শিরোনামহীন প্রবাস কথন

কিছু একটা লেখার ইচ্ছে ছিল সবসময়। ইচ্ছেটা মাথা মাঝে মাঝেই জেগে উঠে, আবার তা হারিয়েও যায়। তেমন ভাবে লেখা হয় নি কখনই, বলাও হয়ে উঠেইনি। নীরব দর্শক হয়েই থেকেছি বেশিরভাগটা সময়।
সেই ২০১২ সালের অগাষ্ট মাসে পাড়ি জমিয়েছিলাম এই আমেরিকাতে। উদ্দেশ্য হাইড্রোলজি ও জিওস্পেশ্যাল টেকনলোজিতে উচ্চ্তর জ্ঞান আহরন। বাল্টিমোরের পাঠ চুকিয়ে বর্তমানে অ্যামারিলো নামক এক গ্রামে চাকুরির প্রয়োজনে স্থানান্তর। এই তিন বছরের কিছু বেশি সময়ে নানা রকম দেশি-বিদেশির সাথে পরিচয়-আলাপ হয়েছে। সেই সব টুকরো স্মৃতি, কিছু আত্ম উপলব্ধি নিয়ে লেখার এই চেষ্টা।

 

ঐক্য , দেশপ্রেম ও ধর্মীয় চেতনা
আমাদের ঐক্য , দেশপ্রেম ও ধর্মীয় চেতনা অনেকটাই আপেক্খিক। নিজ নিজ সুবিধামত আমরা এর না রূপ ধারণ করি। একতার কথা বলার কোন অবকাশই নেই। সিনিয়র-জুনিয়র, ভাবী-ভাবী থেকে শুরু করে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – বুয়েট গ্রুপিং। কিংবা এলাকাভিত্তিক দলাদলি এর ফলে ভিন্ন ভিন্ন মসজিদ এ নামাজ আদায় , এসবই আমাদের উদার মানসিকতা ও ঐক্য এর পরিচয়। যে আমরা দেশে থাকতে, ভারত অথবা পাকিস্তানের পিন্ডি চটকাই, সেই আমরাই দিব্যি হিন্দিতে ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেড়াই। আর বাইরে হালাল রেস্টুরেন্ট ছাড়া ছাড়া খেলে আমাদের জাত-ধর্ম চলে যায়, কিন্তু আয় কম দেকিয়ে ট্যাক্স ফাকি দেয়া, ইন্সুরেন্সের টাকা মেরে দেয়া, কিংবা পরচর্চা-পরনিন্দাতে আমাদের ধর্মীয় অনুভুতিতে কোন আঘাত লাগেনা।

আমি কখনই বলিনা আমি ভাল মানুষ। কিংবা ঐক্য , দেশপ্রেম ও ধর্মীয় চেতনা আমার মাঝে প্রবল। আমি আমার মত চেষ্টা করে যাই। কিন্ত আমার নীতি আছে, এইটুকু বলতে পারি। দুবছর ৫টা ইন্ডিয়ান এর সাথে এক ল্যাবে কাজ করার পরও যখন ওদের সাথে ইংরেজিতে কথা বলি, লোকাল আমারেকানরা যখন বাংলায় (হোক তা গুগল দিয়ে) অথবা শাদা চামড়ার সুপারভাইসর যখন নিজে ৩০ মিনিট ড্রাইভ করে হালাল মাংস কিনে তারপর তাদিয়ে রান্না করে খাওয়ায়, তখনতো এতটুকু বলতেই পারি, তাই না??

এমনই কিছু অসংলগ্ন চিন্তা-ভাবনা নিয়েই এই চেষ্টা। আর একটা যেটা উদ্দেশ্য তা হল, অফিস টাইমের অলস সময়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। অফিস টাইমে ব্যক্তিগত কাজ যদিও গর্হীত তারপরেও ক্যাডেট বলে ডজ মারার অধিকারতো আছে। আমার অফিস পিসিতে নিরাপত্তার কারনে জিমেইল পর্যন্ত ওপেন হয় না। অনেক চেষ্টায় এক অনলাইন বাংলা এডিটর দিয়ে লেখা। ভূল-ভ্রান্তি এর জন্য ক্ষমা প্রার্থী। আর সবকিছুই বিক্ষিপ্ত মনের এলোমেলো চিন্তা, কাউকে আঘাত করার জন্য নয়।

ইসতিয়াক
ফকক (৯৮-০৪)

১৩ টি মন্তব্য : “শিরোনামহীন প্রবাস কথন”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    ইসতিয়াকের প্রথম ব্লগে প্রথম B-)

    অনটপিকে একটা ছোট্ট মন্তব্য- অসংলগ্ন চিন্তাভাবনাকেও একটা প্যাটার্ন বা ছাঁচের মধ্যে ফেলে উপস্থাপন করলে পড়তে ভালো লাগে। পাঠের পরেও তার রেশ থেকে যায় খানিকক্ষণ।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. নাফিস (২০০৪-১০)

    ব্লগে স্বাগতম ইশতিয়াক ভাই। প্রথম পোস্ট দেওয়ার পর সিসিবিতে একটা কাজ করতে হয়। ইয়ে মানে ইয়ে আমি কি বলে দেব সেইটা কি, নাকি অন্য কোন সিনিয়র ভাই বলবেন ? 😛 😛

    জবাব দিন
    • ইসতিয়াক আহমেদ (৯৮-০৪)

      ... কোন সমস্যা নাই। অ্যামারিলোতে চলে আসলে সবই হবে 😀


      শ্রান্ত পথিক আমি, বেলাশেষে-
      চারপাশে অভেদ্য-দুর্গম পাঁচিল তুলে
      বসে থাকি নষ্ট ঘরে
      হিসাবের খাতা মেলে খুঁজি কতোটা অপচয় হলো।

      জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

        @ ইশতিয়াক,

        না-জেনে বিপদ ডেকে এনো না। সিসিবির প্রথা অনুযায়ী প্রথম ব্লগে সিনিয়ররা এসে পাঙ্গা লাগায়, মানে ফ্রন্ট রোল দেওয়ায়। নাফিস তোমার ওখানে বেড়াতে গেলে কি তুমি ওর সামনে ফ্রন্ট রোল দিবা?

        খুব খিয়াল কইরা :grr:


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
        • ইসতিয়াক আহমেদ (৯৮-০৪)

          ভাই, সিনিয়ারিটি কি ব্লগার হিসেবে নাকি কলেজ অবস্থানকাল।

          আর নাফিস আমার বাল্টিমোরের বাসায় এসেছিল এই রোজার আগেই। তাই বললাম টেক্সাস এ এসে বেড়িয়ে যেতে।

          বিফ স্টেক খাওয়ার আমন্ত্রণ কিন্তু সবার জন্যই 🙂


          শ্রান্ত পথিক আমি, বেলাশেষে-
          চারপাশে অভেদ্য-দুর্গম পাঁচিল তুলে
          বসে থাকি নষ্ট ঘরে
          হিসাবের খাতা মেলে খুঁজি কতোটা অপচয় হলো।

          জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগে স্বাগতম ইশতিয়াক, তোমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বরন করে নেয়ার গুরুভারটা আমিই নিয়ে নেই 😀

    তাড়াতাড়ি ১০টা ফ্রন্টরোল লাগাও তো দেখি :grr:

    মূল প্রসঙ্গে আসি, এই ধরনের বিক্ষিপ্ত চিন্তা ভাবনা আর দিনলিপি পড়তেই সবচেয়ে বেশী ভাল লাগে। যে তিনটি বিষয় বললে এগুলো নিয়েই এখন মনে হয় সবচেয়ে বেশি সার্কাস দেখা যায়।

    ভাল লাগলো পড়ে, আশা করি নিয়মিত তোমার লেখা পড়তে পারবো।

    হায়পি ব্লগিং 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ব্লগে স্বাগতম ইশতিয়াক।

    পোস্ট টা ভালো ছিলো। শর্ট এন্ড শার্প ফাঁকিবাজি লেখা।

    তুমি যে দুইটা কথা বললে সেটা আমিও একই ওয়েতে ভাবি। এখানে বিদেশীরা অনেক সময়ই বাংলাদেশ শোনার পরে একটু খাতির জমানোর চেষ্টা করে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বলার চেষ্টা করে। তাদের আন্তরিকতাটা ফেলে না দেয়া গেলেও তাদের সবিনয়ে বলি হিন্দির সাথে আমার ভাষার পার্থক্য আছে। এবং বেটার খাতির জমানোর চেষ্টা না করা। আর কোন লোকের সাথে হিন্দি উর্দুতে কেলানোর তো প্রশ্নই আসে না। তবে হয়তো আমাদের যারা হিন্দি বলে ভারতীয়দের সাথে হয়তোবা তাদেরকে ভালো লাগার বা কাছে টানার অনুভূতি দিতে চায় মনে করে বেনিফিট অফ ডাউট দিতে চাই।

    তবে হালাল মাংস নিয়ে নর্থ আমেরিকার বিশেষ করে বাঙালি সমাজের চুলকানি আগার কাছে বিশেষ রকম বিরক্ত লাগে। সেই সব গল্প না হয় আরেকদিন হবে।
    শুভকামনা।

    জবাব দিন
    • ইসতিয়াক আহমেদ (৯৮-০৪)

      ধন্যবাদ ভাই। চুলকানিতে সমস্যা নাই ভাই কিন্তু গায়ে পরে আমাকে চুলকায় দিলে সমস্যা। আমি এমন অনেককে চিনি, যারা নামায পড়েন, জাল সার্টিফিকেট বানিয়ে ব্যবসা করেন, আরো অবৈধ্য আয় করেন কিন্ত আপনি বাইরের মুরগি খাইলে আপনার ঈমান নিয়া টানাটানি শুরু করবে। যাইহোক, পরচর্চা আমার ঊদ্দেশ্য না। নন-জাজমেন্টাল আমি, নিজের বিক্ষিপ্ত চিন্তা এই সেফ এনভায়রমেন্টে শেয়ার করার জন্যই লেখা।


      শ্রান্ত পথিক আমি, বেলাশেষে-
      চারপাশে অভেদ্য-দুর্গম পাঁচিল তুলে
      বসে থাকি নষ্ট ঘরে
      হিসাবের খাতা মেলে খুঁজি কতোটা অপচয় হলো।

      জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বাহ! প্রথম ব্লগেই সিরিজ করার দারুন সুযোগ তৈরি করে রাখলি দেখি...
    আশা করি নিয়মিত থাকবি।
    সিসিবিতে স্বাগতম।

    পোস্ট নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।
    দিন শেষে কোন না কোন ভাবে আমিও একজন হিপোক্রিট যে...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • ইসতিয়াক আহমেদ (৯৮-০৪)

      ধন্যবাদ ভাই। হিপোক্রিট ভাই সবাই কম বেশি। আমার কথা হল, তুমি ভাই ত্তোমার মত থাক, আমাকে খোঁচাইতে এসো না। আমি জানি আমার নীতে কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি আছে তাই বলে আমি অন্য কাউকে জ্ঞান দিতে যাই না।

      যারা অসত রোজকার করে, ইন্সুরেন্স এর টাকা মারে, জাল কাগজ বানিয়ে ব্যাবসা করে কিন্ত একবেলা বাইরে চিকেন ফ্রাই অর স্টেক খাইলে আপনার ঈমান নিয়ে টানাটানি করে কাফের বানায় দিবে তাদেরকে নিয়ে সমস্যা।


      শ্রান্ত পথিক আমি, বেলাশেষে-
      চারপাশে অভেদ্য-দুর্গম পাঁচিল তুলে
      বসে থাকি নষ্ট ঘরে
      হিসাবের খাতা মেলে খুঁজি কতোটা অপচয় হলো।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।