বিষয় বিবেচনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিজ্ঞানের নবীনতম শাখা। এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে বৃটিশ বিজ্ঞানী অ্যালান টিউরিং এর হাত ধরে যার জন্ম এবং এখনো বিকাশমান। কিন্তু নতুন হলেও এর বৈচিত্র আর বহুমুখী সম্ভাবনার কারনে আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে এ. আই.আমাদের কাছে আর কোন অপরিচিত বিষয় নয়। বরং হলিউডি রংচংয়ে ছবির কল্যানে এইব্যাপারে আমাদের আগ্রহ চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে। আগ্রহের ঘাটতি না থাকলেও এই ব্যাপারে আমাদের জানাশোনা যে খুব বেশী তা বলা যায়না, এবং যেটুকুই জানি তার মাঝে বাস্তবতার চেয়ে কল্পনার মিশেলই বেশী। এ. আই.শুনলেই আমাদের বেশীরভাগের মাথায় সবার আগে যেটা ভেসে আসে তা হল কিছু বুদ্ধিমান রোবট আর তাদের নৃশংসতা! কিন্তু বাস্তবতাটা আসলে কি? এ. আই. কি আসলেই টার্মিনেটর- ম্যাট্রিক্সের মত ভয়ংকর কোন ব্যাপার, যেখানে রোবট মাত্রই মানুষের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দেয় নাকি আই রোবট, ওয়ালির মত মিষ্টি, বন্ধুত্বপূর্ণ কোন পরিবেশেও রোবটদের সাথে থাকা সম্ভব? নাকি এ. আই. এর কিছুইনা, শুধু গনিতের মারপ্যাঁচ আর নীরস কিছু অ্যালগরিদম? বা তার চেয়েও অন্যকিছু?
এ. আই. কি বুঝতে হলে আমাদের আগে পরিষ্কার হওয়া দরকার বুদ্ধিমত্তা বলতে কি বোঝায়। কোন কোন বৈশিষ্টের জন্য কাউকে বুদ্ধিমান বলাযেতে পারে? সত্যি বলতে কি বুদ্ধি ব্যাপারটা এত গোলমেলে যে সেটা পরিষ্কারকরে বোঝাতেই আরেকটা রচনা লিখে ফেলতে হবে! তাতেও যে সব পরিষ্কার করে বলা যায় এমনো না। তাই বিষদ আলোচনায় না গিয়ে আমরা অল্প কথায় সংগাটা শুধু জানব।
১৯৯৪ সালে “মেইনস্ট্রিম সায়েন্স অফ ইন্টেলিজেন্স” আকারে ৫২ জন বিজ্ঞানীর সম্পাদনায় বুদ্ধিমত্তার একটি আপাত সংগায়ন করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে,
A very general mental capability that, among other things, involves the ability to reason, plan, solve problems, think abstractly, comprehend complex ideas, learn quickly and learn from experience. It is not merely book learning, a narrow academic skill, or test-taking smarts. Rather, it reflects a broader and deeper capability for comprehending our surroundings—”catching on,” “making sense” of things, or “figuring out” what to do.
অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে একটা সাধারণ মানসিক ক্ষমতা যাযুক্তিসংগত কারণ সনাক্তকরণ, পরিকল্পনা, সমাস্যার সমাধান, বিমূর্ত চিন্তা, জটিল ধারণা অনুধাবণ, শেখার দ্রুততা এবং অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সাথে সম্পৃক্ত।এটা কেবল বই থেকে শেখা, সংকীর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা অথবা পরীক্ষায় বুদ্ধির স্বাক্ষর রাখা নয় বরং এটি বিশদ এবং গভীরভাবে আমাদের পরিবৃত্তকে অনুধাবন করার যোগ্যতাকে প্রতিফলিত করে।
মানে অন্যভাবে আমরা বলতে পারি ” পরিবর্তীত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবার জন্য তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাই বুদ্ধিমত্তা। ” এবং যে যত উদ্ভট কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে কার্যকরী সমাধান দিতে পারবে, সে তত বুদ্ধিমান! তবে ঠিকভাবে বুদ্ধিমত্তার মাত্রা নির্নয় করার কার্যকরী কোনপদ্ধতি এখন পর্যন্ত বের হয়নি।
বুদ্ধিমত্তার এইরকম সংগা অনুযায়ী, উপোরক্ত সকল যোগ্যতা যাদের নেই, মানেবাকিরা কি বুদ্ধিহীন? বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের মাপকাঠি বা আদর্শ তাহলে কি? জংগলে বাস করে বাঘ যেভাবে তার চারপাশকে অনুধাবন করছে, তা তো তার জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ঠ, বা এককোষী ব্যাকটেরিয়া যেভাবে চলাফেরা করে, যেদিকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি অনুভব করতে পারে, সেদিকটা এড়িয়ে অন্য দিকে চলে, নিজের প্রয়োজনীয় খ্যাদ্যের সন্ধান করে নেয়… তবে ব্যাকটেরিয়ার বুদ্ধিমত্তা কি ব্যাকটেরিয়ার জন্য যথেষ্ট নয়? বুদ্ধিমত্তারপূর্বশর্ত কি তাকে জৈবিক হতেই হবে বুদ্ধিমান হবার জন্য? খুব সম্ভবত না। আসলে আমাদের বুদ্ধিমত্তার সবগুলো সংগারই একটা সীমাবদ্ধতা হল সেটা মানুষদের বুদ্ধিমত্তা অনুকরণে সংগায়িত। এর বাইরে যাবার কথা এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা চিন্তাই করেনি। আমরা মানুষ বলেই মানব মস্তিষ্ক নিয়েই আমাদের আগ্রহ বেশী। আমরা বুদ্ধিমত্তার সংগা দিতে চাই মানব বুদ্ধিমত্তার আলোকে, আমাদের তৈরী করা পরিবেশের প্রেক্ষিতে। আমাদের মনে থাকেনা, হটাৎ বাঘের মুখোমুখি পড়লে মানবীয় বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বাঘের সামনে থেকে জান নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম, খুব কম। ব্যাপারটা হল পরিবেশ পরিবর্তন হলে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই আগে থেকে ঠিক করা পরিবেশ(preconception) দিয়ে বুদ্ধিমত্তা সংগায়িত করা আসলে গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাওয়ার মত।
আমাদের প্রচলিত বুদ্ধি পরিমাপের যে পদ্ধতি আই. কিউ. টেষ্ট, দেখা গেছে অনেক মেধাবী ব্যাক্তি তাতে ভয়ংকর বাজে করেছে, যদিও তাদের মেধা নিয়ে শংশয়ের কোন উপায় নেই! তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানের এখন এই শাখায় অনেক কাজ হচ্ছে। বুদ্ধিমত্তা এখন আর শুধু আই. কিউ. দিয়ে মাপা হয়না, এর পাশাপাশি আরেকটি সর্বজনস্বীকৃত পদ্ধতি এসেছে, ই. কিউ. (emotional quotient)। সেটা নিয়ে বিস্তারিত আরেকদিন লেখা যাবে। আমরা বরং মূল বিষয়ে ফেরত যাই।
প্রথম দিকের এ. আই. সংক্রান্ত প্রোগ্রমগুলোর সবচেয়ে বড়সীমাবদ্ধতা ছিল এর শিখতে পারার অক্ষমতা। শুরুর দিকের আমাদের উদ্দেশ্য ছিল রোবটকে দিয়ে কাজ করানো অর্থাৎ শুধু মানুষের মত হাত নাড়াতে পারলেই, বা সিড়ি বাইতে পারলেই আমরা খুশী। কিন্তু হাত নাড়ানো বা সিড়ি বাওয়া এগুলো যান্ত্রিক কিছু ব্যাপার, যে বিষয়টা আমাদের মানুষ করেছে, সেই বিমূর্তায়নের ব্যাপারটা প্রোগ্রামগুলোতে বা রোবটের মাঝে ছিলনা। যেমন আপনি একটা দাবা খেলারপ্রোগ্রাম লিখলে সেটা শুধু দাবাই খেলতে পারতো, এর বাইরের অন্য কোন পরিবেশেএটা অচল। নতুন পরিবেশেরর জন্য প্রোগ্রামারদের আবার নতুন করে এতে সংযোজন বিয়োজন করার প্রয়োজন পড়ত।
বর্তমানেও এর মূলধারার গবেষকেরা যা মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব যদি আরো বহুগুন দ্রুত কম্পিউটারআবিষ্কার করা যায়। অর্থাৎ তারা যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা অর্জন করতে চান গাণিতিক দ্রুততার মাধ্যমে। তবে সে প্রকল্প এখন পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে সফলতারমুখ দেখেনি। এর একটা কারন হতে পারে এ. আই. সংক্রান্ত মৌলিক গবেষণায় আমাদের আগ্রহের অভাব। এখনো পর্যন্ত সত্যিকারের বুদ্ধিমান প্রোগ্রাম তৈরী করার চেয়ে কম সময়ে এর ব্যাবহারিক প্রয়োগ করে তার থেকে লাভ তুলে নিতেই আমরা বেশী আগ্রহী। অনেকেই শুনলে অবাক হবে এ. আই. গবেষণায় এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী বরাদ্দ পায় যদি সেটা শেয়ার বাজারের দরপতনের ভবিষ্যৎবানী করতে বা বেসবলে কে জিতবে সেটা বের করার কার্যকরী প্রোগ্রাম লিখতে ব্যাবহার হয়!
তবে কাঙ্খিত বুদ্ধিমত্তা তৈরী করতে আমাদের ব্যার্থতার আসল কারন সম্ভবত আমাদের কতৃত্ববাদী মানসিকতা। কোন কিছুকে বুদ্ধিমান হতে হলে তাতে একটা ব্যাপার থাকতেই হবে, সেটা হল নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা। সেটির যে অভিজ্ঞতা থাকবে সেটা হতে হবে তার নিজের অভিজ্ঞতা, তাহলেই সেই অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে সে নতুন পরিস্থিতিতে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কিন্তু এখন যেসব প্রোগ্রাম লেখা হয় সেখানে আমরাই সবকিছু ঠিক করে দেই, প্রোগামটিকে যে অভিজ্ঞতা দেই সেটা আসলে আমাদের থেকে ধার করা, ফলে নতুন কোন পরিস্থিতিতেপড়লেই সে অসহায় হয়ে পড়ে, তখন নতুন বস্তুটাকে চেনাতে আমাদের আবার প্রোগ্রামটাকে নতুন করে সাজাতে হয়। একটু উদাহরন দেয়া যাক।
মনে করুন আপনি একটা রোবট বানাতে চান যেটা মানুষের মত ঘুরেফিরে, চিন্তা করতে পারে, সেটার চিন্তাটা আপনি কিভাবে তৈরী করবেন? মানে সেটার প্রোগ্রামটা কিভাবে লেখা হবে? আপনি হয়তো ভাববেন রোবটটাকে আগে বিভিন্ন বস্তু চেনাতে হবে যেমন- কাপ-পিরিচ, ঘর-বাড়ি গাড়ি-ঘোড়া ইত্যাদি। এরপর তাকেযুক্তিবিদ্যা শেখাতে হবে যেমন বাড়িতে থাকা যায়, ঘোড়ায় চড়া যায়, কাপে পানি নেয়া যায়, ইত্যাদি। এগুলো জানলে এরপরে সে আরো জটিল যুক্তি সাজাতে পারবে যেমন ঘোড়ায় চড়ে বাড়ি গিয়ে চা খাবো বা গাড়ি বানাবো, ইত্যাদি। ব্যাস, আপনার রোবট তৈরী! কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা এতো সহজ নয়। প্রথমেই যে সমস্যাটার সম্মুখীন আপনাকে হতে হবে সেটা হল রোবটকে আপনি কোন বস্তু চেনাবেন কিভাবে? একটা গাড়ির ছবি চিনিয়ে দিয়ে বলবেন এটা গাড়ি? আমরাও কি এভাবে গাড়ি চিনি? আরেকটু ভেতরে যাওয়া যাক। আমরা যখন গাড়ি দেখি তখন গাড়ি হিসেবে সেটা আমাদের কাছে আসেনা, আমাদের মস্তিষ্কে আসে গাড়ির কিছু ডাটা যেগুলো আমরা আমাদে রইন্দ্রিয় থেকে পাই। যেমন চোখ দিয়ে আকার, আকৃতি, রং, ঘনত্ব; কান দিয়ে সেটার শব্দ, আর স্পর্শ থেকে সেটার ধরন। আরো ভেতরে গেলে সেগুলো আসলে নিউরোনে সিগন্যালের তারতম্য। পরে সেই ডাটাগুলো আমাদের মস্তিষ্ক বোঝার মতন করে সাজিয়ে নেয়, সেই সাজানো জিনিষটারই নাম আমরা দিয়েছি গাড়ি। এই সাজানোর পুরো কাজটা আমাদের মাথার ভেতর ঘটে যেটাকে আমরা বলি ডাটা প্রসেসিং। কিন্তু আমরাযে একটা নতুন জিনিষ চিনি সেটা কি একদিনেই আমাদের কাছে সেভাবে জানা হয়ে যায়? একটা বাচ্চা কিভাবে ধরতে শেখে সেটা কখনো খেয়াল করে দেখেছেন? সে কিন্তু সব জেনে-বুঝে ধরতে যায়না বরং চেষ্টা করতে করতে ধরতে শিখে যায়। এবং এভাবে যে অভিজ্ঞতাটা হয় সেটা হয় ওর নিজের অভিজ্ঞতা। এবং এই অভিজ্ঞতাটাও আবার সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। যেটা আমাদের প্রয়োজন সেই অভিজ্ঞতাটা আমরা রাখি এবং বাকিগুলা ফেলে দেই। এই যাচাই বাছাইটা আমরা করি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য যেটা অভিজ্ঞতাটা আমাদের সুবিধা দেয়, যেটাকে বারবার ব্যাবহার করতে হয়, সেটাকে রেখে দেয়ার মধ্যে দিয়ে। এবং একই স্থানে থাকলেও, আমাদের প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেহেতু আলাদা তাই আমাদের মানসিক গঠনও আলাদা হয়, সেটা আমাদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন বলেই। এখন ধরা যাক একটা রোবট আমরা তৈরী করলাম যেটা চাকা দিয়ে চলে, সেটা কি আমাদের মতন করে হাঁটতে পারবে? বা আমরা যেভাবে চলাফেরা করি সেই জ্ঞান কি সেই রোবটের কোন কাজে আসবে? নাকি তাকে শুধু এই ইনপুট দিলে ভালো হবে যে তাকে চলতে হবে। এরপর তাকে স্বাধীনভাবে চলতে দিয়ে তাকে শিখে নিতে দিলে সে ট্রায়াল এন্ড এরোর করে নিজেই তার চাকার ব্যাবহার শিখে যাবে। অথবা এমন একটা রোবট বানালাম যেটা আলোর সবগুলো বর্নালী দেখতে পায়, তাহলে তার চোখে দেখা গাছ কি আমাদের চিনিয়ে দেয়া গাছের মতন হবে? বা আপনি একটা রোবট বানালেন যে শুধু সাদাকালো দেখতে পায়। তাকে আপনি নীল আকাশ চেনাতে পারবেন? তার চিন্তায় নীলের অস্বিত্তের অদৌ প্রয়োজন আছে? মানুষের চিন্তায় তথ্য যেভাবে বিশ্লেষণ হয় কিংবা রোবটের চিন্তায় তথ্য যেভাবে বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন, সেটা জানার খাতিরে ভাবনার এই উপায়টাকে ব্যাবহার করা প্রয়োজন। এভাবে ভাবলে দেখা যাবে যে রোবটকে বস্তু বা যুক্তি সম্পর্কে ধারণাগুলো প্রদান করা হয়তো তেমন প্রয়োজনীয় নয়। রোবটের নিজের ডেটাকে মানুষেরজ্ঞানগম্যির সাপেক্ষে নয়, বরং নিজের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ করতে দেয়াটাই হয়তো বেশি কাজের। তবে বর্তমানে এ. আই. সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে এর উপর বিবর্তনীয় ধারণা প্রয়োগের পর। এখন কিছু কিছু প্রোগ্রাম লেখা হহচ্ছেযেগুলো উপরের শর্তগুলো মাথায় রেখে লেখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন এই রোবটটা – A Robot Teaches Itself How to Walk
এ. আই. কে সবচেয়ে বেশী যে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তা হল “রোবটেরা যদি মানুষের মত বুদ্ধিমান হয়ে যায়, তাহলে ওরা কি মানুষদের হটিয়ে তাদের জায়গা দখল করে নেবেনা? ” এরকম একটা ধারনা গড়ে ওঠার প্রধান কারন আসলে বিজ্ঞান নিয়ে আমাদের সকল অভিজ্ঞতার সবচেয়ে বড় উৎস জনপ্রিয় ধারার সায়েন্সফিকশন আর হলিউডি সাই-ফাই ছবি, যেখানে science এর চেয়ে fiction ই বেশী। এমনকি বেশীরভাগ সময় যা হয় বাস্তবতার ঠিক বিপরীত! রোবট বনাম মানুষ এইব্যাপারটা উঠলেই আমরা যে বিষয়টা চিন্তা করতে ভুলে যাই তা হল এখানে রোবট আর মানুষের মাঝে যে দ্বন্দের কথা আমরা বলি, তা আদতে বুদ্ধিমত্তার দ্বন্দ না, দ্বন্দটা ক্ষমতার, কতৃত্বের। কে বেশী যোগ্য সেটা এখানে বিষয় না, বিষয়মূলাটা কে খাবে সেটা! একটু উদাহরন দিয়ে ব্যাপারটাকে আরেকটু পরিষ্কার করেনেয়া যাক।
আমাদের বর্তমান সমাজের সবচেয়ে মেধাবী ব্যাক্তি কারা? সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সবচেয়ে ধনিব্যাক্তি কারা? হাজার খুঁজেও এদের মাঝে কোন বিজ্ঞানীর নাম কিন্তু পাবেননা! প্রশ্ন করা যেতে পারে বিজ্ঞানের সাথে ধন সম্পত্তির সম্পর্ক কোথায়? সেটার ব্যাখ্যা দিতে গেলে আরেক ইতিহাস হয়ে যাবে, ছোট করে বলতে গেলে ব্যাপারটা এরকম – আমাদের সমাজে সেই কাজেই মানুষ বেশী আয় করে যেটা সেই সমাজের বেশীরভাগ মানুষ বেশী গুরুত্ব দেয়। যেমন কিছুদিন আগেও পেশা হিসেবে শো-বিজ বেছে নেয়া ছিল একেবারেই বোকামি, শুধুমাত্র শখের বশে ছাড়া গান-বাজনা করে জীবিকা নির্বাহ করারটা ছিল নিজেকে অনন্ত দারিদ্রের মাঝে ছুড়ে দেয়া। কিন্তু এখন সব দেশেই এই পেশায় টাকা পয়সার ছড়াছড়ি! আগের সময় থেকে এখন সমাজে মূল পার্থক্য হয়েছে শুধুমাত্র শো-বিজের প্রতি আমাদের সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার। যাই হোক, ধনী বিজ্ঞানী হিসেবে কেউ কেউ হয়ত বিল গেটস, স্টিভ জবস টাইপ দু একটা নাম বলতে চাইবে কিন্ত খেয়াল করে দেখবেন এর যতটা না বিজ্ঞানী তার চেয়ে বেশী ব্যাবসায়ী। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যদি বুদ্ধিমানই হবেন তাহলে যোগ্যতা হিসেবে তাদের সবার তো ইনকাম সবচেয়ে বেশী হওয়া তাইনা? তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সেই উত্তরে যাবার আগে আরো কয়েকটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখা যাক। আপনারা ক্লাশে কখনো এমনকোন ছাত্র/ছাত্রী পেয়েছেন কোন বিষয়ে যার জ্ঞান অনেক বেশি? আমি কিন্তু দেখেছি। আমাদের কলেজ জীবনে আমাদের এক সহপাঠী ছিল যার ধ্যান-জ্ঞান ছিল রসায়ন। সে প্রথম বছরেই আমাদের কলেজ লেভেলের পাঠ্যসূচী শেষ করে অনার্সের বইপত্র ঘাটতে শুরু করেছিল। আমার মনে আছে আমরা ওকে ক্ষেপাতাম কারন রসায়নে এতজ্ঞান থাকা স্বত্বেও বেচারা জীবনেও কখনো পরীক্ষায় বেশী নম্বর পাওয়া তো দুরের কথা, পুরো উত্তরই দিয়ে আসতে পারেনি কারন ও এতো বিষদভাবে উত্তর দিতে যেত যে দুই ঘন্টা সময়ে ওর কখনোই কূলাতোনা! বেচারা ছিল একটু লাজুক প্রকৃতির তারপরেও মাঝে মাঝেই উদ্ভট সব প্রশ্ন করে শিক্ষকদের বেকায়দায় ফেলে দিত। এমনকি কলেজ জীবনের শেষের দিকে স্যাররাও কোন ব্যাপারে আটকে গেলে ওর সাথে সেটা নিয়ে আলোচনা করে নিত। এরক মানুষ সবাই দু একজন দেখে থাকবেন নিশ্চই? কিন্তু এমন কি কখনো হয়েছে, এই ছাত্র-ছাত্রীরা স্যারকে হঠিয়ে দিয়ে ক্লাশ নেয়া শুরু করেছে? শুনতে হাস্যকর লাগছেনা? রোবট বনাম মানুষের বিতর্কটাও অনেকটা এরকমই। এবার আরেকটু বড় জায়গা থেকে ব্যাপারটা দেখা যাক।
একটা সময় ছিল যখন একজন মাত্র মানুষ পুরো একটা দেশ চালাতো! রাজা, মহারাজা, সম্রাট এসব নামে ডাকা হত তাদের। কিন্তু একটা লোকের পক্ষে কি সম্ভব একটা দেশের সব কাজ করা? রাজ্যের যত কামার কুমার তাতী, জেলে, চাষী, সৈন্য সবার কাজ একা করা? নিশ্চই না? তাহলে “দেশ চালানো” বলতে সে আসলে কি করত? সে আসলে কাজ খুব বেশী কিছু করতনা, শুধু কে কি করবে সেটা ঠিক করত, বেশীরভাগ সময় চাপিয়ে দিত। আর মজাটা হল (অথবা দুঃখ) তখন একটা দেশের যত আয় রোজগার হত তার কিন্তু প্রায় সবটাই রাজা একাই খেয়ে নিত। আর ওই কাজ করার জন্য যারা সাহায্য করত তারা সেই রোজগারের ছিটেফোঁটা পেত। ওদেরকেই আমরা এখন বলি মন্ত্রী, আমলা, সেনাপতি। আজ আমরা যে রাজাদের শানশওকতের গল্প পড়ি সেগুলো সব এভাবেই সৃষ্টি। সেই শাষণ ব্যাবস্থাকে বলে অটোক্রেসি। সেই সময় যদিও রোজগারটা সবাই মিলেই করত কিন্তু তার প্রায় সবটাই ভোগ করত রাজা একাই। সেখানেও কিন্তু অনেক মানুষ ছিল যারা সেই রাজাদের থেকে অনেক যোগ্য ছিল কিন্তু তারা রাজার মত যা ইচ্ছে তাই করতে পারতনা। কেন পারতোনা? এখানেই চলে আসে ক্ষমতার প্রশ্নটা। মানুষের ক্ষেত্রে “ক্ষমতা”মানে হল তার সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার/ক্ষেত্র। এখন যেমন কোন জায়গায় রাস্তা হবে না ব্রীজ হবে, কি দিয়ে সেটা তৈরী হবে বা অদৌ সেখানে রাস্তা তৈরী করা দরকার কিনা সেটা ঠিক করে ইঞ্জিনিয়ারেরা, কারো অসুখ হলে ঔষধেই কাজ হবে নাকি অপারেশন লাগবে সেটা ঠিক করে ডাক্তারেরা, তখন ব্যাপারটা এরকম ছিলনা। তখনও এরকম মানুষ ছিল কিন্তু তাদের কাজ ছিল রাজা যা বলত সেটাকে বাস্তবায়ন করা, তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন অধিকার ছিলনা, আরেক ভাষায় তাদের তেমন কোন ক্ষমতা ছিলনা। তাদের সবার ক্ষমতা গিয়ে জমা হয়ে ছিল রাজা নামের একজন ব্যাক্তির হাতে। এই ব্যাবস্থাটাই অটোক্রেসি। একটা দেশ বা একটা শাষণ ব্যাবস্থা হল একটা সিস্টেম যেখানে মানুষগুলো হল এর নাট-বল্টু। একটা সিস্টেমকে ঠিকভাবে চলতে হলে এর সবগুলো অংশ সমানভাবে কাজ করা যেমন জরুরী তেমনি জরুরী সব অংশে ঠিকভাবে পুষ্টি পৌঁছানো। কিন্তু অটোক্রেসিতে সেটা হতনা। এবং এর ফলও ভোগ করেছে তখনকার মানুষ। মানুষের ইতিহাসে রাজাদের আমলটাকে বলে মধ্যযুগ। যেটার আরেক নাম অন্ধকার যুগ কারন সেই পুরোটা সময় মানুষের বলার মত তেমন কোন অর্জনই নেই। এর কারনটাও লুকিয়ে আছে খোদ সেই শাষণ ব্যাবস্থা তথা সিস্টেমের মধ্যেই। ক্ষমতার সাথে সাথে সমাজের সব পুষ্টি তথা রোজগারও যে গিয়ে জমা হত রাজার কোষাগারে! আর সেই কারনে সেই শাষণ ব্যাবস্থা তথা সিস্টেমেঅনেক অনেক প্রতিভা ঠিকমতো বিকশিতই হতে পারেনি। কম্পিউটার প্রোগ্রামে যেমন বাগ থাকে, এটাও ছিল সেই সমাজের প্রোগ্রামের ত্রুটি বা বাগ।
এখন আর রাজাদের সেই যুগ নেই। শাষণ ব্যাবস্থার সেই ত্রুটি অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে মানুষ। এখন ইচ্ছে করলেও যা খুশী তাই করতে পারেনা কেউ, সে যত ক্ষমতাবানই হোক। বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষমতাবান ধরা হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে। এতো ক্ষমতা থাকা স্বত্তেও সেই বেচারাও ইচ্ছা করলেই আজকের যুগে চট করে ইরাক আক্রমণ করতে পারেনা, তার জন্য টুইন টাওয়ারে হামলা চালিয়ে আক্রমনের জন্য জনসমর্থন আদায় করতে হয়! তার মানে আগে যেখানে (অটোক্রেসীতে) সর্বসাধারনের মতামতের কোন দামই ছিলনা, এখন সেখানে অল্প হলেও এখন থাকছে। আর এর মাধ্যমে আসলে যে পরিবর্তনটা হয়েছে সেটা হল ক্ষমতাটা রাজার মত এক ব্যাক্তির হাত থেকে সবার মাঝে কিছুটা ছড়িয়ে গেছে। তবে তারপরেও সব ত্রুটি যে কাটিয়ে উঠেছে মানুষ সেটা কিন্তু বলা যাবেনা। এখন আবার অটোক্রেসির আদলে গড়ে উঠেছে কর্পোরেটোক্রেসি। মানে বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো যারা সারা দুনিয়াজোড়া ব্যাবসা করছে, সেটার বদৌলতে তারা দুনিয়াজোড়া আরেকটা সম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। এসব কোম্পানিগুলো আসলে চলে কিভাবে? প্রশ্নটা কিন্তু করা হয়েছে তার ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভারসাম্যের জায়গা থেকে, টেকনিক্যাল চলা অর্থে না। খোঁজ নিলে দেখা যাবে সেখানে সবচেয়ে বেশী বেতন নেয় যারা(সাধারনত এদের গালভরা নাম সি. ই. ও), সময় বা গুন বিচারে কাজ কিন্তু সবচেয়ে কম করে তারা। অনেকে বলে থাকে ওদের কাজটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারন কে কি করবে, অর্থাৎকোম্পানি কিভাবে চলবে সেটা দেখতে হয় তাদের কিন্তু বাস্তবতা হল নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজগুলো তারা একরকম জোর করে করে, নয়ত নেয় নানা কৌশল করে করে, ঠিক রাজাদের মত। এবং সেই কাজগুলোও তারা যে নিজেনিজে করে এমন নয়, সবসময়ই আরো অনেকের সাহায্য নিয়ে করে থাকে। এর মাধ্যমে এরা আসলে যেটা করে তা হল নিজের আধিপত্য বজায় রাখে। খুঁজলে ক্লাশের মতসব কোম্পানিতেই এমন একাধিক মানুষ পাওয়া যাবে যাদের যোগ্যতা যেকোন বিচারেই সি. ই. ও. র থেকে বেশী! এখন সেই যোগ্য মানুষগুলো কি সব একজোট হয়ে মালিককে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গা নিয়ে নেয়? এখানেও এমনটা খুব কমই ঘটে কারন কোন সমাজ বা সিস্টেম ঠিকভাবে চলার জন্য সবার উপরে থাকা জরুরি না। in fact, একটা ভালো সিস্টেমে উপর নিচ বলে কিছু নেইই। এর আছে বিভিন্ন অংশ যেগুলো সবগুলো মিলে ঠিকভাবে কাজ করার উপরেই সেই সিস্টেমের টিকে থাকা নির্ভর করে। তারপরেও কিছু লোক মালিক/নেতা হবার জন্য বা ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার জন্য প্রানপাত করে সেটা তারা বুদ্ধিমান বলে নয় বরং তার উল্টো! এখানেই চলে আসে ক্ষমতার সাথে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক। মানুষের পুরো সময়ের ইতিহাস ঘেটে এমন একজন রাজা বা রাজনৈতিক নেতা খুঁজে বের করতে পারবে যে ছিল অসাধারণ প্রতিভাবান? এমন কেউ কি আছে এদের মধ্যে যার আছে একদম মৌলিক কোন আবিষ্কার বা কালজয়ী কোন লেখা কিংবা ছবি? পারবেনা কারন এরকম হওয়া সম্ভব না। অনেকে অনেক রাজাকে বা নেতাকে “প্রতিভাবানদের চেয়েও প্রতিভাবান ” টাইপের অনেক কিছু বানিয়ে দেয় যার মধ্যে আসলে বাস্তবতার চেয়ে আবেগের মিশেলই থাকে বেশী। তবে সব নেতাদের একটা সাধারন বৈশিষ্ট হল তারা মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, যেটা একজন ভালো সেলসম্যান জীবিকার প্রয়োজনে নিয়মিত করে থাকে। এর জন্যে বড়জোর চালাক হলেই চলে, প্রতিভাবান নয়।
প্রথমে আমরা একটা প্রশ্ন করেছিলাম, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ধনী কারা? একটু খোঁজ করলে দেখা যাবে পৃথিবীতে এখন ক্ষমতার কেন্দ্রে যারা আছে, তারাই সবচেয়ে ধনী। এর বাইরে আছে শেয়ার ব্যাবসায়ীরা। কিন্তু এই লোকগুলোপ্রতিভাবান এটা পাগলেও বলবেনা। আমাদের উপমহাদেশে তো এখনো জরিপের কোন বালাই নেই কিন্তু ইউরোপের নেতা এবং ব্যাবসায়ীদের নিয়ে চালানো একাধিক জরিপে উঠেএসেছে অনেকগুলো মজার তথ্য। যেমন যেসব মানুষই ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট, তারাসবাই কমবেশি “সাইকো মানসিকতা” সম্পন্ন!
