পেশায় ভিক্ষুক হলেও মানুষের কাছে হাত পাততে একদমই ভালো লাগে না বশির মিয়ার। অবর্ণনীয় অসহ্য লাগে। তবুও যত অবর্ণনীয় অসহ্য কিংবা বিরক্তই লাগুক না কেন অবশেষে পেটের যন্ত্রনায় নাক মুখ খিঁচিয়ে, দাঁত কিড়মিড় করে হাত কিন্তু পাততেই হয় পথচারীর সামনে গিয়ে। কখনো ডাক্তার, কখনো উকিল, কখনো শিক্ষক- কখনো বা স্কুলছাত্রের সামনেও।
বাম হাতে একটা থালা নিয়ে হঠাৎ করেই গিয়ে হাজির হয় ফার্মগেটের মোড়ের কোন এক পথচারীর সামনে। বশির মিয়া বাম হাতে থালা নিয়ে হাঁটতে থাকেন এদিক থেকে ওদিক, এখান থেকে ওখানে। তিনি বাম হাত দিয়েই সব কাজ করেন। বাম হাতে খান, বাম হাতে আঁকড়ে ধরেন কোন কিছু, বাম হাতেই তার থালা থাকে সবসময়- এমনকি ভিক্ষা করবার সময় বাম হাত দিয়েই নিয়ে থাকেন মানুষজন থেকে।
কারণ তার ডান হাতটি নেই।
দু বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় বশির মিয়া তার ডান হাতটি হারায়। তারপর থেকে তার দুঃখের আর অন্ত নেই। যদিও হারানো হাতের বদৌলতে আয় উপার্জন কিন্তু আরো বেশি হওয়ার কথা। এই হারানো হাতের জন্য মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে বশির মিয়ার।
পরিবার পরিজন বলতেও কেউ নেই বশির মিয়ার। ঢাকায় এসে ভিক্ষা করে করে এক একটি দিন জীবন থেকে পার করে বশির মিয়া। শুধুমাত্র পেটের দায়েই, শুধুমাত্র পেটের যন্ত্রনার জন্যই এই বেঁচে থাকা।
ক্ষুধার যন্ত্রনায় পেটের ভেতরটা হঠাৎ করেই মোচড় দিয়ে ওঠে বশির মিয়ার। কিন্তু তার সম্বল মাত্র দুই টাকা। এই দুই টাকা দিয়ে কী করবে বশির মিয়া? দোকানগুলোর মচমচে খাবারগুলো থেকে ভেসে আসা গন্ধে যন্ত্রনাটা আরও হয়ে উঠে প্রকট, রাস্তার দুপাশে সাজানো সারি সারি গ্লাসের শরবত দেখে তেষ্টা আরও হয়ে উঠে প্রবল, প্রতিমুহূর্তে এভাবে বেঁচে থাকার এই যন্ত্রনায় রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে বশির মিয়ার চোখে আসে জল।
এই বেঁচে থাকার প্রতি, এই অসহনীয় জীবনের প্রতি একদম বিতৃষ্ণা চলে আসে বশির মিয়ার। এই বেঁচে থাকা থেকে মুক্তি চায় সে। এই জীবন থেকে পালাতে চায় সে। তাই এই বেঁচে থাকা থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে, এই জীবন থেকে পালাতে সে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে, গন্তব্যহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে সে চলে যায় ওভারব্রীজের ওপরে। ওভারব্রীজের ওপর দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে নিচের শহরটাকে। শত শত মানুষ ছুটছে ফুটপাত দিয়ে, শত শত গাড়ি চলে যায়, শত শত বাস মানুষকে উঠাচ্ছে, নামাচ্ছে- এভাবে উঠাতে উঠাতে আর নামাতে নামাতে চলে যাচ্ছে বহুদূর। এর মধ্যে যদি একবার লাফিয়ে পড়া যায় তাহলে আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না বশির মিয়াকে, ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে পুরো দেহটা।
জীবনটা থেকে পালাতে, নিজেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে বশির মিয়া ঠিক যখন সামনের দিকে পা বাড়াতে যায় ঠিক তখনই-
* * *
এক ভিক্ষুক, তার দুটি হাতই নেই, পরনে শুধুই একটা চ্যাটচেটে ময়লা লুঙ্গি। খাবারের অভাবে পেট আর পিঠ একসাথে হয়ে গেছে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে তখন থেকে লাফিয়ে যাচ্ছে সে। যেন অনেকদিন পর প্রচণ্ড খুশির কিছু ঘটেছে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বশির মিয়া।
দ্রুত নিচে নেমে আসে বশির মিয়া। বড় বড় চোখ নিয়ে সে হাজির হয় সেই দু’হাত হারা ভিক্ষুকটির সামনে। ভিক্ষুকটি তখনও লাফিয়ে যাচ্ছে…
খুব আগ্রহের সাথে বশির মিয়া জিজ্ঞেস করে, “মোর এক হাত নাই এতেই আমি দুঃইখে মইরতে যাই, আর তোমার দুই হাত নাই তুমি খুশিতে এইরকম লাফাইচ্ছ?”
ভিক্ষুকটি আগের থেকে আরও বেশি লাফাতে লাফাতে বলল, “ আরে আমি লাফাইতেছি না ভাই, আমার গা চুলকাইতেছে!”
১ম :grr:
অপূর্ব হইছে, লাস্টের টুইস্টটা অসাধারণ। প্রথম শুরু হইল বিষন্নতা আর দুঃখ দিয়া, তারপর একটুখানি আশা, এরপর একটা সারকাজম (বাংলা জানি না)। এক প্যাকেজে কত কিছু!!!!!!
থ্যাংক ইউ তৌফিক ভাই...
=))
দোস্ত চরম হইছে, ব্যাপক.....পুরা গুল্লি :gulli2:
থ্যাংকস দোস্ত...
আরে আমিতো পুরা অবাক লাষ্টে এটা কি ফিনিশিং??
দারুন লাগলো ......... এতদিন কই আসিলা তুমি ???
থ্যাংকস্ ভাই...
জোশ ! জোশ ! বেশি জোশ!!! :boss:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
থ্যাংকস্
:gulli2: :gulli2: :gulli2: :gulli2:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
পুরাই :gulli2:
ফার্মগেটের উপরে ভিক্ষাবৃত্তি ব্যক্তি-স্বাধীন না, ওটা খুবই অর্গানাইজড। ভিক্ষুকরা সেখানে অনেকটা কমিশনে চাকুরি করার মতো, দৈনিক বেতনে 'ভিক্ষাবৃত্তি'তে নিয়োজিত।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই, ভিক্ষুকদের সম্পর্কে আমার ধারণা খুব কম। এতকিছু চিন্তা ভাবনা কইরা আমি গল্পটা লিখতে যাই নাই। তবে ইনফরমেশনটার জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটা পড়ে ব্যপক মজা পাইলাম দোস্ত। :)) :))
:salute:
থ্যাংকস্ দোস্ত...
সুন্দর লেখা :clap:
থ্যাংকস্ ভাই।
বেশ ভালো লাগলো লিখাটা পড়ে।
ধন্যবাদ...
:boss: :boss: :boss:
বহুমাত্রার লেখা মনে হল। অনেক ভাবে চিন্তা করা যায় এটা।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
থ্যাংক য়্যূ ভাই
ব্যাপক, ব্যাপক। :gulli2:
চালায়ে যাও লেখালেখি। :clap: :clap:
থ্যাংক য়্যূ ভাই...
হিহিহহিহহিহিহি :))
ফিনিশিং টা সিরাম হইছে...
=)) =)) =))
অসংখ্য ধন্যবাদ...
খুবই সুন্দর হইছে...
:gulli2: :gulli2: :gulli2:
ব্যাপক হইছে… দারুন লাগলো :clap:
থ্যাংক য়্যূ ভাই।
জট্টিল :clap: :clap:
ফয়েজ ভাইয়ের কথাটাই কই, বহুমাত্রিক লাগছে শেষদিকে, একেকজন একেকভাবে চিন্তা করবে, ভাববে। চরম চরম :hatsoff:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!