[সেদিন বীথোফেনের সিম্ফনি ৩ শোনার সৌভাগ্য হয়েছিলো বিশ্বখ্যাত Cleveland Orchestra-র পরিবেশনায়। পরিচালনা করছিলেন ফ্রানজ ওয়েলসার মোস্ত্। এই সিম্ফনিটি Eroica নামেও পরিচিত। নেপোলিয়নের বীরত্বকে উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যে এটি রচিত হয়েছিলো, যদিও পরে আর তা করেননি বীথোফেন। তাই (H)eroica নামকরণ।অপূর্ব এই সিম্ফনিটি সম্পর্কে বিস্তারিত যে কেউ জেনে নিতে পারবেন একটু সার্চ করলেই। আপাতত শ্রবণকালীন অনুভূতির কিছু টুকরো এখানে তুলে ধরলাম, আমার মতো করেই। লিংকটিতে গিয়ে সুরটি চালিয়ে নিয়ে পাঠ করতে অনুরোধ করছি। Beethoven 3. 1st Mvt – Part 1 ]
কে? তুমি?
আচমকা শুধিয়েই
একটুও দাঁড়ায়নি আর
আলতো হাতে তুলে নিয়ে
ডানায় ভর করে ঘুরে দেখালো
নীচের বাগান, রাশি রাশি আপেল
আর অনন্তকাল প্রতীক্ষারত প্রেমিকা
অপেক্ষার মুহূর্তগুলো যার
একপাশে স্তুপ হয়ে প’ড়ে….
এই নদী ওই বন
সেসব শস্য- আর যুদ্ধক্ষেত্রের ওপর
বয়ে গেলাম আমরা
হাওয়ায় বধির হয়ে
কান্নার মতো
কাঁপতে কাঁপতে
বারংবার সুরের ভেতর
ডুবে গিয়ে
মঞ্চের সামনের সারির
ঠিক ওপরে এসে
ছোট্ট প্রজাপতি সেজে
দুটিতে দেখছি
বেহালা বাঁশি থেকে
কি করে ফুল আর
কান্না আর
অস্থির ফিসফিসানি
স্ফুরিত হচ্ছে একে একে….
এ গাছটা ও গাছকে
কানে কানে কি বললো কে জানে
অমনি ওর গালে গালে
পাতায় পাতায় লালচে আভা লজ্জার
তখনো কেউ বুঝিনি
প্রেমের কি মানে,
সবুজ মাথার গাছটা
অথচ দুলে যাচ্ছে ক্রমাগতঃ
আগেই বলেছিলাম
শুনতে চেওনা
পাতাঝরানো সেসব দিন!
বললে হবে কি
ভালোবাসার পেয়াদারা তো
চিরকাল বুঝেছে
কার কতটা ঋণ
হ্যাঁচকা টানে
আছড়ে ফেলেছে ততক্ষণে,
বেহালার ছড়ে ছড়ে
হৃৎপিণ্ডে তখন জোয়ার উঠেছে
ফুলে ফুলে উঠেছে বুক
জোয়ারে ভেসে গেছে
ভালোবেসে
আমাদের ছোট ছোট ডিঙি দুটো….
মঞ্চে তখন পরিচালক
হাতের ইশারায় সুরকে
জাগিয়ে নাচিয়ে শুইয়ে
ঘুম পাড়িয়ে বাড়ি পাঠিয়ে
কাছে ডেকে
কানে কানে আদর করে
চুমু খেয়ে
মত্ত হয়ে গেছেন
আর পারছিনা
কিছুতেই বলতে পারছিনা,
আর নয়।
সমস্ত সাগরময়
অসহনীয় সুরের পংক্তি
আঁকড়ে ধরে ভাসতে ভাসতে
এ ওর থেকে আলাদা হয়ে
ছিটকে গেলাম
দুজনের প্রজাপতি ডানা
লাজমেশানো ডালিম-রঙা পাতা
অপেক্ষার আপেলক্ষণগুলো সব
বীথোফেনের পায়ে রেখে
আমরা মিলিয়ে গেলাম।
বুদ্বুদের মতোই…..
প্রথম হবার লোভটা সামলাতে পারলাম না ভাইয়া।
:clap: :clap:
পড়ে মনে হয় কিছুই বোঝা গেলো না তাই না? 🙁
ভাইয়া, 🙁
আসলে বেশি বোঝার কিছু নেই। পুরো ব্যাপরটা অর্কেস্ট্রা শুনতে শুনতে কল্পনা আর সুরের মূর্ছনায় ভেসে বেড়ানোর মতো।
নিশ্চয়ই অর্কেস্ট্রার পরিবেশনা সম্বন্ধে কিছুটা আইডিয়া আছে তোমার। একজন পরিচালক (conductor) থাকেন যিনি হাতে একটা ছড়ি নিয়ে পুরো কনসার্টটি পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর ইশারায় সুরের তীব্রতা আর মূর্ছনা ওঠানামা ও খেলা করে সারা মঞ্চ জুড়ে। Conductor এর চোখে মুখেও খেলা করতে থাকে সুরের সমিল অভিব্যক্তি।সমস্ত যন্ত্রীরা মিলে তাঁর নেতৃত্বে সুরের এক অপূর্ব মায়াজাল গড়ে তোলেন। সে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা, সামনাসামনি থেকে দেখলে।
একেকটি সিম্ফনি সাধারণত কয়েকটি ভাগ বা movement এ বিন্যস্ত থাকে। প্রতিটা movement এর আলাদা থিম থাকে।
এই লেখাটা প্রথম movement নিয়ে। যদি লিংকটায় গিয়ে শোনো, তাহলে দেখবে এটি শুরু হয়েছে দুটো ধারালো ধ্বনি দিয়ে। লেখাটির শুরুতেো তাই দুটো প্রশ্নবোধক। যেন জানা নেই আগে বা পরের কোন প্রসংগ। অতঃপর শুধুই ভেসে চলা লাগামহীন কল্পনায় ভর দিয়ে। পড়তে পড়তে যেমন যেমন দৃশ্যের মুখোমুখি হচ্ছো তাকে যদি বিনাপ্রশ্নে মেনে নাও আর কল্পনার চোখে তাদের দেখে নিতে পারো যখন যেমন আসছে তারা, তাহলে আশা করি ততটা দুর্বোধ্য ঠেকবেনা কিছুই।
পুনরায় চেষ্টা করে দেখবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
দুর্দান্ত.....
