সাতাশ বছর পরে – সাত

সেদিন ছিলো ভালোবাসা দিবস
আগেই পৌছে গেছি, মনে হলো
কিছু একটা ভুলে গেছি, সিঁড়ি দিয়ে
তাড়াহুড়া করে নামছি। এক ডজন
লাল গোলাপ আনতে। একটু পরে
থমকে গেলাম, সামনে নীলা সিঁড়ি
দিয়ে উপরে আসছে। ধ্যৎতেরিকি।

দুই হাত পিছনে লুকোলাম, ভাবটা
এমন হাতে কিছু ধরা আছে, বললাম
“নীলা তুমি বসো, আমি একটু আসছি।”

তাড়াহুড়ো করে গিয়েও লাভ হলো না।
ফুল সব শেষ, অগত্যা নীলার পছন্দের
চকলেট নিয়ে ফিরলাম। ও আবার সাদা
চকলেট ছাড়া অন্যগুলো পছন্দ করেনা।
আবার সিঁড়ি বেয়ে ওঠা। দেখা হতেই
বললাম, “নীলা তোমার জন্য চকলেট,
ভালোবাসা দিবসের জন্য।” নীল চুপ
করে রইলো, বললো, “লাল গোলাপ
কোথায় গো? নাকি কাউকে দিয়ে এসেছো?”

কপালের দুপাশে ঘাম ঝড়ছে, বেড়েই
চলছে। বললো “হাত লুকিয়ে নামলে
ভাবলাম গোলাপ এনেছো।” চুপ করে
থাকলাম। বললাম, “হাতে কিছু ছিলো না
ভাব করছিলাম অবাক করে দেবো, এতো
প্রেমিকের মাঝে আমার গোলাপ শেষ হয়ে
গেছে।” নীলা হাসলো, হাত বাড়িয়ে
চকলেট নিলো, রেখে বললো “মিথ্যে
ভান করেছো, তুমি পাবেনা, পুরোটাই
আমার। রাতে একা একা শেষ করবো।”

এরপর হাত বাড়ালো, ব্যাগের ভিতর
থেকে বের করে আনলো টকটকে একটা
লাল গোলাপ। এগিয়ে দিয়ে বললো,
“তুমি যা ভুলোমন, নিজেই নিয়ে এসেছি,
এবার আমার হাতে তুলে দিয়ে বলো
ভালোবাসা দিবসে তুমিই আমার
ভালোবাসা।” যা বললো, তাই করলাম
ঘাম তখনো থামেনি, সাথে লজ্জাটাও
যাচ্ছিলো না। ভুলোমনের জন্য
নিজেকে শাপ-শাপান্ত করছি, তবু
মুখের হাসিটা ধরে রেখেছি। নীলা
নিজের ফুল নিজেই হাতে তুলো নিলো।

নীলা হেসে ফেললো, আবার একই কথা
বললো, “ভুলোমন।” হঠাৎ চোখ পড়লো
পাশে একটা মার্কারের উপর। কি ভাবলাম
জানিনা, নীলার হাত টেনে নিলাম, লাল
শাড়ীর সাথে লাল ব্লাউজ পরা হাত, বাহুতে
একটা লাল গোলাপ একে দিলাম। নীলা
বলে উঠলো, “একি করলে?” বললাম
“চলো একদিন, লাল গোলাপের সাথে
সবুজ পাতা মিলিয়ে উল্কি করিয়ে দেবো।
এরপর প্রতিদিনই হবে ভালোবাসা দিবস।”

কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো, বললো, “উল্কি
বড় বিচ্ছিরি লাগে, হাতে দেয়া লাগবে না,
হৃদয়ে করাই আছে। তুমি যা ভুলোমন
তোমার হাতেই আমার নামের উল্কি করে দেবো,
যেন আমি না থাকলে কেউ তোমাকে দেখে
যেন বার বার বিরক্ত করে, ‘এই নীলা কে?’
ভ্যাবাচ্যাকা খাবে, ঘাম দেখতে মজার হবে।”

দুজনেই উঠলাম, আজ নাস্তাটা কোন ঝুপরি
দোকানে করবো, পরোটা ডিম সাথে চা,
বারবার জ্বাল দেয়া দুধচা। রাস্তায় আরো কি
যেন বলছিলো, সব মনে নেই, শুধু একটা
কথাই কানে গেছে, “তোমার সাথে বিয়ের পর
নাম বদলাতে বলবে না, আমার নাম এমনই
সুন্দর।” হু হা করছিলাম, ভুলোমন, বাকী
সব ভুলে গেছি। এখনো হাতের উল্কিটাতে
হাত বুলাই আর বলি “নীলা যাবার এতো
তাড়া ছিলো, কখনো বুঝতে দাওনি কেন?”

৬,০১০ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “সাতাশ বছর পরে – সাত”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।