মানে এই মানুষগুলো একই ধরনের কাজ বারবার করে সেটা থেকে আনন্দ পায়। যে “গুনটা” মানসিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে হরহামেশাই দেখা যায়! ক্ষমতাকে ধরে রাখতে হলে আপনাকে অনেক নিষ্ঠুর কাজ করতে হবে যেটা একজন কৌতুহলী সংবেদনশীল মানুষের পক্ষে কোনভাবেই করা সম্ভব নয়। আর শেয়ার বাজার সংক্রান্ত ব্যাবসায় উন্নতি করতে হলে আপনাকেহতে হবে গোঁয়ার, একরোখা এবং আশেপাশের মানুষ সম্পর্কে উদাসীন! স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ ছাড়া আর কোন ব্যাপারে এরা কারো সাথে কোন লেনদেনে যায়না। এদের দুনিয়াটা আটকা পড়ে যায় লাভ-লস নামের কিছু যান্ত্রিক হিসেব নিকেশের পাতায়। কিন্তু মজার বিষয় হল একগুঁয়েমি এবং নিষ্ঠুরতা দুটো বৈশিষ্টই বুদ্ধিমত্তার মৌলিক শর্ত কৌতুহল এবং পারষ্পরিক সহযোগীতার ঠিক বিপরীত। সোজা কথায় এই মানুষগুলো মোটেও বুদ্ধিমান নয়, বড়জোর ধান্দাবাজ বলা যায়। বেশীদুর যাবার দরকার নেই, বর্তমান সময়ে পৃথিবীর বড় ছোট সব নেতা, ব্যাবসায়ীদের কাজ আর যারা অন্যের ব্যাপারে সংবেদনশীল, জানে বেশী, সেসব বিজ্ঞানীদের কাজের ফিরিস্তি দেখলেই ব্যাপারটা যে কারো কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। বেশীনা, মাত্র একটা উদাহরণে পার্থক্যটা টেনে ব্যাপারটা শেষ করছি। সারা দুনিয়া জুড়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং আন্দোলন সম্পর্কে সবার জানা আছে নিশ্চই? একটু খোঁজ নিয়ে দেখুনতো এগুলোর নেতৃবৃন্দ বা সমর্থক কারা, আর এই আন্দোলনগুলো সফল হতে পারছেনা কাদের জন্য? এটা পরিষ্কার হলেই আরো অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। সবখানেই দেখবেন এসব আন্দোলনের পুরোভাগে আছে সব বিজ্ঞানী আর সেই দেশের সচেতন মানুষেরা আর এর বিপক্ষে সবসময়ই দাড়িয়েছে ব্যাবসায়ী গোষ্ঠী আর রাজনৈতিক নেতারা। যেমন তেলের উদাহরনটাই টানা যাক। এখন আমাদের সভ্যতা প্রযুক্তিগতভাবে যে অবস্থানে আছে, তাতেই পুরো পৃথিবী আজ থেকেও পঞ্চাশ বছর আগেই শক্তি উৎপাদনে খনিজ তেল থেকে নবায়নযোগ্য উৎসের শক্তিতে switch করতে পারতাম। এখনো প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে প্রাকৃতিক নানা শক্তিকে ব্যাবহার উপযোগী করে তোলার। বাকি সব বাদ দেই, আপনারা কি এটা জানেন শুধুমাত্র ২৫৪ কিলোমিটার সোলার প্যানেল বসিয়ে তা থেকেযে পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তা দিয়ে পুরো পৃথিবীর চাহিদা মেটানোসম্ভব!
ঠিকই পড়েছেন, পুরো পৃথিবীর!তারপরেও আমরা সেটা করছিনা বাকরতে পারছিনা কারনটা শুধুমাত্র কিছু লোকের তেলের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে বলে! এখন যে মানুষটা সুদূর সাইবেরিয়ার মগজ কাঁপানো শীতে বসে তুচ্ছ পেঙ্গুইনদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে বা যে মানুষটা আক্ষরিক অর্থেই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত করে দুনিয়ার বিভিন্ন শহর ঘুরে ঘুরে মানুষকে বৈষ্ণিক উষ্ণতার কুফল সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছে বা সেই মানুষগুলো যারা বুঝতে পেরেছে ও সে অনুযায়ী কাজ করছে যে আমাদের জীবনটা আসলে কোটি কোটি বছরের ধারাবাহিকতার ফল, সেখানে লাফ দিয়ে “উন্নতি” করতে গিয়ে সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ ফেলা মানে আসলে নিজের অস্বিত্তকে হুমকির মুখে ফেলা, তারা বেশী বুদ্ধিমান নাকি সেই মানুষগুলো বেশীবুদ্ধিমান যারা survival of the fittest নামক natural fallacy ব্যাবহার করে নিশ্চিত ধ্বংস জেনেও তেল পুড়িয়েই যাচ্ছে শুধুমাত্র “নিজের” ব্যাবসা আর ক্ষমতা হাতছাড়া হবে বলে, সেটা বিচারের ভার আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম।
তাই সেইসব রোবটেরা, যারা হবে আমাদেরচেয়ে বুদ্ধিমান, তাদের আচরণ কেমন হতে পারে সেটার একটা ধারনা উপরের আলোচনা থেকেই পাও্যা যাবে আশা করি। তবে আমাদের এরকম ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানসিকতা থাকলে আমরা তাদেরকেও দখল করে দাস বানাতে চাইব এটা নিশ্চিত! তবে মানুষকে যদি সেটা দেখার জন্য টিকে থাকতে হয়, তাহলে আমাদের নিজেদেরকে এই ক্ষমতার লড়াই থেকে বেরিয়ে এসে আরো টেকসই, কিন্তু নমনীয়একটা সমাজ বা সিস্টেমে switch করতেই হবে, তা নাহলে আমরা নিজেরাই মারামারি করে শেষ হয়ে যাব।
এককালে এ. আই. ল্যাবরেটরির তাত্ত্বিক গবেষনার বিষয় হলেও, আজ কিন্তু আর সেই পরিস্থিতি নেই। এখন এ. আই. আমাদের জীবনেরই অংশ হয়ে ঊঠেছে।বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় এর ব্যাবহার আজ অপরিহার্য। এমনকি আমাদের সাধারন মানুষের জীবনেও চলে এসেছে এর ব্যাবহার। বিশেষ করে শিল্প কারখানাগুলো এবংকৃত্তিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে এখনই এ. আই. নাহলে আজ আমাদের চলবেইনা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে এ. আই. এমনভাবে স্থান দখল করে নিয়েছে যে চাইলেও আমরা এর বিকাশ বন্ধ করে দিতে পারবনা। বরং সেটা হবে মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মত সমাধান।
এখনো মূল ধারার কল্পবিজ্ঞানের লেখকেরা বা চলৎচিত্র নির্মাণকারীরা আসলে তাদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানসিকতার কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানব সভ্যতার জন্যহুমকি হিসেবে উপস্থাপন করতেই বেশী ভালোবাসে। অথচ বাস্তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার জন্মকাল থেকেই মানবের কাজের সাহায্যকারী, এর কাজ মানুষেরজীবনযাত্রাকে সহজ করে দেয়া, তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা নয়। কল্পবিজ্ঞানের লেখকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যতই আতংক সৃষ্টি করুক, একদিন মানব সৃষ্ট কৃত্রিম দানবের পদতলে চলে যাবে মানব সভ্যতা, বাস্তবে তা আসলে ঘটবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অনেক অবকাশ আছে। সেইসাথে যারা একদিন ভাবতো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চটজলদি অর্জন করে ফেলবে মানবের অনুরূপ বুদ্ধিমত্তা, সেটাও সহসা ঘটে যাচ্ছে না। আসলে ভবিষ্যৎ চিন্তা করামানে এতো অসীম সংখ্যক চলক নিয়ে কাজ করা যে তার থেকে বসে বসে সমুদ্রের ঢেউগোনা সহজ। কেউ কি কিছুদিন আগেও চিন্তা করেছিল শুধুমাত্র মোবাইলের অপারেটিংসিস্টেমের পরিবর্তন(এন্ড্রয়েড, আই ওএস ইত্যাদি) আমাদের সামাজিক জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেবে? এমনকি আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশেও? আর তাছাড়া জীবনের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য তো তার অনিশ্চয়তায়, তাইনা? তাই আমাদের উচিৎ কি করলে কি হবে সেই হিসেব করতেগিয়ে মাথার চুল না ছিড়ে এ. আই. কে কিভাবে আরো ভালোভাবে মানুষের কাজে লাগানো যায় সেই বিষয়ে মনোনিবেশ করা।
:boss: :boss: :boss:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। :thumbup:
একটি ব্যাপার “রোবটেরা যদি মানুষের মত বুদ্ধিমান হয়ে যায়, তাহলে ওরা কি মানুষদের হটিয়ে তাদের জায়গা দখল করে নেবেনা? ” এই প্রশ্নের উত্তরে যেসব যুক্তি-উদাহরণ দিলি তাতে ঠিক সন্তুষ্ট এবং আশ্বস্ত হতে পারলাম না। শুধু এটা নিয়েই আরেকটু বিশদ আলোচনা করিস একদিন...
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আমি চেষ্টা করেছি এ. আই. এর টেকনিক্যাল ব্যাপারের চেয়ে এর বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করতে। এর জন্য মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরণের ইতিহাসটাকে বিশ্লেষন করার চেষ্টা করেছি। এই হাজার বছর আগেও আমরা মানুষরা এরকম ছিলামনা, লক্ষ বছর আগে আরো বেশী বর্বর ছিলাম। লক্ষ্য করলে দেখবেন যত সময় পার হয়েছে, আমাদের বুদ্ধিমত্তা আস্তে আস্তে বেড়েছে। তার সাথে সাথে কমেছে আরেকজনেরটা কেড়ে নেয়ার প্রবণতা। এর বদলে আমরা শিখেছি কিভাবে মিলেমিশে থেকে আরো বড় সিস্টেম তৈরী এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়। সামষ্টিকভাবে এখন আমাদের বুদ্ধিমত্তা যেখানে আছে সেখান থেকে সেটা যদি আরো বাড়ে তাহলে আমাদের এখনকার কাড়াকাড়ি করে খাওয়ার যতটুকু প্রবণতা, সেটা আরো কমে যাবার কথা। এই ধারাবাহিকতায়, এমন কোন কিছু যদি থাকে যারা আমাদের এখন যা জ্ঞান তার চেয়েও বেশী জ্ঞান ধারণ করে, তাদের "এইটা আমার, ওইটা তোমার" এরকম তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে হাউকাউ না করারই কথা!
তবে এতো কম কথায় ব্যাপারটা পরিষ্কার হলনা সেটা আমারো মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে বিশদ আলোচনার ইচ্ছা রইল।
না জানাটা দোষের কিছু না, কিন্তু জানতে না চাওয়াটা দোষের। এইগুলানের শাস্তি হওয়া উচিৎ!!
যদি তোর কথা মেনেও নিই তাহলেও কাড়াকাড়ির প্রবণতা কমে গেলেও একেবারে নির্মুল হবে না। এটাই ন্যাচারাল। অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিমানে হলেও কাড়াকাড়ি করার সম্ভাবনা রয়ে যাবে, ঠিক না? বুদ্ধিমত্তা যতই বাড়ুক তা কখনোই মন্দকে একেবারে নাশ করতে পারবে না।
মানুষ এবং এ.আই এর মধ্যে আমার মতে অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে এর ১। উন্মেষ এবং ২। সংখ্যা বৃদ্ধির হারের আকাশ পাতাল তারতম্য। যা বলতে চাচ্ছি-
১। তোর কথাতেই এসেছে 'এই হাজার বছর আগেও আমরা মানুষরা এরকম ছিলামনা, লক্ষ বছর আগে আরো বেশী বর্বর ছিলাম। লক্ষ্য করলে দেখবেন যত সময় পার হয়েছে, আমাদের বুদ্ধিমত্তা আস্তে আস্তে বেড়েছে।' কিন্তু রোবটের ক্ষেত্রে তো এরকম হবে না। কম্পিউটার থেকে সুপার কম্পিউটারে আসতে আমাদের মাত্র কয়েক দশক লেগেছে। তাহলে রোবট থেকে সুপার রোবট বানাতে খুব বেশি সময় লাগার কথা না। তারমানে আমরা যেসব জ্ঞান অর্জন করেছি হাজার বছর ধরে এ.আই তা করবে কয়েক দশকেই!
২। আমরা প্রায়ই সুপার জিনিয়াস মানুষের গল্প শুনি। কিন্তু তার থেকে আরও দশটা মানুষকে কি আমরা একই রকম জিনিয়াস বানাতে পারি? পারি না। কিন্তু একটি অত্যন্ত অত্যন্ত বুদ্ধিমান রোবট বানানো সম্ভব হলে তার থেকে রাতারাতি হাজার হাজার, লাখ লাখ রোবট বানানো কোন ব্যাপারই হবে না। ফলে, এমন যদি হয় - একটি খুবই জিনিয়াস কিন্তু দুষ্ট রোবট বানানো হল যে কিনা নিজেই নিজেকে আরও আপগ্রেড করতে পারে। তাহলে এটা কি বলা যায় না যে কিছু দিনের মধ্যে আমরা খুবই উন্নত বুদ্ধিমত্তার রোবট দেখতে পাবো, যার সম-বুদ্ধিমত্তা বা প্রায় কাছাকাছি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিশাল রোবট বাহিনী তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে?
মোদ্দা কথা, এ আই এর উন্মেষ ঘটবে অত্যন্ত দ্রুত এবং এদের মাস প্রডাকশন করা সম্ভব দ্রততম সময়ে। কনসিডারিং, পৃথিবী থেকে মন্দ কখনোই দূর হতে পারবে না- এবার বল কেন '“রোবটেরা যদি মানুষের মত বুদ্ধিমান হয়ে যায়, তাহলে ওরা কি মানুষদের হটিয়ে তাদের জায়গা দখল করে নেবেনা?”
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আপনি প্রথমেই যেই জায়গায় আমার সাথে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন সেটা হল আপনি রোবট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাপারটাকে সমাজ থেকে আলাদা করে ফেলছেন। :no: যখনই আমাদের সমাজে বড় কোন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আসে, সেটা আমাদের উৎপাদন ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়, সেই সাথে সমাজের গঠনেও মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম তা হল
বানাতে হলে আমাদের সামাজিকভাবে যে যায়গায় যাওয়া লাগবে সেটার "গঠন" আর "ভালো খারাপ বোধ" আমাদের বর্তমান প্রচলিত সামাজিক গঠন আর মূল্যবোধ থেকে অবশ্যই অনেক ভিন্ন হতে হবে। বর্তমান সমাজ কাঠামো দিয়ে সেই অবস্থাকে ব্যাখা করার চেষ্টা করাটাই বোকামি। ~x( আমাদের সভ্যতা এখনো আছে type0 তে! এখান থেকে টাইপ ১ এ আমরা যেতে পারব কিনা সেটার উপর নির্ভর করবে আমরা বুদ্ধিমত্তাকে সত্যিই আমাদের মস্তিষ্কের বাইরে আনতে পারবো কিনা বা এ ধরনের আরো প্রযুক্তিগত উন্নতি করতে পারবো কিনা। পদার্থবিদ মিচিও কাকুর এই ব্যাপারে সুন্দর কিছু বক্তব্য আছে, you tube এ একটু ঘাটাঘাটি করলেই পাবেন...
উপরের উদাহরনটা আমি ব্যাবহার করেছিলাম আমাদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতাটাকে সহজে বুঝানোর জন্য। :bash: কিন্তু এটাকে আক্ষরিক অর্থে নিলে বিপদ আছে। 😕 এখানে বোঝার সুবিধার জন্য আরো অনেক প্রাসঙিক বিষয়কে বাদ দিয়ে শুধু একটা ঘটনার উপর গুরুত্ত দিয়েছি, এটা অনেকটা এরকম বাস্তবে পরিবর্তনগুলো হয় আরো অনেক ঘটার পারষ্পরিক ক্রিয়ায়। আর সোজা করে বললে বর্তমান প্রযুক্তি কতদুর যেতে পারবে সেটার একটা ধারণা অলরেডি আছে,
এইটাকে বলে ন্যাচারালিস্টিক ফ্যালাসি। যার ফলাফল social derwinism নামক আধাখ্যাচড়া কিছু তত্ত্ব। মানুষের সমাজের কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। প্রকৃতিতে যা ঘটে তার সবটা মানুষের সমাজের উপর প্রয়োগ এখন সমাজবিজ্ঞানের অনার্সের কোন ছাত্রও করতে যায়না। এটা শুধুই একটা ব্যাক্তিগত ধারণা যার সাথে বাস্তবতার কোনই সম্পর্ক নেই! ;;) মানুষের মাঝে কাড়াকাড়ির ব্যাপারটা কিসের উপর নির্ভর করে "চাহিদা এবং যোগান" দিয়ে সেটা ব্যাখ্যা করা আছে, অর্থনীতির একদম বেসিক পাঠ সেটা। একটু উদাহরনে যাই। হিসাব মতে আমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, সেটার জন্যেই তো সবচেয়ে বেশী কাড়াকাড়ি করা উচিত আমাদের তাইনা? তো আমাদের বেচে থাকতে সবচেয়ে দরকারী কি? বাতাস, অক্সিজেন। সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে দেখেছেন কখনো? করিনা কারন সেটার পেটেন্ট এখনো কেউ নিতে পারেনি, সেটা সবার। তার মানে যেটা সবার সেটার জন্য কাড়াকাড়ি আমরা কেন, কেউই করেনা। তাহলে আমরা কাড়াকাড়ি করি কেন? সেটার ব্যখা এতো কমে লিখে বুঝাতে পারবোনা তবে এটুকু চিন্তা করে দেখেন, এগুলো বিভাজন সব আমাদের বানানো। বাতাসের মতো পানি, তেল গ্যাসও একসময় সবার ছিল, এখন কিছু মানুষের হাতে চলে গেছে বলেই "কেড়ে নেয়ার" প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। সম্পদের অপ্রতুলতার কথা বলে অনেকে, রিসোর্স নাকি নাই সবার জন্য, কিন্তু কথাটা যে সত্যি না, একটু চোখ কান খোলা রাখলেই যে কারো বুঝার কথা, তাও একটা উদাহরন দেই, পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সম্পদে সবচেয়ে সমৃদ্ধ আফ্রিকা, অথচ সবচেয়ে বেশী মানুষ "না খেতে পেয়ে" মারা যায় আফ্রিকায়!! মিলে?
দুষ্ট-মিষ্টি, ভালো-খারাপ, এই ব্যাপারগুলোও অনেক গোলমেলে বিষয়, জানা না থাকলে ভুল হবার সম্ভাবনা প্রবল। অনেক বিষয়ই আছে, দেশ কাল পরিবর্তনে ভালো খারাপের অর্থই পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন আমাদের দেশে কেউ কল্পনা করতে পারবে নিজের প্রফেসরকে নাম ধরে ডাকার কথা? এর চেয়ে খারাপ কাজ আর আছে? কিন্তু ইউরোপে ব্যাপারটা এতোই স্বাভাবিক যে এর বিকল্প থাকতে পারে সেটাই এরা জানেনা! বা আরেকটু সিরিয়াস হওয়া যাক, আমাদের মাঝে (বিশেষত মুসলমানদের ভিতর) খালাতো, মামাতো ভাই-বোনের বিয়ে খুব স্বাভাবিক বিষয়, অথচ ইউরোপে অরা এটাকে অজাচার হিসেবে জানে! তাহলে কোনটা খারাপ? কোন মানদন্ড জানা আছে কি? 😡
আপনি সম্ভবত "দুষ্টু রোবট" বলতে বোঝাতে চেয়েছেন যে রোবট "রিসোর্স" নিয়ে মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করবে, ম্যাট্রিক্সের মতো। সেটা যদি তারা করেও, সেখানেও কথা থাকে। আমাদের দেশে পাহাড়ী আদিবাসীরা যা করছে, বা ভারতে মাওবাদীরা যা করছে, সেটাকে আমরা রাষ্ট্র থেকে চাপিয়ে দিচ্ছি "সন্ত্রাসী কর্মকান্ড" বলে, কিন্তু ওদের জন্য তো এটা বাঁচা মরা, অস্বিত্তের লড়াই! এখানে ভালো কোন পক্ষ? যদি হয় রাষ্ট্র তাহলে তো রোবটদের দুষ্ট হওয়াটা ঠিকই আছে, আর যদি বলেন আদিবাসীরা তাহলে আপনি মানুষ হয়ে রোবটদের পক্ষে কথা বললেন!
মানুষ energy resource এ অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠলেই সেই জায়গায় যাও্য়া সম্ভব এটা বোঝানোই আমার লেখার একটা পয়েন্ট ছিল, বোঝা যাচ্ছে সেটা ফুটিয়ে তুলতে আমি পুরোপুরি ব্যার্থ! :((
আরেকটা ব্যাপার, চিন্তা করে দেখেন, গঠগত দিক থেকে ওরা আমাদের থেকে এতোই আলাদা যে আমাদের "জৈবিক রিসোর্সের" প্রতি ওদের আগ্রহ থাকার কোন কারন আমি দেখিনা :-B (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
না জানাটা দোষের কিছু না, কিন্তু জানতে না চাওয়াটা দোষের। এইগুলানের শাস্তি হওয়া উচিৎ!!
আপনি প্রথমেই যেই জায়গায় আমার সাথে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন সেটা হল আপনি রোবট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাপারটাকে সমাজ থেকে আলাদা করে ফেলছেন। :no: যখনই আমাদের সমাজে বড় কোন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আসে, সেটা আমাদের উৎপাদন ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়, সেই সাথে সমাজের গঠনেও মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম তা হল-
একটা খুবই জিনিয়াস রোবট বানাতে হলে আমাদের সামাজিকভাবে যে যায়গায় যাওয়া লাগবে সেটার "গঠন" আর "ভালো খারাপ বোধ" আমাদের বর্তমান প্রচলিত সামাজিক গঠন আর মূল্যবোধ থেকে অবশ্যই অনেক ভিন্ন হতে হবে। বর্তমান সমাজ কাঠামো দিয়ে সেই অবস্থাকে ব্যাখা করার চেষ্টা করাটাই বোকামি। ~x(
আমাদের সভ্যতা এখনো আছে type0 তে! এখান থেকে টাইপ ১ এ আমরা যেতে পারব কিনা সেটার উপর নির্ভর করবে আমরা বুদ্ধিমত্তাকে সত্যিই আমাদের মস্তিষ্কের বাইরে আনতে পারবো কিনা বা এ ধরনের আরো প্রযুক্তিগত উন্নতি করতে পারবো কিনা। পদার্থবিদ মিচিও কাকুর এই ব্যাপারে সুন্দর কিছু বক্তব্য আছে, you tube এ একটু ঘাটাঘাটি করলেই পাবেন...
। তোর কথাতেই এসেছে 'এই হাজার বছর আগেও আমরা মানুষরা এরকম ছিলামনা, লক্ষ বছর আগে আরো বেশী বর্বর ছিলাম। লক্ষ্য করলে দেখবেন যত সময় পার হয়েছে, আমাদের বুদ্ধিমত্তা আস্তে আস্তে বেড়েছে।' কিন্তু রোবটের ক্ষেত্রে তো এরকম হবে না। কম্পিউটার থেকে সুপার কম্পিউটারে আসতে আমাদের মাত্র কয়েক দশক লেগেছে। তাহলে রোবট থেকে সুপার রোবট বানাতে খুব বেশি সময় লাগার কথা না। তারমানে আমরা যেসব জ্ঞান অর্জন করেছি হাজার বছর ধরে এ.আই তা করবে কয়েক দশকেই!
