বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা : কিছু ভাবনা

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে খুব সাধারণ একটা অভিযোগ হল, এখানে যা শেখান হয়, বাস্তব জীবনে তা কাজে লাগে খুবি কম। আর বাস্তব জীবনে যা কাজে লাগে, সেগুলো সবাই শেখে ঠেলায় পড়ে। কথারটার মধ্যে সত্যতা আছে বলেই মনে করি। আমার মতে এই ব্যাপারগুলো আমাদের স্কুল সিলেবাসে থাকা উচিত যেগুলো বাস্তব জীবনে কাজে লাগবে-

রান্না ও পুষ্টি: সাধারণ রান্নার নিয়ম-কানুন জানা ও অভিজ্ঞতা থাকা সবারই দরকার। আর পুষ্টির ব্যাপারটা রান্নার সাথে শেখান হলে সেটা বেশি কার্যকর হবে মনে হয়।

খাদ্য ও শরীর চর্চা: শরীর ঠিক রাখার সাধারণ নিয়ম-কানুন গুলো সিলেবাসে থাকা উচিত। খাদ্যাভ্যাস এবং শরীর চর্চা এর দুইটা বড় দিক বলে আমার মনে হয়। আমাদের সিলেবাসে স্বল্পমেয়াদী অসুখ-বিসুখের প্রতিরোধ-প্রতিকারের কিছু বর্ণনা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন ডায়বেটিস বা হৃদরোগ কিংবা ক্যান্সার ইত্যাদির কারণ-প্রতিরোধ-প্রতিকার নিয়েও সবাইকে সচেতন করা উচিত।

উদ্যোগ/ব্যবসার প্রাথমিক ধারণা: জীবনের লক্ষ্য নিয়ে রচনা লিখতে গিয়ে আমি কখনই ব্যবসা কিংবা ফর্মাল ভাষায় “উদ্যোগ” নিয়ে কাউকে কিছু লিখতে দেখিনি। আমাদের দেশে উদোক্তা হওয়াকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য যেন চাকুরীজীবি তৈরি করা। সেই বৃটিশদের রেখে যাওয়া কলোনিয়াল মানসিকতা আর কি। অথচ অর্থনৈতিক খাতে এর ব্যবসা/উদ্যোগের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় উদ্যোগ/ ব্যবসা-র প্রাথমিক ধারণা দেয়াসহ একে উৎসাহিত করা উচিত। আর সাথে সাথে চাকরীর ব্যাপারেও কেবল সার্টিফিকেট/পুঁথিগত বিদ্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে কর্মক্ষত্রের বাস্তব দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরা উচিত। একই সাথে শিক্ষার কারণে কায়িক শ্রমের প্রতি অবজ্ঞা এবং অনীহা যেন তৈরি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।

জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয়: জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয় আমাদের দেশে অত্যন্ত জটিল বলে আমার মনে হয়। এ সংক্রান্ত অফিসিয়াল কাগজ/দলিল-পত্রে যে পরিভাষা ব্যবহার করা হয়, তাই আমরা সাধারণ মানুষ বুঝি না। অথচ জীবনের কোন একটা সময়ে যেয়ে এসব বোঝার দরকার হয় সবারই। এজন্য এসবের একটা ধারণা সিলেবাসে থাকা উচিত।

আইন সংক্রান্ত বিষয়: আইন সংক্রান্ত কোন বিষয়ে আমাদের ধারণা খুবই কম। কোন সমস্যায় পড়লে পুলিশকে কীভাবে জানানো উচিত, জিডি, মামলা, মামলার পক্ষ/বিপক্ষ, আদালতের নিয়ম-কানুন, আইনজীবি, কোনটা দেওয়ানী আর কোনটা ফৌজদারী ইত্যাদি নানান আইনী ব্যাপারে আমাদের তেমন কিছুই জানা থাকে না। কিন্তু সমস্যায় পড়লে ঠিকই জানতে হয়। এগুলোও সিলেবাসে থাকা উচিত।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ট্যাক্স/কর সম্পর্কে ধারণা, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কাঠামো থেকে আমাদের প্রাপ্য নাগরিক অধিকার, ভোক্তা অধিকার, শ্রম অধিকার এসব বিষয়ও থাকা উচিত। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উচিত ভবিষ্যত নাগরিকদের বাস্তব জীবনের জন্য তৈরি হতে সাহায্য করা।

৬,০১৯ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা : কিছু ভাবনা”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।