[বিঃ দ্রঃ সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা 😛 ]
এক্স ক্যাডেট হওয়ার প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেছে। কলেজকে আগের মত এখন আর মিস করা হয়না, মাঝে মাঝে আশপাশের কিছু কিছু ঘটনায় কলেজের কথা খুব বেশী মনে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে বৃহস্পতিবার রাতে ডিভিডি শো গুলোর কথা মনে পড়ে, কিংবা বাস্কেটবল গ্রাউন্ড দেখলে কলেজের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডটাকে খুব মিস করি। মনে পড়ে ক্লাসে কিংবা প্রেপে দোস্তদের সাথে আড্ডা কিংবা ফাজলামির কথা, কিংবা রাত জাগতে গিয়ে মনে পড়ে হাউজের বারান্দায় বসে আকাশ-পাতাল চিন্তা করার কথা।
হঠাৎ একদিন মাথায় ভূত চাপলো যে,কলেজে ঘুরতে যাবো। সেই শেষ রি-ইউনিয়নের সময় গিয়েছিলাম, তারপর আর যাওয়া হয়নি। ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ ছিলো না, কলেজ থেকে বের হওয়ার পর সবাই যার যার মত বিজি হয়ে যায় নিজেকে নিয়ে……বা যারা কলেজে যেতে ইচ্ছুক, তাদের সাথে আমার সময় মিলেনি হয়তো। কলেজে যাওয়ার জন্য সঙ্গী খুঁজছিলাম, কিন্তু এবারো দুর্ভাগ্যবশত কাউকেই ঐ সময় ফ্রি পেলাম না। কিন্তু এবার আমি নাছোড়বান্দা; যত যা-ই হোক না কেন, আমি দরকার হলে একাই কলেজে গিয়ে ঘুরে আসবো।
নির্দিষ্ট দিনে বের হয়ে পড়লাম কলেজের উদ্দেশ্যে। বাসে যেতে যেতে কলেজের কত স্মৃতি মনের মাঝে খেলা করছিলো, তা হয়তো আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না। যখন কলেজের ফার্স্ট গেটে গিয়ে পৌছালাম, তখন মন চাচ্ছিলো দৌড়ে কলেজের ভিতর ঢুকে যেতে। যাই হোক, কলেজের ভিতরে ঢুকলাম……একাডেমিক ব্লকের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম মাত্র মিল্ক-ব্রেকের টাইম হয়েছে, সব ছেলেরা হই-হুল্লোড় করতে করতে ক্লাসরুম থেকে বাইরে বের হচ্ছে। নিজেদের সময়ের কথা মনে পড়ে গেলো খুব, খুব খারাপ লাগছিলো তখন।
হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ালাম সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে, যে গাছের নিচে জুনিয়র লাইফের অনেকদিনই প্রেপের আগে ব্যান্ড পজিশনে থাকতে হত আমাদের। আমার সামনে দিয়ে ছেলেরা যাচ্ছিলো সবাই; স্টাফরা বাঁশি বাজাচ্ছেন, ছেলেদের ফল-ইন করানোর জন্য তাড়া দিচ্ছেন। একে একে সব ক্লাসগুলো ফল-ইন করে মিল্কব্রেকের জন্য ডাইনিংয়ের দিকে যাওয়া শুরু করলো। ডিউটি মাস্টার স্যারকে দেখলাম দূরে, সবার পিছনে আসছেন। তিনি আর কেউ না, আমার বাবা…আমার আপন বাবা!!!
বলা হয়নি সবাইকে, বাবা ক্যাডেট কলেজের চাকরী নিয়েছেন কিছুদিন হল। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই জানি না আমরা; জাস্ট একদিন বাবা আমাদের সবাইকে জানিয়ে চলে আসলেন কুমিল্লাতে, একা একা। এখন দেখলাম বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছেন এখানে! দেখলাম তিনি স্টাফের সাথে কথা বলে যাচ্ছেন ডাইনিং হলের দিকে। আমার মাথায় ভূত চাপলো, ডাইনিং হলে আজ ক্যাডেটদের সাথে মিল্ক ব্রেক করবো। হাঁটতে লাগলাম বাবার পিছে পিছে, একটু দূরত্ব রেখে।
হাঁটতে হাঁটতে দেখছিলাম আমার প্রিয় কলেজকে। সেই আগের মতনই আছে সবকিছু। ছোট্ট পাহাড়ের উপর সেই “জ্ঞানই আলো” লেখাটি, অপরপাশে সেই বিশাল বড় মাঠ, সাদা-কালো ডোরাকাটা রঙ করা গোলবার, মাঠের সেই অর্ধ-সবুজ ঘাস, মাঠের চারপাশের বড় মেহগনি গাছ – সবই আগের মতই আছে……মনে হচ্ছে আমি নিজে এখনও সেই ৩ বছর আগের লাইফটাতেই আছি, সেই আগের মতই ক্লাস শেষে ডাইনিং হলে খেতে যাচ্ছি। রাস্তার ধারে সামনেই স্টাফদের কোয়ার্টার, তার পাশে ধোপাবাড়ি, তার পাশে হাসপাতাল – নাহ, কোন পরিবর্তন নেই কোথাও। হাসপাতালের সামনে থেকে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের উপর ডাইনিং হলটাতে ক্যাডেটরা যাচ্ছে গল্প করতে করতে, কোলাহল-হাসাহাসির শব্দও শুনলাম দূর থেকে।
ডিউটি মাষ্টারের পিছে পিছে আমিও উঠে এলাম ডাইনিং হলে, একটু তাড়াতাড়ি করে ঢুকে গেলাম আরেক দরজা দিয়ে। নাহ, আমাকে কেউই দেখেনি-না ডিউটি মাষ্টার, না কোন স্টাফ, না বাটলার ভাই। তাড়াতাড়ি করে তিতাস হাউসের ৭ নং টেবিলে আমার জায়গাটায় গেলাম, এবং অবাক হয়ে দেখলাম আমার টেবিল লিডারের জায়গাটা এখনও খালি! খালি জুনিয়রগুলা একটাকেও চিনলাম না……স্বাভাবিক, ৩ বছর আগে এক্স ক্যাডেট হয়ে গেছি, আর এখনও সব জুনিয়রদের চেহারা মনে রাখবো কিভাবে। বেল বাজলো, “ক্যাডেটস, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” শুনলাম, দূরে দেখলাম ডিউটি মাষ্টার রাউন্ড দিচ্ছেন। আমি আমার পাশের জুনিয়রটাকে জিজ্ঞেস করলাম, “এই স্যারটাকে চিনো?” “না ভাইয়া।” “উনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের টিচার, আমার বাবা……” বলতে না বলতেই কাঁধে কার হাতের স্পর্শ পেলাম। দেখি আমার বাবা, আজকের ডিউটি মাষ্টার আমার পিছে। “এই তুমি এখানে কেন……এই বাটলার, একে কে ঢুকতে দিয়েছে……এই এই……” ………………………
বাবার ধাক্কাধাক্কিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার, “সারাদিন ঘুমালে কি হবে? বিকাল হয়ে গেছে……এখনি তোর স্টুডেন্টরা আসবে।” ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর আমি কিছুক্ষণ হতবুদ্ধির মত শুয়ে ছিলাম, কি দেখলাম এটা ভেবে। আসলেই, মাঝে মাঝে আমার ফেলে আসা কলেজকে আমি আসলেই মিস করি!!!
দারুন স্বপ্ন 🙂 প্রতিটা এক্স ক্যাডেটই মনে হয় জীবনে একবার হলেও কলেজ নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
কেন যে বাবা ডাক দিলো :((
দুর্দান্ত!
আমি তো সত্যিই ভাবলাম তোমার বাবা জয়েন করেছেন ক্যাডেট কলেজে।
ভাইয়া, আমার বাবা না, মা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লেকচারার......কেন বাবাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলাম আল্লাহই জানেন 🙂
আহা স্বপ্ন বিষয়টা আমার বিশেষ পছন্দের। যদিও স্বপ্ন দেখে গত মাসে পায়ে ব্যথা পেয়েছি। গত পরশু স্বপ্ন দেখলাম শীতের সকালে কুয়াশার মাঝে পিটির ফল-ইনে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি। ঘুম ভাঙার পরে দুটো কথা মাথায় আসলো, ১) পিটি ও ২) শীতের কুয়াশাঃ এই উদ্ভট রকমের স্পেসিফিক স্বপ্ন কেন দেখলাম!
লেখাটা চরম লাগলো! :thumbup:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
স্বপ্নের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ওটাকে উদ্ভট হতে হবে 😀
আমারতো হিংসাই লাগা শুরু করতেছিল একটা পর্যায়ে। ভাগ্য ভাল স্বপ্ন ছিল 😛
• জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •
হ......আর স্বপ্নটা ভাঙ্গার পরে আমার যে কষ্ট লাগছে, ওইডা কি? 😕
ধুর মিয়া... এইটা স্বপ্ন না বলেই তো চালায় দিতে পারতা 😛 ভালো ছিল।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ধন্যবাদ ভাইয়া 😀
:clap: :clap: :clap:
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
😀 😀 😀