছর গ্রামে ছিলাম। বাসায় একটা কুকুর ছানা নিয়ে আসছিল বাবা। তখন ওরে নিয়ে কত খেলা। দিনের অনেক সময় শুধু ওরে নিয়েই কাটতো। তারপর চলে আসলাম ঢাকায়। বাড়ি গেলাম প্রায় দেড় বছর পর। আশ্যর্য আমাকে দেখা মাত্রই সেই পুরানো খেলা শুরু হয়ে গেল। খুবই আনন্দ পাইছিলাম যে সে আমারে এতদিন পর চিনতে পারছে।
The Bond Cadet
সোহান, আর কি কি কনফেশান আছে? 😛
@ উজরাত, ICCLMM '০৯ এর পর আর দেখা হয় নি, না?
শাহিন ভাই,
আমার নানার একটা কুকুর ছিল। নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে রাতে অন্য কোন বাড়িতে থাকলে সারারাত জেগে, দরজায় দাঁড়িয়ে পাহারা দিত। সে কিভাবে যেন বুঝে যেত তার মালিকের কাছে এই ছেলেমেয়েগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। অদ্ভুত না?
ওয়াহিদা আপু, ধন্যবাদ। 🙂
আহসান আকাশ ভাইয়া,
ছবি ব্লগ সহ আপনার সব লেখাই খুঁজে খুঁজে পড়ি। এবং বেশ আনন্দ পাই 😀
সারমেয় বৃত্তান্ত ভাল লাগলো :clap: :clap: :clap:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
:clap:
ওই মুভিটা দেখার কুকুরের প্রতি আমার ভালোবাসার শুরু। আর আমার কোলে যে কুকুরটা দেখছিস বাসায় যাবার সঙ্গে সঙ্গে সে একবার আমার কোলে লাফ দিয়ে আমার শেখানো মতে পিছনের দুই পায়ে বসে থাকে যতক্ষন না তাকে আদর করে দেই।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
সম্ভবত মুভির সেরা ডায়লগ , '' He is Japanese, not American !''
আপনার কুকুরও মনে হচ্ছে মার্কিনী 😛
খাটি বাংলাদেশী 😉
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
বারবার পড়বার মতো একটা ব্লগ, যেমন চমৎকার, তেমন তথ্যবহুল। :clap:
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
সকাল সকাল মনটা ভাল করে দিলেন 😀 😀
কুকুরের উদ্ভবের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ধারণাটি হলো নেকড়ে থেকে বিবর্তনের। এই বিবর্তন শিকারী মানুষ ঘটিয়েছিল, তাই এটাকে "কৃত্রিম" বিবর্তন বলা হয়। কৃত্রিম এই অর্থে যে মানুষের শিকার-প্রবণতা বা শিকার-সহযোগীর দরকার না পড়লে হয়তো কুকুরের উদ্ভব হতো না। ধারণা করা হয় নেকড়েদের মাঝে শিকারে পটু এবং বশ মানে এমন নেকড়েদেরকে গোষ্ঠীর ভেতরে নিয়ে নিতো আদিম মানুষ। এইসব নেকড়ের ভেতরেও যে নেকড়ে যত বেশি পোষ মানতো, সেগুলোকে রেখে দেয়া হতো। স্বাভাবিকভাবেই নেকড়ের অদম্য স্বভাবের জন্য দায়ী জিনের প্রভাব কমে যেতে থাকে, এবং একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হতে থাকে যার ভেতরে আনুগত্যের স্বভাব প্রবল (কারণ আনুগত্যকেই তখন মানুষেরা একমাত্র যোগ্যতা বলে বিবেচনা করেছিল)।
এজন্যই কুকুর এতোটা অস্বাভাবিক রকমের আনুগত্য দেখাতে পারে। নেচার ভার্সাস নার্চার তর্কে অনেক সময় এই উদাহরণটা নার্চারের প্রকট প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে দেয়া হয়। সম্প্রতি "Cosmos: A Space-Time Odyssey" নামের টিভি সিরিজের দ্বিতীয় এপিসোডে এই বিষয়টা খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আমার মনে হয় কুকুর খুবই চালাক প্রানী।