নাহ্ আর ভাল্লাগছেনা এত কাজ। সিগারেটে টান দিতে দিতে ঠিক করে ফেললাম, ক’দিনের জন্য অফিসের খাঁচা থেকে উড়াল দিতে হবে। এই আঠার তলা থেকেও আকাশটাকে যে কেন এত দূরের বলে মনে হয়!
মনটা কি আজ উড়ুউড়ু হয়ে আছে? লাঞ্চটাইমে নিশা ডাগর আঁখি মেলে জানতে চাইলো, আপনার কি মন খারাপ?
না মেজাজ খারাপ।কাজ যেটা দিয়েছিলাম হয়ে গেছে?(আমার মন খারাপের দিস্তা তোমারে মাপতে কে কইলো লক্ষীছাড়া?)
এখন ভোর সাড়ে চারটে। নতুন একটা প্রজেক্টে ফেঁসে গিয়ে ক’দিন ধরে অফিসেই দিবস রজনী কাটছে।।মনিটর থেকে চোখ দুটোকে একটু রেহাই দেবো বলে বারান্দায় এলাম, ঠাণ্ডা হাওয়ায় জুড়িয়ে গেলো। পৃ কি করছে এখন? নিশ্চয়ই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে আর হিজিবিজি স্বপ্ন দেখছে। ভীষণ হিংসে হলো। হঠাৎই মনে হলো ওর সংগে কতদিন কথা হয়নি। কি সব নিয়ে যেনো ছুটোছুটি করছিলো।
ফোন করা যাক।
অবাক ব্যাপার, একবার রিং হতেই হ্যালো!
কি রে ঘুমোসনি?
না।
কেনো?
ভাল্লাগছিলোনা।
কেনো।
এক্ষুণি আমাদের দেখা হতে পারে?
এক্ষুণি?
হুম্ এক্ষুণি।
ভেতরে আয়।
দরজা খোলার পর পৃ-কে দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম। চোখ দুটো ফোলা ফোলা। সারারাত কাঁদছিলো কি?
ভেতরটা ভোরের বাতাসের মতো হু হু করে উঠলো। কি হয়েছে সোনা?
ধরা গলায় বললো, সেই কবিতাটা একবার শোনাবি?
কোন কবিতা কি কবিতা বোঝা আগে ও নিজেই আপনমনে বলতে শুরু করে দিলো।
মনে পড়ে প্যারিসে সূর্যোদয়?
বিনিদ্র রাতের সমস্ত কথোপকথন
কখন যেনো পিলপিল
পালিয়েছে রাস্তায়,
মিঠে আলোয় তখন ভোর ফুটছে
পল সেজানের আপেলের মতো।
রাঙা হয়ে…
আমরা তো সারারাত গেছি শুধু বেসে
বুঝিনি দিনের সূচনায়
রাত্রি যাবে ভেসে;
প্রণয়ের এসব ক্ষণ
ফিরবে কি কোনদিন
প্যারিসের পথে পথে
আজকের মতন এতটা নির্ভয়ে
কাল প্যারিস চলে যাচ্ছি সোনা।দু’ বছরের জন্য।
আমার হৃৎপিণ্ডটা জমে গেলো এক মুহূর্তে, কি বলছিস!
ঠিকই। বলেছিলাম না মাস্টার্সটা করে নেবো এইবার। সোনা একটা ভালো ড্রিংক খাবো বলে তোকে ডেকে পাঠানো।মন ভালো করে দেবার মতো।
ওকে বস!
একটু একটু করে ভোর হচ্ছে। কালকের দিনটা, তারো পরের ঘন্টাগুলো মুহূর্তগুলো আমার বিস্বাদ ঠেকতে শুরু করেছে। পৃবিহীন দিনগুলো নিয়ে শূন্যতায় ভাসতে ভাসতে ওর ফ্রিজ খুলে টেকিলা পেয়ে গেলাম।
আজ তবে টেকিলা সূর্যোদয় হোক।
১। একটা প্লেটে কিছুটা চিনি, লবণ, দারচিনি গুঁড়ো আর সামান্য লালমরিচ পাউডার নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিলাম।
serving glass এর মুখটা কমলালেবুর রসে খানিকটা ভিজিয়ে প্লেটে ছুঁয়ে ঘুরিয়ে নিলাম একপ্রস্থ। বাহ্!
৪/৫ টা আইসকিউব ছেড়ে দিলাম।
২। টেকিলা, ৬০ মিলি
অরেঞ্জ জুস ২৫০ মিলি
৪/৫ টা আইসকিউব সহ নিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে
গ্লাসের মুখ ঢেকে মিশ্রণটিকে ছেঁকে serving glass এ।
৩। সবশেষে, ১০ মিলি মতো grenadine syrup
গ্লাসের কিনারা ঘেঁষে সন্তর্পণে ঢেলে দিলাম
যেন তা তলায় গিয়ে ধীরে ধীরে জমা হয়ে
ঠিক সূর্যোদয়ের আবহ তৈরী করে ড্রিংকটিতে…..
লিভিংরুমে এসে দেখি পৃ লাগেজ গোছাতে শুরু করে দিয়েছে। ওহ্! ওকে তো কয়েকঘন্টা পরই ছুটতে হবে।
সোনা তোমার ড্রিংক হাজির।
ওর জানলায় তখন সূর্যের প্রথম ছটা। ঢাকায় ভোর হচ্ছে। আমাদের যুগল ভোর।
টেকিলা সূর্যোদয় পান করতে করতে প্যারিসে কোনোদিন নিশ্চয়ই একসংগে ভোর দেখবো এ ভাবনায় বিভোর হয়ে চালিয়ে দিলাম আমার সবথেকে মনখারাপ করা প্রিয় গানটি।
Now that I’ve lost everything to you
You say you wanna start something new
And it’s breakin’ my heart you’re leavin’
Baby, I’m grievin’
But if you wanna leave, take good care
Hope you have a lot of nice things to wear
But then a lot of nice things turn bad out there……
Wild World, Mr. Big
১ম :boss: :boss:
সুর্যোদয়ে টেকিলা সানরাইজের আইডিয়া মন্দ নয়.
😛
ভালো লাগলো.
😀 থ্যাংকস আয়েশা।তোমার আবদার মাথায় রেখে ভেবেছিলাম তোমার পছন্দের tequila sour নিয়ে লিখবো এবারে, কিন্তু sunrise হয়ে গেলো।
সত্যি কথা বলতে কি,আমার কোনো পছন্দ নেই। আমি আর আমার পতিদেব নেহায়েতই নিরামিষ টাইপ। তবে বন্ধুমহলের ব্যাপক আলোচনা এবং পার্টি এটেন্ড থেকে এলকোহলিক পানীয় সম্পর্কে জানতে পারি আর কি! আমার জামাই ভার্সিটির একটা halloween পার্টি তে আমাকে ক্ষেপানোর জন্য ওর বন্ধুর সাথে ঠুস ঠাস বোতল খুলে drink করছিল। আমি ওখান থেকে চলে আসতে চাইলে সে আমাকে দেখিয়েছিল ওটা স্পার্ক্লিং আপেল cider ( নন এলকোহলিক)। ঐসব দিন এখনো মিস করি। :dreamy: নূপুর ভাই, fall নিয়ে লিখা কবে পাব? আমি আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছি!
টেকিলা আমার একটি প্রিয় drink . এভাবে কখনো try করে দেখিনি । ধন্যবাদ ,আগের লেখা গুলোর মতই চমত্কার একটি লেখা । 🙂 🙂
ধন্যবাদ তানভীর।
আপনি সত্যিইই অসাধারণ লিখেন। প্যারিসে টেকিলা সূর্যদোয় পানের জন্য শুভকামনা 🙂
🙂 🙂
ধন্যবাদ আবীর। প্যারিস যাবার ইচ্ছে আমার বহুদিনের।
নূপুরদা, এটা কি সূর্যাস্তের পরে খাওয়া যায়! নাকি সকালের প্রথম রোদের সঙ্গে ...
😀
বারগুলোর কথা ভাবো। সূর্যোদয়ের সময় কোন বার খোলা থাকে!
শুধু mixing এর বিশেষত্বের কারণে এমন নামকরণ নিশ্চয়ই, পানের লগ্নের জন্যে নয়।
সাধু.....সাধু, নূপুর! টেকিলার রেসিপিটা পছন্দ হইছে। ভাবতাছি, দেশে ফিরা আইলে ক্যাডেট কলেজ ক্লাব বারের দায়িত্বটা তোমার হাতেই ছেড়ে দেবো!
পৃ'কে প্যারিস পাঠিয়ে রেসিপি দেওয়া বন্ধ করো না কিন্তু। প্রয়োজনে নতুন নতুন চরিত্র আনো। এমনকি সানা ভাইকে সন্ধ্যার পার্টিতে নিমন্ত্রণও জানাতে পারো! ককটেলগুলোর স্বাদ বাস্তবে না পেলেও লেখায় যা পাচ্ছি, তাই বা কম কিসে?
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ওয়াও! ক্যাডেট কলেজ বারের দায়িত্ব!
তবে সিনিয়রদের ড্রিংক পছন্দ না হলে :frontroll: এর বিনিময়ে চ্যাংড়া জুনিয়ররা ড্রিংক এর আবদার করলে :frontroll: সহ করার নিয়ম চালু করতে হবে..... :))
রেসিপি বন্ধ হবেনা এতো শিগগির। আপনারে আর সিসিবিরে নিয়ে একটা ককটেল পার্টি করা লাগে।
না না, পৃ (হইলেও হইতে পারে) বৌদির সাবস্টিটিউট চলবে না!!!
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
:boss: :boss: আরো একটা রেসিপি, আরো একবার জিভে জল 😛 😛
আরে এবার তো বিরহে চোখেও জল... 🙁
জানেন তো, গভীর প্রেম শুধু কাছেই টানেনা, ঠেলে দেয়
:thumbup:
দাদা, ইয়ে মানে আপনার এই রেসিপিগুলো দেখে তো আমার মত নিতান্তই নিরামেষভোজী মানুষের মনেও কি কি সব ইচ্ছা যেন করচে! 😛 :shy:
যাই, এক কাপ কফি খাই গে!
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
ননঅ্যালকোহলিক রেসিপি একটা নামাতে হবে দেখছি।
স্বপ্নচারী মইনুলেরো আব্দার রয়েছে...
দাদা, ননএ্যালকেহলিক লেখায় কি এমন নেশা চড়বে? অবশ্য আপনি লিখবেন তাতে কোন সন্দেহ পোষন না করাটাই শ্রেয়। 😀
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
সামবুকা ট্রাই করেছেন কখনো? আমার খুব পছন্দের (মনে হয় রবিনেরও 😉 )। ইতালিয়ান ড্রিঙ্ক। ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের বারে বেশ কিছুদিন এনে রেখেছিল। এখন আর পাইনা। তবে স্বাদটা লেগে আছে। টেলিকা ভালো লাগলে এটাও লাগবে। গ্যারান্টি।
এটার রেসিপি আছে বেশ কয়েক রকমের। তবে আমার পছন্দ এইভাবে
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
না হে! সামবুকা ট্রাই করিনি।
এই রেসিপিটা দেখেই তো নেশা হয়ে গেলো হে...
নূপুর ভাইয়ের লেখা পড়বার আগ্রহ বেশ কিছুদিনের, খানিক ধারণা পেলাম যা তাতে খুব ভালো লাগলো। :hatsoff:
ঈগলস-এর টেকিলা সানরাইজ-গানটা কোন এলবামে ছিল মনে পড়তেছে না। হেল ফ্রিজেস ওভার কনসার্টে পারফর্ম করা ভিডিও দেখেছিলাম মনে হয়।
এ নামে যে গান আছে তাই তো জানতামনা...
তাহলে তো এটাই জুড়ে দেয়া যেতো,
অবশ্য গল্পটাও তাহলে পাল্টে যেতো।
নেশা লাগিলো রে (লেখা পড়েই) !!!
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
🙂 😛
আরে জোস! নুপূরদা, এইটা দেখি ব্যাপক লেখা। রেসিপির জন্য সাধু! ট্রাই করতে হবে এইভাবে। গানটার জন্যও থ্যাংকস।
কাম্রুলাসান বস! সামবুকা রকস!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ধন্যবাদ রাব্বী।
এই গানটা আমার খুব প্রিয়।
ড্রিংকটাও।
ঐ নূপুর ভাই, আমাগো মত "ভেজ"দের জন্য একটা দুইটা রেসিপি দেন নারে ভাই.........।।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
হুমমম। ভাবতেসি। নায়িকা ঢাকার বাইরে। এই সুযোগে 'ভেজ' ট্রাই করা যেতে পারে। 😉
টেকিলার কথা শুইনাই তো নেশা দঃইরা যায়। সানরাইজ টেকিলার ছবিটা ব্যাপক ভালো পাইছি ভাই....।
ব্যাপক ধন্যবাদ আমিন!