১.
বৃষ্টি পড়ছিলো।।অরকা রি ইউনিওয়নে এসে ইমরান এমন প্রকৃতি বেশ উপভোগ ই করছিলো।।একটু পরেই শিরোনামহীনের কনসারট।।দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।।হঠাত চোখ আটকে গেলো।।পাশে যে শাওন ছিলো তা যেনো খেয়ালই করেনি,বৃষ্টি উপেক্ষা করেই পিছু নিলো হঠাত দেখা সেই রমণীর পিছে পিছে।।পরিচয় জানা আবশ্যক।।বলেই ফেললো,”ওয়াও”।।
দেখা গেলো যে রমণী ২৪ ব্যাচ সিনিয়র এক ভাইয়ের কন্যা।।ভাবলো মন্দ নয়।।সে যাত্রা বুঝি বিধি সাথেই ছিলো কেনোনা আরও জানা গেলো যে যুবতী যুবকের ইয়ারমেট।।আর পায় কে,ইমরানের আকাশে বাতাসে ভাস্তে শুরু করলো রঙ বেরঙ্গের মেঘ।।আর কিসের রি ইউনিয়ন কিসের কি!!সারাটা সময় মানে ঐ ৪টা দিন যুবক শুশুমাত্র নাম না জানা যুবতীর পিছন ছুটে চললো।।এবার বুঝি সিঙ্গেল থাকার দিন ফুরোলো।।অনেক কষ্টে সৃষ্টে রমণীর নাম আবিষ্কার হলো।আনিকা!!
এরপর চললো ইনভেস্টিগেশন।।ইমরানের চেহারা ছুরত মাশাল্লাহ ভালো।।সে ভাবলো মেয়ে যদি সিঙ্গেল থাকে তবে একে তার লাগবেই।।ফেসবুক আই ডি ও অবশেষে পাওয়া গেলো।।তারপর ছেলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলো।।প্রথমে অ্যাড না করলেও ছেলে টেক্সট করার পর মেয়ে অ্যাড করলো তাকে।।এরপর সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত গুলোর শুরু হলো।।পটানোর সময়কাল।।রূপ আর গুণের প্রশংসায় মেয়েকে আসতে আসতে ভালো বন্ধু বানিয়ে ফেললো সে।।জানা গেলো যে মেয়ের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল।।আর পায় কে!!
ইমরান তখন আকাশে উড়ছিলো।।ঐ কয়েকটা দিন ভিঞ্চি সাহেব ইমরান কে দেখলে শিউড়লি মোনালিসার জায়গায় ইমরান কে বসিয়ে আরেকটা বিখ্যাত চিত্রকর্ম করেই ফেলতেন।।ইমরান নিয়মিত স্টক করতো আনিকাকে।।মেয়ের সাথে কিছু ব্যাপার অবশ্যি একেবারেই যেতোনা ইমরানের।।কারণ আনিকা একটু মডার্ন ওয়েতে চলাফেরা করতে পছন্দ করতো।।আর ইমরান এদিক দিয়ে কিছুটা সাদাসিধে টাইপের।।তবে এসবকে সে থোড়াই কেয়ার করতো।।কেননা তার মনে তখন একশো হাজারটা রঙ্গিন প্রজাপতি উড়ছে,যার প্রতিটার মুখ যেনো আনিকার মতো দেখতে!!
না পারতে একদিন বলেও ফেললো যে সে আনিকাকে ভালোবাসে!ইউজুয়ালি মেয়েরা যা করে।আনিকা শুরুতে এমন একটা ভাব করলো যেনো কিছুই বোঝেনা,রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লো।অবশ্যি ৫ দিনের মাঝেই তারা একে অপরকে ভালোবাসি শব্দটি বলার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রিলেশনশিপে গেলো।।
২.
তাসনিম পড়তো ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজে,সে ছিল ইমরানের সবচেয়ে কাছের বান্ধবী।।যথারীতি সে সব কিছুই শুনতো এবং জানতো।।আর আনিকার সাথে ইমরানের রিলেশন হওয়ার খবরটা জানার পর সেদিন প্রচন্ড কেঁদেছিল সে।।তবে একটুও বুঝতে দেয়নি,একা একা কাদতো।অনেক,অনেক্টা ভালোবাসতো সে ইমরানকে,এভাবে ও অন্যের হয়ে যাবে বুঝতেও পারেনি তাসনিম।।বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা,দুটি সত্ত্বার মাঝামাঝি থেকে সবচেয়ে কঠিন সময়গুলো বুঝি তাসনিমই পাড় করতে শুরু করল।।
ইমরান ও যে বুঝতোনা তাও নয়।।কিন্তু একবার হারালে হৃদয়,ফেরানো তাকে দায়!তাই যাইই হোক সে অন্তত এত ভালো একটা বন্ধুকে হারাতে চায়নি।।দেখা যেতো যে রাতের বেলা সে হয়তো আনিকা্র সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছে,আনিকা পড়তে বসেছে।।ঘুম যাতে চলে না আসে সেজন্য সে ঘন্টার পর ঘন্টা তাসনিমের সাথে কথা বলতো।।এমনও দিন গেছে যে আনিকা আর কথাই বলেনি।।তাসনিমের সাথে সারারাত ফোনে কথা বলে শেষে মন টন খারাপ করে ঘুমুতে যেতো ইমরান।
