কাঁদতে খুব লজ্জা লাগে। শেষ দুঃখে কেঁদেছিলাম ৯৮ এর ২৯ ডিসেম্বর। নিজেকে নিয়ে একটা গর্ব ছিলো, আমি ব্যাটা ছেলে। কাঁদবো কেন?
কিন্তু কাঁদতে হলো। ২৬ ফেব্রুয়ারী। মাজহার এর বাসায় গিয়েছিলাম। কেন গিয়েছিলাম জানিনা। কিন্তু না গিয়ে পারিনি। আমার বউ মাজহার এর বোন- মীম এর বন্ধু। বউকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাইনি। কি বলব আন্টিকে? কি বলে সান্তনা দেব মীম কে? -যে মেয়েটা সারাক্ষণ শুধু ছোড়দা ছোড়দা করত?
হঠাত দেখি মীম এগিয়ে আসছে। আমি কোথায় পালাব? শান্ত কন্ঠে বল্লো, “ভাইয়া, ভেতরে আসেন!!”। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। দৌড়ে ওপর তলার সিড়িতে গিয়ে পালিয়ে বেঁচেছি। হাউমাউ করে কেদেছি। দশ বছর পরে কেদেছি। লজ্জা, অহংকার ভুলে কেঁদেছি।
মাজহার আমার খুব কাছের বন্ধু ছিলনা। একটু বিরক্ত ও ছিলাম ওর ওপরে। কেন হবোনা? রাজপুত্রের মত চেহারা, দরাজ গলায় হাসি, সবার সাথে খাতির। একটু হিংসা তো হবেই। কিন্তু এমন ছেলেকে ভাল না বেসে ত পারা যায় না।
মাঝে মাঝে কথা হত। HSC র পরে ওর সাথে বেশ কয়েকদিন ক্রিকেট খেলেছি। আড্ডাও মেরেছি। কিন্তু আমি যখন কয়েকদিনের জন্য DG Coast Guard এর ADC ছিলাম, তখন আর অনেক কাছাকাছি এসেছিলাম। মাঝে মাঝে মবাইলে কথা হত। একবার আমাকে একচোট খুব গালাগালিও করল বারবার নাম্বার চেঞ্জ করি বলে। আমার বউ এর কাছে বারবার ওর গল্প শুনতাম। ছোড়দা আজকে এই খাওয়াল, য়াজকে জ্যোতিকে বাসায় নামিয়ে দিয়েছে, আজকে আমাদের নিউমারকেট যাওয়ার জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল- এইসব। আমি আবার হয়ত একটু থ্যাঙ্কস দিয়ে দিলাম………। এই ছেলেটাকে মেরে ফেললো? এত সুন্দর মুখটা এভাবে বিকৃত করে দিল? আমার বউ কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলছে- কেউ কিছু করবে না? দেশে এত শু*** বাচ্চা থাকতে এত ভাল মানুষটাকে মেরে ফেললো?
আমি বুঝিনি দুদিন পরেই আবার কাঁদতে হবে। ঢাকায় ছিলাম। সাথে কম্পিউটার ছিলনা। চট্টগ্রাম এসে সিসিবি খুলেই দেখি সামিয়ার বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ধক করে উঠল বুকের মদ্ধে। মেয়েটাকে চিনিনা। শুধু কয়েকটা ব্লগ পড়েছি। তবে এটুকু বুঝেছি, মেয়েটা সবার খুব আদরের। আমার বউ ও আমার সাথে মাঝে মাঝে সিসিবি পড়ে। ওকে বললাম। তারপর থেকে আমার বউ বারবার জানতে চাচ্ছিল, আপুর আব্বুর কি খবর? শেষমেষ জানলাম। বউকে খবর টা জানাতে গিয়ে কান্নাটা গিলতেই পারলাম না।
মাজহার, সামিয়া- আমাদের মাফ করে দিও। যে যোদ্ধারা নিরস্ত্র অবস্থায় শহীদ হল, তারা আমাদের মাফ করে দিও। আমরা তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আমরা লজ্জিত।
আর পারছি না, এভাবে আরো কত কাদতে হবে জানা নেয়
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সান্ত্বনা দেবার ভাষা খুঁজে পাই না। পাহাড়সম শোকের কাছে কথাগুলোকে বড় অকিঞ্চিৎকর মনে হয়.............................................
নির্দ্বিধায় একমত। আমরা সবাই ভালবাসি তাঁকে, দোয়া করি আল্লাহ তাদের সবাইকে জান্নাতবাসি করুন।
..................
.............
.....
..
Life is Mad.
...........
___________________________
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
সুবিচারের আশায় আছি।তাদের ঋণ তাহলে বিন্দুমাত্র শোধ করা হবে।
কেন যেন আজ চোখের পানি কোন বাঁধ মানছে না।কোনভাবেই পারছি না।.............
....................................
........................................................................
বাঙালীরা আসলে পাকিস্তানী থেকে খুব বেশি আলাদা না। আমাদের রক্তে সমস্যা আছে। পাকিস্তানীরা তাও শত্রুদের সাথে আমরা আরো খারাপ।
..........................