………..নিজস্ব অপারগতাগুলো তুলে ধরতে খুব আপন কেউ চাই। এমন কেউ যার সাথে কোন কম্পিটিশন নাই। যার সাথে কোন লেনাদেনা নাই। যার সাথে কোন রাখ-ঢাক বা ইজ্জতের ব্যাপার নাই। প্রশ্ন উঠতে পারে…ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরা তাহলে কি? উত্তরে বলব। জ্বী। অবশ্যই ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরাই হতে পারে এরকম কেউ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আমি নিজেও কতবার অংকে খারাপ করার পর আমার বন্ধুর কাছে গিয়ে অংক বুঝিয়ে নিয়েছি। বরং বলা যায় ক্যাডেট কলেজই পড়াশুনার জন্য আদর্শ স্থান যেখানে সার্বক্ষনিক সাহায্যের হাত বাড়ানো আছে। যাদের কাছ থেকে হেল্প নেয়া যাবে তারা সবসময় সাথে সাথেই আছে। বন্ধুরা তথা ক্লাসমেটরা। শুধু নিতে শেখা। আর আমার এই লেখার চুম্বক অংশই হল এই “নিতে শেখার” মধ্যে। নিতে শেখা বা নিতে পারাটা কি কলেজে এতই সহজ আসলে ? সবাই কি নিতে শিখতে পেরেছিল? যদি ৫০ জনের মধ্যে ৪৯ জনই নিতে শিখেছে বলে দাবি করে আর একজন বাকি থাকে, তাহলে আমার আজকের এই আয়োজন শুধু ঐ একজন ছেলেটিকে নিয়েই। কেন সে পারলো না। কোথায় প্রবলেম ছিল। কিসের অভাব ছিল। কি তাকে কষ্ট দিল? কি তাকে বাধা দিল। কেন তার নিতে ইচ্ছা করল না। কেন মিশে যেতে পারল না স্রোতে?
খুব নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষন করলে যে যে সম্ভাব্য বিষয় গুলো তার মনে কাজ করতে পারে বলে আপাতত মনে হচ্ছে সেগুলো একে একে বিশ্লেষণ করা যায় কিনা চেষ্টা করে দেখিঃ
ক। কলেজে প্রেপের সময়টাই নিজে পড়ার সময়। আমরা সাবাই জানি প্রেপের সর্বসাকুল্যে সময় কতটুকু। যে ছেলেটার বুঝতে একটু সময় বেশি লাগে তার জন্যে এই সময় টুকু পরিমিত-পর্যাপ্ত কিন্তু নাও হতে পারে। আমি বাস্তেবেই দেখেছি এই সময়টা পর্যাপ্ত হয় না অনেক সময়। সকলের মাথার ধারন ক্ষমতা এক নয়। ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া ছেলেটা যত তাড়াতাড়ি একটা জিনিস ক্যাচ করে ফেলল, বা দিনের বেলা স্যারের / ম্যাডামের ক্লাস চলাকালেই নিজে পড়ার বিষয়টা কৌশলে এগিয়ে রাখলো সেরকম তো সবাই পারে না। যাই হোক অনেক শাখা প্রসংগ এসে যাচ্ছে। অত কথা বলতে গেলে হাতে ফোস্কা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখানে যেটুকু বলতে চাই……যে ছেলেটার হেল্প দরকার সে কখন হেল্প নিতে যাবে? প্রেপের সময়? তাহলে যার কাছে যাবে তার পড়ার কি হবে? তার পড়ার ক্ষতি হবে না? আবার প্রেপের সময় দেখা যায় ডেস্ক থেকে নড়ন চড়ন করা নিষেধ। প্রেপ ডিউটি স্যার ম্যাডামরা সেটা এনশিওর করছেন পেছনে বসে বসে। তাও যদি কোন মতে পারমিশন- টারমিশন নিয়ে যাওয়া হয়ও তাহলেও আর একজনের পড়ার ডিস্টার্ব করে কারো কাছে পড়া বুঝতে যেতে অনেকের সংকোচ হতেই পারে। আবার যদি ছেলেটা ক্লাসের একদমই পেছনের প্রোফাইলের হয়(একাডেমিক্সের দিক থেকে) তাহলে একদম ফার্স্ট বয়ের কাছে যেয়ে পড়া বুঝতে যেতে আরো বেশি দ্বিধার মধ্যে পড়ে যেতে পারে। হয়ত প্রকাশ করবে না। কিন্তু মনে মনে? যেতেই পারে। মনে হতে পারে- ” ওর পড়া নষ্ট করব? নাহ্ থাক। না জানি কি মনে করে আবার।” আর সেই সাথে যদি কোন একদিন মেজাজ খারাপের সুবাদে কারো কাছে বুঝতে যেয়ে একটু হালকা টিজ বা ঝারি খায় তাইলে তো হইসেই কাম। আর কখনই হয়ত মন চাইবে না কারো কাছে কিছু বুঝতে যেতে। সবার জন্য সত্যি না, কিন্তু হয়। এরকম হয় কিন্তু।
এভাবে দেখা যায় প্রেপ গুলো পর্যাপ্ত না হওয়ায় সপ্তাহ শেষে অনেক অনেক পড়া পেন্ডিং পড়ে যায়। এদিকে
প্রেপ ছাড়া বাকি বুঝিয়ে নেয়ার মত সময় থাকে বৃহস্পতিবার বিকাল ( যেদিন মুভি দেখানো হত আমাদের সময়- সে এক বিরাট আকর্ষণ) আর হল শুক্রবার। বৃহস্পতিবারের মুভি মিস করে পড়াশুনা করবে, এমন বেরসিক কমই আছে। তাও ধরে নিলাম পরীক্ষায় ভালো করতে হবে বলে সিনেমার আকর্ষণ উপেক্ষা করে সে টেবিল চেয়ারে বসল। কিন্তু হেল্প নেয়ার জন্য যাকে দরকার সে গিয়েছে সিনেমা দেখতে। তখন? এমনটা তো হতেই পারে। এবং হয়ও। অতএব ঐদিন আর হলনা। এরপর তো স্পেশাল ডিনার ( আহা! লিখতে যেয়ে পোলাওএর গন্ধ পাচ্ছি রে…উম্ম্ম্) , তাপর এসে একটু হৈ হট্টগোল এবং ১১টায় লাইটস অফ। লাইট্স অফ মানে তো সব অফ। যাই হোক, অতএব এদিন হয়ত হলোনা।
