ঘটনা: ১: আমার রুমমেট মবিন ভাই, তার মায়ের অপারেশন। খুব জরুরী রক্তের প্রয়োজন পড়ল হাসপাতালে বসে। এদিক ওদিক ছুটোছুটি। প্রায় ঘণ্টাখানেক খুঁজে রক্ত পাওয়া গেল। কিন্তু মানে একটা অজানা ভয় রয়ে গেল: আচ্ছা , রক্তটা সত্যিই বিশুদ্ধতো ???
পরদিন সকালে মবিন ভাই রুমে আসলেন।
=> কি খবর মবিন ভাই, আন্টির অবস্থা কি?
: আরে আর বোল না, কাল রাতে A+ রক্ত খুঁজতে খুঁজতে অবস্থা খারাপ …
=> আরে কি বলেন, আমারই তো A+ ছিল …
: তাই নাকি ?
… …. … …
… … … … … …. ….
[লক্ষ্য করুন: আমরা নিজের রুমমেটের রক্তের গ্রুপই জানি না … …]
ঘটনা: ২: আমার চাচীর অপারেশন। রক্ত লাগবে প্রায় ৪ ব্যাগ … A- , খুবই ঝামেলায় পড়লাম … ৪ ব্যাগ A- !!! !!! যাই হোক , ভাগ্য ভাল থাকায় পেয়ে গেলাম, তবে কষ্ট কম হয়নি … … চাচীকে বাসায় নিয়ে আসার পর তার ৫/৬ জন কলিগ তাকে দেখতে আসল। সব ঘটনা শুনে , তারা তিন জনই বলে উঠল যে তাদের রক্তের গ্রুগ A- … … … আর আমার চাচী অবাক হয়ে বলছে, কী আশ্চর্য, প্রতিদিন তোমাদের সাথে এক টেবিলে কাজ করি, কত গল্প করি, অথচ তোমাদের Blood group টা কোনদিন জিজ্ঞেস করা হয়নি !!!
[লক্ষ্য করুন: আমরা আমাদের খুব কাছের মানুষগুলোর রক্তের গ্রুপই জানি না … …]
মুল আলোচনা
আমার এই পোস্টের একটাই লক্ষ্য : সবাইকে ব্যাক্তিগত Blood Bank তৈরীতে উৎসাহিত করা। কিন্তু কথা হচ্ছে ব্যাক্তিগত Blood Bank জিনিসটা কী???
Personal Blood Bank
আপনার পরিচিত মানুষগুলোর রক্তের গ্রুপ সংগ্রহে রাখা।এটা আসলে কোন কাজ নয়, এটা একটা অভ্যাস। একটু লক্ষ্য করুন, আপনার পরিচিত কমপক্ষে ৫০০/৬০০ মানুষ আছে, যাদের সাথে আপনার নিয়মিত দেখা হয়। আপনার এলাকার মানুষজন, আপনার নিকটাত্মীয়, আনার অফিস কলিগ, আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আরও অনেকে … … একবার ভেবে দেখুন, এদর সবার রক্তের গ্রপ যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে আপনি হতে পারেন একজন “মোবাইল Blood Bank” … …
কীভাবে তৈরি করবেন আপনার নিজস্ব ব্লাড ব্যাংক???
আগেই বলেছি, এটা আসলে কোন কাজ নয়, এটা একটা অভ্যাস। তাই আপনাকে অভ্যস্ত হতে হবে, বন্ধু-বান্ধব যার সাথেই কথা হবে তার রক্তের গ্রুপ জেনে নিন এবং সংগ্রহে রাখুন। লিখে রাখাটা অনেকের কাছেই বাড়তি ঝামেলা মনে হতে পারে। তাই একটা টেকনিক Follow করতে পারেন। সেটা হচ্ছে আপনার মোবাইলে Contact Number এ নামের সামনে রক্তের গ্রুপটা লিখে রাখা।
যেমন: Abbu A+
Ammu O-
Bhabi AB-
Tipu vai A-
Ovi B+
… … …
এভাবে … …
আমার ধারণা Personal Blood Bank তৈরি করার এটাই সবচেয়ে সহজ উপায় । তবে আমি পরামর্শ দিব, বাসায় একটা “পারিবারিক Blood Bank” তৈরি করার। অর্থাত মাত্র ১০/১৫ টাকা দিয়ে ছোট্ট একটা ডাইরি কিনুন যেটা সবসময় আপনার ড্রইং রুমে থাকবে এবং আপনি, আপনার মিসেস, আপনার সন্তান নিজের সুবিধামত সময়ে নতুন মানুষগুলির রক্তের গ্রুপ সেখানে লিখে রাখবেন। ব্যাস, এভাবেই একদিন, দুদিন, একমাস, দুমাস … … তিন মাস পর দেখবেন আপনার “পারিবারিক Blood Bank” কত বড় হয়ে গেছে … … আর এভাবে আপনার সন্তানের মাঝে ছোটবেলা থেকেই একটা ভাল অভ্যাস গড়ে উঠবে … …
সুবিধা
কোন একসময় জরুরী প্রয়োজনে ডাক্তারের মুখ থেকে “রক্ত লাগবে” শুনলেই আমরা ঘাবড়ে যাই, আর ঘাবড়াবেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, আপনি রোগীকে যে রক্ত দিচ্ছেন (মানে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক থেকে সংগৃহীত), সেটা কি আদৌ বিশুদ্ধ ??? নাকি, কোন নেশাকারীর রক্ত ??? কিংবা যে অপিরিচিত মানুষটার কাছ থেকে রক্ত নিচ্ছেন, সে কি নেশা করে ???? আপনি জানেন না। আর জরুরী প্রয়োজনের সময় এত কিছু ভাবার সময় নেই … … কিন্তু বিষয়টার গুরুত্ব চিন্তা করে দেখুন … … যদিও রোগীর শরীরে দেয়ার আগে রক্তের বিশুদ্ধতা টেস্ট করে দেখা হয়, কিন্তু ভাই, আমাদের দেশটার নাম “বাংলাদেশ” … এখানে সবাই হয় “না হওয়ার মত” … … তাই আপনার পরিচিত নিকটজনই হতে পারে আপনার সবচেয়ে নিরাপদ ঠিকানা … … নিজের প্রয়োজনে যেমন লাগবে, তেমনি জরুরী মুহূর্তে বন্ধু-বান্ধবের সাহায্যেও এগিয়ে আসতে পারবেন … …
বি.দ্র.
Medical Science এর মতে, খুব বেশি কাছের Relative দের কাছ থেকে রক্ত না নেয়াই Better। তবে মনে রাখবেন, আমাদের সব পরিচিত কাছের মানুষই কিন্তু আমাদের কাছের আত্মীয় নয় … … যেমন: বন্ধু-বান্ধব , কলিগ … …
আমি যা করি
ভাই , আমার এই পোস্ট অনেকের কাছেই “আতলামি” মনে হতে পারে … … কিন্তু যারা রক্তের ঝামেলায় পড়েছেন, তারা বুঝবেন “রক্ত কী জিনিস !!!”
আমার পিসিতে Blood Bank নামে একটা MS Access ফাইল আছে, তাতে তিনটি Column :
1. Name 2.Contact Number 3. Blood Group
যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে Search বক্সে প্রয়োজনীয় রক্তের গ্রুপটি বসিয়ে দিলেই কাজ শেষ …. … একটার পর একটা পরিচিত জনের নাম চলে আসে … …
তাছাড়া একই সাথে Contact Number গুলোর Back Up এর কাজও হয়ে যায় …
পরিশেষ
আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য “সবার মাঝে রক্তের ব্যাপারে ব্যাক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি করা,” তবে এর মানে এই নয় যে, আমরা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দেব না। যারা নিয়মিত ডোনার, তারা অবশ্যই নিয়মিত অন্যকে রক্ত দিব। তবে সেই সাথে নিজের একটা ব্লাড ব্যাংক থাকলে আরও ভাল হয় না?
মনে রাখবেন, প্রয়োজনের সময় আপনার শুধু “রক্ত” দরকার না, দরকার “বিশুদ্ধ নিরাপদ রক্ত” … … তাই আপনার পরিচিত নিকটজনই হতে পারে আপনার সবচেয়ে নিরাপদ ঠিকানা … …
আসুন আজ থেকে শুরু করুন … … অন্যকেও উৎসাহিত করুন …. … ঐ যে কবিতাটা শুনেছেন না …
ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল …
গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল … …
[যারা কোন ব্লাড ডোনার গ্রুপ (যেমন: বাধন, সন্ধানী …)এর সাথে কাজ করেছেন, তারা হয়ত এ পদ্ধতির সাথে পরিচিত, কিন্তু অন্যদেরকে এ পদ্ধতিতে উতসাহিত করতেই আমার এই পোস্ট দেয়া। ]
1st 🙂
সাধুবাদ জানাই।
দারুন এবং কার্যকর একটি পোষ্ট, জীবন রক্ষায় সহায়ক হবে।
আমরা সিসিবিতেও একটা ব্লাড গ্রুপ লিস্ট মেইনটেইন করতে পারি।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
😀 😀 😀
চমৎকার পোস্ট। ভালো আইডিয়া। ধন্যবাদ তারিক। :thumbup:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
উপকারী পোস্ট। আমার ইনজুরির সময় রক্ত অনেক জরুরী হয়ে পড়েছিল, তখন সবাই থাকায় রক্ত নিয়ে কোন সমস্যা হয় নি, তবুও রক্তের প্রয়োজন যে কখন হয়ে পড়ে তা বলা যায় না। আমাদের সিসিবি ডেটাবেসে রক্তের গ্রুপ নামে একটা ফিল্ড থাকলে ভাল হয়।
অথবা কমন একটা ডেটাবেস থাকলেও ভাল হয়। আইইউটি এর পোলাপান মিলে একটা সাইটে রক্তের গ্রুপ আপডেট করছিল, কিন্তু মেইনটেনেন্স এর অভাবে সাইটটার এখন বেহাল অবস্থা।
ভিজিট করে দেখতে পারেন http://www.lookingforblood.com
দারুণ .......ঢাকা ভার্সিটিতে আমাদের এমন একটা চেইন আছে....নিজেদের প্রয়োজন ছাড়াও অন্যদের রক্ত দেই...
পুরাই অফ টপিক: একজনার রক্ত আরেকজনার শরিরে দিলে তাদের মধ্যের সম্পর্ককে কি রক্তের বন্ধন বলা যায়?............ :-B
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
:thumbup:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
খুবই উপকারী এবং দারুণ একটা পোস্ট।
অনেক অনেক ধন্যবাদ তারিক।
:thumbup: :thumbup:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
:thumbup: :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
চমৎকার একটা প্রস্তাব তারিক। :thumbup:
আমার রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ।
আমারো O পজেটিভ।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ঐ
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ঐ
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমার A+,
আমার কাছে আমার ইউনিটের একটা ডাটাবেজ আছে যেইখানে একটা ফিল্ড আছে রক্তের গ্রুপ। তাই দরকারের সময় খুব কাজ এ লাগে
ভালো আইডিয়া দিয়েছো, দেখি লিখা শুরু করবো কোথাও।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
চমৎকার এবং দরকারী পোষ্ট।সরাসরি ৫ তারা দাগাইলাম আর প্রিয়তে যোগ করলাম।
আমার মামীর ব্লাড ক্যান্সার ছিল তখন বুঝেছি এক ব্যাগ রক্ত কত মূল্যবান ! ত্রিশ ব্যাগেরও বেশি রক্ত আমরা ম্যানেজ করেছি আল্লাহ্র রহমতে কিন্তু বেগ পেতে হয়েছে বেশ।তারপরও অবধারিতভাবেই শেষরক্ষা হয়নি।এ মেসেরই ১১ তারিখে বিদায় নিলেন।
চমতকার একটা পোস্ট এবং নতুন ধরনের এই আিডিয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।