আনিকার জন্য ডেডিকশনের কোনো কমতি কখনোই ছিলো না ইমরানের।।এদিকে তাসনিম সব জেনে শুনেও ওকে সাপোর্ট দিয়ে যেত,একটাই কারণ,নিজের ভালোবাসার ভালোবাসাকে সে শ্রদ্ধা করতো।।আর ইমরানের খুশিই তাকে সব থেকে খুশি করতো।।তাই হাসিমুখে এই চরম নিষ্ঠুরতাকে সহ্য করতো বেচারি।।
আনিকা আবার চেস্টা করতো ইমরাবনের উপর সবসময় কর্তৃত্ব খাটাতে,ইমরান তাতে খুব বেশি নারাজ হতোনা।।তবে একটু হলেও ওরও খারাপ লাগতো।যাইই হোক না কেন ইমরান শুধু জানতো যে কোনভাবেই তার আনিকাকে ছাড়া চলবে না আর আনিকাকে সে হারাতেও দিতোনা তাই।।বরং মেয়েটার সব আবদার,সব রাগ,অভিমান নিজের করে নিয়ে তাকে আরও বেশি করে ভালোবাসতো।।
আর তাদের ভালোবাসার গল্পের মাঝে যাযাবর অনেকটা দিনই কাটিয়ে দেয় তাসনিম।।দুজন দুরকমের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও যে ভালোবাসা নামক আজব এক বন্ধনে ইমরান ও আনিকা আবদ্ধ ছিলো তাতে কিন্তু আনিকার থেকে ইমরানের চেস্টাই বেশি ছিলো।।কিজানি আনিকা হয়তো ইমরানের দুর্বলতাকে টনিক হিসেবে নিয়েছিলো।।যাতে করে সে নিজের ইচ্ছেমতো চলতে পারতো আরও।।অনেক কিছু ইমরানের খারাপ লাগলেও সে চেপে যেতো,কারণ ঐ যে হারাবার ভয়।।
৩.
এদিকে ইমরানের কলেজমেট যারাই জানতো ইমরান আর আনিকার রিলেশন যারা আনিকাকে চিনতো আর কি তারা কেউই ইমরান কে সাপোর্ট করতো না এই ব্যাপারে।।আনিকার নাকি আগেও রিলেশন ছিলো অন্য একটা ছেলের সাথে যা সে চেপে গেছে ইমরানের কাছে থেকে।এমনকি এখনও আনিকা ইমরান ছাড়াও আরো ছেলেদের সাথে কথা বলে ফোনে।।
বিপত্তি বাধলো যেদিন থেকে ইমরান প্রায় রাতেই আনিকার ফোন ওয়েটিং পেতে থাকলো,অথচ আনিকা তাকে আর আগের মতো সময় দিতোনা।নানান অযুহাত দেখাতো,একটা সময় ইমরান হাতেনাতে ধরে ফেললো যে আনিকা ডাবল টাইমিং করার চেস্টা করছে।।খুব খুব কষ্ট পেলো ইমরান।।মনে মনে ভাবলো,যার জন্য এতোটা করলাম বিনিময়ে এই দিলো!এমনই জীবন,কাউকেই আসলে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসতে নেই কখনো,তাতে সবসময়ি হারানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আরোও অবাক হলো যেদিন আনিকা জানিয়ে দিলো অন্য আরেকটি ছেলের সাথে সে এনগেজড।।যেনো আকাশ থেকে পড়লো ইমরান।।এছাড়া কিই ভবা করার ছিলো তার,অথচ সেই সময়টাতে তার আনিকাকে সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিলো।।কেননা তার এডমিশন টাইম এ ছিলো ঘটনাটি।।প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে ও।নিজের প্রতি বিশ্বাসই হারিয়ে ফেলে একতা পরযায়ে।তবে সত্যিটা কি,নারী ভাংতে পারে,নারী গড়তেও পারে।।সেই সময়টাতে ইমরানকে সর্বক্ষণ সংগ আর উৎসাহ দিত তাসনিম।।
আর ইমরানও বুঝে ফেলে প্রকৃত ভালোবাসার মানে।।হয়তো সেদিন তাসনিম পাশে ছিলো বলেই ও খুব তাড়াতাড়িই আনিকাকে ভুলে যেতে পেরেছে আর আজ সে তার ডিজায়ারড পজিশনেও যেতে পেরেছে আল্লাহর রহমতে।।
সেদিনটাতেও বৃষ্টি পড়ছিলো,যথারীতি আরেকটা অরকা রি ইউনিয়নের প্রস্তুতি চলছিলো।।অরকার আবার একটিভ সদস্য ইমরান,ব্যাচ রিপ্রেজেনটেটিভ অব ০৭-১৩ ব্যাচ।কাকভেজা হয়ে অরকা অফিস থেকে বেড়িয়ে ভাবলো আজ বুঝি ঠান্ডা লেগেই যাবে।।বাইরে তাসনিম দাঁড়িয়ে ছিল।।যত্ন করে ইমরানের মাথা আর মুখ মুছে দিলো।।পরম নির্ভরতার চোখে তাকিয়ে রইলো ইমরান,অনেকটা সময় যেনো।।আর মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানালো এই স্বর্গের অপ্সরীটিকে তার জীবনে পাঠাবার জন্য।এবারের অরকা রিইউনিয়ন কিংবা এক্সক্যাফ রিইউনিয়ন,কোনোটাতেই তারা হয়তো একা যাবেনা।।কারণ,
“কপালের লেখন,যায়না খন্ডান।”
(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
১টি মন্তব্য “নীড়ে ফেরা পাখি”
মন্তব্য করুন
লেখালেখি চলুক।
বানানের দিকে একটু খেয়াল রেখো ভাইয়া।
অনেক শুভকামনা।