মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি যত টুকু জানি আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তার মানে আপনি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন। ইসলাম ধর্মে “পরকাল” বলে একটা বিষয় আছে। যেটাতে বিশ্বাস না করলে মুসলিম হওয়া যায় না। সেখানে দুনিয়ার সকল কাজের হিসেব দিতে হয়। আমাকে যেমন হিসাব দিতে হবে যে আমার নিরাপরাধ এত গুলা ভাই-বোন মারা গেল তাদের জন্য আমি কি করলাম? আপনাকেও হিসাব দিতে হবে যে, আপনি শপথ করে এই মানুষগুলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কেন তাদের বাঁচাতে পাড়লেননা? ঘটনার পর এত গুলা মানুষকে আপনি কি ভাবে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিলেন? আপনি কি ব্যবস্থা নিলেন দোষীদের বিরুদ্ধে? আপনি দেশের মাথা, এখানে হয়ত কেউ আপনাকে এই উত্তর গুলা দিতে বাধ্য করবে না, কিন্তু সেই হাসরের ময়দানে উত্তর দেয়ার জন্য কিছু নোট তৈরি করবেন আশা করি। যদি ইসলাম ধর্ম বলে আসলেই কিছু থাকে তাহলে আপনাকে এই উত্তর আল্লাহ’র সামনে দিতে হবেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ দেশে আগুন লেগে এত গুলা মানুষ পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। সেখানে ইমারজেন্সী ফায়ার এক্সিট ছিল না, স্টোর ছিল জেনারেটর রুমের পাশে। এগুলা পরিদর্শনের জন্য কি সরকারী কোনো সংস্থা নাই? ওরা কি ভাবে এসব কিছু দেখার পর ও এই গার্মেন্টস চালানোর উপযুক্ত বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দিল? এ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দায় কার? যাদের কারনে এত গুলা মানুষ পুড়ে মারা গেল তাদের কিছুই হবে না? তারা আবারও গার্মেন্টসের নামে শত শত মানুষ পুড়িয়ে মারার সুযোগ পাবে?
চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙ্গে পরে মানুষ গুলো মারা গেল। এই একই ফ্লাইওভারের এটা ৩য় দূর্ঘটনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কেন আপনি বা আপনার নির্দেশে চলা সংশ্লিষ্ট সংস্থা আগের বার যখন ১টা গার্ডার ভেঙ্গে পরেছিল তখন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করলেন না? তখনো এত গুলো মানুষ মরে নাই, এই জন্য? এবারতো মরল। এখন দয়া করে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন। যে ফ্লাইওভার তৈরির আগেই তিন বার ভেঙ্গে পরে সে ফ্লাইওভার কি ভাবে মানুষের ব্যবহার উপযোগী হবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কেন আপনি এসব বিষয় গুলাকে দেখে শুধু তদন্ত কমেটি করে ছেড়ে দিচ্ছেন? ঐ ফ্লাইওভারের ধসে পরা গার্ডারের নিচে সজীব ওয়াজেদ জয় চাপা পরছে না বলে? নাকি পুতুল ঐ তাজরিন গার্মেন্টসে আগুনে আটকা পরছে না বলে? এ ধরনের দূর্ঘটনায় আপনার পরিবারের কারো কিছু হলেও কি শুধু তদন্ত কমেটি, ২০০০০/- টাকা আর শোক দিবস ঘোষনা করতে পারতেন? অবশ্য ওনাদের এধরনের পরিস্থিতির শিকার হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কারন ওনারা যে সব দেশে থাকেন সেখানকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমাদের দেশের মত এত দূর্বল নয়। সেখানে নিশ্চয়ই নির্মানাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙ্গে পরে না, অবশ্যই সেসব দেশে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কোনো কারখানা চালানোর অনুমতি সরকার দেয় না। এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে হল, কেন যে মনে হল বুঝতেছি না। আপনি অনেক ব্যস্ত থাকেন। টিভিতে নিউজ ছাড়া অন্য কিছু দেখার আপনার কোনো সুযোগ বা সময় নিশ্চয়ই হয় না। প্যারাসুট নারিকেল তেলের একটা বিজ্ঞাপন আছে। যেখানে দেখানো হয় একটা লোকের ভাঙ্গাচুরা, নোংরা একটা নারিকেল তেলের কারখানা আছে। সেই লোকের বাসা থেকে ফোন আসে নারিকেল তেল নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে বাড়ি ফেরার সময় দোকান থেকে প্যারাস্যুট তেল কেনে আর বলে পরিবারের জন্য ভাল জিনিসটাই নিচ্ছি। আপনার সন্তান, ওনারা সৌভাগ্যবান। সোনার চামচ মুখে নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন তাই এমন দেশ ছেড়ে সোনার দেশে গিয়ে থাকতে পারছেন। কিন্তু আমাদের গরিব মানুষদের সে সুযোগটুকো নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমাদের এদেশের ফ্লাইওভারের নীচ দিয়েই হাঁটতে হয়, এদেশের গার্মেন্টসেই চাকুরি করতে হয়।
হ্যা, আমরা অবুঝ না। আমরা বুঝি যে ১৫ কোটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, আপনি যদি তাজরিন গার্মেন্টস চালু করার ক্লিয়ারেন্স যার স্বাক্ষরে হয়েছে, মালিক পক্ষ কেন উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নাই তাদের গার্মেণ্টস চালানোর অনুমতি বাতিল করে, দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেন, সেই ফ্লাইওভারের ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিল করে তাদের ও দায়ী সকলকে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করেন তাহলে হয়তো পরবর্তীতে এতগুলো প্রাণ আর যাবে না। তাহলে হয়তো অন্যরা এ ধরনের কাজ করার আগে একবার হলেও ভাববে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ব্রিজ, রাস্তা বা এয়ার্পোটে আপনার বাবা “শেখ মুজিবর রহমান” এর নাম না বসালেও কোনো সমস্যা নাই। এই বাংলাদেশের জন্য, এই জাতির জন্য উনি যা করে গেছেন তা কখনই মুছে যাবার নয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম জানি আওয়ামীলীগ থাকুক আর না থাকুক, যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, ইতিহাস যতই বিকৃত করা হোক না কেন শেখ মুজিবর রহমানের অবদান ঢেকে ফেলা যাবে না। আপনি এত বড় একজন নেতার গর্বিত কন্যা। আপনিও এমন কিছু করুন এই দেশটার জন্য যেন এদেশের মানুষ জন্ম-জন্মান্তর আপনার বাবার মত আপনাকেও মনে রাখে। শুধু শেখ মুজিবের কন্যা হিসেবে না, আপনার ভাল কাজগুলোর জন্য আপনাকে মাথায় তুলে রাখে। আর সেগুলো করার এখনি সময়। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৫৭ বছর। আমার মনে হয় আপনার কাজ শেষ করার সময় আপনি নাও পেতে পারেন আরও পরে শুরু করলে।
মাননীয় প্রধামন্ত্রী, আমি এবং আমার মত আরো লাখো মানুষ আছে যাদের কোন নিকটজন বা পরিচিত কেও এই দূর্ঘটনায় নিহত হয় নাই। কিন্তু আমরা গত দুই দিন ঘুমাতে পারছে না, কোনো কাজে মন দিতে পারছি না। তন্দ্রা এলেই দুঃসপ্ন দেখছি আগুনের বা বড় পাহাড় মাথায় ভেঙ্গে পরার। অন্ধকার হলেই মনে হচ্ছে কেও আমাকে জিজ্ঞেস করছে “কি দোষ করেছিলাম আমরা? কেন আমাদের এভাবে মরতে হল?” মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরছে কি দোষ ছিল এই শত শত মানুষের? কেন তাদের পুড়ে কয়লা হতে হল? চাপা পরতে হল টন টন কংক্রীটের পাথরের নীচে? দয়া করে এই দুঃসপ্ন থেকে আমাদের মুক্তি দিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জোরজবরদস্তি আমাদের রক্ষাকর্তার দায়িত্ব নেন নাই। আমরাই আপনার ওপর ভরসা করে, আপনাকে ভোট দিয়ে আমাদের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাকে দিয়েছি। আপনি সেই দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ করেছেন। দয়াকরে সেই ওয়াদা ভুলে যাবেন না। দয়া করে আমাদের দেশটাকে “জয়” বা “পুতুলের” বাসের যোগ্য দেশ করে দিন। যে দেশে আপনিও আপনার পরিবারের সকলকে নিয়ে একসাথে থাকতে পারেন। আমাদের বাবা-মায়েরাও সারাদিন এই দুশ্চিন্তায় থাকবে না “ছেলে সুস্থ অবস্থায় ঘরে ফিরবেতো?”
একদম মনের কথাটাই বলসেন ভাই 🙁 (সম্পাদিত)
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
:hatsoff:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
বাংলাদেশ যেনো হীরক রাজার দেশ হয়ে গেছে।
ডিফারেন্স একটাই ছবি তে ছিলো একটা হীরক রাজা আর বাংলাদেশে সব ক্ষমতাবান লোকেরা একেকজন হীরক রাজা।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
অসাধারন মোর্শেদ
চমৎকার লেখা মোর্শেদ ভাই।
মোর্শেদ তোমার লেখাটি অসাধারণ হয়েছে! এমন একটি সাহসী লেখা লেখার জন্য তোমাকে একবার না অসংখ্যবার ধন্যবাদ দিতে হয়।
আমাদের নেতাদের একা দেশে থাকা আর তাদের পরিবারের সকল সদস্যদের বিদেশে থাকা নিয়ে আমি বহুবার বহু লোককে বলেছি, কিন্ত কাউকেউ কিছু বোঝানো যায়না। সবাই কেবল তাদের পক্ষেই কথা বলে। বলে যে এটা ঠিকই আছে, এই দেশে তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নেই, তাই পিতামাতা হিসাবে তাদের কর্তব্যই হলো, সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের বাইরে তাদের রাখা।
আর আমার মত দুই-একটা গর্দভ যারা, বিদেশের সব সুখ রেখে দেশে এসেছে শুধুই দেশের জন্য সামান্য কিছু হলেও করতে তাদেরকে বড় মাপের ছাগল মনে করে। এমনকি অনেক নেতা, আমলা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের কাছে অনেকবার হেনস্থাও হয়েছি।
আবার অনেক পলায়নবাদীদের দেখেছি, বাংলাদেশ ছেড়ে বাইরের দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করে সেখানেই স্থায়ী হয়েছে। দেশের কাজ তো অনেক দূরের কথা। তারা আবার মাঝে মধ্যে ঐ দর্শকের গ্যলারী থেকে বক্তৃতা দেয়, লেখা পাঠায়, কোন পথে কি করে এই দেশের উন্নতি হবে ইত্যাদি সম্পর্কে!
জানিনা শেষ পর্যন্ত কি হবে এই দেশের। হয়তো খুড়িয়ে খুড়িয়েই চিরকাল চলবে এই দেশ।
লিখাটি সাহসী ও সময়োপযোগী হয়েছে। আমাদের দেশের নেতা গোছের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগন যদি আদতেই দায়িত্বশীল ভুমিকা রাখেন, আমার এই দেশ সোনার বাংলা হতে খুব বেশি সময় নিবে না। ধন্যবাদ।
চমৎকার ..
:hatsoff: