এখন যেটা নিয়ে লিখতে বসেছি, সেটা দর্শনের একটা তত্ত্ব। দর্শন বিষয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও আমাদের পাঠ্য বইয়ের অংশ হিসেবেই এই ধারণাটির সাথে আমার পরিচয় ঘটে গতবছর, Artificial Intelligence কোর্সের সময়। এই তত্ত্ব বা থিওরির নাম ছিল- “Brain in a vat”. প্রথমে কিছুটা জটিল লাগলেও বেশ ভাল লেগেছিল পুরো ব্যাপারটা। সেজন্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে বসলাম।
এই “Brain in a vat”- আঙ্গুল উঠায় একেবারে আমাদের অস্তিত্বের দিকে। আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, আমাদের বস্তুগত(Physical) অস্তিত্বের দিকে। আমাদের অস্তিত্ব কি আসলেই বাস্তব? নাকি অন্যরকম কিছুও হতে পারে? শুধু আমদের বা আমার না, বরং যে চারপাশের জগত আমি দেখছি, শুনছি, অনুভব করছি, সেটার অস্তিত্ব নিছক আমাদের কাছে পাঠানো কিছু সিগনাল নাতো? আসলেই যদি চিন্তা করে দেখা যায়, আমি বা আমার চারপাশের জগতের সাথে আমার যোগাযোগ হয় কিভাবে? আমি কিভাবে বুঝি যে আমার চারপাশে যা আছে বা যেই আমি আছি সেটা ঠিক কেমন? উত্তর খুব সহজ। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর মাধ্যমে। চোখ দিয়ে দেখছি, কান দিয়ে শুনছি, নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছি, স্বাদ নিচ্ছি জিহ্বা দিয়ে, আর আমাদের পুরো শরীরের ত্বকে আছে স্পর্শানুভূতি।যার দ্বারা কোন জিনিস স্পর্শ করলে আমরা বুঝতে পারি সেটা কঠিন না নরম/তরল, মসৃণ কিনা, তাপমাত্রা কেমন আরো অনেক কিছু। ইন্দ্রিয়গুলো থেকে আসা এই অনুভূতি বা সিগনালগুলোই আমাদের কাছে আমাদের চারপাশের জগত। এমনকি আমাদের নিজেদের শরীরও এর অন্তর্ভুক্ত।
এখন আসুন পুরো ব্যাপারটাকে একটু ভিন্নভাবে দেখা যাক। ধরা যাক আমাদের মস্তিষ্ককে আলাদা করে ছবির মত এমন একটি দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হল, যেটা মস্তিষ্ককে বাঁচিয়ে রাখে এবং সতেজ রাখে। এরপর এই মস্তিষ্ককে ঐসব সিগনাল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হল যা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো থেকে মস্তিষ্কে অনুভূতি হিসেবে আসত। স-ম-স্ত সিগনাল। এই সিগনালগুলো পাঠানোর দায়িত্ব পালন করবে একটা কম্পিউটার যে কিনা ঠিক সময়ে ঠিক সিগনালটি পাঠিয়ে দেবে। আবার মস্তিষ্কও কিন্তু এসব সিগনাল পেয়ে কিছু একটা করবে। সেগুলোও আসলে কিছু সিগনাল, যা সে পাঠাতে চাচ্ছে অন্য অঙ্গগুলোকে। তো এই ক্ষেত্রে সেগুলো যাবে ঐ কম্পিউটারে। কম্পিউটার এসব নিয়ে হিসেব-নিকেশ করে আবার পাঠাবে নতুন সিগনাল। এভাবে চলতে থাকবে। এখন প্রশ্ন হল, ঐ মস্তিষ্ক কি বুঝতে পারবে যে, তার চারপাশে আসলে কিছুই নেই? সে একটা সিমুলেশনের অংশ মাত্র? সে যা ভাবছে, যা করছে তার কোন কিছুই সত্য না? পারবে না।
এখন বলুন তো, আপনি কিভাবে বুঝলেন যে, আপনি :just: এমন একটা মস্তিষ্ক না?
ম্যাট্রিক্স সিনেমাটির মতন।
বোঝার কি উপায়?
গুলশান ভাই,
আমরা যেমন কম্পুটারে গেম খেলি; আল্লাহ মনে হই ওই রকম একটা গেম খেলতেছে; আমরা উপাদান মাত্র
অত্যান্ত চিন্তার বিষয় :-B
আমি আসলে লেখাটাকে আরও একটু বড় করতে চেয়েছিলাম। এই বিষয়টি নিয়ে আমার ভাবনাগুলোও শেয়ার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চেয়েছিলাম পাঠক এইখানটাতে এসে একটু থামুক। এজন্যই শেষ করেছি। পরে আমার কথাও বলব।
সিগনাল পাঠানোর মানেই হল আমরা কিছু সত্য তথ্য পাঠাচ্ছি।আর যে প্রসঙ্গ কাঠামোতে ঘটনাটি ঘটবে সেটাই নির্ধারণ করবে কোনটি বাস্তব কোনটি বাস্তব না। একটি প্রসঙ্গ কাঠামোতে একটি বাস্তবতাই থাকতে পারে,প্যারালাল বিশ্বের তত্ত্বটি এখনো প্রমাণিত নয়।
এখানে কিন্তু ভাইয়া দুইটা বাস্তবতার কথা বলা হচ্ছে না। বরং বলা হচ্ছে বাস্তবতা একটাই। কিন্তু হয়ত আমাদেরটা না। আমি অবশ্য পরে এটা নিয়ে আরও লেখার চেষ্টা করব। এটা নিয়ে উইকিপিডিয়ার এইটুকু পড়ে দেখতে পারেন।
i think therefore i am চলে?
আমার ভাবনাগুলো পুরোপুরি এই "ব্রেইন ইন আ ভ্যাট" এর মত নয়। কিন্তু এটার একটা ভাল অবদান আছে আমার চিন্তা-ভাবনায়। পরের পর্বে আমার কথাগুলো লেখার ইচ্ছা আছে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
এটা কি সম্ভব। :thumbup: