সাতাশ বছর পরে

সাতাশ বছর আগে লেখা আটটা কবিতা পেয়েছিলাম। সাতটা পোস্ট করেছি, আট নম্বরটা অনেক বড়, আর লিখবোনা।

মানে, নীলা মারা গেছে। আমার লেখা যে অনেকে পড়ে, যদিও ফ্রেন্ডলিস্ট ছোট, সেটাতে অবাক হয়েছি। তার থেকে বেশী বিব্রত হয়েছি, বড় ভাইরা, বন্ধুরা, প্রাক্তন সহকর্মীরা এবং ছোটভাইরা যখন ফোন করে জিজ্ঞাস করেছে, নীলা কে?

চিন্তায় একটা মানুষ দাঁড় করা, জীবন্ত করা, বোধ এর মাঝে আনা, অনুভূতি দেয়া, এরপর অনুভব করে লেখা সহজ কাজ না। কবিরা সহজেই পারেন, আমিতো আর কবি না। হয়ত ২৭ বছর আগে পারা সহজ ছিলো, এখন পারিনা।

আবার কিছু বিশিষ্ট লেখকের মতো না যারা তরুনী, নারী, মহিলা দেখলেই ছোঁক ছোঁক করে, লিখেও ভালো। নাম না হয় নাই লিখলাম, এক তসলিমা নাসরীন কিছু নাম লিখে যেই ঝামেলা মামলার মধ্যে আছে, কি দরকার নাম লেখার?

যাইহোক, নীলার চ্যাপ্টার শেষ। নীলার উপরে কমেন্ট দেখলে খুশী হবো। দুইটা জিনিস মাথায় রাখবেন, এক ২৭ বছর আগে লেখা, আর দুই কোন এডিট করি নাই। তাই অনেক কিছুতেই ভুল আছে। আমার ভুল ধরালে একদমই লজ্জা পাইনা, তাই নির্লজ্জের মতো কমেন্ট দিতে পারেন।

নীলা মারা গেলো, মনটা খারাপ।

সাতাশ বছর পরের লেখা

‘আজ আমার মনটা খারাপ, কথা বলবো না’।

আজ আরও একটা মন খারাপের দিন।
মন খারাপের জন্য কোন কারন লাগেনা, মন
শুধু চাইলেই হয়। একেকটা দিন একেক একেক
রকমের রং নিয়ে আসে। শুধু নীল যদি হয় মন
খারাপের রং, অন্য দিনের রং বদলায়, এক 
মাসে যত দিন, তার থেকে রং বেশী, মন খারাপ
আরো বেশী। রং দিয়ে কি মন খারাপ মাপা যায়?
কে যানে, সময় কোথায় এটা খুঁজতে যাবার?

মন খারাপের রং খুঁজে পেলে, মন খারাপ ছিলোনা।

কত ছোট বড় কারন তাড়া করে, বলে সময় হয়েছে
মন খারাপের। মাঝে মাঝে কারন লাগেনা, শুধু
অভ্যাস আর চেনা ব্যথা জাগানোর জন্য মন
খারাপ করতে ইচ্ছা হয়, অনেকটা খামোখা ভান 
করার মত। ‘আমার মনটা ভালো নেই, বললেও 
মনটা ভালো হয়ে যায়, নিজের কানে শুনলেও
ভালো লাগে। আর কাছের মানুষগুলো যখন ‘কেন
মন খারাপ, কিছু লাগবে নাকি, কি করলে ভালো
হবে, শুনে খারাপ লাগলো’ এই ধরনের ভান করা
কথা বলে, মন খারাপের ভান করতেও ভালোই
লাগে। এ এক অদ্ভুত আনন্দের ভন্ডামি, তাই না?

এটা আনন্দের ভন্ডামি কিংবা ভন্ডামির আনন্দ।

ভেবে দেখলাম, মন খারাপ বলে কিছু নাই, যা 
আছে হয় তা এক রকম কষ্ট যা বুকটা খালি করে,
নয়ত না পাবার যন্ত্রণা যখন নিজেকে মনে হয় 
কোথাও ভুল করেছিলাম, একটু সময় পেলে ঠিক
করে নিতে পারতাম। শুধু সময়টা হাতছাড়া হয়ে 
গেছে, নয়তো কিছু একটা ভুল হয়ে গেছিলে, আর
একটা সুযোগ পেলে পাল্টে নিতে পারতাম পুরোটা।

কেউ যদি বলে কোন কষ্ট নাই, মিথ্যা কথা বলে।

মন খারাপ শুধু অন্যের স্বান্তনা পাবার জন্য এক
চমৎকার ভান, যা ইচ্ছা তাই করে মন খারাপের
দোষ দেবো, কতভাবে অন্যের জন্য কষ্ট হচ্ছে তা
বোঝাবো। যখন কষ্টটা আসলেই বুকে বাধে, কেউ
কখনো একটা শব্দ বলেনা। কষ্টটা অনেক বেশী
ব্যক্তিগত, নিজের দায়টা এতো বেশী, কাউকে 
বলা যায়না। কষ্টটা এতো বড়, কোন হেমন্ত, বসন্ত,
প্যাঁচা, ঘাসফড়িং, নদী, পাখি কিংবা নীল, লাল, 
সবুজ কোন রং দিয়ে বোঝানো যায়না। মনের ভেতর 
একটা ফাঁকা ভাব, আর সময়মত কিছু করতে না
পারার ব্যর্থতা কাজ করে। কষ্ট দেয়, আর ক্লান্ত করে।

এমন কাউকে এখনো দেখিনি, এই কষ্টটা লুকায় না।

৫,০৩৪ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।