আবার বাকি থাকে শুক্রবারটা। এদিন সকাল ০৮০০ ঘটিকায় ঘুম থেকে ওঠার মজাটা যেন আল্লাহর নিজ হাতে পাঠানো ক্যাডেটদের জন্য একটি বেহেশতি আইটেম। আহা!! আহা!! যাই হোক জুনিয়র থাকা অবস্থায় হলে এরপর হয়ত থাকবে গার্ডেনিং, নাইলে চুলকাটা, নাইলে অপশনাল গেমস, নাইলে কোন দিন হয়ত স্যোশাল ওয়ার্ক( কাঁচি দিয়ে আশপাশ পরিষ্কার)ইত্যাদি, এরপর জুম্মা, লাঞ্চ। হ্যাঁ এই লাঞ্চের পরে একটু লম্বা সময় পাওয়া গেল ছেলেটির জন্যে কারো কাছে কোন কিছু বুঝিয়ে নিতে। তাও কথা আছে- যদি যার কাছে হেল্প নেয়া হবে সে একটু ঘুমিয়ে নিতে না চায়? হা…হা…। এখন কথা হল সারা সপ্তাহ জুড়ে যে এক গাদা না বুঝা জিনিস বাকি পড়ে রইল তার সবটাই কি সল্ভ করা যাবে এই সময়ের মধ্যে? হয়না। কিছু হয়। মেলা কিছুই হয় না।
এদিকে পরদিন থেকে আবার শুরু হয়ে যায় নতুন সপ্তাহ। নতুন পড়া। নতুন ভাবে নতুন কিছু জমে যাওয়া। আর দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই পাক্ষিক পরীক্ষা! পরীক্ষা খারাপ করার সাথে সাথে বাসায় চিঠি। মা-বাবার দুঃশ্চিন্তা। এমনিতেই পরীক্ষা খারাপ করলে নিজের মনই খারাপ থাকে তার উপর আবার বাবা-মা চিন্তা করছেন- এটা তার সাথে একটা নতুন মাত্রা দেয় হয়ত। নিজেকে আরো অসহায় অসহায় মনে হতে পারে…।
সুতরাং পয়েন্ট টু নোট ইজ…ফাইনালি হেল্প নেয়াটা সে ভাবে হল না। আর হলেও পর্যাপ্ত হল না। মনের ভিতরে অতৃপ্তিটা রয়েই গেল। একথাও বলে রাখি আমি এভাবে দেখলাম জিনিসটা- এটা একধরনের পারসেপশন। আমার এই বিশ্লেষণ পড়ে এটা ধরে নেয়ার কোন কারণ নাই যে ” ওমা, তাইলে কি ক্যাডেট কলেজে কেউ কাউরে হেল্প করে না। হেল্প করে জন্যেই তো বাইচা ছিলাম”? আমি বলব- অবশ্যই করে। অবশ্যই করে। করে জন্যেই চালিয়ে যাওয়া যায় আসলে। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই করে। আমি শুধু ” নাও যে হতে পারে ” শুধু সেটা বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি। এবং আমার মনে হয় আমি যে ভাবে বললাম সেভাবে আমাদের অনেকের জীবনেই হয়েছে। হতেই পারে।
তবে বেশিরভাগ হেল্পিং টা হয় গিভ এন্ড টেকের ক্ষেত্রে। যার কাছে কিছু পাওয়ার থাকে তাকেই কিছু দেয়া আরকি। অতিশয় দরদী ক্যাডেটদের কথা আলাদা। যারা নিজে কিছু না নিয়েও কাউকে ভালো করানোর চেষ্টা করে। এরকম আছে।
এখানে প্রসংগক্রমে একটা কথা এসেই যাচ্ছেঃ এই যে কলেজে পড়াশুনা বিষয়ক সময়াভাব, ক্লাসের সাথে তাল মিলাতে না পারা, পরীক্ষায় খারাপ করা এগুলো এড়াতে বাধ্য হয়ে একটা চিন্তা মাথায় আসে এবং আমার জানামতে ৯০% ছেলে যেটা করতে বাধ্য হয় সেটা হল ” ছুটিতে বাসায় যেয়ে প্রাইভেট পড়া”। হা…হা…। এ এক মজার দৃশ্য। প্রত্যেকবার ছুটিতে যাবার সময় ব্যাগে আর কিছু না থাকুক বই থাকবে এক গাদা। প্রত্যেকবার পর্বান্ত পরীক্ষায় খারাপ করে রেজাল্ট হাতে নিয়ে মনে হয় ” বেটার লাক নেক্সট টাইম”। ছুটিতে বাড়ি গমনের সময় চোখে থাকে বিরাট স্বপ্ন – পরের বারের পর্বান্তে আর এরকম হবে না। এবার ছুটিতে সব কিছু পড়ে আসবো। সব মুখস্থ করে আসবো। কলেজে এসে সময় পাই না। এবার সব পড়ে আসবো । সব। বুকের মধ্যে এরকম একটা সংকল্প নিয়ে সাথে বইয়ের গাট্টি নিয়ে ক্যাডেট পাড়ি জমায় ছুটিতে। হোম, সুইট হোম। বাড়ি আসে। বাড়িতে এসেই শুরু করে দেয় ২/ ৩ টা প্রাইভেট পড়া। ছুটি মানেই যেন পড়াশুনা করতে আসা। সবার ক্ষেত্রে হয়ত না। কিন্তু সবাই যে প্রাইভেট পড়ে এতে কোন সন্দেহ নাই। এই প্রাইভেট যে শুধু খারাপ স্টুডেন্ট টা পড়ে তা কিন্তু না। ভালো রাও। বরং ভালোরা আরো বেশি পড়ে দেখেছি। নিজেকে পরের পর্বান্ত পরীক্ষার জন্য এগিয়ে নিয়ে যায়। কলেজে যেয়ে খালি রিভাইজ দেয় আর পরীক্ষা দেয়। বড় বড় নোট লেখার সময় কম পাওয়া যায় কলেজে বিধায় সুন্দর সুন্দর হাতের লেখা করে অনেক বিশাল বিশাল নোট বানিয়ে নিয়ে যায়।
এর মধ্যে বেশির ভাগের জন্যেই মজার বিষয় যেটা হয় সেটা হল কোন-বারই যেমনটি ভেবে ছুটিতে আসা হয়েছিল, ছুটি থেকে ফেরার কালে সেইরকম একটা তুমুল হতাশা নিয়ে কলেজে ফেরত আসতে হয়। হা…হা…। কিছুই বের করা হয় না। দেখা যায় যে উপরে থেকে কেবল হয়ত ম্যাথ, ফিজিক্স, ক্যামিস্ট্রি এই তিনটার বই গুলা বের হয়েছে, সাথে কলেজের খাতা কিছু। আর বাকি যাবতীয় বই -পত্তর -খাতা-কলম যা কিছু সব যেমন কলেজ থেকে ব্যাগে করে এসেছিল ঠিক ঠিক তেমনই রয়ে গেছে……হা…হা…। কেউ অস্বীকার করতে পারবে এই সীন?
যাই হোক এই সীন যদি ঐ ছেলেটার ও হয়ে থাকে তাহলে কি হতে পার তার কনসিকোয়েন্স?
এছাড়াও কলেজে একাডেমিক্সে খারাপ করার আরো কিছু অনিবার্য কারণ হলঃ
ক। মাঝে মাঝে পড়তে ভালো না লাগা।
খ। ক্লাসে ঘুম পাওয়া ।
গ। প্রেপে ঘুম পাওয়া। ইত্যাদি।
ঘ। কোন স্যারের ক্লাস ভালো না লাগা। (বোরিং)।ক্লাস না বোঝা। ফলে ভালো করে পড়তে না পারা।
ফলশ্রুতিতে , পরের পর্বান্ত পরীক্ষাতেও য্যায়সা কা ওয়েসা হি।
এট দ্যা এন্ড অফ দ্যা ডে, একাডেমিক্স সংক্রান্ত ব্যাক বাইটিং টা তার মাথায় কিন্তু রয়েই গেল। ভালো করতে পারছিনা, ভালো করতে পারছি না…………
বিধায় আমার আলোচনার বিষয়বস্তু তথা- “একটা ছেলে কেমন করে ধীরে ধীরে মেইন স্ট্রীম থেকে সেগরিগেটেড হতে থাকে” এই বিষয়ের পরথম পয়েন্ট/ ক্যাটালিস্ট- “একাডেমিক্স” এর একশন বর্নিত হইল।
একাডেমিক্স বিষয়ক পয়েন্টটির পরিশেষে যেন কোন দ্বিমত এর উদ্রেগ না ঘটে সেকারণে বলছি… কেউ প্রশ্ন করতে পারেন- তাহলে ক্যাডেট কলেজের সামগ্রিক রেজাল্ট ভালো হয় কি করে? কাউকে তো কখনো দেখা গেল না ভীষণ খারাপ করে বের হয়েছে। উত্তরটা হল…আসলে ক্যাডেট কলেজের স্ট্যান্ডার্ড টাই অনেক ঊঁচু স্তরের। এখানে খারাপ যাকে বলছি সেও হয়ত দেখা যাবে কলেজে আসার আগে ক্লাস ফাইভ অথবা সিক্সে ফার্স্ট বয় ছিল কোন স্কুলের। কলেজে এসে খারাপ করা শুরু করেছে। নরমালি ইন এন এভারেজ এদের ব্রেন থাকে শার্প। দেখা যায় পরীক্ষার আগের রাথে কম্বলিং করেই পর্বান্ত পরীক্ষায় পাশ করে পরের শ্রেনীতে চলে যায় অনেকেই। অনেকেই না বরং বেশির ভাগই। এটা আমাদের একটা ট্রেডিশানেরই মত। গুরুজনেরা বলতেন পরীক্ষার পূর্ব রাত্রি ভয়ানক নিয়ম কনুন করে পড়া এবং তারাতারি ঘুমানোর রাত্রি। আমাদের বেলায় সেটা কিসের কি। এমনো দেখা গেছে সারারাত পরে সকালে পরীক্ষা দিতে। আর পাবলিক এক্সাম গুলোর আগে কলেজে ১৫ দিনের বা এক মাসের করে যে প্রিপারেশন টাইম টা দেয়া হয় সেই টাইম টাকে কাজে লাগিয়েই একটা ক্লাসের অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন তুমুল রেজাল্ট করে ফেলে। এগুলো সবই সত্যি। পাবলিক এক্সাম গুলোর আগে যদি ঐ সুযোগটুকু না দেওয়া হতো তাহলে ক্যাডেট কলেজের রেজাল্ট এতো ভালো হত কি?
হয়তো…হয়তো নয়।
আমার এখনকার আলোচনার পার্ট সেটা না। এই আলোচনার পার্ট হল…এতো কিছুর মধ্যে থেকেও একটা বা একাধিক মানুষ কি করে ভিতরে ভিতরে একা হয়ে যায়?
( চলবে…?)
চলবেতো অবশ্যই....
সময় করে এসে মতামত দেব ইনশাল্লাহ্।
ওক্কে...
চলবে না মানে? চালাতে হবেই কালবেলা ভাই।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমার জিন্দেগীতে ক্লাসে কখনোই বুঝতে পারতাম না, বোঝার চেষ্টাও করতাম না, দু'একটা ব্যতিক্রম ছাড়া। এই ব্যতিক্রমগুলো অবশ্যি ক্যাডেট কলেজের না। ক্যাডেট কলেজ থাকাকালীন আমার শিক্ষক ছিল বন্ধুরা, ওদের কাছ থেকেই বুঝে নিতাম না বোঝা বিষয়গুলো। আমাদের ব্যাচে এমনও হয়েছে প্রায় পূরো ব্যাচ পড়েছে এক নোট, কারণ ওই নোটটাই সবচেয়ে ভালো ছিল। আমাকে কয়েকদিন আগে একজন জিজ্ঞেস করেছিল, ক্যাডেট কলেজের রেজাল্ট ভালো হয় কেন? আমার এক মুহূর্তও চিন্তা করতে হয়নি, বলে দিয়েছিলাম, পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য।
তৌফিক,
ঠিক বলছো...ঠিক বলছো......। নোট আদান প্রদান - ব্যাপকভাবে হয় কলেজে।
কালবেলা ভাই আপনার এই লিখাটা মনে হয় আপনি আমাকে দেখে লিখেছেন।সেই সাথে আরেকটু যোগ করি...ক্লাশ ১২ এ যদি পামোশের মত ভিপি থাকে আর আপনি যদি সৌভাগ্যক্রমে কোন "পৈতাধারী" হন,আর আপনি যদি অথরিটির একের পর এক চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়গুলো সহ্য করতে না পেরে বিদ্রোহ করে বসেন-(সেইসাথে আপনার একাডেমিক লার্নিং প্রসেস যদি কিছুটা ধীর হয়)তাহলে তার পরিণতি কি হতে পারে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।আমি কিভাবে এইচএসসি পরীক্ষা পাস করেছি এটা আজো আমার কাছে বিস্ময়ের ব্যপার।
তার পরেও বলি, এখন পিছন ফিরে তাকালে মনে হয় তখন সেই কঠিন পরীক্ষায় হাল ছেড়ে দেইনি বলে সেই প্রশিক্ষণ আজো আমার চলার পথের পাথেয়।ক্ষুদ্রপ্রাণ আমার কাছে এটাও কিন্তু একটা প্রাপ্তি, যার জন্যে আমি কলেজের কাছে কৃতজ্ঞ।
ক্যাডেট কলেজের এই দিকটা তুলে ধরবার জন্যে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ব্লগের পর আর কেউ বলতে পারবেনা যে আমরা আত্মসমালোচনা করতে ভয় পাই।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা সবাইকে।
মাসরুফ,
তুমি কি প্রিফেক্ট ছিলা? থ্যাংকস্ ফর নাইস কমেন্ট। 🙂
ভাই রে,পামোশ ভিপি থাকলে প্রিফেক্ট হওয়া লাগেনা উনার দৃষ্টিতে সবাই সমান ,কম বেশি কারে জ্বালায় নাই? শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসাধারণ জ্ঞানের কারণে লোকটারে এখনো কিছুটা ভালো পাই।এই রাজাকারের জয়যাত্রায় এইরকম কিছু লোক ক্যাডেট কলেজে ছিলো বইলা সামান্য কিছু হইলেও জানতে পারছি।
কিন্তু ক্যাডেট জ্বালানোর ব্যাপারে উনার জুড়ি মেলা ভার!
ক। মাঝে মাঝে?? আমারতো সবসময়ই পড়তে ভালো লাগে না 😀 । ইনফ্যাক্ট কার লাগে! 😮 (তৌফিকের অবশ্য লাগতে পারে... 😀 সে অনেক ঘাটাঘাটি করে যেকোন বিষয় বুঝতে ট্রাই করে :boss: । আপসোস, ঘাটাঘাটি টা পরীক্ষার আগের রাতে ১১/১২টার দিকে শুরু হতো...আর সে পরীক্ষা চেগাইতো! =)) । একবার ক্লাসে অনেক উপরের দিকে ছিল, হাউজ ফার্স্ট মনে হয়...সেইটা ধরে রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ম্যাথ পরীক্ষার আগে না ঘুমায়ে সারারাত পড়ে পরের দিনের ম্যাথ পরীক্ষায় ফেল করলো! =))
খ। সোমবারের তেহারি আর ফিজিক্সের আজিজ হাসান স্যারের ফার্স্ট পিরিওড - এই কম্বিনেশন বড় সর্বনাশা কম্বিনেশন ছিল! :shy:
গ। আফটারনুন প্রেপ আর থার্ড প্রেপ! ভাই আর বইলেন না ভাই...... 😕
ঘ। হে হে 😀 দুই একজন ছাড়া সব স্যারের ক্লাসেই তো এই অবস্থা! :shy:
ভাইয়া...এগুলিতো কোন স্পেশাল কেস না। এগুলিতো আমরা সবাই ই ফিল করে আসছি 😀
আশিক,
হা হা মজা পাইলাম। 😀
একারনেই বলেছি - এগুলো অনিবার্য কারণ। অর্থাৎ এগুলি তো আছেই তার সাথে উপরের গুলা।
চলুক কালবেলা।
তোর বিশ্লেষন গুলো যৌক্তিক।
কামরুলের লেখায় আমার মন্তব্য গুলো দেখলে বুঝবি- আমি তোর সাথে একমত।
কামরুলের লেখায় মন্তব্যের জের ধরেই বলতে চাই- সিস্টেম লস কোথায় নেই?
বরং ক্যাডেট কলেজে এর হিসাব শতকরায় করলে ২- ৩ কিংবা ৫% হয়। কারন- অনেক ছেকে ভাল ভাল ছাত্র/ছাত্রীরাই যায় সেখানে।
কিন্তু তাই বলে আমি সেই সিস্টেম লস কে মেনে নিতে বলছি না। কিন্তু তাকে অস্বীকার করি কি ভাবে !
আমার ব্যক্তিগত উদাহরন দিলে অবশ্য কোন যুক্তি দাড় করাতে পারব না। আমি খুব্বি ফাঁকিবাজ টাইপ স্টুডেন্ট ছিলাম। তারপরও যে ফলাফল নিয়ে বের হয়েছি তাতে শিক্ষক/শিক্ষিকার পাশাপাশি বন্ধুদের সহযোগিতা ছিল মূখ্য।
আর, প্রতি ব্যাচেই কিছু কিছু ছেলে থাকেই যারা নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যদের সাহায্য করে। তারাই ভরসা হয় সেই সব পিছিয়ে পড়া বন্ধুদের আলোকবর্তিকা।
আসলে হাতের পাঁচ আঙ্গুল তো আর সমান হয় না; তাই ভাল খারাপ মিলেই একেক টি ব্যাচ শেষ মেষ বেরিয়ে আসে।
যদি আরেকটু গভীরে প্রবেশ করি - দেখা যাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে গ্রেডিং-স্বর্বস্ব সিস্টেম প্রচলিত; তাতে করে ভালো নোট মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় ঝেরে দিয়ে আসতে পারলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আমি এটা বলছি না সব ভাল ছাত্ররাই অরিজিনাল নয়। তবে এমন অনেকেই আছে...। এমন কি অংক মুখস্থ করেও কেউ কেউ দিব্যি পার হয়ে এসেছে। এটা আমদের সিস্টেম এর একটা দূর্বল দিক।
এই ক্ষেত্রে ক্যাডেট কলেজ গুলি কিন্তু একজন ক্যাডেট কে শিক্ষার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলা অ্যাক্টিভিটি আর গ্রুপ ফিলিংস তৈরীতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। আর মূলত এ কারনেই বাইরের অনেক ভাল স্কুল/কলেজের ভাল ছাত্রের থেকে ক্যাডেট কলেজের মিডিওকাররাও পরবর্তী জীবনের প্রতিযোগিতায় ভাল করার প্রয়াস পায়।
সব মিলিয়ে পঞ্চাশ জনের মধ্যে ঐ গুটি কয়েকজন ক্যাডেটের জন্য আমার মতে কিছু করতে হলে তা আসতে হবে অফিসিয়াল অ্যাঙ্গেল থেকে।
:-B
১। আমাদের ক্যাডেট কলেজের প্রশাসন আর টীচার দের হিউম্যান সাইকোলজীর উপর খানিকটা দৃষ্টি দিতে হবে। প্রহোজনে ট্রেনিং।
২। এমন কি প্রতি কলেজে প্রয়োজনে সাইক্রিয়াটিস্ট এর নিয়োগ দেইয়া যেতে পারে। তারা সেইসব পিছিয়ে পড়া ক্যাডেটদের মানসিক উত্তরনে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন। এতে করে সেই শতকরা হিসাবও কমে আসবে বলে আমার ধারনা।
😛
হ্যাঁরে- এত বড় মন্তব্য হয়ে যাচ্ছে। ব্লগে সাবমিট হবে তো ? যাক আজ তাহলে অফ যাই।
ভালো থাকিস। 😀
(দৌড়াক...)
