জিজ্ঞাসা – মন কি যে চায় বলো

মনোবিজ্ঞানী নই, নই কোন প্রেম-ভালোবাসা-হৃদয় ঘটিত লেখক ও। শিরোনাম দেখে যদি প্রশ্ন আসে, তাই উত্তর ও দিয়ে দিলাম আগে ভাগেই। প্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্ন আমার ও আছে, প্রেম ভালোবাসা ছাড়া কি মন এর অস্তিত্ব নেই? কঠিন পাষান সীমার এর ও মন ছিলো, এ কথায় সাহিত্যিক রা রাগ করলেও জীববিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা আমার কথাকে সমর্থন করবেন আশা করি। আর মন যদি থেকে ই থাকে তাহলে চাওয়া (পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা) ও থাকতেই হবে। যুক্তি ই হোক কিংবা হোক বাস্তবতা, এ পর্যন্ত ঠিক ই ছিলো এবং আছে।

বাস্তবে সমস্যা শুরু হয় চাওয়া র আগে ও পরে দুটো বিষয় নিয়ে, এরা হলেন সামর্থ্য ও পাওয়া। সুতরাং সামর্থ্য-চাওয়া-পাওয়া র সমীকরনকে যদি আমরা বিয়ে র মতো ঘটনার একটি ছাচে ফেলে তুলনা করি, তাহলে হয়তোবা কিছুটা লঘু মন নিয়ে বিশ্লেষন করতে পারবো। একজন ছেলে ও একজন মেয়ের আইনগত সাংসারিক দৈনন্দিন মানসিক ও দৈহিক সহাবস্থান কেই বিয়ে বা বিবাহ বলে আখ্যায়িত করা যায়। সাধারন ও স্বাভাবিক বিষয় সমুহ প্রতিফলিত হলে এটি গনিতের নিয়মেই চলার কথা। তেমনি সামর্থ্য-চাওয়া-পাওয়া (সাচাপা) সমীকরন ও সাধারন ও স্বাভাবিক নিয়মে খুবই প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিপালিত হয়ার কথা। একটি চারা গাছ লাগিয়ে এর নিয়মিত পরিচর্য্যা করলেই এটি ফলবান ছায়াপ্রদানকারী মহীরূহে পরিনত হওয়ার কথা।

কত কিছুই তো হওয়ার কথা, কিন্তু সব কি হয়? কথা দিয়ে কেউ কথা রাখে না । মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক ।

এরকম প্রবাদ গুলো থেকে ই আমরা জেনে গেছি যে, সমীকরন গুলো সবসময় গনিতের নিয়ম মানে না। এখানে একটা ব্যপার কে সবাই প্রশংসা করবে, তা হলো বাঙ্গালীর বুদ্ধিমত্তা । যেহেতু বাঙ্গালী হিসেবে আমরা জেনে গেছি যে, সাচাপা সব সময় গনিতের নিয়ম মানে না, আমরা এটাকে “কখোনোই গনিতের নিয়ম মানে না” বলে নিজেদের জীবনে ও আদর্শ হিসেবে গ্রহন করেছি। কথা গুলো কি খুব কঠিন হয়ে গেলো?

তাহলে সহজ করেই বলি, আমরা বাঙ্গালীরা নিজদের সামর্থ্য কে ঠিকভাবে জানি না, সামর্থ্যকে জানার পর ও সামর্থ্য অনুযায়ী চাই না, চাওয়া অনুযায়ী পাই না (অথবা পাই না বলে অনুযোগ অভিযোগ করি ) এবং যা সাধারনত পাই তা আমাদের সামর্থ্যের ও চাওয়ার সাথে সংগতিপুর্ন নয়। আমাদের মনের এই চাওয়া-পাওয়ার সমীকরনটিই আসলে অসঙ্গতি তে ভরে আছে।

শিরোনামে ফিরে আসি – মন কি যে চায় বলো । দেখি মন কি চায় –

১। মন চায় পড়াশোনা যত তাড়াতাড়ি পারি শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে, যদিও ঠিকভাবে জানি না প্রতিষ্ঠা কাকে বলে। যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে চাওয়াটা সবসময় বাতিঘরের কাজ করার কথা, করেও থাকে। মজার বিষয় হলো কোন বন্দর ই সাধারনত একেবারে বাতিঘরের বরাবর থাকে না কিংবা জাহাজ নিয়ে কখোনোই সরাসরি বাতিঘরে উঠে যাওয়া যায় না। এর অর্থ হলো Lighthouse is the directional orientation, The port is the specific destination ।

২। আমরা পদার্থবিজ্ঞানে মাষ্টার্স শেষ করে কাষ্টমস এ চাকুরী খুজি, বাংলা সাহিত্যে মাষ্টার্স করে পুলিশ বিভাগে গিয়ে বেকারত্ব ঘুচাই, রসায়নে গ্রাজুয়েট হয়ে প্রশাসনের মুখ উজ্জ্বল করি। একবার সেলুকাস নামে কাউকে সম্বোধন করে একটি উক্তি যেন শুনেছিলাম, কি যেন বিচিত্র এই দেশ ধরনের। সত্যিই বিচিত্র কিছু একটা আছে এখানে। নইলে সবাই কিভাবে আরামে আছে? আরামে নেই, তাই কি? মনে তো হয় না। প্রতিদিন নিয়ম ভাঙ্গা টাই আমাদের পাওয়া, চাওয়া কি না জানি না।

৩। কঠিন শব্দ “সাট-মুদ্রাক্ষরিক” ইংরেজীতে হবে clerk । তার চাওয়ার তো কোন দোষ দেখি না, যদি তিনি ঢাকা শহরে কমপক্ষে দুটি বাড়ি চান, এবং দুটি জমি চান। তার সামর্থ্য কি সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কি লাভ । তিনি চান, এবং এ দেশে তিনি চাইলে পেয়ে ও যান। গনিত কি এ দেশের জন্য নুতন নিয়মের ছাচে চলবে? অবশ্যই, চলতেই হবে, নইলে সা-চা-পা সমীকরনের কি হবে? আমরা তার চাওয়া নিয়ে কিংবা তার গানিতিক আয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি অঙ্গুলীনির্দেশ করবেন একজন মিটার পাঠক এর দিকে, মিটার পাঠক করবেন তারালাপনীর লাইনম্যানের দিকে। আর আপনারা করবেন আমার দিকে – বলবেন – তোমার (যদি ভদ্রতা করেন) নজর এত নীচু কেনো? সমাজের উচু অংশে তোমার কি তুলনা করার কিছু নেই? প্রশ্ন হবে জানি বলেই এ প্রসঙ্গের অবতারনা করলাম। স্যার রাও আছেন, ওনারা জ্ঞানীগুনী মানুষ, ওনাদের নিয়ে কি বলবো বুঝে পাই না। বলা যায় বামন হয়ে চাদের দিকে হাত বাড়াতে নেই, বা, ভীমরুলের চাকে ঢিল মারা কি বুদ্ধিমানের কাজ? আমাদের লাইনম্যান ভাই যদি বলেই ফেলেন, চাকুরীটা পেতে ৬ ডিজিটের টাকা খরচ হলো, সেটা তুলতে হবে না, তাহলে কিন্তু তিনি ঘুষের কথা বলে মৌচাকে ঢিল দিলেন না, আমি যদি বলি সেটা হবে ঢিল ঢিল ঢিল।

৪। আসলে আমি অল্পবিদ্যাওয়ালা একজন লোক, কাউকে অভিযুক্ত করা আমার কাজ না। কোন শিক্ষার সমাপনী যোগ্যতা কি হবে, তার প্রয়োগ কি হবে, সে শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ হতাশায় ভুগবে কি না, তা যাদের বোঝার কথা তাদের মন যে কি চায় তা তো আমি জানি না। তারা নিজেও জানেন কি না সন্দেহ।

৫। ঢাকা শহরে ৪০০০.০০ টাকা বেতনের একজন পিওন কি করে বাস করবে এবং নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করবে তা যাদের বোঝার কথা তাদের মন কোথায় পড়ে আছে কে জানে। তাদের মন কি এগুলো বুঝতে চায়? তাদের মন কি চায় কে জানে? স্বয়ং বিধাতা কি জানেন কিনা সন্দেহ।

৬। সভ্য দেশে (আমরা যে অসভ্য সেটা বলছি না) বড়সড় প্রানহানিকর অথবা ক্ষতিকর কোন ঘটনা ঘটার পর অবহেলার নিদর্শন থাকলে কোনরুপ তদন্ত ব্যতিরেকেই বিভাগীয় প্রধান/সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক প্রধান স্বসন্মানে পদত্যাগ করেন। আমাদের এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে একাধিক তদন্তের মাধ্যমে সুদীর্ঘকাল ব্যয় করে সঠিকতম তথ্য বের করার চেষ্টা করি যাতে আমাদের মনে কোন সংশয় না থাকে। এদের মন চায় সবসময় সংশয়হীন থাকতে, কারন সংশয়ে সংকল্প সদা টলে। ওনাদের মন চায় – সংকল্প যেন কভু নাহি টলে। প্রশ্ন হলো সংকল্প টা কি? সেটা ওনাদের মন ই জানে আর কেউ নয়।

তারপরে ও মাঝে মাঝে মন কি যে চায়, খালি আবোল তাবোল বকি। আমরা আসলে ও বুঝি না মন কি যে চায় !!!!!!!!!!!!!

২,১৬০ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “জিজ্ঞাসা – মন কি যে চায় বলো”

  1. রকিব (০১-০৭)

    ২ এবং ৫ নাম্বার পয়েন্টদ্বয়কে বিশেষভাবে :thumbup: :thumbup: অবাক হতাম যখন ব্যাঙ্কার বাবার সহকর্মী হিসেবে একজন বুয়েট পাস ইঞ্জিনিয়ারকে দেখতাম। প্রাচ্যে এবং উত্তর আমেরিকাতে (এটা প্রত্যক্ষ দেখছি) কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাকেডেমিক কোয়ালিফিকেশন বেসড চাকুরী।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।