দন্ত-কাহিনি

মিষ্টিপ্রীতি আছে তীব্র রকমের। জিভ সামলাতে পারি না দেখলে,হাতও না। অবশ্য সামলানোর ইচ্ছেও মনের মধ্যে তেমন একটা জোরালো নয়।দেশে থাকার সময় ইচ্ছেমতন খেতাম। কুমিল্লা গেলেই মাতৃভান্ডারের রসমালাই আর জলযোগের স্পঞ্জ নিয়ে বসে যেতাম বন্ধুরা গোল হয়ে, আয়েশ করে খেতাম। আমরা অবশ্য খাওয়া বলতাম না, বলতাম সাধনা করা।

তো যা হয়, পরবাসী হবার পরে সেই সাধনায় ব্যাঘাত ঘটলো। এখানে এসে টিন কেটে মিষ্টি খেতে জুত পাই না। তাই বলে খাওয়া কমেছে সেটাও ঠিক নয়। পেলেই খাই, এরকম অবস্থা। শুটকো পটকা অবস্থা থেকে দেহের হাল এখন এমন হয়েছে যে লোকে ইদানীং আমাকে দেখিয়ে উদাহরণ দেয়, ‘আমি ভাই ঠিক আপনার মতন মোটা ছিলাম ক’দিন আগেও, ইদানীং শুকিয়েছি।” নিজের পাশে বসে থাকা মর্তমান হিমালয়সম বউকে রেখে আমাকে দিয়ে মোটা মানুষের উদাহরণ কেন টানা, ভদ্রতার খাতিরে আমি এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাই। সে যাকগে। এই দুঃখের গল্প আরেকদিন।

তো যা বলছিলাম। মিষ্টি খাই, সাথে বেশি পাই না এই দুঃখে জাত-বেজাতের চকোলেটও সাবাড় করি নিয়মিত। এই করে করে দাঁতের তেরটা বেজে গেছে আমার। আজ সকালে মাজতে গিয়ে দেখি কমপক্ষে তিনটা দাঁতের গোড়া ফাঁকা হয়ে গেছে, একটার অর্ধেক নেই। এভাবে চলতে থাকলে মধ্য তিরিশেই ফোকলা বুড়ো হয়ে যাব কি না সেই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
দন্ত-সেবায় মনোযোগী হতে হবে মনে হচ্ছে আরো। মাজন বদলাই নিয়মিত, সাথে চলে সবচেয়ে দামী পেস্ট। বন্ধুরা বুদ্ধি দিয়েছিলো ব্যাটারিওয়ালা অটোমেটিক মাজন ব্যবহার করতে। কিন্তু মুখের ভেতর জিভ বাদে আর কোন কিছু স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে কিলবিল করে নড়ছে, ভাবতেই গা-টা কেমন শিউরে উঠলো! তাই সেটা নাকচ করে দিলাম।

দাঁতের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল পুরনো গল্প।
সে অনেককাল আগের কথা। ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। কার্জন হলের গ্যালারিতে ক্লাস করি। একবার ক্লাশের ফাঁকে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি। সবাই কিছু না কিছু খাচ্ছে, আমি খাচ্ছিলাম পেয়ারা। আমার নীচের পাটির ঠিক মাঝখানের দাঁত দুটো একটু আজিব কিছিমের। বাকি সবার থেকে আলাদা হয়ে এরা খানিকটা বাঁকা হয়ে বেড়ে উঠেছে। দেখতে অনেকটা ইংরেজী অক্ষর ‘এম’ বা ‘ডব্লিউ’র মতো দেখায়। তো, সেদিন পেয়ারা খেতে খেতে আমি হঠাৎ তাকিয়ে দেখি, প্রতিবার কামড় দিলেই পেয়ারার গায়ে সুন্দর করে ‘ডব্লিউ’ ভেসে উঠছে! কি চমৎকার দৃশ্য। আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাই। পাশে বসে ছিল একজন সহপাঠিনী, এলিজা নাম। সহজ সরল বলে খ্যাতি ছিল মেয়েটির। ওকে আগ্রহ নিয়ে দেখিয়ে বললাম, ‘দেখ দেখ এলিজা, আমি কামড় দিলেই কেমন ‘ডব্লিউ’র মতো হয়ে যায়। দেখেছিস!”
ও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ভালো করে। তারপরে কি বুঝলো কে জানে, মুখ চোখ লাল হয়ে গেল ওর, আর আমাকে বলে উঠলো, ‘ছি ছি তারেক, তুই এতো অসভ্য! ছি!”
পেয়ারা হাতে আমি বেকুব হয়ে গেলাম! লে বাবা! আমি আবার কি অসভ্যতা করলাম!
যত্ন সহকারে আমি তো পেয়ারাই কামড়েছিলাম শুধু, আর কিছু তো নয়!

২,৫২১ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “দন্ত-কাহিনি”

  1. চিল্লাও মাত। মে ইয়াহা হু।
    জো ডার গায়া, সামঝো বো মার গায়া। দিচকিয়া :gulli: দিচকিয়া :gulli: ।

    "‘ছি ছি কনফু, তুই এতো অসভ্য! ছি!”
    ওই বেটা ক্যাম্পাসে তোরে আবার কনফু ডাকতো কেডা?

    অফ টপিকঃ
    কালকে কার্জন হলে গেছিলাম। মাঠের মধ্যে ছড়াইয়া থাকা জটলা জটলা আড্ডা গুলি দেইখা মনডা আনচান কইরা উঠলো। 🙁 🙁 🙁

    জবাব দিন
  2. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    সদস্যঃ 5 জন অতিথিঃ 4 জন
    আদনান (১৯৯৪-২০০০)
    রবিন (৯৪-০০)
    তারেক (৯৪/ক)
    তানভীর (৯৪-০০)
    টিটো রহমান (৯৪-০০)

    অবস্থা দেখছস? জয় ৯৪.....


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  3. তারেক (৯৪ - ০০)

    @ আদনান,
    হ, সিধা সুরল লুক পাউয়া বড়ই দুষ্কর!

    @ টিটো,
    পেয়ারা দেখাইয়া তুই বেড়াস বেকুব, আমি দেখাই কামড়। 😉

    @ কামস,
    থুক্কু, অভ্রাস। ঠিক করে দিলাম।


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  4. তৌফিক

    তারেক ভাই, মজা পাইলাম অনেক। আমার নিজের একটা ঘটনা বলি, টিচিং এসিট্যান্ট হিসাবে একটা ল্যাব নিতাছিলাম আন্ডারগ্র্যাডের পোলাপানের। একটা ছোট রোবট এসেম্বল করতে হবে যার বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে একটা রোলার বলও আছে। এক পোলা আইসা বলল তাদের রোলার বল লক হয়া গেছে, ঘোরে না। আমি বদলায়া একটা নতুন দিলাম। প্রফেসর আসার পর ইনভেনটরি রিপোর্ট করতে গিয়া বললাম, "Sir, this ball is busted." প্রফেসরের হাসি দেখে কে। সে টেকনোলজিস্ট একটারে ডাইকা আইনা কয়, "Taufiq tells me this ball is busted. ha ha ha"

    মনে বড় দুঃখ পাইছিলাম। এরা তো সবসময় নষ্ট যন্ত্রপাতিরে বাস্টেড বলে, বাস্টেড স্ক্রু। 🙁 🙁 🙁

    জবাব দিন
  5. তারেক (৯৪ - ০০)

    মাশরুফ,
    তুমি এক্ষুনি গিয়া জেসিসির মাঠে তিন চক্কর লাগাও! বেয়াদ্দপ! আমার দাঁতের শেইপ বদলাইয়া ফেলে! x-(

    কিংকং,
    আপনারে এখানে দেইখা মজা পাইলাম। ধন্যবাদ।

    সামিয়া, মরতুজা ভাই, তৌফিক, টি২, ফয়েজ ভাই,
    সবার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  6. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    @পেয়ারা দেখাইয়া তুই বেড়াস বেকুব, আমি দেখাই কামড়।

    x-( আমি পেয়ারা দেখিয়া বেড়াই। এতে দোষ নাই। ফুল আপনার জন্য ফোটে না।
    আর তুই শালা কামড় দিস বইলাই,সিতার মত পবিত্র মেয়েরা অমন অসভ্য কয়। বয়স হইছে, বিয়া করছস এখন কামড়াকামড়ি বন্ধ কর


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  7. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    (‘দেখ দেখ এলিজা, আমি কামড় দিলেই কেমন ‘ডব্লিউ’র মতো হয়ে যায়। দেখেছিস!”
    ও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ভালো করে। তারপরে কি বুঝলো কে জানে, মুখ চোখ লাল হয়ে গেল ওর, আর আমাকে বলে উঠলো, ‘ছি ছি তারেক, তুই এতো অসভ্য! ছি!”)

    ব্যাপারটা আমিও ক্লিয়ার না...(আমি কি টিউব লাইট নাকি???) 🙁

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।