এর আগের পর্বে লিখেছিলাম “ব্রেইন ইন আ ভ্যাট” এর সাথে আমার পরিচয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পড়ার সময়। তো ঐ তত্ত্বের সাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সম্পর্কও জানানো প্রয়োজন। তার আগে বলে নিই, আমাদের চারপাশের টেকনোলজি কিন্তু দারুণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা চলছে। অন্যদিকে এগুচ্ছে মানুষের চেহারার ভাব-ভঙ্গি বা আচরণ নকল করতে পারা যন্ত্র তৈরির কাজ। এ নিয়ে দেখতে পারেন এই ভিডিওটি-
সেজন্য আমরা আশা করতে পারি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে যেমন রোবটের কথা পাওয়া যায়, যাদের সাথে বাইরে থেকে মানুষের পার্থক্য করতে পারাটা প্রায় অসম্ভব, কিছুদিন পরেই হয়ত আমরা সেসব রোবট দেখতে পাব। তো এইখানে এসে তৈরি হয় একটা সমস্যা। সমস্যাটা উৎপত্তি দার্শনিকদের মাথা থেকে। যদিও বিজ্ঞানীরা এটা নিয়ে খুব কমই মাথা ঘামান। উনারা ব্যস্ত উনাদের কাজ নিয়ে।
বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার সময় যে ব্যাপারটার দিকে খেয়াল করেন তা হল, একই রকম ইনপুটের জন্য মানুষ আর রোবটের মধ্যে ফলাফল বা আউটপুটে কোন পার্থক্য থাকে কিনা। অর্থাৎ মানুষ যেসব কারণে বিভিন্ন ধরণের অভিব্যক্তি(Expression) প্রকাশ করে, চেহারায় এবং শারীরিক ভাবে, রোবটও এসব অবস্থায় একই ধরণের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারছে কিনা। যেমন, মজা পেলে হাসবে, দুঃখ পেলে কাঁদবে, চিমটি দিলে ‘ওহ’ বলে উঠবে আমাদের মত ইত্যাদি ইত্যাদি। সব মানুষের জন্য অভিব্যক্তি অবশ্য সমান হবে না। সেজন্য আরেকটু ভাল করে বললে বলা যায় যে, এতটুকু হলেই হবে যে, রোবটের অভিব্যক্তিকে মানুষের অভিব্যক্তি থেকে আলাদা করা যাবে না। অর্থাৎ রোবটীয় ভাবটা থাকবে না আর কি।
একটা সমস্যার কথা বলছিলাম। যেহেতু দার্শনিকদের মাথা থেকে এর জন্ম, স্বাভাবিকভাবেই এটা দর্শন সংক্রান্ত। ব্যাপারটা অনেকটা নীতিগত। তাই একে এক ধরণের বিতর্কও বলা যেতে পারে। বিষয়টা হল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঐ অবস্থায় কি রোবটদের ভিতরে ‘মন’ তৈরি হবে? হয়ত খুব সহজেই বলবেন, অবশ্যই না। ওরা তো শুধু মানুষকে নকল করছে। কিছু সমস্যার সমাধান হয়ত তারা করতে পারছে যার জন্য বুদ্ধিমত্তার দরকার। কিন্তু শুধু মানুষের মত অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারলেই কি হয়ে গেল? মন একটা অন্য ধরনের ব্যাপার। যন্ত্রের আবার মন থাকে কিভাবে?
কিন্তু একটু চিন্তা করলেই দেখবেন, ঐ অবস্থায় মানুষের আর রোবটের মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্যই। হয়ত ভিতরের কলকব্জা অন্য উপাদানে বানানো। কিন্তু তাতে কি? মানুষ কখন কাঁদে? সাধারণভাবে যখন তার দুঃখবোধ প্রবল হয়। কান্না কিন্তু আপনা-আপনিই চলে আসে। জোর করে আনতে হয় না। রোবটের ক্ষেত্রেও ধরুন এক একটা অনুভূতির এক একটা পরিমাপ থাকবে। সেই মাপ অনুসারে তার অভিব্যক্তিও পরিবর্তিত হতে থাকবে। ঐ পরিবর্তনও সে নিজের ইচ্ছা করে করছে না। অর্থাৎ, রোবটটা কিন্তু কান্নার অভিনয় করছে না। কি সেই ‘মন’ যার কারণে আমরা রোবটকে আলাদা করছি? কি সংজ্ঞা সেই মনের? সেটা কি আমাদের মস্তিষ্ক আর বুদ্ধিমত্তা থেকে আলাদা কিছু?
আবার যদি এমন কিছু স্বীকার করা হয় যে, মানুষের যদি মন থাকে, তাহলে রোবটেরও আছে, তাহলে আবার আসবে অন্য সমস্যা। তাহলে ‘অধিকার’ এর একটা প্রশ্ন চলে আসে। একতা মানুষকে যেমন হত্যা করা যায় না, বেঁচে থাকা যেমন তার অধিকার, হত্যাটা যেমন অপরাধ, রোবটকে ধ্বংস করাও তেমনি অপরাধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অবশ্য শুধু রোবটের স্মৃতি বা মেমোরি ঠিক থাকলেই সে বেঁচে আছে বলা যাবে। এরকম আরও অনেক অধিকারের ব্যাপার চলে আসবে। তখন?
