কেমন আছি?

মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ থাকে।
আজ ঘুম ভেঙেছে ভেন্টিলেটরের বাসিন্দা চড়ুইপাখির কল্যাণে। ভোর ৫ টায়। সিলিং ঘেঁষে ওড়ার সময় প্রকৃতির ডাক সে এড়াতে পারেনি। ঠিক মুখের উপর পায়খানা করে দিয়েছে। ( পায়খানা বিষয়ক সিরিজ স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে মৌন প্রতিবাদ সম্ভবত)।
শীত- গ্রীষ্ম সবসময়ই মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর কল্যাণে পয়ঃনিষ্কাশিত বর্জ্যের আলিঙ্গন লেপের উপর দিয়ে গেলেও পূতিগন্ধময় নারকীয় দুর্গন্ধটা কিছুতেই এড়ানো গেল না। শুয়ে শুয়েই দিব্যদৃষ্টে দেখলাম পরীক্ষা শেষে রুমে এসে জ্বালিয়ে দিয়েছি চারটা ভেন্টিলেটর, দাউদাউ করে জ্বলছে জ্যান্ত চড়ুই,পটপট করে ফুটছে তাদের অস্থিসন্ধি।
উঠে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলাম। নিরীহ পাখিটার উপর কিসের প্রতিশোধ নিব আমি? ওর কি দোষ? হয়তোবা কুড়িয়ে খেয়েছে কোন দুষ্পাচ্য খাবার, খাবার সময় অলক্ষ্যে ঢুকে গেছে কোন ব্যাক্টেরিয়াম। ওদের তো স্যালাইন ও নেই, ফ্লাজিল ও নেই, আছে শুধু এক চিলতে আকাশ। মাফ শালাকে। বেচে গেলি হারামজাদা।
বছর পাঁচেক আগের কথা মনে পড়ে গেল। ঢাকা যেতে গিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তায়ই নেমে পড়তে হয়েছিল সেদিন। পাবলিক টয়লেটে গিয়ে বলেছিলাম “ভাই, ব্যাগটা একটু দেখবেন??! ” মোচ-টাকওয়ালা লোকটা কান চুলকে বলেছিল “সম্ভব না। ”
আমি বলেছিলাম “তাইলে বাড়িত লইয়া যান!”
আমি পারিনি সেদিন পার্থিব কোন বস্তুগত মায়ায় অমোঘ এ ডাক অগ্রাহ্য করেতে। চড়ুইটা না পারলে সমস্যা কোথায়?
৯ টা থেকে পরীক্ষা ছিল। অমূল্য দুটি ঘন্টা সময় পেয়েছিলাম। মিজাজ খারাপ ছিল,তাই পড়াশুনা করেছি ঠেসে।
ব্যাটা চড়ুই দেখি এখন ধন্যবাদেরও দাবিদার!

ইমোশনাল অত্যাচারে আছি। অতীত সংকটে বিপর্যস্ত বর্তমানে আছি। সামাজিকতার কাঠগড়ায় আসামি সাব্যস্ত হয়ে আছি। বিরাট যাতনা!
নিজের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির জঙ্ঘাদেশে স্যান্ডউইচ হয়ে আছি। চাই আবার চাই না।
পেতে চাই কিন্তু মূল্য দিতে চাই না। শ্রোডিঞ্জারের বিড়ালের মত!
প্রকৃতির ডাক জয় করতে পারে নি যে, উষ্ণ জঙ্ঘার আবেদন অগ্রাহ্য করার সাধ্য কী তার!? তাই মুখে বলছি চিপায় আছি আসলে চিপায়ই থাকতে চাচ্ছি। ভাল লাগে।

লোকে অস্তিত্ব সংকটে থাকে, আমি আছি অবস্থান সংকটে। ইদানীং অহরহই যে প্রশ্ন করি নিজেকে “এ কই আইলাম?!! ”
লেবু দোকানে লেবু কিনতে গিয়েছি, লেবু মামা কে বললাম “মামা! লেবুতে কি রস আছে? ” মামা বলল “রস ছাড়া লেবু আছে?”
মনে মনে বললাম ‘আছে,চিপপা রস বাইর করা লেবু ‘
পারি নাই। বললাম “কই আইলাম “?

কথাবার্তা ছাড়াই বৃষ্টি নামল কয়েকদিন। অযথাই মনটা উদাস হয়ে গেল। আবেগের দিক থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত এ হৃদয় এই ওয়েদারের নামও দিয়ে ফেলল “চা-সিগারেট” ওয়েদার। এই ওয়েদারে পার্কে নদীপাড়ে বসে থেকে চা দিয়ে সিগারেট খেয়ে সারাজীবন পার করে দেয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দেখা যেত পার্কে গেলে সিগারেট অর্ধেক খেয়েই মনে হত ‘ধুর বাল,হুদাই আইলাম। রুমে বইসা ঘুমাইলেও হইত!’
স্বপ্ন স্বপ্নেই ভাললাগে। মানুষ কত স্বপ্নই তো দেখে। বাস্তবে করে উল্টোটা।
মেয়েরা সারাজীবন রাজপুত্রের দিবাস্বপ্নে বিভোর থাকে। অথচ রাজপুত্রের আগমনের আগ পর্যন্ত অসুর সঙ্গেই তারা একাকীত্ব দূর করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই একাকীত্ব দূর করতে করতেই ভবলীলা সাঙ্গ হয়, বাকিদের কপালে হয়ত অধিকতর অসুর জোটে। রাজপুত্রের আর আসা হয় না। দিবাস্বপ্নও থেমে থাকে না। হঠাত যদি সত্যিই রাজপুত্র এসে পরে তাহলে কেমন লাগে এটা জানার কিউরিওসিটি থেকেই হয়ত এই বিলাসিতা চলতে থাকে!

রুমে আসার পথে তাওহীদের সাথে দেখা, সে বলল “খাটো হইয়া যাইতেছ নাকি ভাই? পরীক্ষার চাপে? ”
পরীক্ষার চাপে কিনা জানি না,তবে খাটো হয়ে যাচ্ছি, ছোট হয়ে যাচ্ছি, কুঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি শীতার্ত কোন শিশ্নের মত। একদিন হয়ত বিলীন হয়ে যাব। স্বপ্নগুলো থেকে যাবে। নিষিদ্ধ ইচ্ছেগুলো থেকে যাবে। আফসোসগুলো থেকে যাবে। ঘূর্ণনরত মুদ্রার মত এপিঠ ওপিঠ করেই কেটে যাবে অলস বিকেলবেলা। কখনো জানা হবে না কেমন আছি!…..

১০ টি মন্তব্য : “কেমন আছি?”

  1. সামিউল(২০০৪-১০)
    ওদের তো স্যালাইন ও নেই, ফ্লাজিল ও নেই, আছে শুধু এক চিলতে আকাশ। মাফ শালাকে। বেচে গেলি হারামজাদা।

    লেখা অসম্ভব ভাল লাগলো। তবে খুব চাপে আছেন বোঝা যাচ্ছে।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।