কোলের উপর রাখা ব্যাগটা খুলে পানির বোতলটা বের করে নিলাম। প্রায় পুরোটা শেষ করেও তৃষ্ণা মেটেনা আমার, গলাটা শুকিয়ে একেবারে খটখটে হয়ে আছে। দুপুরের এই সময়টায় সবাই খুব ক্লান্ত, ক্লান্তি নেই কেবল মাথার উপর তরল আগুন ঢেলে যাওয়া সূর্যের। অগ্নিদেবের উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে বাসের পেটে গাদাগাদি হয়ে থাকা মানুষগুলো রীতিমতো ধুঁকতে থাকে। কপাল বেয়ে নামতে থাকা নোনাজলের ধারা কিংবা বাসের হেল্পারের একটানা বকে যাওয়াকে উপেক্ষা করে আমি চোখ বুজি। একটু একটু করে এগিয়ে যাই আমার নদীটির দিকে।
আমাদের একটা নদী আছে, ছোট কিন্তু ভীষণ চঞ্চল সেই নদী। আমার ভাই আর আমার শৈশব-কৈশোরের সবটুকু আনন্দ, বিলাসিতা এই নদীকে ঘিরে। নদীর নাম বাঙালি, সবুজগাঁয়ের বুক চিরে এঁকেবেঁকে বয়ে চলে অবিরত। ঝিরঝির জলধারায় দু’ধার সবুজ করে তোলে, আবার বর্ষাকালে মেঘের সাথে মিতালি করে ভীষণ রাগে তছনছ করে দেয় চারিদিক। পরে কিন্তু নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার ঠিকই জাগিয়ে তোলে আশার চর। ছেলেবেলায় ঘুম না আসলে যখন বাবার কাছে গল্প শুনতে চাইতাম, তখন বাবা বলতো ‘বাঙালি’ নদীর কথা। আমাদের গ্রামের ঠিক বুক চিরে বয়ে গেছে সেই নদী। চোখ বড়বড় করে গল্প শুনতে শুনতে কখন যে ভালবেসে ফেলেছি সেই নদীকে! ব্যস্ত শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে কখনো ছুটি মেলেনি বলে আজো সেই ছোঁয়া হয়নি সেই নদীর জল, তিরতির করে কাঁপতে থাকা নিজের ছায়া দেখা হয়নি তার বুকে। তবু কল্পনায় সেই নদীর ধার ঘেঁষে ছুটে বেড়িয়েছি বহুবার, তীরে বিছিয়ে থাকা শামুক খেতে আসা হাঁসের দলের সাথে সাথে। ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে আঁজলাভরা নদীর জলে ধুয়েছি ক্লান্তি।
কখনো না দেখা বন্ধু নদীটির বুকে আমাদের স্বপ্নের ভেলা বহুবার ভাসিয়েছি আমি আর আমার ছোট ভাই। অফিস থেকে ফেরার পথে বাবার কিনে আনা তরমুজের রস আস্বাদন করতে গিয়ে দু’জনেই ভেবে নেই,আমাদের ছোট নদীটির ওপারের চরের বালুতেই হয়তো জন্মেছিলো এই তরমুজ! গামছা পেতে বাবার মাছ ধরার গল্প শুনে নিজের অজান্তেই কল্পনায় ডুব দেই আমরা, নিজেদের ভেবে নেই ‘বাঙালি’ নদীর তীরে। কাঁধের ব্যাগে বইয়ের ভারে হাঁপিয়ে উঠলে চোখ বন্ধ করে ভেসে বেড়াই নদীটির বুকে, ছোট নৌকায় বসে দুচোখ ভরে দেখি টুপ করে ডুবে যাওয়ার আগে লাল টুকটুকে সূর্যটাকে।
না দেখা ছোট নদীটাই আমাকে একটু একটু করে বাঁচিয়ে রাখে, ভীষণ ভালবাসি বন্ধু ‘বাঙালি’ কে!
দারুন :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:shy: :shy: :shy: :shy:
খেয়া (২০০৬-২০১১)
চমৎকার লিখো তুমি খেয়া। এর আগের কয়েকটা ব্লগ পড়েছি, মন্তব্য করা হয়ে উঠেনি। তাই এবার, এই সুযোগে জানিয়ে দিচ্ছি। লেখার অভ্যাসটা চালিয়ে যেও। 'বাঙালি' নদীটার নাম জানি। কি সুন্দর নাম! কিন্তু কোথায় যে সেটা ভুলে গেছি। সম্ভবত দক্ষিণে!
নতুন ক্যাডেট কলেজের নতুন ব্লগারকে আগেই সবাই স্বাগতম জানিয়েছে, আমিও দেরিতে জানালাম। :clap:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ধন্যবাদ ভাইয়া। 'বাঙালি' নদীটা বগুড়ার সারিয়াকান্দির পাশ দিয়ে গেছে। 🙂 🙂
খেয়া (২০০৬-২০১১)
:clap: :clap:
হাত তালি দিতে আসলাম! 😛
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
:shy: :shy: :shy: :shy:
ধন্যবাদ ভাইয়া। 😀
খেয়া (২০০৬-২০১১)
ভাল উপস্থাপন
:thumbup: :thumbup: