কলেজে সর্বসাকুল্যে পাঁচবার অবস্ট্যাক্ল কোর্স করতে হয়েছে। কোন অবস্ট্যাক্লে যে কি কাহিনী ঘটিয়েছিলাম কিচ্ছু মনে নেই। কাহিনী অনেকই মনে আছে কিন্তু কোনটা কোন বছরের তা বের করাটা সহজ না। ক্লাস টুয়েলভের টাও তেমন মনে পড়ছে না। কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে ক্লাস এইটে করা জীবনের প্রথম অবস্ট্যাক্লের কথা। কারণ তো বোঝাই যাচ্ছে, ব্যতিক্রমী কিছু ঘটেছিল। সে কাহিনীটাই বলতে চাচ্ছি এবার।
জীবনের সবচেয়ে জটিল রোগগুলো হয়েছিল ক্যাডেট কলেজে থাকতেই। ক্লাস এইট থেকে শুরু। প্রথমে “চিকেন পক্স” হল। যথারীতি অ্যাডমিট হলাম কলেজ হাসপাতালের স্পেশাল ওয়ার্ডে। স্পেশাল বলতে একটা দুই বেডের ঘরকে বোঝানো হতো তখন, অনেকে আবার আইসোলেশন ওয়ার্ডও বলতো।পরবর্তীতে অবশ্য বড় করে “সংক্রামক ব্যাধি ওয়ার্ড” নামে একটা আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছিল। যাহোক, একা এক রুমে থাকতে শুরু করলাম। সংক্রামক বিধায় জেনারেল ওয়ার্ডে যাওয়া নিষেধ, টিভি দেখার কোন উপায় নেই। কেবল শুয়ে থাকা, আর শুয়ে থাকতে কষ্ট হলে বসে থাকা, তাতেও কষ্ট হলে দাড়িয়ে থাকা বা ছোট্ট রুমটার ভেতরেই হাটাহাটি করা। কিন্তু বেশিদিন একা থাকতে হলো না, কারণ পক্সের মৌসুম চলছে তখন। আমি ভর্তি হওয়ার দুই দিন পরেই কাজী পক্স বাধিয়ে হাসপাতালে এলো। রুমে আরেকজন ক্লাসমেট পেয়ে বেশ কাটতে লাগলো দিনগুলো। কষ্ট যা ছিল তা কেবল শারীরিক, মানসিক প্রশান্তির কোন অভাব ছিল না।
সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা ছিল হাসপাতালে বসে পাক্ষিক পরীক্ষা দেয়া। হাসপাতালের অ্যাটেন্ডেন্ট এসে প্রশ্ন আর খাতা দিয়ে যেতো। যতক্ষণ খুশি লেখ, এক্সট্রা কাগজ লাগলে হাসপাতালের অফিসে গিয়ে নিয়ে আসো, যখন মর্জি হয় গিয়ে খাতা জমা দিয়ে আসো। হাসপাতালে যতদিন ছিলাম, পড়াশোনা একবিন্দুও করিনি, আর পরীক্ষা দিয়েছি বই খুলে। মনে আছে, ইসলামিয়াত দুই তিনটা নোট বই খুলে পরীক্ষার খাতাকে নোট খাতা হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম। চমৎকার দিয়েছি সবগুলো পরীক্ষা। ফলাফল দেয়ার পর দেখা গেল, আমি ফার্স্ট আর কাজী সেকেন্ড হয়েছে। অথচ, আমাদের দুজনের কেউই কখনও ৩০-এর ভেতরে ঢুকতে পারিনি আগে। জীবনে ঐ একবারই ফার্স্ট হয়েছিলাম কোন পরীক্ষায়। আর কাজীও বোধহয় জীবনে ঐ একবারই সেকেন্ড হয়েছিল।
যাহোক, কাহিনী এটা না। পক্স হলে কলেজের নিয়ম অনুযায়ী ২১ দিন ভর্তি থাকতে হতো। আমরা তো নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছি। এমন সময়ে আন্তঃহাউজ অবস্ট্যাক্ল কোর্স কম্পিটিশন এসে গেল। হাউজের কেউ হাসপাতালে থাকলে বিরাট পেনাল্টি দিতে হবে। হাউজ মাস্টারদের তো মাথায় হাত। একসাথে সবগুলাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে এনে প্র্যাকটিসে লাগিয়ে দেয়া হল। আমি আর কাজী সে যাত্রা বেঁচে গেলাম। কিন্তু দু’দিন পরেই খবর এলো, কিচ্ছু করার নাই। মেডিক্যাল অফিসারকে বিশেষভাবে কনভিন্স করেছেন ওনারা। আমাদেরকেও হাসপাতাল ছাড়তে হবে। তখন মাত্র ১৬ দিন হয়েছে আমাদের পক্সের বয়স। অবশ্য আমাদের পক্স খুব একটা সিরিয়াস ছিল না। ১৬ দিন কেন, তার আগেই ডিসচার্জ করে দেয়া যেতো। শুধু নিয়ম বলে কথা। আমরা দুজনেই চিন্তায় পড়লাম। কেউ এর আগে কোন প্র্যাকটিস করিনি। অকস্ট্যাক্লের আর মাত্র ২ দিন বাকি।
সকালে মেডিক্যাল অফিসার ডেকে দেখলেন। ডিসচার্জ করে দেয়া হলো দুজনকেই। সেদিন বিকালে সোহরাওয়ার্দী হাউজের প্র্যাকটিস। কাজী আর আমি দুজনেই ছিলাম অনেক খাটো। অবশ্য কাজী আমার থেকে বেশী খাটো। সোহরাওয়ার্দীর হাউজ লিডার বুঝলো কাজী শরীরের এ অবস্থায় পেরে উঠবে না। ডিসকোয়ালি হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও বড় পেনাল্টি দিতে হবে। অগত্যা ছাড়া পেয়ে গেল কাজী। আমার ভাগ্যে আর ভালো কিছু জুটলো না। পরদিন আমাদের হাউজের প্র্যাকটিস। মাত্র একদিন প্র্যাকটিস করে আমাকে অংশ নিতে হবে অবস্ট্যাক্লে। তার উপর একটা পূর্বসূত্র আছে। কিভাবে জানি আমার ডান দিকের কলার বোন ডিসপ্লেস্ড হয়ে গিয়েছিল মাসখানেক আগে। অনেক দিন হাসপাতালে থাকায় সে ব্যথা তখন নেই। প্র্যাকটিস শুরু হলো। দুরু দুরু বুক নিয়ে শুরু করলাম। সবগুলো পেরে যাচ্ছি দেখে নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছিলাম। নিজেকে খুব বস মনে হচ্ছিলো। কিন্তু সিক্স ফিট ওয়ালের সামনে এসে নিজেকে অসহায় মনে হল খুব। না আর বস থাকা গেলো না। ওইটা বাদ দিয়ে টারজান রোপের মাধ্যমে প্র্যাকটিস শেষ করলাম। কিন্তু জেপি’র হাত থেকে রেহাই নাই।
সিক্স ফিট আমাকে পার করতেই হবে। প্রথম বার দিলাম। আশ্চর্যের বিষয়, জেপি’র দেখানো পদ্ধতিতে প্রথম বারেই পার হয়ে গেলাম সিক্স ফিট ওয়াল। কিন্তু, ঝামেলা বাধলো সেখানেই। কলার বোনের পুরনো সেই ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। পরের তিনটা এটেম্পটের তিনটাতেই ব্যর্থতা। জেপি বললো,
– অসুবিধা নাই ফাইনালে পারবা। এখন রেস্ট নাও। আর ফাইনালের আগে অন্য কোন কিছু ট্রাই করবা না।
ফার্স্ট এইডে গিয়ে কলার বোনে স্প্রে করিয়ে হাউজে ফিরে এলাম। সরিষার তেল মালিশ করে কোন মতে অবস্থা ঠিক হলো। পরদিন সকালে উঠে দেখি ব্যথা নাই। আমি তো মহা খুশি।
