ক্লাসে বসে থেকে অনেক কস্টে মিলানোর চেস্টা করছি যে আমি আসলে এখানে কি করছি(!) এমন সময় পাশে বসা ছেলেটা আচমকা জিজ্ঞেস করে বসল, “ভাই, আপনার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত কোনটা?”
কিছুটা সময় নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার জীবন! ক্লাস সেভেনে আনন্দের মুহূর্ত? বারবার জোর করে ষ্টেজে ওঠানো স্যার দের উপর চরম বিরক্ত হয়ে বলতাম “ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়া”
বিএমএ আর বিএনএ তে চাপের মুখে বলতেই হত “গ্রিন কার্ড পাওয়া”
অফিসার হওয়ার পর স্ট্যাটাস এর জন্য বলতে হত “যেদিন র্যাঙ্ক পড়িয়ে দিল বাবা মা”
কিন্তু আমার চেয়ে আর কে ভালো জানে, একটা শব্দ সত্য না। আমি ছেলেটাকে বললাম,
” ক্লাস সেভেনে আমাদের খুব কস্ট হতো জানো। সারা দিন সারা রাত আমি জানতাম ও না কি হচ্ছে আমার চারপাশে। ঐ অতটুকুন ১২ বছরের শরীরটা আর কত নিতে পারে! আমি ভেবেছিলাম আমার বাবা মা অবশ্যই আমায় কুড়িয়ে পেয়েছিল এখন শেষ পর্যন্ত ক্যডেট কলেজে পাঠিয়ে তারা দায়মুক্ত হয়েছে। মজা না সত্যি বলছি তিন মাসে আমার ছিল এটা সবচেয়ে দৃঢ় ধারণা।
এরপর প্রথম প্যারেন্টস ডে তে আমি মার সাথে কোন কথা বলতে পারি নাই। কেঁদেছিলাম অনেকক্ষণ, পুরোটা সময়। মা কি বলবেন ভেবে না পেয়ে, শুধু বুকে জড়িয়ে বসেছিলেন। কেঁদেছিলেন কিনা দেখি নাই। রাগে ক্ষোভে কস্টে আমি শুধু মাথা নিচু করে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছিলাম। প্যারেন্টস ডে শেষে ৩০৫ নাম্বার রুম, হ্যাঁ আমি ওই রুমে থাকতাম, সেই রুম থেকে কলেজের গেট দেখা যেত। অস্পস্ট তবে দেখা যেত। আমি জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ালাম। বেশ শক্ত তখন আমি। একটা চরম সিদ্ধান্ত সেদিনই নিব ভেবেছিলাম। যদি আমার মা ওই গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যায় তবে আমি তার সন্তান না। আর যদি একবারও ঘুরে তাকায় তবে আমাকে তারা ত্যাজ্য করেন নি আমি তাদের ছেলে……
সব বাবা মা চলে যাওয়ার পর আমার মা সেই গ্রিল ধরে টানা দুঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক স্যার পরে বলছিলেন তাকে কোনমতেই সেখান থেকে সরানো যাচ্ছিলনা। আমার মা আমার মা…”
কথা শেষ করতে পারিনাই তখন। কিন্তু এটা বোঝা কি খুব শক্ত একটা ছেলের জীবনে এর থেকে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে?!
আমার মা , আমার জীবন।
১ম
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাই?