এক সময় বিজ্ঞান আর দর্শন আলাদা কিছু ছিল না। স্কুলে পড়েছি, মহামতি অ্যারিস্টোটল বিজ্ঞানের অনেকগুলো শাখার জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু আদতে তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক। এই যে দর্শন থেকে বিজ্ঞানের আলাদা হয়ে যাওয়াটা, এটা কিন্তু খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। এর আগ পর্যন্ত যিনি বিজ্ঞানী ছিলেন, মোটামুটি ধরে নেয়া যায় তিনি দার্শনিকও ছিলেন। তবে আমি ইতিহাসের দিকে যাচ্ছি না এখানে।
এখন কথা হল, বিজ্ঞান দর্শন থেকে কীসের ভিত্তিতে আলাদা হল? প্রাচীন দর্শনের মূল কথা ছিল “চিন্তা” ও “যুক্তি”। দার্শনিকরা শুধু চিন্তা থেকেই অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতেন। দার্শনিকদের মত ছিল যৌক্তিক চিন্তা দিয়েই সব বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব। তবে বলাই বাহুল্য, অনেক ক্ষেত্রেই একজনের চিন্তার ধরণ ও ফলাফল আরেকজনের সাথে মিলত না। একই বিষয়ে দেখা যেত নানান মত। বিভিন্ন মতের মধ্য থেকে আবার কোনটি বেশি গ্রহণযোগ্য, কী কারণে বেশি গ্রহণযোগ্য, কীভাবে সেটা নির্ণয় করা হবে, তা নিয়ে দার্শনিকেরা আরও তত্ত্ব দাঁড় করাত। অনেক সময় মূল বিষয়ের চেয়ে “কে বলেছেন” সেটাই বেশি গুরুত্ব পেয়ে যেত।
অন্যদিকে বিজ্ঞানের মূল বিবেচ্য বিষয় হল- “যাচাই” বা “Empirical test”। বিজ্ঞান ব্যক্তির খ্যাতির উপর, কিংবা চিন্তার উপর ভরসা রাখে না। বিজ্ঞানে সব কিছুকেই যাচাই করা হয়, পরীক্ষা করা হয়। যাচাই করার পরেই কেবল কোন কথা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসাবে স্বীকৃতি পায়। যাচাইয়ে ভুল প্রমাণ হলে তো ধারণাটাই বাতিল। আর যাচাই করা না গেলে এর বিজ্ঞান একে “হাইপোথিসিস” (সম্ভাব্য তত্ত্ব) আকারেই রেখে দেয়, তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। সোজা কথায় বলা যায়, এই “যাচাই করা” ব্যাপারটাই হল আধুনিক বিজ্ঞানের মূল নিয়ামক।
যেহেতু যাচাই বিজ্ঞানে খুব গুরুত্বপূর্ণ, “যাচাইযোগ্যতা”ও বিজ্ঞানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন একটি বিষয়ে কোন একটি হাইপোথিসিস দেয়া হলে, সেটা যাচাই করে সঠিক বা ভুল প্রমাণ করা সম্ভব কিনা, সেটাই যাচাইযোগ্যতা। ব্যাপারটাকে আরেকটু সূক্ষভাবে বলতে গেলে আসবে ফলসিফায়েবিলিটির কথা। কিন্তু এতটা দার্শনিক সূক্ষতার দিকে এখন আর না যাই! কিছু কিছু নিয়ামক বা ফ্যাক্টর আছে, যা দিয়ে একটি বিষয় কতটুকু যাচাইযোগ্য তা বোঝা যায়।
যাচাইযোগ্যতার প্রথম নিয়ামক হল “পরিমাপযোগ্যতা”। অবশ্য পরিমাপযোগ্যতার মধ্যেই আরেকটি নিয়ামক লুকিয়ে আছ- “ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা”। যা কিছু মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অর্থাৎ দেখা, শোনা, স্পর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ যা উপলব্ধি করতে পারে, হোক সেটা সরাসরি বা কোন মাধ্যমের সাহায্যে, তা নিয়েই বিজ্ঞানের কাজ কারবার। কিন্তু যেহেতু একেক জন মানুষের অনুভূতি একেক ভাবে কাজ করে, এজন্য সবাই মিলে একই সিদ্ধান্তে আসার জন্য দরকার “পরিমাপ”। এক কেজি কারও কাছে হালকা, কারও কাছে ভারী লাগতে পারে। কিন্তু কোন জিনিসের ওজন (ভর) এক কেজি বললে সবাই একমত হতে পারবে। সুতরাং, যাচাইযোগ্যতার আওতায় আসতে গেলে প্রথমে কোন না কোন ধরণের পরিমাপের আওতায় তাকে আসতে হবে। আর যে জিনিস যত ত্রুটিহীন ও সূক্ষভাবে পরিমাপ করা যাবে, তার যাচাইযোগ্যতাও হবে তত বেশি। চাউলের বস্তা আর সোনার ওজন তো আর একভাবে মাপা হয় না।
এর পরে যেই ফ্যাক্টরটা আসবে তা হল-“পুনরাবৃত্তি”। অর্থাৎ, কোন একটা ঘটনাকে বার বার, আলাদা আলাদা ভাবে পরিমাপ করতে পারার ক্ষমতা। অনেক যাচাই বা পরীক্ষার আয়োজন, উপকরণ এতই সরল ও সহজপ্রাপ্য যে, খুব সহজেই বার বার করা যায়। আবার অনেক জিনিস বার বার করা অত্যন্ত কঠিন। যেগুলো করতে অনেক প্রস্তুতি, সময় ও খরচের প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বোসন কণার সন্ধানে চালানো কলাইডারের পরীক্ষাগুলি। আর কিছু ঘটনা আছে, যার পুনরাবৃত্তি হয়ই না। যেমন বলা যায় “বিগ ব্যাং” এর কথা- মাত্র একবারই হয়েছে। তবে সেসব অতীতের ঘটনাও বর্তমানে থেকে যাওয়া বিভিন্ন চিহ্ন থেকে যাচাই করা যায়। এভাবে যত সহজে কোন পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব, সেই পরীক্ষা থেকে প্রামাণ্য বিষয়ের যাচাইযোগ্যতা তত বেশি। তবে অতীতের যেসব বিষয়ের সরাসরি পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়, সেসবের অন্তত বর্তমান চিহ্ন থেকে পরিমাপের পুনরাবৃত্তি সম্ভব হতে হবে। আর এই যাচাইয়ের পুনরাবৃত্তি থেকে পাওয়া পরিমাপগুলো যত কাছাকাছি হবে, সংশ্লিষ্ট তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতাও তত বেশি হবে। (এইখানে এসে বিভিন্ন পরিমাপ থেকে পাওয়া ভিন্ন ভিন্ন মানের মধ্যে সমন্বয় করতে পরিসংখ্যানের দরকার হবে।)
তারপর বলা যায় যাচাই/পরীক্ষা করার পরিবেশের দুইটি বৈশিষ্ট্যের কথা- ১) পরীক্ষণের পরিবেশ/সিস্টেম বাকী পরিবেশ থেকে আলাদা করতে পারা। আর ২) পরীক্ষণের পরিবেশের মধ্যে থাকা বিভিন্ন নিয়ামক বা ফ্যাক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা। কারণ, আলাদা করতে না পারলে বাইরের পরিবেশের অন্যান্য বিষয়গুলো পরীক্ষার ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলবে। আর পরীক্ষণের পরিবেশের বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে, সিদ্ধান্ত/পরিমাপ অনেক ভালভাবে বোঝা যায়। এই দুটি বিষয়কে ঠিক যাচাইযোগ্যতার শর্ত বলা যায় না, তবে যত বেশি থাকবে তত ভাল।
সুতরাং দেখা গেল, এসব ফ্যাক্টরের উপর কোন বিষয়ের যাচাইযোগ্যতা নির্ভর করে। কোন কিছু যাচাই করতে পারার মূল সুবিধাটা হল, এসব বিষয়ে খুব সহজেই সবাই ঐক্যমতে আসতে পারে। দর্শনে একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। একজনের সাথে অন্যজনের ভিন্নমত থাকতেই পারে। উদাহরণ হিসাবে আগের কথাটাই আবার বলি- একটা বস্তুকে কেউ হালকা আবার কেউ ভারী বলতে পারেন। কিন্তু ওজন করার পরে বস্তুটার ওজন এক কেজি হলে সেটা মেনে নিতে কোন পক্ষই আপত্তি করবেন না। এজন্য যেই বিষয় যত বেশি যাচাইযোগ্য, সেই বিষয়ে বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তও তত বেশি নিশ্চিত। আর সেসব বিষয়ে পরীক্ষালব্ধ সিদ্ধান্তের বিপরীত কোন মতামতের গ্রহণযোগ্যতাও কম। আর যাচাইযোগ্যতা কম হলে, দেখা যায় খোদ বিজ্ঞানের মধ্যেই সে বিষয়ে নানান মত। আর যেসব বিষয় এখনও যাচাইযোগ্য নয়, সেখানে তো ভিন্নমতের সুযোগ আরও বেশি। আর এই যাচাইযোগ্যতার কমতির কারণেই, অনেক নিয়ময়ানুযায়ী চললেও অর্থনীতি বা সমাজ বিজ্ঞানের মত বিষয়গুলো ঠিক বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠতে পারেনি। এখানে একটু বলি, যেসব বিষয়ে যাচাইযোগ্য নয়, সেসব বিষয়ে অন্যকে নিজের মতের উপর আনতে গেলে মনে রাখা উচিত, এটা যাচাইকৃত তো দূরের কথা, যাচাইযোগ্যও নয়। সুতরাং, এসব ক্ষেত্রে ভিন্নমতকে অস্বাভাবিক বা অবৈজ্ঞানিক মনে করা উচিত না।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যাচাই করা না গেলে সেসব বিষয়ে কি বিজ্ঞানের কোনই বক্তব্য থাকবে না? অবশ্যই থাকতে পারে। যাচাইযোগ্য না হলেও বিজ্ঞান কোন বিষয়ে নিয়ে তত্ত্ব দিতে পারে, যাকে বলা হচ্ছে হাইপোথিসিস। এই হাইপোথিসিসই তো বিজ্ঞানের প্রথম ধাপ। ব্যাপারটাকে এভাবে দেখা যায়- বিজ্ঞানের একটা ইনার সার্কেল আছে আর আছে একটা আউটার সার্কেল। আউটার সার্কেলে আছে হাইপোথিসিসগুলো, যেগুলো এখনও পর্যন্ত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে যাচাই করা যায়নি বলেই হাইপোথিসিস কিন্তু উড়িয়ে দেয়ার মত কিছু না। হাইপোথিসিস হতে হলেও একটা তত্ত্বকে খুব ভালভাবে সুসংজ্ঞায়িত হতে হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে সাযুজ্য রাখতে হয়। তবে তার থেকেও বড় কথা, একে বিজ্ঞানের একটা শূণ্যস্থান পূরণের উপযোগী গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হাজির করতে হয়। অন্যদিকে ইনার সার্কেলে থাকবে এসব হাইপোথিসিসের মধ্যে যেগুলো যাচাই করে সঠিক প্রমাণ করা গেছে, সেগুলো। এগুলোই বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব। বিজ্ঞানে কোন কিছুই সরাসরি ইনার সার্কেলে ঢুকতে পারে না। প্রথমে আউটার সার্কেলে ঢুকতে হবে, মানে হাইপোথিসিস দাঁড় করাতে হবে। আর আউটার সার্কেল থেকে যাচাই হয়ে ইনার সার্কেলে যাবে। তাহলেই কেবল হাইপোথিসিস পরিণত হবে যাচাইকৃত তত্ত্বে। এখানে উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, স্ট্রিং থিওরি আর থিওরি অব রিলেটিভিটির কথা। একটু খোঁজ খবর নিলেই দেখবেন- স্ট্রিং থিওরি এখনও আউটার সার্কেলে থাকা হাইপোথিসিস। এবং সহসাই ইনার সার্কেলে ঢোকার সম্ভাবনা নাই। অন্যদিকে থিওরি অব রিলেটিভিটি কয়েকটা আলাদা পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই হয়ে ইনার সার্কেলে আসন গেড়ে বসে গেছে। এখন কথা হল, এই যে বিজ্ঞানের কোন কিছু ইনার সার্কেলে আছে নাকি আউটার সার্কেলে, তাতে কী যায় আসে? ইনার সার্কেলে একবার ঢুকে গেলে, সেকথাটা প্রতিষ্টিত হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা সেসব কথার সাথে আর দ্বিমত পোষণ করেন না। কারণ, দ্বিমত করতে চাইলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে- আনতে হবে বিকল্প গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব । কিন্তু আউটার সার্কেলের থিওরির সাথে দ্বিমত পোষণ করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। একারণে এখন অনেক বিজ্ঞানীই আছেন, স্ট্রিং থিওরির বিপক্ষে। একইভাবে আমার কিছুদিন আগে আলোচনা করা ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির প্রকৃত স্বরূপ নিয়েও বিজ্ঞানীদের মধ্যে আছে নানান মত।
শুরুতে যেই দর্শন নিয়ে কথা বলছিলাম, সেই দর্শনেই আবার ফেরত যাই। বিজ্ঞানের এই যুগে কি দর্শনের কাজ ফুরিয়ে গেছে? অনেকের মতামত অনেকটা এমনই। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ছাড়াও অর্থনীতি, পৌরনীতি, সমাজ-বিজ্ঞান ধরণের জ্ঞানের শাখাগুলোও আজকার কেবল “যৌক্তিক চিন্তা” ভিত্তিক দর্শনের মত কাজ করে না। যেটুকু যেভাবে যাচাই করা সম্ভব সেটুকু যাচাই করে নেয়। হয়ত এসব “সামাজিক বিজ্ঞানের” বিষয়গুলোর যাচাইয়ের মানদন্ড উপরে উল্লিখিত বিজ্ঞানের যাচাই পদ্ধতির মত না, তবে আছে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ধরণ দর্শনের আওতাকে অনেক ছোট করে দিয়েছে। এক সময় যেমন জ্ঞান(Science) আর দর্শন প্রায় সমার্থক ছিল, সেটা আর নেই। বরং ইংরেজি Science শব্দটা আগে যেমন যেকোন ধরণের জ্ঞানের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হত, সেখান থেকে এসে এখন শুধু বিজ্ঞানের সমার্থক হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখানেও আসবে সেই যাচাইযোগ্যতার কথা। এখনও জ্ঞানের কিছু কিছু শাখা আছে, যেখানে যাচাই করার কোন উপায় নাই। কিংবা যাচাই করাটা ঠিক সেসব ক্ষেত্রে খাটে না। সেসব ক্ষেত্রে এখনও দর্শন সেই আগের মত কেবল যৌক্তিক চিন্তার (সাথে অন্যান্য আবিষ্কৃত যাচাইকৃত জ্ঞান-বিজ্ঞানও সহযোগী হিসাবে থাকবে) উপর ভিত্তি করে কাজ করে যাবে। যেমন বিজ্ঞানের যে ইনার সার্কেলের কথা বললাম, সেখানে হয়ত দর্শনের কোন কথাই চলবে না। কিন্তু আউটার সার্কেলের হাইপোথিসিস তৈরিতে দর্শন হয়ত সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও করতে পারে।
শেষে দর্শনের প্রয়োগক্ষেত্রের একটা মজার উদাহরণ দিয়ে যাই। এখানে যে কথাগুলো বললাম, তা মূলত Empiricism নিয়ে। কথাগুলো ঠিক এভাবেই আমি কোথাও পাইনি অবশ্য। বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লেখা থেকে আমার মনে হয়েছে, বিজ্ঞান নিজের স্বাভাবিক নিয়মেই Empiricism-এর এই নিয়মগুলো মেনে চলে। সেই Empiricism-কে আমি এই লেখায় খানিকটা ক্যারেক্টারাইজ করার চেষ্টা করেছি মাত্র। এখন কথা হল, আমি যা যা লিখলাম, সেগুলোকে আমি নিজেই ঠিক যাচাইযোগ্য বলতে পারছি না। সুতরাং, এই লেখাটা দর্শনের ভাগেই পড়বে, বিজ্ঞানের ভাগে না। আর দর্শনের স্বাভাবিক নিয়মেই যে কেউ যৌক্তিক দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। যদি কারও দ্বিমত থাকে, সেটা জানার আগ্রহ রইল।
[মন্তব্যের ঘরের আলোচনার প্রেক্ষিতে কিছুটা সংশোধিত]
দর্শণ এমন নয়। আর এর সঠিকতার মাপকাঠি গণতান্ত্রিককতা/জনপ্রিয়তাও নয়।
এই ধারণার উৎস কি?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
প্রথমেই মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে নেই। আপনার মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার লেখাটা আসলে বিজ্ঞান এবং এম্পিরিসিজম কেন্দ্রিক। দর্শনকে তুলনার জন্য এনেছি। ভুল হতে পারে। "দর্শন এমন নয়" বলতে কি শুধু এই গণতান্ত্রিকতার কথাই বুঝাচ্ছেন নাকি আরও কোন পয়েন্টের কথা বলছেন? গণতন্ত্রের কথা বলেছি মানে ব্যাপারটা এমন না যে, সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে দর্শনের মতবাদ ঠিক করা হবে। যারা নিজের দর্শনের চর্চা করেন, তাদের মধ্যে ইমপ্লিসিট(সঠিক বাংলা শব্দ কী হবে জানি না)-ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই গৃহীত হবে। এটাকেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বলেছি। এখনকার যুগে হয়ত ব্যাপারটা এতটা গণতন্ত্র টাইপ না। কিন্তু দর্শনের পথিকৃৎ প্রাচীন গ্রীসে কি এমনি ছিল না দর্শনের চর্চা? অ্যারিস্টোটলের বিভিন্ন ভুল মতবাদও তখন সাদরে গৃহীত হত। তবে মানছি, আমার কথাটা আরেকটু ঠিক করে বলার চেষ্টা করা উচিত। আপনার উত্তর পেলে আশা করি কী কতটুকু ঠিক করতে হবে সেটা আরও ভাল বুঝতে পারব। সংশোধনটা তখনই করব না হয়।
গুলশান,
দর্শন, বিজ্ঞান, ইত্যাদি নিয়ে তুমি যে সিরিয়াসলি চিন্তাভাবনা করো, এইটা ক্রমশঃ বিলুপ্তপ্রায় একটা গুণ। এইজন্য তোমার লেখাগুল সব সময়ই অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ি।
তোমার এই লেখাতে কিছু বিভ্রান্তি দেখতে পাচ্ছি।
এইটা মনে করার কারণ কি? দর্শণের ইতিহাস কি এটা একদমই বলেনা। আর এই ভুল অনুমান থেকে তুমি আরো একটা ভুল অনুমানে গেছো যে, "অ্যারিস্টোটলের বিভিন্ন ভুল মতবাদও তখন সাদরে গৃহীত হত।"- না, প্রাচীন গ্রীসে কখনোই কোন ভুল মতবাদ কোনভাবেই গৃহীত হতো না। এমনকি পৃথিবীর কোথাওই না।
দর্শণে তোমার যেরকম উৎসাহ, তাতে আমার বিশ্বাস কিছু নির্ভরযোগ্য বইপত্র পড়লে নিজের চিন্তা+আগ্রহকে সঠিক পথে চালিত করতে পারবে। শুরু হিসেবে A Brief History of Western Philosophy by Anthony Kenny দেখতে পারো। এছাড়াও আরো অনেক বহুল সমাদৃত বই পুরোটা বা তাদের সারাংশ ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমি স্বীকার করি যে, আমার পড়াশোনায় ঘাটতি আছে। আমার বেশির ভাগ পড়া ইন্টারনেটের আর্টিকেল থেকে। বইপত্র থেকে না। আমি নিজের মত চিন্তা করতে ভালবাসি, অনেক অনুমান সঠিক হয়েও যায়, এই যা। বইটা পড়ার চেষ্টা করব। তবে আপাতত এই লেখাটাতে দর্শন নিয়ে বলা কথাগুলো সংশোধন করতে চাচ্ছি। "যাচাইযোগ্যতা দর্শন আর বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়" এটাকে এই লেখাটার মূল থীম বলা যায়। এই মূল থীমটা ঠিক আছে তো? তাহলে থীমটা রেখে দর্শন নিয়ে বলা কথাগুলো সরিয়ে দেব। আর যদি মূল থীমে সমস্যা থাকে, তাহলে লেখাটাই সরিয়ে দিতে হবে।
না, ঠিক নাই। দুইই নির্ভর করে যাচাইয়ের মাপকাঠির উপর, শুধু কোন কোন ক্ষেত্রে পদ্ধতি ভিন্ন। তবে লেখাটা রেখে দাও। বিজ্ঞান ও দর্শন পাঠের প্রক্রিয়ার পরবর্তী পর্যায়ে যেতে কাজে দিবে। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমি আসলে লেখাটায় চারটা বৈশিষ্ট্য "পরিমাপযোগ্যতা/ পুনরাবৃত্তি উপযোগিতা/ পরিবেশ পৃথকীকরণ/ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ" কে একসঙ্গে যাচাইযোগ্যতা বলছি। অন্য আর কী শব্দ এখানে ব্যবহার করা যেতে পারে জানি না। আর দর্শনের যাচাই প্রক্রিয়ায় এগুলোর স্থান নেই সম্ভবত। দর্শনের যাচাই প্রক্রিয়ার উপর কোন ছোট-খাট লেখার লিংক দিতে পারলে ভাল হত। অথবা আপনিই একটা লিখে ফেলতে পারেন। যেখানে বিজ্ঞান আর দর্শনের যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্যগুলো থাকবে।
আরেকটা কথা মাথায় আসল- গণিতে বিজ্ঞানের এসব যাচাই প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। গণিতে আসলে যাচাই করার দরকারই হয় না। গণিত খুব অ্যাবস্ট্রাক্ট কিছু মূলনীতির উপর যুক্তি সাজিয়ে গড়ে ওঠে। সেই যৌক্তিক প্রক্রিয়া ঠিক থাকলেই ফলাফল সঠিক। বাস্তবে পরীক্ষা না করলেও চলবে। কিংবা বাস্তবের পরীক্ষায় ফলাফল কিছু হেরফের হলেও মূল যৌক্তিক প্রক্রিয়ার ফলাফলকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। দর্শনের যে যাচাই প্রক্রিয়ার কথা বলছেন তা কি এমন কিছু? আচ্ছা, আমার "যাচাইযোগ্যতা" কথাটাকে কি "পরীক্ষণযোগ্যতা" বলা যায়?
এখন স্পস্ট হলো তুমি আসলে কি বোঝাতে চেয়েছো।
গণিতের উদাহরণ এনে ভালো করেছো। গণিতের যাচাই প্রকৃয়া চলে বিমূর্ত ধারণাগুলোকে যুক্তির মধ্য দিয়ে বিশ্লেষণ করে। কাজেই, এগুলোকে এম্পিরিক্যালি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়না। দর্শণকে তুমি যেভাবে দেখতে চাইছো, তা' অনেকটা এরকমই। তবে দর্শণেরও অসংখ্য তত্ত্বকেও এম্পিরিক্যালি পরীক্ষা করা সম্ভব, হয়েছেও।
হবে হয়ত কোন এক সময়। দোওয়া রাইখো। 🙂 (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
হুম :-B
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
এই নিয়ে আমার লেখা একটা আর্টিকেল আছে। এই সিসিবি ব্লঘেই আছে।
'কোন জ্ঞান বিজ্ঞান? সেই জ্ঞান পাঠ করা এতো জরুরী কেন?'
লিংকটা দিলাম
//cadetcollegeblog.com/ramit/49973
ঐ লেখাটাতেই আমি কমেন্ট করেছিলাম, এই লেখাটা লিখছি এটা বলে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
কঠিন জিনিষ মাথায় ঢুকতে চায়না। তবে লেখার গুণে কঠিনও হয়ে গিয়েছে সরল
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
দর্শনশাস্ত্রের ব্যাপারে, একজন লে ম্যান হিসেবে লেখাটাকে আমার কাছে বেশ যুক্তিপূর্ণ বলেই মনে হয়েছিলো, তবে ডঃ মাহমুদের মন্তব্যগুলো পড়ে এটাও বুঝলাম যে ব্যাপারটা এত সহজ নাও হতে পারে। যাহোক, মন্তব্যগুলো পড়তে বেশ লাগলো। লেখিকার বিনয়ী মনোভাব আর ডঃ মাহমুদ এরও বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার আন্তরিক প্রচেষ্টা দেখে খুব ভালো লাগলো। কোন ব্লগে একটা প্রাণবন্ত বিতর্ক জমে উঠলে সেটা লেখক, পাঠক, উভয়ের জন্যই আনন্দদায়ক হয়।
খায়রুল ভাই,
আপনার মন্তব্যে অনেক উৎসাহ পেলাম। তবে আমার নামের সামনে ডঃ না লিখলে খুশি হবো। আমি নামের আগে কিছুই বসাতে চাইনা, ওটা নামের পরে যাবে, তা-ও আবার শুধু অফিসিয়াল কাগজপত্রে।
আরেকটা কথা, এই ব্লগের লেখক জেসিসি'র 😀 । আপনি মনে হয় খেয়াল করেন নাই।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এত জ্ঞানগর্ভ কথা! বক্তার নামের আগে পিছে কিছু একটা না দিলে কেমন খালি খালি লাগছিলো। তাই ঐ সদ্যোপার্জিত যোগ্যতার প্রতীকটুকুই বসিয়েছিলাম। তবে এ ব্যাপারে তোমার ইচ্ছেই শেষ কথা। তথাস্তু!
তুমি ঠিকই বলেছো, আমি বিষয়টা খেয়াল করিনি। কলেজের নামটা চোখে পড়েনি। এই ভুলের জন্য আমি লেখকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
😀 এমন হয় মাঝে মধ্যে। মাহমুদ ভাইয়ের সাথে মন্তব্য চালাচালির পর লেখাটা একটু সংশোধন করার কথা ছিল। এখন পারিনি। লেখা পড়া এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
উপরের মন্তব্যগুলো পড়লাম,এতে বুঝা যাচ্ছে দর্শনের প্রতি একটা অাগ্রহ অাছে লেখকের।তবে দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক যেভাবে দেখানো হয়েছে এবং দর্শনকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, দর্শন অাসলে এতটুকু নয়।মুল কনসেপ্টটাই প্রকৃত পক্ষে অাসে নাই।দর্শন সম্পর্কে জানতে হলে দেখতে হবে দর্শনের বিষয়বস্তুকে,এর পদ্ধতিকে।অার দর্শনের উপযোগিতা অাধুনিক বিশ্বে অাছে কি না, এবং থাকলেও তা কতটুকু,সে বিষয়ে দর্শনকে অাগে বুঝতে হবে সে কি বলে।
প্রথম কথা,,,মানব জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে অালোচনা করে,সমাধানের পথ খোজে।যার সমাধান অাজো বিজ্ঞান পারে না দিতে।এগুলো বিমূর্ত প্রত্যয়।
দর্শনের মুল অংশ তিনটি,যা তাকে অন্য সব জ্ঞানের শাখা থেকে পৃথক রেখেছে।
১।অধিবিদ্যা: অাত্বা,সৃষ্টিকর্তা,জগতের উৎপত্তি,পরজগৎ,ইত্যাদি নিয়ে এটা অালোচনা করে।যার সমাধান বিজ্ঞান এখনো দিতে পারেনি।
২।জ্ঞানতত্ত্ব:জ্ঞান কি,কিভাবে পাই,উৎস,কারন,ইত্যাদি অসংখ্য প্রত্যয় নিয়ে।
৩। নীতিবিদ্যা +যুক্তিবিদ্যা +নন্দনতত্ত্ব : নৈতিকতা সম্পর্কিত সব অালোচনা,কোন কিছুর যৌক্তিকতা বিষয়ক সমস্যা,এবং সৌন্দর্য্য বিষয়ক সমস্যা।
দর্শনের এই শাখা গুলো ভিক্তিক লক্ষাধিক গ্রন্থাদি রয়েছে এবং প্রত্যেকটি মানুষ তাদের অজান্তেই এগুলো নিয়ে দর্শন চর্চা করছে।
অামাদের যাবতীয় জ্ঞানের বিচার বিশ্লেষন(বিশেষ মানদণ্ডে) ও বৈধতা,সত্যতা ইত্যাদি অালোচনা করে। দর্শন অালোচনা করে সবকিছুর উপর সত্য, সুন্দর, কল্যানের।এতে অাছে ধর্ম,মানবতা,সত্যতা,মুক্তমনা চর্চা,স্বাধীনতা,ভ্রাতিত্ব।যতদিন পর্যন্ত মানুষ চিন্তা করবে,মানুষের অস্তিত্ব থাকবে,ততদিন পর্যন্ত মানুষ এসব মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে ভাববে,অার ততদিন পর্যন্ত দর্শন ও এর উপযোগিতা থাকবে।বিজ্ঞানের জ্ঞান পরিপূর্ণ ও নিশ্চিত নয়,চলমান কালের অংশিক সত্য মাত্র।অাজকের বিজ্ঞানের সত্য অাগামির প্যারাডাইম।" বিজ্ঞানের দর্শন"বিষয়ে কারো অাগ্রহ থাকলে হাজারো বই অাছে পড়ে দেখতে পারেন,বিজ্ঞানের এই যুগে দর্শনের উপযোগিতা।অারো পড়তে পারেন Analytical philosophy বিষয়ে।খুব খুব সামান্য একটু ধারনা দিতে চেষ্টা করলাম দর্শন সম্পর্কে,অাগ্রহীগন পড়তে পারেন এ সম্পর্কে সহস্র বই লেখা হয়েছে,হচ্ছে এবং হবে। এক একজন দার্শনিকের এক একটি মতবাদ/চিন্তা কিভাবে পুরো সমাজ, দেশ ও বিশ্বকে অালোড়িত,অান্দোলিত করেছিল,পরিবর্তন এনে দিয়েছিল দৈহিক ও মানসিক জগতে।কিভাবে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল? অাজকের মনজগতের ভাবনায় অামরা কার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি! সমাজ,রাষ্ট,ব্যক্তি,অর্থনীতি,সাহিত্য সবখানে এখনো দর্শন জীবিত।যতদিন মানুষ থাকবে as a rational being হয়ে, যেখানে ন্যায়,সাম্য,স্বাধীনতা,কল্যান,মানবতা,বৈধতা,যৌক্তিকতা,সৌন্দর্য,অজানাকে জানার অাগ্রহ, ততদিন দর্শনের উপযোগিতা থাকবে,একা কেবলি মুখের মামুলি কথা নয়।যদিও জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় বর্তমানে দর্শন অজান্তেই ঢুকে অাছে।
লেখাটা আসলে বিজ্ঞান/দর্শন কী নিয়ে কাজ করে- তার থেকে Empiricism কীভাবে এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য টেনে দেয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই লেখা। এবং বিজ্ঞান এই সীমারেখা মেনে কখনই সবকিছু নিয়ে কথা বলতে পারবে না। দর্শনের কাজ থাকবেই। কোনভাবে দর্শনকে ছোট করেছি মনে হলে ক্ষমাপ্রার্থী। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আসলে দর্শন এমন একটা সাব্জেক্ট যা অধ্যায়ন করা দারা ব্যাক্তিতার নিজ নিজ পরিচয় জানা সম্ভব ।
এবং ব্যক্তি তার সার্বিক জীবন বাস্তবায়ন এর ক্ষেত্রে দর্শনের জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
দর্শনআর বিজ্ঞান উভয়একে অপরের পরিপুরক।
<blockquot