শুরু হলো অবস্ট্যাক্ল। প্রথম থেকেই বুঝা যাচ্ছিলো আমাদের হাউজ খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। দেখতে দেখতে একসময় আমাদের গ্রুপের পালা চলে এলো। গ্রুপে আমি ছিলাম সবচেয়ে নাজুক। দেখতে না দেখতেই সব পার হয়ে যথারীতি চলে এলাম সিক্স ফিটের কাছে। আমার আগেই সবাই পার হলো। আমি প্রথমে কেন পার হলাম না? কারণ সেখানে এসেই বুঝতে পারলাম কলার বোনের ব্যথা আবার শুরু হয়েছে। সবাই একে একে চলে গেলো। ক্লাস এইটের আগে জীবনে এরকম অসহায় খুব একটা বোধ করিনি।
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। পারবো না। কিন্তু পাশে এসে উপস্থিত হল জেপি। যেভাবেই হোক সিক্স ফিট দিতেই হবে। এমনিতেই হাউজের অবস্থা খারাপ।
মনে মনে শাপ-শাপান্ত করতে করতে একটা রান আপ নিয়ে রওয়ানা হলাম। তখন সিক্স ফিটের জাজ ছিলেন কিরণ কুমার স্যার। উনিও সামনে এসে উপস্থিত। সিক্স ফিটের সিস্টেমটা তো সবারই জানা। লাথি দিয়ে উঠতে পারতাম না। প্রথমে হাত ওয়ালের উপরে দিয়ে পা তোলার চেষ্টা করতে লাগলাম।
একসাথে দুই গ্রুপ কখনো ছাড়েনা। তাই পুরো কলেজে তখন আমি ছাড়া আর কেউ অবস্ট্যাক্লের ট্র্যাকে নাই। একদিকে সব ক্যাডেট আর জাজের দল। অন্য দিকে অতিথি ও প্রিন্সিপাল। হাউজের পোলাপান চিল্লা পাল্লা করে উৎসাহ দিতে লাগল। আমি তখন পা তোলায় ব্যস্ত। কিরণ কুমার স্যার বললেন,
– এইতো হয়ে গেছে।
ওয়ালের অর্ধেক পা আসতেই হাল ছেড়ে দিলাম। আমার তখন হুশ নেই। কলার বোন ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে। দুই পাশের সব দর্শক জাজেরা যে কেবল আমার দিকে তাকিয়ে আছে তা অন্তরে বুঝতে পারছিলাম কেবল। নিজ চোখে দেখার সাহস হয় নি।
আমার সেকেন্ড এটেম্পট্টা ছিল সবচেয়ে কার্যকর।
সে যে কি অবস্থা। হাত ওয়ালের উপর। পা ওয়াল থেকে মাত্র ৬ ইঞ্চির মত দূরে। আমার গ্রুপের গুলাও কোর্স শেষে এখানে এসে উৎসাহ দিচ্ছে। জেপি-হাউজ লিডার সব আশেপাশে। কি মনে হয়, পেরেছিলাম শেষ পর্যন্ত।
না ভাগ্যে ভালো কিছু ছিল না। সবাইকে হতাশ করে নিচে পড়ে গেলাম। এই অবস্থাতেও জেপি তিন নম্বর এটেম্প্ট নিতে বললো। তখন নিয়ম ছিল তিনবার চেষ্টা করলে কি জানি একটা ছাড় আছে। আমিও হাউজের পরাজয়ের ভারটা নিজের কাঁধে নিতে চাচ্ছিলাম না। অগত্যা পরের চেষ্টা শুরু করতে গেলাম।
কিন্তু কিরণ কুমার স্যার বললেন না দরকার নাই। লাভ হবে না। আমিও তাও শুনবো না। উনি বোঝালেন কোন অসুবিধা নাই তেমন কিছু হবে না।
নিজেকে খুব ছোট ছোট লাগলেও স্যারের কথায় আশ্বস্ত হলাম। পরে আরেকটা ইভেন্ট ছিল। টারজান রোপ। এটা তো সোজা। একেবারে ঝুলে পড়ে পার হলাম। তারপর ডাবল ডিচ। ফিনিশিং লাইনের সাদা দাগের উপরই শুয়ে পড়েছিলাম। পরবর্তী গ্রুপের জন্য জায়গা খালি করতে হবে। তাই অনেক কষ্টে ফার্স্ট এইড টেন্টে পৌঁছলাম। সেখান থেকে সোজা হাসপাতাল।
