তেঁতুলগোলা পানিটার দিকে আমার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকা দেখে খিলখিল করে হেসে দিলো পৃ। ‘ভাই, আরেক প্লেট দেন।’
‘ভাইজানরে দিমু না?’ আমার বিরক্তিকে আরেক দফা উসকে দিয়ে জানতে চায় ফুচকাঅলা।
আমারো যদিও জিভে ভালো মতোই পানি চলে এসেছে, তবু প্রাণে ধরে সেটা স্বীকার করতে পারিনা আর। একবার না করে ফেলেছি, প্রেস্টিজ কে খসাবে।
পড়ন্ত বিকেলে একটা মস্ত লালমতন সূর্যকে আড়াল করে মুগ্ধ চোখে পৃ-র মুগ্ধতা দেখি, আমার ফুচকা খাওয়া লাগেনা।
পাশ দিয়ে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার একঝাঁক পতাকা পতপত করে উড়িয়ে চলে গেলেন এক বিক্রেতা।
পৃকে শুধালাম, আচ্ছা তুই কোন্ দলের সাপোর্টার?
‘কেন, ইতালী?’
‘কোন কারণ?’
‘একঝাঁক সুদর্শন বালকের দুইঝাঁক সুদর্শন উরু আর ততোধিক নন্দনীয় ফুটবল-শৈলী!’
একটুও না ভেবে কঠিন কঠিন শব্দের এমনতরো বয়ানে আমার মুখে মাছি ঢুকে যাবার জোগাড়। ‘বুঝেছি ফুটবলের তুমি কিছুই বোঝনা। খালি সুন্দর ছেলে খোঁজো।’
‘আর তুমি? তুই কেন ব্রাজিলকে সাপোর্ট করিস বুঝিনা মনে করিস? খেলার মাঠের থেকে তো গ্যালারির কোণে কোণেই চোখ দুটোকে বেশি ব্যস্ত রাখতে দেখেছি গেলোবার — এই বুঝি উদ্দাম সাম্বা মিস হয়ে গেলো।’
‘পাঁচ পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো বুঝি গ্যালারি জুড়ে সাম্বা নেচে নেচেই! গারিঞ্চা পেলে জিকো সক্রেটিস জিকো ক্যারেকা রোমারিও বেবেতো রোলাল্ডিনহো রোনাল্ডোরা বুঝি এমনি এমনি জন্মেছে সেদেশে? বাহ্ পৃ বাহ্!’
‘আসলে জানিস তো, ব্রাজিলের খেলার আমিও খুব ভক্ত। কিন্তু ব্রাজিলের ম্যাচ দেখতে বসে টিভির কোণায় স্কোরকার্ডে সংক্ষিপ্ত নামটা দেখেই কেন জানি প্রচন্ড হাসি পায়।
‘মানে?’ দু’ সেকেণ্ডের জন্যে বোকা বনে গিয়ে পরক্ষণেই ‘হা হা হা হা’- হাসিতে আমার পেট ফেটে যাবার যোগাড় হয়,’ফুচকাঅলা ভাই, তাতারি আরেক প্লেট দ্যান আপনার আপারে।’ উফফ্!
আজ দুপুরে বেশ বৃষ্টি হয়ে গিয়ে হাওয়াটা কেমন ফুরফুরে মেজাজে বইছে। অফিস থেকে প্রায় কান ধরে বার করে শহরের এই প্রান্তে এনে আমাকে ফুচকা অবসর কাটাতে বাধ্য করছে পৃ। কিন্তু কোন কথা খুঁজে পাইনা সত্যি। কি এত ভাবছি জানতে চাইলে বললাম, চ’ এবারের বিশ্বকাপটা একসঙ্গে দেখি দুজনায়, যতটা পারা যায়।
শুনেই ঠোঁট উল্টে সে বলে, এসব কথা গতবারো বলেছিলি। কিন্তু বন্ধুবান্ধব ছাড়া নিরিবিলিতে বিশ্বকাপ দেখার মানুষ কি তুই? আর আমিও তো ভোঁসভোঁস করে ঘুমাবো। তার চে’ ভাই-ব্রাদারদের সঙ্গেই তোর খেলা দেখাটা জমবে বেশী। এ্যালার্ম দিয়ে নিয়ম করে ঘুম ভাঙবে সবার – হৈ হৈ করে চা কফি খাওয়া হবে, মাঝে মধ্যে মদ্যপান – মন্দ কী? পুরো একটা মাস আমার সময় কাটবে তোকে গালাগাল দিয়ে,আমাকে তুই একটুও মিস করবি না।
খানিকটা বিষণ্ন হয়ে পড়লেও পৃ-র কথাগুলো অস্বীকার করবো সে উপায় কই। কেবল বললাম, একটা দুটো ম্যাচ তো তুই আমাদের সবার সঙ্গে দেখতেই পারিস তাই না?
‘তা তো পারিই, আমার ইচ্ছে হলে হয়’ ইনিয়ে বিনিয়ে এড়িয়ে যায়।
হঠাৎ কী মনে হতে খপ করে ওর হাতটাকে টেনে মুঠোর ভেতর নিয়ে আসি। কানের কাছে মুখ নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলি
না হয় না-ই হলো
কিছুদিন
অকারণ
রাত্রি জাগরণ –
সুগোল চাঁদ নয়
ক্ষয় পেলো
কিছুটা সময়,
আরো কিছুদিন
প্রতীক্ষার
অসহ জারণ।
বেপরোয়া
সেলফোন
জানবে
লুব্ধ বারতায়
চুম্বন পারাপার,
কান্নার
যেখানে
সবিশেষ
বারণ!
ধুস্!কাব্য করতে গিয়ে আরো মনভার করা কথা বেরিয়ে আসে, কোন মানে হয়! বললাম, চল্ আজকে একটা স্পেশাল ড্রিংক খাওয়াবো তোকে। ওয়ার্ল্ড কাপ স্পেশাল।
সহসাই মুখচোখ চকচক করে উঠলো পৃ-র, সেটা কি রকম?
সেটা যথাসময়ে প্রকাশ্য। বলেই ফুচকাঅলাকে ভচকে দিয়ে খপ করে একটা চুমু পেড়ে ফেললাম পৃ-র ঠোঁট থেকে। তারপর উড়াল দিলাম আমার ডেরায়।
আমার প্রিয়দলের খেলা উপভোগ করবো বলে আগেই কিছু জোগাড় যন্ত্র করে রেখেছিলাম, না হয় পৃ-র সম্মানে আজই তার উদ্বোধন হোক!
আজকের ড্রিঙ্কটি হচ্ছে ব্রাজিলের জাতীয় ককটেল, নাম ক্যাপিরিন্হা। মূল উপকরণ হচ্ছে Cachaça বা কাশাসা (আখের রস চোলাইকৃত মদ), ব্রাজিলিয়ান রাম হিসেবেও পরিচিত।
ক্যাপিরিন্হা ব্রাজিলে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় বহুকাল থেকেই, তবে ইদানিং বিশ্বব্যাপী বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
উপকরণ:
Cachaça 51: ১.৫ আউন্স বা ৫০ মিলি
চিনি(ব্রাউন হলে ভালো): দু’ চা চামচ
লেবু: অর্ধেকটাকে চার ফালি করে কেটে নেয়া এবং একটা গোল স্লাইস সাজানোর জন্যে
আইসকিউব
প্রথমে লেবুর আস্ত ফালিগুলো আর চিনি নিয়ে একসঙ্গে গ্লাসে নিয়ে ভালো করে পিষে নিলাম যাতে করে লেবুরস ভালোমতো বেরিয়ে আসে। চিনির দানাগুলোকে পুরোপুরি গলে যেতে দিতে দেবো, প্রয়োজনে চামচ দিয়ে একটু গুলে দিলাম। তারপর আইসকিউব দিয়ে গ্লাস ভরে দেয়া। সবশেষে Cachaça ঢেলে ভালোমতো মিশিয়ে নেয়া shaker দিয়ে অথবা চামচ দিয়ে নাড়িয়ে।
তারপর গ্লাসের কিনারায় লেবুর গোল স্লাইসটা এঁটে নিয়েই পৃ-র উদ্দেশ্যে চেঁচালাম —
Nossos copos estão prontos! অর্থাৎ আমাদের পানপাত্র প্রস্তুত!
ছুটে এসে একটা ছোট দ্বিধান্বিত চুমুকের পরেই আরেকটা দী-ই-র্ঘ চুমুক দেয়া দেখেই বুঝে নিলাম কেমন হয়েছে ককটেলটা। আনন্দের আতিশয্যে বিশ্বকাপের থিমসংটাই বাজিয়ে দিলাম ইউটিউব থেকে,পিটবুল আর জেনিফার লোপেজের উন্মাদনা আমাদের মধ্যেও একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করছে। আকাশে তখন প্রায় গোলাকার বিশাল চাঁদ উঠে এসেছে — একটা লম্বা চুমুক দিয়ে আমিও চিতকার দিয়ে উঠলাম — গো-ও-ও-ল!
অনেক দিন পর ব্যক্তিগত রেসিপি! :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ইতালীর ছেলে লরেঞ্জো পড়ছে আমাদের সাথে। গত সেমিস্টারে এসেছে। ফুটবল শৈলীর খবর জানি না তবে বাকি দুই উপমা কিন্তু খাপে খাপে মিলে! 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
😀 😀
পড়তে পড়তে অন্য একটা জগতে চলে গেলাম...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂
অনেক ধন্যবাদ পারভেজ ভাই।
:clap: :clap: :boss: :boss:
Brazil, everybody put your flags in the sky and do what you feel...
🙂 🙂
প্রেমের মধ্যে খেলা, নাকি খেলার মধ্যে প্রেম???
যেটাই হোক, অসাধারণ!! বরাবরের মতই....
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
অসংখ্য ধন্যবাদ সামিউল।
তোমার লেখা কই?
অসাধারন নূপুরদা। রোমান্স, ফুটবল সাথে রেসিপি, আর কি চাই!
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
অনেক ধন্যবাদ আকাশ।
এ লেখাটা ঠিক এই লেখালেখি উৎসবের শর্তগুলোর সাথে যায় কি যায় না অতশত না ভেবেই লিখে ফেললাম। সত্যি বলতে কি, ক্যাপিরিনহার নাম আগে শুনিওনি, চেখে দেখা ত দূরে থাক।
নেট ঘেঁটে জানতে পারলাম, ব্রাজিলের জাতীয় ককটেলের কথা। তাই এটা নিয়েই এবারের রেসিপি পর্ব। এজন্যে আগে নিজে বানিয়ে খেয়ে দেখলাম জিনিসটা কেমন। সত্যি অসাধারণ। আমাদের দেশের গরমের দিনের জন্য আদর্শ ককটেল হতে পারে।
Cachaça খুঁজে পেতে অবশ্য হালকা ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে। আমার শহরে ব্রাজিলিয়ান বার খুব বেশী নেই। আর মদের দোকানেও খুব সহজলভ্য নয়। তবে Cachaça -র বদলে Vodka ব্যবহার করলেও হয়, সেক্ষেত্রে এর নাম হয়ে যাবে Caipirissma । তবে সেটি আর ব্রাজিলের জাতীয় ককটেল থাকবেনা। তার সে ক্যারিশমাও থাকবেনা -- অন্তত আমার কাছে তো বটেই। 🙂
কাহিনী কি সত্যি নাকি নূপুরদা 😛
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
সে আর বলতে!
ব্রাজিলের খেলায় উদ্দাম গ্যালারিতে চোখ নিবদ্ধ করবোনা এমন বেরসিক বা সন্ত আমি কোনকালেই কি ছিলাম? 😀
রেসিপিটা সুন্দর 😀 😀
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
ধন্যবাদ হুমায়ূন।
ট্রাই করে দেখো যদি অ্যালকোহলে অনাপত্তি থাকে।
আমার গ্রামে নাই। গতকাল খুজেছি। আপাতত Caipirissma নিয়ে খুশি থাকতে হবে! 🙁
আখ থেকে তৈরী মদ, ভাবতেই তো ভাল লাগছে। ব্রাজিলিয়ান কেরু! 😛 😛
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
Daiquiri ও ট্রাই করতে পারো। মূল উপকরণ হচ্ছে Rum , বাকী সব এক।
তবে ক্যাপিরিনহা চেখে আর এটা সম্পর্কে পড়ে মনে হলো, এটা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পানীয় -- কেমন যেন মাটির কাছাকাছি।
সেটাই ভাবছি। ইথানল ও বায়োফুয়েল ইন্ডাস্ট্রির সদর দপ্তরে আখের রসের মদ জনসাধারণের পানীয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
হুয়ায়ুন অ্যালকোহলে আপত্তি আছে কি? 😉
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
হুমায়ুনের দারুতে অরুচি হলে আমি বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রী! :goragori:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
একে তো সরকার, তার উপর পিএম ও হইতে চাও 😛 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:pira: হাহাহাহাহাহাহা। এরকম আয়রনি বাঙলাদেশে ইতিহাসে হইতে পারলে নিশ্চিত পুলাপান এইটা নিয়া মজা লুটবে! :bash:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
হুমায়ূন তো উত্তরই দিলোনা! 😀
হুমায়ুন লজ্জা পাইসে! 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
Magnífico, splêndido, soberbo... B-)
চমৎকার, চমকপ্রদ, খাসা... 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
Obrigado!
আপনার রেসিপিগুলা ট্রাই করতে মন চায়। একে একে শুরু করে দিব। 😀
এই রেসিপি সিরিজ নিজেই একটা ককটেল :duel:
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
আ হা... কি শুনাইলা!
😀 😀 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
সিসিবিতে লগ ইন বেশ কিছুদিন পর। কঠিন রেসিপি ভাই।
🙂 🙂
ধন্যবাদ!
তোমার একটু আগের লেখাটা গেলো কই? মুছে দিয়েছো?
বিশ্বকাপ নিয়ে একটা লেখা দেবে?
লেখা টা ড্রাফটে ভাই। আরেকবার পড়তে হবে।
আর বিশ্বকাপ তো চার বছর পর পর হয় ভাই। এতো আগের কিছু মনে থাকে না আমার সচরাচর। ফুটবল জীবনে খেলিনি। আর যেটুকু খেলেছি সেটা কিছু লেখার মত যথেষ্ট না 🙁 (সম্পাদিত)
অ, আমার তো বেশ লাগলো। মন্তব্যে বলেছিলাম।
ফুটবলে আমিও ত মোস্তাফিজ ভাইয়ের ভাষায় দেখোয়াড়। 🙂
😀
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
আদ্যপান্ত :boss: :boss: :boss:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂 🙂 🙂
চল একদিন হয়ে যাক!
এত দিন এর অপেক্ষাতেই ছিলাম ভাই...
:thumbup: :thumbup: :boss:
🙂
সম্মানিত বোধ করছি মুয়াজ।
তোমার লেখা চাই।
সহমত 😛 =))
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
হা হা। 😀
:grr:
সাবাস নূপুর । রথদেখা কলা বেচা দুটোই হল :boss:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
Brazil by Vengaboys
বেপরোয়া
সেলফোন
জানবে
লুব্ধ বারতায়
চুম্বন পারাপার,
কান্নার
যেখানে
সবিশেষ
বারণ! 😉 :shy: 😡 :dreamy:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
আপনের রাত জেগে খেলা দেখার পারমিশন আছে তো? 😉