ক্লাস শেষে নায়লাকে ঘিরে একটা ছোটখাট জটলা হল । আমাদের ক্লাসেরই একটি ছেলে ওকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে ।নায়লা রসিয়ে রসিয়ে সে গল্প শোনাচ্ছে।এরকম জটলা প্রায়ই হয়।ক্লাসের বেশির ভাগ মেয়েই বেশ সুন্দর।একেকজন ইতোমধ্যে গড়ে ৬-৭ টা প্রস্তাব পেয়ে গেছে! আমি এধরণের জটলার নিয়মিত শ্রোতা।মন দিয়ে গল্পগুলো শুনি।ওদের মধ্যে আমিই বোধহয় একমাত্র ব্যাতিক্রম।কখনো প্রস্তাব পাইনি।ভবিষ্যতে পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখিনা।আমি দেখতে ভাল নই।গায়ের রংটি কাল।চোখে-মুখে সুশ্রীতা আছে কি না জানি না,তবে লোকে আমাকে সুন্দর বলে না।একবার একটা ছেলে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ‘কালী’ বলে মন্তব্য করেছিল।আমি স্রষ্টার দানকে মেনে নিয়েছি।তবে ইদানীং একটা দানা বাঁধতে যাওয়া অশোভন অনুভূতিকে কিছুতেই তাড়াতে পারছিনা।আমাদের দু’বছরের সিনিয়র এক ভাইকে মনে গেঁথে ফেলেছি।অনুভূতিটা অশোভন এ জন্য যে তাকে চাওয়াটা আমার মোটেই সাজে না।অসাধারণ সুদর্শন একটা মানুষ ফয়সাল ভাই।এমন সুদর্শন পুরুষ বাংলাদেশে খুব কমই দেখা যায়।নিজেই নিজেকে বকাঝাকা করি,তাকে তুমি সেভাবে চেনো না।মানুষ কেমন তা জানো না।শুধুমাত্র রূপ দেখে পাগল হলে হবে? মানুষ তোমাকে গায়ের রঙ-রূপের জন্য অবহেলা করে বলে এতদিন তাদের দুষেছ।আসল বর্ণবাদী তো তুমি নিজেই!ছোটবেলা থেকেই রোমান্টিক স্বভাবের মেয়ে আমি।কিছুটা ইঁচড়ে পাকা হওয়াতে প্রেম-ভালবাসার বিষয়গুলো ছোটতেই বুঝে ফেলেছিলাম।আমার রোমান্টিক ভাবনাগুলোকে উসকে দিতে কবি-সাহিত্যিকেরা তো আছেনই।তাদের কবিতা-গল্প-উপন্যাস পড়তে পড়তে ‘প্রেম’ নামক আরাধ্য বস্তুটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।কী সেই জিনিস যার স্পর্শে মানুষ রাতারাতি বদলে যায়,কী সেই অনুভূতি যা মানুষকে মাতাল করে তোলে ! এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি সেই অনুভূতির কাঁপুনি।একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেন ফয়সাল ভাই।তাকে প্রাণভরে দেখার আশায় সেটার সদস্য হয়েছি।সকাল-বিকাল সেখানে গিয়ে বসে থাকি।আমার কাজ দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করি।ফয়সাল ভাই আমার কাজে খুশি হন।মিষ্টি হেসে বলেন, ‘এতদিনে তোমার মত এ্যাকটিভ কাউকে পাওয়া গেল!’ ব্যাস,ওই পর্যন্তই।কথা আর এগোয় না।ফয়সাল ভাইয়ের দিকে আমার পলকহীন তাকিয়ে থাকা,তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা-এসব সংস্থার দু’একজনের নজর এড়োয় না।একদিন তিস্তা নামের মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘এই,একটা সত্যি কথা বলবা ?’
‘বল।’
‘তুমি কি ফয়সাল ভাইকে পছন্দ কর ?’
কী উত্তর দেব আমি! লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি।তিস্তা ধরে ফেলে ব্যাপারটা।
‘আমার সাথে শেয়ার কর।লজ্জা পাচ্ছ কেন ?’ কথাগুলো এতদিন পর্যন্ত আমার বুকের গোপণ কুঠুরীতেই তালাবদ্ধ ছিল।এবার আলো-বাতাস চাইল তারা।সরল মনে অকপটে বললাম ।পরদিন বুঝলাম তিস্তাকে জানানোটা ঠিক হয়নি।সংস্থায় ঢোকার সাথে সাথেই পলাশ বলে উঠলেন,‘এই যে ফয়সাল,দেখো, তোমার ফেভরিট মেম্বার এসেছে!’ একযোগে হেসে উঠল সবাই।ফয়সাল ভাই আর আমাকে জড়িয়ে ঠাট্টা শুরু হল।আমি হাসার চেষ্টা করলাম।কিন্তু পুরোটাই ছিল কৃ্এিম খুশির চেষ্টা।ফয়সাল ভাই বুঝে গেলেন আমি তাকে ভালবাসি।আমার সাথে কথা বলার সময় তার চেহারায়ও একটা প্রশ্রয় মাখা হাসি খেলে যায় সবসময়।আমি আশায় থাকি হয়ত ফয়সাল ভাই আমাকে ভালবাসবেন একদিন।হয়ত এই ‘কুচ্ছিত হাঁসছানা’টিকেই তার ভাললেগে যাবে।তার একটা সাধারণ কথাও আমার সারাদিনের উপহার হয়ে যায়।আমি ঘুরেফিরে বারবার রোমন্থন করি কখন কিভাবে তিনি ওই কথাটা বলেছিলেন।
খবরটা আমাকে তিস্তাই দিল-ফয়সাল ভাইয়া এ সংস্থার কাঁকনের সাথে প্রেম করছে!কাঁকনই প্রস্তাবটা দিয়েছিল।টুকটুকে ফর্সা পুতুল পুতুল চেহারার কাঁকন। এমন মেয়ের প্রস্তাব ফেরানো যায় না।ফয়সাল ভাইয়া হ্যাঁ বলে দিয়েছেন।তিস্তা এবার আমার পক্ষ নেয়।‘কাঁকন এমনটা কীভাবে করল বলত ? ও তো জানতই তুই ফয়সাল ভাইয়াকে কতটা পছন্দ করিস।’
আমি স্বাভাবিক থাকতে নিজেকে সান্ত্বনা দেই।বারবার এই গানটা শুনি-যদি আর কারে ভালবাস/ যদি আর ফিরে নাহি আস/ তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও / আমি যত দুঃখ পাই গো । ফয়সাল-কাঁকন জুটিকে অন্তরঙ্গ হয়ে ঘুরতে দেখি।হিংসার আঁচ টের পাই ভেতরে।বিধাতা আমাকে কেন অসুন্দররূপে গড়লেন ! বিধাতাকে তার একপেশে বিচারের জন্য দোষারপ করতে থাকি।তবু কেন জানি মনে হয় হয়ত ফয়সাল ভাইয়ের মনে আমার জন্যও একটুখানি জায়গা আছে।হয়ত সেটা খুব ছোট।কিন্তু আছে!ভালবাসার বিনিময়ে ভালবাসা পায় যারা তাদের আর বিশেষত্ব কী ! কিছুই না পেয়েও ভালবেসে গিয়ে আমি নাহয় মহত্তের তকমা গায়ে আঁটলাম!
এবারও খবরটা এল সংস্থার অঘোষিত স্পাই তিস্তার মুখ থেকে।ফয়সাল-কাঁকনের নাকি সময় ভাল যাচ্ছেনা।ঝগড়া-ঝাটি লেগেই আছে।কে জানে,ফয়সাল ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ালে আমার ভালবাসাও হয়ত আটপৌড়ে হয়ে যেত।ভালবাসার যে নিখুঁত ছবিটা আমি এঁকেছি তাতো আর বাস্তবে মিলত না।দুনিয়াটা তো নিখুঁত নয়।বাস্তবের ভালবাসার গায়ে চাওয়া-পাওয়ার টানাপড়েন,ঈর্ষা,অভিমান,স্বার্থপরতার কলংকের দাগ।আমার নিখুঁত ছবিটা কবেই হারিয়ে যেত !এসব ভাবতে ভাবতে ফয়সাল ভাইকে নিয়ে আমি আবার নিখুঁত ছবিটাতে ঢুকে যাই।
ভালো লেগেছে। কিছু কিছু জিনিস না পাওয়াই ভাল। পেলে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।
এটা কিন্তু শুধুই একটা গল্প ভাইয়া...আমার সাথে এর কোন মিল নেই।
ভাই কি কইসে তোর সাথে মিল আছে?বেশী বুঝস কেন?
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
হয়তো কিছুই নাহি পাব ...
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ভাল লেগেছে...
ভাল্লাগছে। নিয়মিত লেখার অনুরোধ থাকলো বইনডি 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
দোস্ত, ভালই লিখেছিস........চালিয়ে যা ......... 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
আপু তোমার হাসি দেখেই বোঝা যায় ঘটনা সত্ত।হা হা হা হা হা ..................
পিয়া, তোমার লেখার ধরনটা আমার খুব ভালো লেগেছে।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
ধন্যবাদ আপা 🙂
আমি কোথায় যেন এই কথাটি দেখেছিলাম --
সুন্দর লেখা। Keep it up 🙂
সুন্দর ছিমছাম লেখা পিয়া 🙂 বেশ ভাল্লাগলো ...
আদনান বলেছেন, "আমি কোথায় যেন এই কথাটি দেখেছিলাম –
মানুষ না হয়ে যদি ভালবাসার অনুভুতিটুকু হতে পারতাম! " লেখাটি পড়ে ভাল লাগল :goragori: :awesome: :goragori: । সামনে আরও ভাল লেখা পাবার অপেক্ষায় রইলাম......
বাহ।