এই লাইন দুইটা খুব মনে ধরল।
অনেক ধন্যবাদ তানভীর!
আমি বিথোফেনের ফার ইলাইজের একনিষ্ঠ ভক্ত। আমার ননদ সেও একজন ডাক্তার - আটলান্টায় কাজ করছে। সে আমাকে বলেছিলো বাচ্চাদের এক বছরের আগে বিথোফেন শোনালে ব্রেনের গঠন নাকি বেশ ভালো হয়।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
বাহ্! এই তথ্যটা অজানা ছিলো।
নূপুর ভাই,
আমি তো বিঠোভেনের অন্ধভক্ত! আমার গাড়িতেও ওর সিডি রাখি. ফুর এলাইজ, যার মানে হলো ফর এলিস, আমার খুব প্রিয়, এটার আরেকটা কারণ হলো ছোটবেলা থেকেই এই টিউন টা পরিচিত ছিল।কিন্তু পরে দেখি, এই ডেফ লোকটা আরো কি অসম্ভব অসম্ভব সুর কম্পোজ করেছেন! ওরই sonata pathetique বাজিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। আমার ছেলেও মেয়রের সামনে অড টু জয় বাজিয়েছিল।
কবিতা তো সম্পূর্ণই অন্যরকম হয়েছে। :boss:
তবে ভাইয়া একটা কারেকশন আছে-
ওর নামটা পড়ার সময় বিথোভেন মনে হলেও, উচ্চারণের সময় (বাংলার ক্লোসেস্ট) লুডউইক ভ্যান বিঠোভেন বলা হয়।
আসলে বিথোভেন, বিঠোভেন বা বিথোফেন..... জার্মান জিহ্বায় যা-ই বলতে চাওনা কেন
'ঠ' হয়ে যাবে 'থ', আর 'ভ' হবে 'ফ'।বাংলায় সবরকম ভাবেই লিখতে দেখেছি, তবে আমি মূল উচ্চারণের অনুগামী থাকতে চাই সমসময়, সেটা আমাকে টানে বেশি।
ইউরোপিয়ান ক্লাসিকাল সংগীত শোনা হয়নি খুব একটা। তবে Cleveland Severance Hall এ Cleveland Orchestra-র পরিবেশনা উপভোগ করার অনুভূতির একটি সরলীকৃত (আর নিতান্তই অক্ষম) অনুবাদ বলতে পারো লেখাটিকে।
পাঁচতারার জন্যে ধন্যবাদ।
বাহ্! মা-বেটা দুজনেই মিউজিশিয়ান!
তা তুমি কি বাজাও? পিয়ানো?
জার্মান জিহবায় "ঠ" পরিবর্তিত হয়ে "থ" হয়ে যায়? নূপুর ভাই, আপনার জ্ঞানের পরিধি কত? তার উপর কত শত শব্দ নিয়ে প্রতিটা কবিতাতে খেলেন! হায়রে আমি কেন এমন হলাম না? :-/
ও আমি পিয়ানো বাজাই, তবে আমার সাত বছরের পিচ্চিটা মেনসান এবং ও আমার চেয়েও ভালো গ্র্যান্ড পিয়ানো বাজায়. এখন বাঁশি শিখছে. আমি তো হলাম না তবে ছেলেটা বড় হলে মিউজিশিয়ান হলেও হতে পারে আর কি.
নিশ্চয়ই ও অনেক বড় মিউজিশিয়ান হবে। সেদিনের প্রতীক্ষায় রইলাম।
পাঁচ তারা।
ইয়ে নূপুরদা,মাইর দিয়েন না,আমি শিরোনামটা ভুল পড়ছিলাম...(জানি এখন চা-ওয়ালা বলবে যার মনে যা ... x-( )
t-যোগে নিশ্চয়ই! =)) =)) =)) =)) =)) =))
তা tea ওয়ালার আর কি দোষ বলো!
😀 😀 😀 😀
অট: ওই নামের একটা কম্পোজিশন রাখলেও পারতো বীথোফেন, কি বলো?
নাহ মাস্ফ্যুদা লুকটা পুলিশ হইয়াও ভালো হইলো না :no: :no:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমি নগন্য মানের শ্রোতা। শুধু ভাললাগা জানিয়ে গেলাম। চলুক।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আমার অবস্থাও তাই। 😛
দাদা,
আপনি এতকিছু একসাথে কেমন করে বাঁধেন এক সুতোয়। :dreamy:
যত দেখছি - যত পড়ছি - অতলে হারিয়েই যাচ্ছি।
সুন্দর।
অনেক সুন্দর।
সৈয়দ সাফী
অনেক আপ্লুত হলাম ওবায়দুল্লাহ।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো খুব এলোমেলো টাইপ হয়ে গেছে লেখাটা।
আসলে ভাবনাগুলোও কেমন খাপছাড়া ছিলো কি না!
সেরকম করে লিখতে গেলে তো প্রতিদিন বসে থেকে এই সিম্ফনিটা শুনতে হবে।
টিকেটের যা দাম! 🙁