কি মনে হয় আপনার? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর অনুভূতির সমন্বয়ে যদি রোবট বানানো হয়(শারীরিক আকৃতিটা বড় ব্যাপার না), তাদের কি মন থাকবে?
খুবই ইন্টেরেস্টিং প্রশ্ন। আমার মতে যদি কোনো কম্পিউটার মানুষের মতন করে অনুভূতি ইভালুয়েট করতে পারে, তাহলে অবশ্যই বলতে হবে তার মন আছে। মানুষ কিন্তু সবসময় লজিক্যাল কাজ করে না বা করতে চায় না, একটা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিভাবে ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে???
মানুষের লজিক্যাল কাজ না করার পিছনে কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে। যেমন ধরুন অলসতা। এই অলসতার একটা সূচক যদি রোবটের থাকে, যেটা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত হয়, আর কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে এই অলসতার সূচককেও যদি একটা লজিক্যাল ফ্যাক্টর হিসেবে রাখা যায়, তাহলে রোবটের ক্ষেত্রেও ওমন কিছু অবস্থা তৈরি করা খুব অসম্ভব কিছু হবে না।
দার্শনিকরা বানালে মন থাকবে, বিজ্ঞানীর হাতে তৈরী হলে মন থাকবে না। প্রোডাকশন হাউজটা খুব ইম্পর্টেন্ট এই ক্ষেত্রে।
বাই-দ্য-ওয়ে, বিজ্ঞানীদের আবার মন-টন আছে নাকি? জানতাম না তো 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
হাহা। ভাল বলেছেন ভাইয়া।
রোবটকে অনুভূতি দেয়া সম্ভব, যদিও আমি মনে করি তা দেয়া ঠিক না। মানুষের আবেগ শুধু মানুষের মাঝে থাকা দরকার।
জুনায়েদ
এটা নিয়েও দার্শনিকদের মধ্যে একটা বিতর্ক আছে সম্ভবত যে, রোবটকে অনুভূতি দেয়া ঠিক হবে কিনা। বিজ্ঞানীদের অবশ্য এব্যাপারে ভ্রূক্ষেপ নেই। উনারা ব্যস্ত উনাদের গবেষণা নিয়ে।
আমার একটা অন্যরকম ধারনা আছে। আমি ভাবি প্রানী বা উদ্ভিদের প্রতিটা আলাদা কোষের আলাদা আলাদা প্রান। আর প্রতিটি প্রান মিলিত স্বরুপ হল আত্মা বা মন। আমার এই ধারনার পিছনে একটা যুক্তিও আছে। তা হল মানুষ রক্ত দান করতে পারে, মরনোত্তর চোখ, কিডনী দান করতে পারে। অর্থাৎ এই সব অঙ্গ গুলো কিছু সময় অনুভূতি হারালেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবার মস্তিষ্কের সংস্পর্শে এসে পুনরায় অনুভূতি পায়। কিন্তু ধীরে ধীরে অঙ্গ গুলোর কোষ যখন প্রান শূন্য হয় তখন পুরো অঙ্গটির আর কোন কার্যকারিতা থাকে না। আবার এইরকম মনে হয়, যেই সব প্রানী বা উদ্ভিদের কোষ গুলির প্রান শক্তি দুর্বল তার মনটাও দুর্বল থাকে। আমার দৃষ্টিতে, মন কোন আলাদা অঙ্গ বা ছোয়া যায় না এমন কোন বস্তু নয়। আরো মনে হয়, মনকে আরো অধিক শক্তি যোগাতে পারে মস্তিষ্কের বিভাজিত নিউরন।
কি সব আবোল তাবোল চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছি।
আবোল-তাবোল চিন্তা করতে পারাটা একটা বড় গুণ ভাইয়া। আমার মনে হয়, এরকম আবোল-তাবোল চিন্তা করতে পারে বলেই মানুষ এতদূর এসেছে। এই ব্যাপারটার একটা নাম আছে- Alternative Thinking। আমিও এইখানে সেটারই চেষ্টা করছিলাম আর কি ...
আমাদেরও(মানে গাছেদেরও) মন আছে, এটা বলার জন্য ধন্যবাদ।
ফলো করছি এবং ভালো লাগছে।
একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখি এতোদিন প্রাকৃতিকগতভাবে পৃথিবীতে ছেলে-মেয়ের আনুপাতিক জন্মহার ব্যালেন্স ছিল। মান্যুপুলেশন হওয়াতে চায়্নাতে ইমব্যালেন্স হয়ে পড়ছে। আমাদের দেখের বাইরেও যে কিছু প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রন চলছে তা নিয়ে কিন্তু একদম গবেষণা হচ্ছে না। বিজ্ঞান আর দর্শন হাতে হাত ধরে না চললে কী হতে পারে সেটা বোঝার পর হয়তো এরপর দুটো এক হয়ে যাবে। সেটা অবশ্য এ শতাব্দীতে হবে না বলেই মনে হয়।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ফলো করছেন জেনে অনেক ভাল লাগল। সম্ভবত আমার কোন পোস্টে আপনার প্রথম মন্তব্য। ব্লগে এমন কয়েকজনের মন্তব্য পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকি। অনেক ধন্যবাদ আপু।