পেপার টা সম্পর্কে একটি হ্যাঁ সূচক ই-মেইল পাওয়ার পর থেকে মনের ভিতরে একটি সুন্দর অনুভুতি শুরু হল। জাপান ভ্রমনের এই সুযোগ কানাডীয় সরকারের খরচে ! যখন প্রাথমিক স্কুলে পড়তাম, তখন সম্ভবত চীন-জাপান নিয়ে একটি গল্প পড়ান হত। তাই ছোট বেলা থেকেই এই দুটো দেশ সম্পর্কে একটি কৌতূহল ছিল। যাহোক, এবার সেটা মেটানোর পালা। প্রফেসর ও খুশি, শুধু খুশি নয় জীবন সঙ্গিনী, যাচ্ছি যে আমি একাই। শেষে বিভিন্ন বাক্য ব্যয়ে, তার সম্মতি পাওয়া গেল। শর্ত, অনেক অনেক উপহার।
বিদেশ ভ্রমনের প্রথম স্টেপ ভিসা সংগ্রহ। জাপানী ভিসা আবার আমি যে শহরে থাকি সেখানে পাওয়া যাবে না। ছোট শহর, ক্যানাডিয়ানদের চোখে এটি একটি মফস্বল, তাই সব এম্বাসি এখানে নেই। যেতে হবে ক্যালগেরি, ৬০০ কিমি দূরে। বাসের টিকিট কেটে উঠে বসলাম, সঙ্গি এক ল্যাবমেট, তাঁকে ও যেতে হবে জাপানে। শীতের রাত, তাপমাত্রা শুন্যের বেশ নিচে। ১০-১১ ঘণ্টা বাসে চড়ার পর যখন ক্যালগেরি নামলাম, তখন সকাল। কিন্তু ভিসা মিটিং বিকালে, ৩ টায়। এই বাকি সময় টুকু কিভাবে কাটানো যায়? একটু হেঁটে দেখার চেষ্টা করলাম শহর টা, কিন্তু সেটা খুব একটা ভাল অপশন ছিল না, কিছু ক্ষণের মধ্যে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আস্তে হল আস্তানাতে, গ্রে হাউন্দ বাস স্টপে। একটি ব্যাপার বুঝতে পারলাম, ঘুরাঘুরি করার জন্য উৎসাহী সঙ্গীর দরকার। আর বড় শহরে পায়ে হেঁটে ঘোরা একটি বোকামি, বন্ধুর গাড়ি সবচেয়ে ভাল অপশন। যাহোক, দুপুরে পেটে যখন ক্ষুধা চরমে, তখন কিন্তু আমরা পায়ে হেঁটে ঠিকই কেএফসি খুজে বের করে ফেললাম। বুঝলাম, পেটের ক্ষুধা আর ভ্রমণের ক্ষুধা এক মাত্রায় পড়ে না।
বিকালে যখন ভিসা অফিসের কাজ শেষ করে বেরে হচ্ছি, তখন আমরা একেবারে শহরের ভিতরে। জানিনা কেন এরা শহর কেন্দ্র কে “ডাঊন টাওন” বলে। যাহোক, ক্যালগেরি ডাঊন টাওন দেখে তো আমাদের চোখ ছানাবড়া ! খুবই উন্নত, সাস্কাতুনের চেয়ে। বড় বড় শপিং মল আর ইমারতে ঠাসা শহর। সাস্কাতুনে ট্রাম নেই, এখানে ট্রাম আছে, বড় বড় কোম্পানির–মাইক্রোসফট, গুগল– হেড অফিস গুলো সব এখানেই।নিজেদেরকে স্মল টাউন পিপল বলে মনে হল।বড় বড় শহরে কখনও বেশি সময় বাস করা হয়নি, ইচ্ছাও করেনি। কিন্ত ক্যালগেরি দেখার পর সে বাসনা যে মনে উদয় হয়নি, তা বললে ভুল হবে। পরে জেনেছি, ক্যালগেরি পৃথিবীর সেরা পাঁচ আকর্ষণীয় শহরের মধ্যে একটি।
ক্যালগেরি শহর কেন্দ্রে আমাদের অভিযান শুরু হল, স্যুভেনির শপ খুজে বের করতে হবে।গুগল মানচিত্রের সাহায্যে কতগুলো দোকান খুজে বের করা হল, কিন্তু কোন কিছুই পছন্দ হচ্ছিল না। কিছু দোকান পাওয়া গেল, কিন্তু বিধি বাম, পাঁচ টা বেজে গেছে, দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অল্প কিছু কেনাকাটা করেই শান্ত থাকতে হল, কিন্তু স্যুভেনির যোগাড় করা গেল না।মনে মনে ভাবলাম, নেক্স টাইম। কিন্তু একটি জিনিস ঘটল আবাক করার মত, প্রায় ৬০+ এক মহিলা এসে অর্থ সাহায্য চাইল। তাঁকে সাহায্য করতে পেরেছিলাম কিনা মনে নেই, তবে তাঁর অভিযোগটা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল। তাঁর অভিযোগ, বয় ফ্রেন্ড এই মাসে টাকা দেয়নি কোন এক কারণে। ৬০+ এক মহিলাকে বয় ফ্রেন্ডের কাছে হাত পাততে হয়, এই ব্যপার টা খুবই বেদনাদায়ক। কোথায় তাঁর সন্তানেরা? নাকি কেউ নেই? পারিবারিক বন্ধন যে কত বড় আশীর্বাদ এবং পাওয়া, তা বড় বড় শহরের ছিন্নমূল মানুষ গুলোর দিকে না তাকালে বোঝা মুশকিল।
রাত বারটার দিকে ফিরতি বাস। জমপেশ খাওয়া দাওয়া করে বাসে উঠে বসলাম। ৮ ঘণ্টার এক ঘুমে সকালে সাস্কাতুন। একে সপ্তাহ পরে ভিসা আসল। মজার ব্যাপার হল, জাপান এম্বাসি ভিসা চার্জ রাখেনি, ফিরিয়ে দিয়েছে ৩০ ডলার। বাংলাদেশী পাসপোর্ট ধারীদের জন্য লিমিটেড ভিসা ফ্রী। জাপান আসলেই বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু।
(চলবে…)