উপরের উদাহরনটা আমি ব্যাবহার করেছিলাম আমাদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতাটাকে সহজে বুঝানোর জন্য। :bash: কিন্তু এটাকে আক্ষরিক অর্থে নিলে বিপদ আছে। 😕 এখানে বোঝার সুবিধার জন্য আরো অনেক প্রাসঙিক বিষয়কে বাদ দিয়ে শুধু একটা ঘটনার উপর গুরুত্ত দিয়েছি, এটা অনেকটা এরকম বাস্তবে পরিবর্তনগুলো হয় আরো অনেক ঘটার পারষ্পরিক ক্রিয়ায়। আর সোজা করে বললে বর্তমান প্রযুক্তি কতদুর যেতে পারবে সেটার একটা ধারণা অলরেডি আছে,
যদি তোর কথা মেনেও নিই তাহলেও কাড়াকাড়ির প্রবণতা কমে গেলেও একেবারে নির্মুল হবে না। এটাই ন্যাচারাল।
এইটাকে বলে ন্যাচারালিস্টিক ফ্যালাসি। যার ফলাফল social derwinism নামক আধাখ্যাচড়া কিছু তত্ত্ব। মানুষের সমাজের কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। প্রকৃতিতে যা ঘটে তার সবটা মানুষের সমাজের উপর প্রয়োগ এখন সমাজবিজ্ঞানের অনার্সের কোন ছাত্রও করতে যায়না। এটা শুধুই একটা ব্যাক্তিগত ধারণা যার সাথে বাস্তবতার কোনই সম্পর্ক নেই! ;;) মানুষের মাঝে কাড়াকাড়ির ব্যাপারটা কিসের উপর নির্ভর করে "চাহিদা এবং যোগান" দিয়ে সেটা ব্যাখ্যা করা আছে, অর্থনীতির একদম বেসিক পাঠ সেটা। একটু উদাহরনে যাই। হিসাব মতে আমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, সেটার জন্যেই তো সবচেয়ে বেশী কাড়াকাড়ি করা উচিত আমাদের তাইনা? তো আমাদের বেচে থাকতে সবচেয়ে দরকারী কি? বাতাস, অক্সিজেন। সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে দেখেছেন কখনো? করিনা কারন সেটার পেটেন্ট এখনো কেউ নিতে পারেনি, সেটা সবার। তার মানে যেটা সবার সেটার জন্য কাড়াকাড়ি আমরা কেন, কেউই করেনা। তাহলে আমরা কাড়াকাড়ি করি কেন? সেটার ব্যখা এতো কমে লিখে বুঝাতে পারবোনা তবে এটুকু চিন্তা করে দেখেন, এগুলো বিভাজন সব আমাদের বানানো। বাতাসের মতো পানি, তেল গ্যাসও একসময় সবার ছিল, এখন কিছু মানুষের হাতে চলে গেছে বলেই "কেড়ে নেয়ার" প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। সম্পদের অপ্রতুলতার কথা বলে অনেকে, রিসোর্স নাকি নাই সবার জন্য, কিন্তু কথাটা যে সত্যি না, একটু চোখ কান খোলা রাখলেই যে কারো বুঝার কথা, তাও একটা উদাহরন দেই, পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সম্পদে সবচেয়ে সমৃদ্ধ আফ্রিকা, অথচ সবচেয়ে বেশী মানুষ "না খেতে পেয়ে" মারা যায় আফ্রিকায়!! মিলে?
এমন যদি হয় - একটি খুবই জিনিয়াস কিন্তু দুষ্ট রোবট বানানো হল যে কিনা নিজেই নিজেকে আরও আপগ্রেড করতে পারে।
দুষ্ট-মিষ্টি, ভালো-খারাপ, এই ব্যাপারগুলোও অনেক গোলমেলে বিষয়, জানা না থাকলে ভুল হবার সম্ভাবনা প্রবল। অনেক বিষয়ই আছে, দেশ কাল পরিবর্তনে ভালো খারাপের অর্থই পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন আমাদের দেশে কেউ কল্পনা করতে পারবে নিজের প্রফেসরকে নাম ধরে ডাকার কথা? এর চেয়ে খারাপ কাজ আর আছে? কিন্তু ইউরোপে ব্যাপারটা এতোই স্বাভাবিক যে এর বিকল্প থাকতে পারে সেটাই এরা জানেনা! বা আরেকটু সিরিয়াস হওয়া যাক, আমাদের মাঝে (বিশেষত মুসলমানদের ভিতর) খালাতো, মামাতো ভাই-বোনের বিয়ে খুব স্বাভাবিক বিষয়, অথচ ইউরোপে অরা এটাকে অজাচার হিসেবে জানে! তাহলে কোনটা খারাপ? কোন মানদন্ড জানা আছে কি? 😡
আপনি সম্ভবত "দুষ্টু রোবট" বলতে বোঝাতে চেয়েছেন যে রোবট "রিসোর্স" নিয়ে মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করবে, ম্যাট্রিক্সের মতো। সেটা যদি তারা করেও, সেখানেও কথা থাকে। আমাদের দেশে পাহাড়ী আদিবাসীরা যা করছে, বা ভারতে মাওবাদীরা যা করছে, সেটাকে আমরা রাষ্ট্র থেকে চাপিয়ে দিচ্ছি "সন্ত্রাসী কর্মকান্ড" বলে, কিন্তু ওদের জন্য তো এটা বাঁচা মরা, অস্বিত্তের লড়াই! এখানে ভালো কোন পক্ষ? যদি হয় রাষ্ট্র তাহলে তো রোবটদের দুষ্ট হওয়াটা ঠিকই আছে, আর যদি বলেন আদিবাসীরা তাহলে আপনি মানুষ হয়ে রোবটদের পক্ষে কথা বললেন!
মানুষ energy resource এ অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠলেই সেই জায়গায় যাও্য়া সম্ভব এটা বোঝানোই আমার লেখার একটা পয়েন্ট ছিল, বোঝা যাচ্ছে সেটা ফুটিয়ে তুলতে আমি পুরোপুরি ব্যার্থ! :((
আরেকটা ব্যাপার, চিন্তা করে দেখেন, গঠগত দিক থেকে ওরা আমাদের থেকে এতোই আলাদা যে আমাদের "জৈবিক রিসোর্সের" প্রতি ওদের আগ্রহ থাকার কোন কারন আমি দেখিনা :-B
না জানাটা দোষের কিছু না, কিন্তু জানতে না চাওয়াটা দোষের। এইগুলানের শাস্তি হওয়া উচিৎ!!
প্রথম লেখাটায় লিঙ্ক আসেনি তাই একই লেখা আবার দিতে হল...
না জানাটা দোষের কিছু না, কিন্তু জানতে না চাওয়াটা দোষের। এইগুলানের শাস্তি হওয়া উচিৎ!!
লেখা পড়িনি এখনো।
তবে শিরোনামের দিকে দৃষ্টিআকর্ষণ করছি।
'কৃত্রিম' বানান ভুল।
ঠিক করে দিয়েছি। তাড়াহুড়া করে লেখা, আরো ভুল আছে মনে হয়। ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।
না জানাটা দোষের কিছু না, কিন্তু জানতে না চাওয়াটা দোষের। এইগুলানের শাস্তি হওয়া উচিৎ!!
ধন্যবাদ মাহবুব!
(সম্পাদিত)
না জানাটা দোষের কিছু না, কিন্তু জানতে না চাওয়াটা দোষের। এইগুলানের শাস্তি হওয়া উচিৎ!!
ফেইসবুকে ট্রেন্ডিং চলছে। টেসলা মোটর্সের সি,এই,ও এলান মার্কস সম্প্রতি এই কথা বলে বেশ আলোচনায় এসে গিয়েছেন। এই লেখার বিষয়ের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ দেখে খুঁজে বের করে লিংকটি পোস্ট করে দিচ্ছি। এখানেঃ
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:clap: :clap: :clap:
সাধারন্যে প্রচলিত ধারনা হচ্ছে এ আই মানে রোবট বানানো বিদ্যা, ঠিক যেমন ইভল্যুশন মানে বানর থেকে মানুষ হওয়া। বিজ্ঞানের কোন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করার সময় এই দিকগুলি নিয়ে পরিস্কার ও বিশদ ভাবে আলোচনার মাধ্যমেই এরকম প্রচলিত ভ্রান্ত ধ্যান ধারনা দূর করা সম্ভব। শুধু রোবট তৈরি করা না, স্যাটন্যাভ এর রুট প্লানার এর মত হাজারো নিত্য ব্যবহার্য টুলগুলিও এ আই এর ফসল। এটাকে সাধারন মানুষ যত বেশী উপলদ্ধি করতে পারবে, এ ধরনের প্রশ্ন করার পরিমাণও তত কমে আসবে।
গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।