কিরণ কুমার স্যার আমাকে আশ্বস্ত করার জন্যই বলেছিলেন। তিন্তু সেটা সত্য ছিলনা। তেমন কিছুই হল। আমি ডিসকোয়ালি হলাম। হাউজও থার্ড হল। কিচ্ছু করার নাই, আমি শত চেষ্টা করলেও সেটা পারতাম না।
এরপর আরও সাত দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। মাঝখানে সাভার সিএমএইচে যেতে হলো এক্স-রে’র জন্য। তেমন সিরিয়াস কিছু হয় নাই। তবে ডাক্তার বললো, আমার ডানের কলার বোনটা আর কখনো সোজা হবেনা। আজীবন সেটা বাঁকাই থাকবে।
চার পাঁচ ‘শ মানুষ কেবল আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। হতাশ করি আর যাই করি। ক্লাস এইটে এমন অভিজ্ঞতার কথা কি ক্যাডেট ছাড়া কেউ ভাবতে পারে? এজন্যেই এইটের অবস্ট্যাক্লের কথাটা সবসময় মনে পড়ে। আজীবন মনে থাকবে।
this is how we,the cadets,learn that obstacles are not to impede us, they are there so that we can overcome them.....
Cadets Rulez!
monkey rope deya niye amar class 10-11 shobshomoy ee jhamela hoisilo.... he he he 😛
MD....nice one...
Amar ta kobe likhbo bujhteci na,
Cls 12 er shomoy j ami r aungon hannan re principal r doctor sir er kace fashailam!!!
Likhboni ekshomoy
Cadets --- R Bosses.
দেখতে না দেখতেই সব পার হয়ে যথারীতি চলে এলাম সিক্স ফিটের কাছ(: P)ে.....vabtesi
tor jodi batha ta na thakto!!!isss...
আমার শালা ঝামেলা লাগত টারজান রোপে...হাস্যকর কিন্তু কেন জানি এইটে নাইনে ডরাইতাম...
tor moto akta exm jody akhon iut hospitale boshe dite partam???!!!! ahhh vabtei valo lagtese.
আইহায়- আমাদের অবস্ট্যাকল ছিলো না, ইশশশস...
আমাদের অবস্ট্যাকল ছিলো না, missed.
হসপিটালের কাহিনী পড়ে মজা পাইলাম।
তা থাকবে কেন...তোরা ক্যাডেট ছিলি নাকি...
মাইর দিয়া ভর্তা বানায়া সেই ভর্তা দিয়া ভাত খাবো
:gulli: :gulli: :gulli: :khekz: :khekz:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
বলসিলাম না যে samjhang খাইতে একটু বেশি ভালবাসে... 😛
আমাদের অবস্ট্যাকলে সবচেয়ে মজার দৃশ্য ছিলো, আমাদের ব্যাচের মইনের ৬ফিট ওয়াল পার হওয়ার চেষ্টা করাটা। ও নিজেই ৬ ফিট লম্বা, কিন্তু কোনদিন সেই ওয়াল পার হইতে পারে নাই। 😀 😀
কিরে টার্মেন্ড পরীক্ষা আছেনি সামনে? যেভাবে সিসিবি রিভিশন দিতাছোস 😀
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
কামরুল ভাই, কন তো দেহি ১২০৩৪ নম্বর কমেন্ট কে করছিল এবং কি লিখেছিল??? :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
😮 ~x( 😮 ~x(
আপনের প্রিপারেশন ভাল হয় নাই... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
;)) ;)) একটা পুরানো কথা মনে পড়ে গেলো, তাই হাসি এলো। ;))