সৈয়দ সাফী
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগটা একটি আধুনিক ও প্রয়োজনীয় বিষয় বলে আমি মনে করি।এতে দুর্বল ক্যাডেটদের মানসিক চাপ কিছুটা হলেও লঘু হতে পারে বলে আমার ধারণা।
অফ টপিকঃ"ফিরে ফিরে আসি" এর জসিম ভাই ধরণের ক্যাডেটদের তাহলে কি হবে?ওই ব্যাটা ত আসল কাহিনি ধইরা ফেলবে! আর ক্যাডেটের যন্ত্রণায় সেই ব্যাটা নিজেই যে পাগল হয়া যাইবনা সেই গ্যারান্টি কেডা দিব?
কালবেলার, তোর সাথে আমি কিছু বিষয়ে একমত না। ক্যাডেট কলেজে প্রেপ টাইমের জন্য থাকে দিনে ২০০ মিনিট। ২০০ মিনিট শুনতে মনে হয় অনেক কম সময়। ইন্টারমিডিয়েটের কথাই ধরা যাক। ইন্টারমিডিয়েটের ২ বছরে আমরা কলেজে থাকি প্রায় ৫০০ দিন। এই ৫০০ দিন প্রতিদিনে ২০০ মিনিট করে পড়লে মোট সময় দাঁড়ায় ১০০০০০ মিনিট। প্রায় ১৬৬৬ ঘন্টা। ক্যাডেট কলেজে যে ছেলেটা একেবারেই ফাকিবাজ তাকেও কিন্তু ইন্টারমিডিয়েটে ১৬৬৬ ঘন্টা পড়তে হয়। পার্সোনার লেখাপড়ার টাইম না হয় বাদ দিলাম, ছুটির সময় পড়ালেখার টাইমও ধরলাম না। আমার মনে হয় ১৬৬৬ ঘন্টা অনেক সময়, ভালো রেসাল্ট করার জন্য। তাছাড়া আমার মতে, ক্যাডেট কলেজের সব ছেলেই অনেক মেধাবী। যে ছেলেটা ক্লাসে ৫৫ তম হয় সেও দেখা যায় কলেজে আসার আগে স্কুলে ফার্স্ট বয় ছিল, ক্লাশ ৫ এ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। দেশের অনেক ছেলেদের মধ্যে থেকে বাছাই করে নেয়া হয় ভর্তি পরীক্ষার সময়। তাই আমার মনে হয় ১৬৬৬ ঘন্টা অনেক সময় ভাল রেসাল্ট করার জন্য। বাইরের অধিকাংশ কলেজের ছাত্ররা ক্লাস ১১ এ কলেজে একবারে যায়ই না বলতে গেলে। তাই তাদের দেখা যায় পরীক্ষার আগে ১০-১২ ঘন্টা করে পড়ে। বোর্ডে স্ট্যান্ড করার পর বাইরের ছাত্ররা বলে যে দিনে ১০-১২ ঘন্টা করে পরে আর ক্যাডেট কলেজের ছাত্ররা বলে ৪-৫ ঘন্টা। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের ছেলেটি কিন্তু পুরা ২ বছর দিনে ৪-৫ ঘন্টা পড়েছে আর বাইরের ছাত্রটা হয়ত শেষ ৩ মাস দিনে ১০-১২ ঘন্টা করে পড়েছে।
আমি জানি না আমার এই হিসাবে কোন ভুল আছে নাকি। কিন্তু আমার কাছে তাই মনে হয়েছে।
আর তুই বলছিস যে কলেজের ভালো ছাত্রদের স্যার ম্যাডামরা ভাল মত চিনে। আসলে আমার কাছে মনে হয়, একজন ভালো ছাত্রের ক্যাডেট কলেজে যত নাম-ডাক, তার থেকে অনেক বেশি নাম-ডাক একটা ভালো খেলোয়ার অথবা ভালো গায়ক অথবা ভালো অভিনেতা অথবা ভালো এথলেটের।
আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান, তাও কিছু যোগ করি ...
পারস্পরিক সহযোগিতাটা যে কি জিনিস সেটা টের পাইছি আইইউটিতে গিয়া ... একটা ক্লাসও করতাম না, সারা সেমিস্টার কিছু পড়তাম না, পরীক্ষার আগের দিন বই নিয়া এর-ওর কাছে যাইতাম সিলেবাসে কোন কোন চ্যাপ্টার আছে জানার জন্য ... এত এত চ্যাপ্টার পইড়া বুঝতে গেলে আর পাস করা লাগবে না, সহজ সমাধান কারো থেকে ডেমো নেয়া ... এইখানের আশিক যে কি পরিমাণ উপকার করছে আমার (এবং আরও প্রায় সব ছেলের) সেটা বলে বোঝানো যাবে না ... পুরা চ্যাপ্টার আগে ওর মুখ থেকে শুনে বুঝে আসতাম, তারপরে পড়া শুরু করতাম ... শুধু আশিক না, এমন আরো দুইএকজন ছিল বলেই সহিসালামতে পাস করে আসছি ...
অথচ এর আগে নটরডেমের অভিজ্ঞতাচছিল পুরাই উল্টা ... সেখানে তুমি কার কে তোমার টাইপ অবস্থা ... বিশেষ করে যেসব পুলাপানের মধ্যে বোর্ডে খাড়ানোর নেশা ছিল তাদের অনেকগুলিই ছিল স্বার্থপরের চূড়ান্ত ... কোন স্যারের কাছে প্রাইভেট পরে সেটা পর্যন্ত বলবে না ... নোট শেয়ারিংয়ের তো প্রশ্নই আসে না ... [এই টেন্ডেন্সির জন্য আমার মনে হয় বাপ-মার দায় বেশি ... নোট যে শেয়ার করার জিনিস না এই কথাটা বাপ-মা বাল্যকালেই মাথায় ঢুকায় দিছে সবার] ...
সবাই যে স্বার্থপর তা কিন্তু না, কেউ কেউ খুবই হেল্পফুল ছিল ... কিন্তু সেটা বেশিরভাগ সময়ই ছিল ছোট ছোট সার্কেলের মধ্যে, ক্যাডেট বা আইইউটির মত ম্যাসিভ স্কেলে না ... সার্কেলের বাইরের কেউ সেই সার্কেলে ঢুকতে সংকোচ বোধ করবে, কাজেই খুব ক্লোজ কোন হেল্পফুল বন্ধু না থাকলে হেল্প পাওয়া লাগতো না ...
ক্যাডেট কলেজ নিশ্চিতভাবেই পোলাপানের মধ্যে এই ইউনিটিটা গ্রো করবে, যেটা পরে আইইউটি করছে আমাদের সাথে ... প্লাস কো-কারিকুলার বা অন্যান্য দিক থেকেও ক্যাডেট সিওরলি হেল্পফুল ... কিন্তু এগারো-বারো বছর বয়সে নিজের পরিবার ছেড়ে দূরে থাকাটাই একটু কেমন কেমন জানি লাগে ... ঐ বয়সে ফ্যমিলির সঙ্গ খুব বড় একটা ব্যাপার, ক্যাডেট কলেজ যত কিছুই দেক আমার তারপরেও সন্দেহটা থেকেই যায়, ডাজ দ্যাট ওয়র্থ ইট?
১...
কিংকু, প্রথমেই ধন্যবাদ এই আলোচনায় কিছু যোগ করার জন্য। তোর "ব্লাডি সিভিলিয়ান" দৃষ্টিভঙ্গিটা অবশ্যি দরকার।
২...
ফ্যামিলির সঙ্গ, বিশেষ করে এগারো বারো বছর বয়সে? দোস্ত, নিজের কথা বলতে পারি। চাষার নাতি এই আমি আজ যতোদূর পড়াশোনা করেছি তার পেছনে আমার মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আমার মাও আর দশটা অবসেসড মায়েদের মতো সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকতে বলতেন, বাসা থেকে বের হতে দিতেন না বখে যাব এই ভয়ে। ক্যাডেট কলেজে গিয়ে আমার ওই ছোট গন্ডিটাই আদিগন্ত বিস্তৃত হয়ে গিয়েছিল। ক্যাডেট কলেজে না গেলে, পুতু পুতু স্টিরিওটাইপগুলোর মতো হয়ে যেতাম, পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই পারতাম না, লোকজনের সাথে ডিল করতে পারতাম না, চিন্তা ভাবনার পরিসরটুকুও হয়তো এর চেয়ে ছোট থাকত হয়ত। ক্যাডেট কলেজে গিয়ে যে সব ভালোই হয়েছে তা কিন্তু না, তোরা ত আমার নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো জানিসই, এগুলোর কিছু কিছু ক্যাডেট কলেজের অবদান। কিন্তু দাঁড়িপাল্লায় যদি ভালো খারাপের মাপ দিই, ভালোটাই ভারী হবে, বিপুল লিডেই ভারী হবে।
৩...
আমাদের পোড়া দেশটা একটা ছেলে বা মেয়ের বিকাশের জন্য নূন্যতম সুবিধাটুকু দিতে পারে না স্কুলগুলোতে। একমাত্র ক্যাডেট কলেজেই এই সুবিধাটুকু পাওয়া যায়, বাবা বিশাল বড়লোক হলে অন্যকথা, তখন এই সুবিধাগুলো কিনে নেয়া যায় ব্যক্তিমালিকানাধীন স্কুলগুলোতে। শুধু ক্যাডেট কলেজের পেছনে এত টাকা ব্যয় করা উচিৎ কিনা- সে অন্য গল্প। অফটপিক হয়ে যাবে বলে আলোচনা করছি সংক্ষেপে। আমি মনে করি, যদি প্রত্যেকটা ছেলে মেয়েকে, তার ব্যাকগ্রাউন্ড যাই হোক না কেন, ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য সমান সুযোগ দেয়া যেত, তবে সরকারের এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়টা অবশ্যই সঠিক হতো (স্কলারশিপ ভেবে নেয়া যেত)। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কথা বাদ দিলাম, উপজেলা শহরের একটা ছেলের কি সমান সুযোগ থাকে যতোটা থাকে শহরের ভালো স্কুলে পড়া একটা ছেলের? পার্ফেক্ট ওয়ার্ল্ডে হয়তো থাকত, কিন্তু দুনিয়াটা তো অনেক দিক থেকেই আদর্শ না, তাই না? এই সমান সুযোগটা কিন্তু সরকারের দেয়ার কথা।
(ভাই ও বোনেরা, আমার সাথে দ্বিমত করতে পারেন, কিন্তু একটা দুটো উদাহরণ দেয়াটা বোধ করি উচিৎ হবে না, বৃহৎ প্রেক্ষিতে পালটা যুক্তি সাদরে আমন্ত্রিত।)
আমি আপনার প্রশ্নটার উত্তরে কি লিখবো সেটা যখন মনে মনে ঠিক করতেসিলাম তখনই দেখি তৌফিক ভাই আমার অনেক কিছুই কপি মাইরা কইয়া দিসে। :grr:
ভাইয়া, আমি আপনার কথাটা মানি যে যে সময়টাতে একটা ছেলের ক্যাডেট কলেজ জীবন শুরু হয় সে সময়টাতে যে কোন মানুষই পরিবারের কাছাকাছি থাকার একটা আকুলতা অনুভব করে। আমাদের জীবনে পরিবারের প্রয়োজনীয়তা কোথায়? যে কোন মানুষই পরিবার থেকে তার সামনের জীবনে চলার মত শিক্ষাটুকু অর্জন করে। আর পরিবার থেকে যে ভালবাসা আর সাপোর্টটা পায় সেটাও অনেক মুখ্য একটা ব্যাপার।এই দুইয়ে মিলিয়েই একটা মানুষ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। আর সেই সময়েই দায়িত্বটা ক্যাডেট কলেজ নিজের ঘাড়ে তুলে নেয়। হ্যা, অনেকেই বলবে বাবা মার সান্নিধ্যের সাথে আর কোন কিছুর তুলনা হতে পারেনা। সেটা আমিও মানি। কিন্তু এই ভালবাসা, মমতার বাইরে পরিবারের আরো একটা বড় দিক যে আছে, একটা ছেলেকে ভবিষ্যতের জন্য পুর্ণাংগরুপে গড়ে তোলা সে ক্ষেত্রে ক্যাডেট কলেজ কি করছে? সেখানেও কি বাবা মা যে শিক্ষাটা দিত সেটুকু ক্যাডেট কলেজ করতে পারছেনা? এক্ষেত্রে কেউ যদি বলেন পারছেনা সেক্ষেত্রে আমার দ্বিমত আছে। বরং অনেক ক্ষেত্রে আমি মনে করি সেটা সে পরিবারের চাইতেও সুনিপুণ ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। যারা পরিবারের ভেতর থেকেই বেড়ে ওঠছে তারা নিজেরাও কি সবসময় ঠিকভাবে বেড়ে ওঠছে? শুধু একটা উদাহরণ দেই, আমি আমার বাইরের অনেক ক্লাসমেটদের দেখেছি তাদের একটা অংশের মুল উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে যে কোন মুল্যে পড়াশুনার দিকটা ধরে থাকা। পড়াশুনার বাইরেও যে একটা জীবন আছে যে জীবনে পড়াশুনা ছাড়াও আরো অনেক কিছুই পড়াশুনার চে গুরুত্বপুর্ণ এই বোধটুকু বোধহয় তারা কখনো ঠিক ভাবে ধরে উঠতে পারেনা। আর পারস্পরিক সহযোগিতার কথাটা আপনি নিজেই বলে গেছেন। এবং এরকম অসহযোগিতামুলক মনোভাব সৃষ্টির জন্য কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের পরিবারই দায়ী। আমি বলছিনা সবাই এরকম। বরং একটা বলার মত অংশের কথা বলছি। কিন্তু ক্যাডেট কলেজে এধরণের ব্যাপারগুলা অনেক কম। এখানে পড়াশুনার পাশাপাশি কো কারিকুলার একটিভিটিসগুলাও সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। সেখানে একজন ভাল ছাত্রকে কলেজের সবাই যতটুকু চেনে, একজন ভাল খেলোয়ার কিংবা একজন ভাল তার্কিককেও সমান পরিমাণে চেনে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো বেশি করেই চেনে।
এবার আমি আমার এক ক্লাসমেটের কথা বলি। আমরা একেবারে ন্যাংটা কালের ফ্রেন্ড। ক্যাডেট কলেজে যাবার আগ পর্যন্ত আমরা সবাই তাকে চিনতাম একটু ভীতু,ঘরকুনো,অসামাজিক হিসেবে। যার কাছে অন্যের চে নিজের যে কোন কিছুই সবচে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। এইসব নানা কারণে তার প্রতি কমবেশি সকলেই কিছুটা বিতৃষ্ণ ছিলাম। আমরা একই সাথে দুই জন দুই ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হলাম। এবং ছয় বছর পর যখন আমরা বের হলাম আমি আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম সেদিনকার সেই ছেলেটাই কেমন মিশুক, আত্নবিশ্বাসী এবং সবার প্রিয়পাত্র কিসিমের একজন হয়ে গেছে। কলেজে থাকতে সর্বোচ্চ প্রিফেক্টশীপটাও সে নিজের করে নিয়েছিল পরবর্তী পরিবর্তিত পরিবেশের সহযোগিতায়। ও যদি কলেজের সময়টুকু নিজের পরিবারে থাকতো আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ও মোটেও এমন চেন্জ হতে পারতোনা। কারণ ওর পরিবারের পরিবেশটুকু কেমন ছিল সেটা আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি।কাজেই একটা ছেলে পরিবারে থাকলেই তার বিকাশ সবচে সুন্দরভাবে হত আর ক্যাডেট কলেজে থাকলেই জীবনখানা বারো আনাই বৃথা এই জিনিসটা কখনোই মেনে নিতে পারিনা। এই যে একটা মানুষের বিকাশে এমন আমুল পরিবর্তন সেটুকু বিবেচনায় যদি ঐ সময়টুকুর পরিবারের মায়া মমতার ব্যাপারটা একটু কম্প্রোমাইজ করা যেতেই পারে। তাতে আর যাই হোক, অমানুষ তো আর হয়ে যাচ্ছিনা। অবশ্য কেউ যদি আমাকে অমানুষ বলে তাইলে ঠিকাছে। 😀 আর কলেজের একটা শিক্ষাবর্ষের ৩৬৫ দিনের ১০০ দিন রয়েছে পরিবারের সাথে অবকাশের জন্য। এটা কি একেবারেই কম সময়? আমার মনে হয়না। 🙂
এতকিছুর পরেও নিশ্চিতভাবেই ক্যাডেট কলেজের কিছু নেগেটিভ দিক আছে। যে গুলো কালবেলা ভাইয়ের কথায় উঠে আসছে। সেগুলোর দিকে বোধহয় এখন আগের চে আরো গভীর দৃষ্টি দেবার সময় এসেছে।
ভাইয়া, আমি আবারো বলি , যে সময়টুকু আমরা কলেজে পার করে এসেছি ঐ টাইমটুকুতে পরিবারের ভালবাসা,সান্নিধ্যটুকুর প্রয়োজনীয়তা কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। তারপরও সব যোগ বিয়োগ গুন ভাগ শেষে যে সফল সমীকরণটুকু দাঁড়ায় সেটার দিকে তাকিয়ে বোধহয় এতটুকু বিসর্জন হাসিমুখে স্বীকার করাই যায়। 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ইশ কিংকং ভাই, আপনেরে আর তৌফিক ভাইরে কালকে গেট টুগেদারে বড়ই মিস করুম...আর আহসান ভাই বেচারা তো... 🙁
মিস করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমারে কেউ বেশি মিস করে না... :(( :((
ভাইয়া,আপনার লেখাটার দুইটা পার্টই পড়লাম। ভাববার মত অনেক কিছু এসেছে।
ভালো লাগলো।
কিন্তু একটা কথা না বলে পারছি না।ক্যাডেট কলেজের উদ্দেশ্য কি শুধু ভালো ছাত্র বের করা।তা তো না। আর প্রেপের তিন ঘন্টা অনেক সময় । পড়ালেখাটা খুব বেশি মুখ্য হওয়াটা আমি তেমন কাজের কিছু মনে করি না। আমি নিজের কথা বলতে পারি। আমি ক্লাশে সব সময় ঘুমাতাম।একটা প্রেপ ছাড়া অন্য দুইটা প্রেপ কাজে লাগাতাম না তেমন।ইন্টারের সময় শুধু দুইটা প্রাইভেট আর এস এস সিতে ম্যাবসে কোচিং করেছি।সেটা যতটা না পড়ার তাগিদে তার চেয়ে বেশি বন্ধুদের সাথে দেখা হবে এই জন্য। তারপরও তো ফেল করিনি (ইংরেজির কথাটা বাদ দেই ।ওটা পড়লেও পাশ করতাম না)।
আমার মনে হয়,ক্যাডেট কলেজ ক্যাডেটদের মানসিক বিকাশে বড় ভুমিকা রাখে।একটা ক্যাডেটকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যাতে সে যেকোন প্রতিবন্ধকতা স্বার্থকতার সাথে মোকাবেলা করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যাডেটরা জীবনের চলার পথে একই পটেনশিয়াল বাইরের ছেলের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকে সব সময়।
আপনি যে সমস্যার কথা বললেন তা ঠিক আছে।কিন্তু তার জন্য দায়ী ঐ ক্যাডেটের অভিভাবকরা।তারা নিজেদের ছেলেদের মানসিক পরিপক্কতা যাচাই না করে ভালো ফলাফলের আশায় ক্যাডেটে পাঠান। এটাই ক্ষতিকর। যেসব ছেলেরা মানসিক সমস্যায় পরে তাদের মানসিক পরিপক্কতার অভাব থাকে।এটা অনভিপ্রেত যদিও ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষার সময় এটা যাচাই করা হয়।
একাডেমিকসে খারাপ করা ছেলেরা হীন মন্যতায় ভোগে এটা আমার মনে হয়নি কখনও।
যা হোক অনেক কথাই মনে আসছে কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারছি না।আপনার পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমিন যতটা না পড়াশোনা করসে তারচেয়ে বেশী আমাদের ডিস্টার্ব করসে। x-( নিজে তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করে আমাদের রুমে এসে খাজুইরা গ্যাজাইতো । :((
এইটা ঠিক না আশিক।এইটা আমার নামে প্রপাগান্ডা। পোলাপান আমারে পছন্দ করত বইল্যাই তো গ্যাজাইতে যাইতাম।
ফ্যামিলি থেকে দূরে থাকার ব্যাপারটা নিয়ে আমার একটা পয়েন্ট আসে। 😀 তিনমাস পরে পরে ২০ দিন বাসায় থাকতে যেই আরাম লাগে......আমার মনে হয় না ৩৬৫ দিন বাসায় থাকলে ওরকম লাগতো! :))
আবার ফ্যামিলির প্রতি টান টা কতটুকু, সেইটা কিন্তু প্যারেন্টস ডে তে অনেক বেশি ফিল করা যায়। সবসময় বাসায় থাকলে কিন্তু এটা অতটা বোঝা যায় না। 😛
জটিল বলসেন আশিক ভাই। 😀
আপনাকে :salute:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ক্যাডেট কলেজের সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে তার থেকে আমি শিখেছি সংগ্রামের মন্ত্র লড়াই করার প্রেরণা।আর শিখিয়েছে কিভাবে বন্ধুত্ব অর্জন করতে হয়।ক্যাডেট কলেজে আমাদের আরোপিত বন্ধুত্ব অনেক স্বতস্ফুর্ত বন্ধুত্বকে ছাড়িয়ে গেছে বহুগুনে।
শেষ লাইনটা আমার না তৌফিকের ডায়লগ মাইরা দিলাম আর কি।
ভাই, আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু চিন্তা করলাম। হেল্প এর কথা চিন্তা করতেই প্রথমেই মাথায় আসলো, আমাদের তানভির এর হেল্প না পেলে অংকে মনে হয় না ভাল করতে পারতাম। আমার মনে আছে, আমি এস এস সি এর প্রি টেস্ট এ হায়ার ম্যাথ এ মনে হয় ২৮ না ৩০ পাইছিলাম। সেকি খারাপ অবস্থা। আমরা ৫/৬ জন। তারপর ফ্রেন্ড দের হেল্প নিলাম। সবচেয়ে বেশি মনে হয় তানভীর এর। তারপর যেদিন এস এস সি এর মার্ক্ সীট দিলো, আমার নাম্বার দেখে আমি নিজেই অবাক। আমি পাইসি ৯৯। মনে হয়, আমাদের ক্লাস এ আর কেউ পায় নাই। তাই না তানভির? আমার দেখা অংকে সেরা ছাত্র। ওর কাছ থেকে আরো হেল্প পাইছি এইচ এস সি তে। কারন ১২ এ আমরা ডাইনিং এ পাশাপাশি বসতাম।
এই লেখা তা পরে ফ্রেন্ড দের হেল্প এর অনেক কথা মনে পরে গেলো।
খাইছে......। তাইতো বলি লগ ইন হইতে পারি না কেন? পেজ লোড হয়না কেন? ...ধ্যাততারি।
যাই হোক আজকে আইসা ব্লগ এডজুটেন্টের পোস্টবৃত্তান্ত পইড়া বুঝতে পারলাম ঘটনা কি হইছিল।......আমার এই পোস্টের ১৩টা কমেন্ট মুছে গেছে...যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল অনেকের কমেন্টের উত্তর। কি আর করা। গেছে সব!! যাক। পরের পর্ব নামাবো কি না ভাবতেসি। ইনফ্যাক্ট পুরা যে ব্যাপারটা মাথায় রাইখা লিখতেসিলাম সেইটাই মাথা থাইকা হারায় গেসে। এখন আবার নতুন কইরা ধারন করতে হবে। ধুরো।
ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেসি...সিসিসিবি আবার ফিরত আসায় ভাল্লাগছে। যারা নিয়া আসলো তাদেরকে নিরন্তর কৃতজ্ঞতা।
আজকে অনেকদিন পরে এই পোস্ট টাপড়লাম। এখানে আমার কমেন্টও আছে। তবে সময়ের সাথে ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে। এই বিষয়টা নিয়ে আরো ওপেন ডিসকাশন হতে পারে।