ফেসবুক ও টিয়াপাখি
‘তোর সঙ্গে আর কথা নেই’ ফেসবুক মেসেঞ্জারে পৃ-র বারতা পেয়ে একটু নড়েচড়ে বসলাম। ঢাকার ফুরফুরে বিকেল মুহূর্তে কেমন ম্লান হয়ে আসে।
‘কথা নয় নেই, দেখা তো হোক!’
‘কোন কথা নেই। নেই, নেই!’ যেন ফুঁসে উঠে সেলফোন।
বারদুয়েক ফোন করি অতএব, সাড়া মেলেনা। অজ্ঞাত অপরাধের হিসেবনিকেশ করতে করতে ঢাকার বুকে নেমে আসি। এ বিশাল জনসমুদ্রে নিজেকে আরো একা মনে হয় আর তাতে স্বস্তিবোধই করি খানিক। ফুটপাত ধরে এগিয়ে যেতে একজন টিয়াপাখিঅলা চোখে পড়ে — পাখি নয়, ভাগ্য বিক্রেতা। কি খেয়ালে একটু কৌতূহল দেখাতে আমাকে খপ করে লুফে নেয় মানুষটা। রঙবেরঙের খামের পরে টিয়াকে নামিয়ে দেয় ঝটপট।
পাখিটিকে নবাবী ভঙ্গিতে চলতে দেখে বেশ লাগে। থেমে থেমে, আলতো করে লাফিয়ে শেষে একটা নীলবর্ণ খাম পেয়ে যায়।
‘দেখেন স্যার, খুইলা দেখেন কি লেখা!’
আরে! খুলেই দেখি অভিনব এক পদ্য তাতে —
তোতাপাখি কুতকুত খাম থেকে খামে
তোতাপাখি পায়পায় কোনখানে থামে!
লালঠোঁটে ঝুলে দ্যাখো ললাটের লেখা
রত্নগুণে মুছে যাবে অলক্ষুণে রেখা
তাহাকেও পেয়ে যাবে না পাইতে যারে
এই শ্লোক গাঁথো যদি হৃদয়-মাজারে;
খাম তুমি যাও উড়ে রজকিনী-ঘাটে
চণ্ডীদাসের বারোবর্ষ যেইখানে কাটে
লালঠোঁটে নীলকথা কও কানেকানে
নয়নেরা ভেসে যাক নয়নের পানে
পাখি তুমি সন্তর্পণে দৃশ্য ফ্রিজ করো
ফুটপাতে চণ্ডীদাস জ্বরে মরোমরো।।
দৃশ্য ফ্রিজ করো
মসজিদে ততক্ষণে আজান হচ্ছে। বাবার হাত ধরে থাকা শিশু হাওয়াই মিঠাইঅলার পানে করুণ তাকাতে তাকাতে রাস্তা পার হয়। ঘ্যাঁস করে বাস এসে দাঁড়াতেই ঘরফেরতা মানুষের কাছে সেটাই যেন ঘরের চেয়েও মূল্যবান কিছু হয়ে ওঠে। আমি তখন বিশাল বিলবোর্ডের দিকে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি পৃ। ইশারায় বলছে — ‘কথা নেই, কথা নেই। তবে দেখা হতে পারে।’ এমন উদ্ভট হ্যালুসিনেশনে আরো বিষণ্ণ হয়ে গিয়ে সেলফি তুলি – একবার বিলবোর্ডসহ, একবার টিয়াপাখির সঙ্গে।
টিয়াপাখিঅলার পাশেই ছিল এক স্ট্রবেরিঅলা। জোর করে এক পলিথিন স্ট্রবেরি গছিয়ে দিলো আর বললো লবণ মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খেতে। সারা ঢাকা শহরকে অভিসম্পাত করতে করতে বাড়ি ফিরে আসি।
কেবল কথাই তো এখন অনন্য অমৃত
আলো জ্বালাবার আগেই দেখি সোফা আলো করে মহারাণী বসে আছেন! স্ট্রবেরির পলিথিন এককোণে ছুঁড়ে ফেলে একছুটে গিয়ে ওকে ছুঁয়ে দেখি সত্যি কি না। মানবী তখন খিলখিল করে হেসে ওঠেন, ঘরময় আরো হাজার ওয়াটের আলো জ্বলে ওঠে।
‘আজ কী ড্রিঙ্ক খাওয়াবি?’
‘আজ কোন ড্রিঙ্ক নেই। কোন ড্রিঙ্ক নেই’ — বলতে বলতে আমার প্রস্তুতি শুরু করে দিলাম।
স্ট্রবেরি ৪ টা। অর্ধেক করে কেটে নেয়া
লেবু ১/২ টা। আনুমানিক ৪-৬ টুকরো করে নেয়া (খোসা সহ)
চিনির সিরাপ ২৫ মিলি
Smirnoff ভদকা ৫০-৬০ মিলি
Cointreau liqueur ২৫ মিলি
লেমনেড ২৫ মিলি
স্ট্রবেরি, লেবুর টুকরোগুলো আর চিনির সিরাপ গ্লাসে নিয়ে ভালো করে থেঁতো করে নিলাম যাতে নির্যাস ভালো করে বেরিয়ে আসে। তারপর পরপর ভদকা, Cointreau আর লেমনেড ঢেলে পাঁচ-ছটা আইসকিউব দিয়ে Shaker এ আচ্ছা করে ঝাঁকিয়ে (Shaker এর গা বরফশীতল না হওয়া পর্যন্ত) নিলাম। ব্যাস, রেডি হয়ে গেল স্ট্রবেরি ভদকা লেমনেড!
পৃ-র গেলাস থেকেই
দী-ঈ-র্ঘ চুমুক দিয়ে
ওর চোখে চোখে রেখে আওড়ে উঠলাম —
জঙ্ঘার নীচে গুটিয়ে সনখ সুন্দর দুটো পা,
বাম হাতে খুলে দিলে খোঁপা —
যেন এক জাহাজডুবির পর নোনাজলে ভাসছি সারারাত,
সুদীর্ঘ চুলের রশি ছুঁড়ে দিলে তুমি অকস্মাৎ
তারপর দু’চোখে সাগর ডেকে বললে, ‘অ-বি
রা-ম তোমার জন্ম হয়। তুমি কবি।।’
প্রথম কবিতা ঃ সিসিবিতে বছর ছয়েক আগে প্রকাশিত
দ্বিতীয় কবিতাংশ ঃ সৈয়দ শামসুল হকের ‘এক আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি’ থেকে
একব্লগেই নারী, শুরা, দর্শন সুখ ও শ্রবন সুখ সবই আছে দেখছি?
এক্কের জম্পেশ।
চনমনে হয়ে উঠলো চারপাশটা......
ব্যক্তিগত রেসিপি – ১২র অপেক্ষায় থাকলাম!!
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
পারভেজ ভাই,
আমার এই সিরিজ তো সুরা আর প্রেম নিয়েই। 😀
সেই জন্যই তো আবার অপেক্ষা.....
পড়ার সময় ঐ গানটা কানে বাজে -
"চোখে চোখ রেখে আমি সুরা পান করি...."
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
এই যে দিয়ে দিলাম:
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂
:thumbup: :thumbup:
ছয় বছর আগের লেখা তোতাপাখি কুতকুত খাম থেকে খামে, অভিমানী পৃ, স্মিরনফ অথবা হক সাহেবের কবিতা.... কোনটা ছেড়ে যে কোনটার কথা বলবো, বলো! আবার ফিরে আসতে হবে পড়তে।
ফিরে এসে বোলো কেমন লাগলো। 🙂
একখানা অডিও ব্লগে এবার পৃ দিদিমনিকে নিয়ে এসো, নূপুর। দিন শেষে প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে গান শুনবে অবর্াচিন যুবক। অথবা লিচি মাটর্িনির গেলাস হাতে পড়া যেতে পারে আবিদ আজাদের কবিতা!
হা হা। না না, অডিওতে এত নাটক পোষাবেনা।
প্রথম পদ্যটি পড়ে প্রীত হ'লাম।
"তোতাপাখি কুতকুত খাম থেকে খামে" - বাল্যকালে ঢাকায় পথচলার সময় পাদপথে বসে থাকা টিয়াপাখিওয়ালার সামনে ভীড় করা কিছু বিমর্ষ মুখের হস্তগণনার আকুতিমাখা চোখমুখ দেখে অবাক হ'তাম, ওরা এসবে বিশ্বাস রাখে কি করে!
"লালঠোঁটে ঝুলে দ্যাখো ললাটের লেখা" - বিশ্বাসে স্বর্গ মেলে...
অশেষ ধন্যবাদ খায়রুল ভাই আপনার পাঠপ্রতিক্রিয়ার জন্যে ।
লুৎফুল ভাইয়ের মন্তব্যের জবাবে কিছুটা লিখেছি এ-লেখার গল্পটুকু।
এগারো নম্বর দিয়ে শুরু
অনুভূতির ঘণত্ব কোয়েন্ট্রোর সমান পুরু
আর সেই তোতাপাখী বলেনি আজো
প্রিয়াকে বলা যেতো কি সাজে সাজো
লেমোনেড স্ট্রবেরীতে ভদকা যতোটা হারালো রং
সখ্যতা সান্নিধ্যে ততোটাকি মিশেছিলো ঢং ! (সম্পাদিত)
:boss: :boss: :boss: :boss:
লুৎফুল ভাই,
ফুটপাতের এ গল্পের পেছনের গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং! গল্পের নায়ক আমারি ব্যাচমেট -- বয়স কত হবে তখন? ১৯ কি ২০! বেচারা প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে খুব মনঃকষ্টে ছিলো। একদিন চট্টগ্রামে পথ চলতে চলতে গণক টিয়া দেখে আমাকেও টেনে নিয়ে গেলো সেখানে। অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দেখছিল তার ভাগ্যে কী লেখা রয়েছে। অবিশ্বাস্য চোখে ওর এ নির্ভরতা দেখছিলাম --- মায়াও হচ্ছিল। বেচারা! টিয়াপাখিও ওর জন্যে ভালো কিছু তোলেনি সেদিন। অবশ্য তাতে ওর ভালোই হয়েছিল। ভালোবাসার অবাস্তব ভুত চিরতরে পালাতে সাহায্য করেছিল। আমার মাথায় বহুদিন এ দৃশ্য চেপে থাকার প্রায় ৭/৮ বছর পর শেষমেশ এ লেখার জন্ম। সেও তো আজ এক যুগের ওপর হয়ে এলো।
তোমার এ গল্পের প্রেক্ষিতে আমার মনেও এক চেনামুখ ভেসে উঠলো। সেও এক ক্যাডেট, বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও 'বেচারা প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে' গণকের স্মরণাপন্ন হয়েছিলো। তবে টিয়া পাখির কাছে নয়, স্বনামধন্য প্রফেসর হাওলাদার সাহেবের কাছে। ফলাফল একই, তিনিও 'ওর জন্যে ভালো কিছু' বলতে পারেন নি এবং তাতে ওরও 'ভালোই হয়েছিল'। অদ্ভূত মিল!
🙂 🙂
হা হা।
লেখা সুস্বাদু হয়েছে।
রেসিপির গুণাগুণ যাচাইয়ের যোগ্যতা নাই 😀
রেসিপি গুণসম্পন্ন। 😀
টেস্ট করে দেখা।
এই লেখা আসলে সিরিজ চালু রাখার উদ্দেশ্যে। তাড়াহুড়োর ছাপ স্পষ্ট।
ভালোই রেসিপি চালিয়ে যাচ্ছেন।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শুধুই লেখায় সীমাবদ্ধ নেই।
😀 😀
ঘ্যাঁস করে বাস এসে দাঁড়াতেই ঘরফেরতা মানুষের কাছে সেটাই যেন ঘরের চেয়েও মূল্যবান কিছু হয়ে ওঠে।
লেখার এই সব শব্দ গুলি আমাকে যত টানে তার চেয়ে বেশি আর কিছু টানে না। তুমি পারোও বেশ। চমতকার
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
সাইদুল ভাই,
অনেকনেক ধন্যবাদ!
তোর কবিতাটা পড়ার পর থেকেই বহু বছর আগে তোলা এই ছবিটার কথা মনে হচ্ছিল। পেয়ে গেলাম আজ। তোতাপাখি নাই যদিও!
ওয়াও। কবেকার ছবি রে!
রেসিপি নিয়ে আর অভিযোগ, বক্তব্য কিছুই আর করা উচিৎ নয়। (location hazard) আপাতত বাকিটুকু ককটেল ভেবে চুমুক দিয়ে গেলাম! 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
বল কি। অভিযোগ, বক্তব্য সব বন্? তুমি কোন্ দেশে হে?
জননী বাঙলাদেশে! যদি রুই মাছের মুড়োর মত কেটে ঘন্ট বানায় তখন? কি দরকার কথা বলার? 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\