ধর্ম নিয়ে আমার ভাবনা – শেষ পর্ব

ধর্ম নিয়ে আমার ভাবনা ১
ধর্ম নিয়ে আমার ভাবনা ২

এই শেষ পর্বে আমি জীবনাচরণের ঐ সমস্ত দিকগুলো নিয়ে বলতে চাচ্ছি, যেগুলো সরাসরি ব্যক্তিধর্মের বিশেষ কোন উপাদানের(ধর্ম/মতাদর্শ/চেতনা) সাথে সংশ্লিষ্ট না। কিন্তু পরোক্ষভাবে উপাদানগুলোর প্রভাব এর উপরে পড়ে। বলা যায়, আগের পর্বে লেখা আচার-অনুষ্ঠান ছাড়া ব্যক্তির বাকি সমস্ত কাজই এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই আচরণগুলো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্মিলিত। কারণ, আমাদের সম্মিলিত বেশীর ভাগ কাজই কোন না কোন উপাদানের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে পড়ে যায়।

আমি প্রথমে এই আচরণগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করছি। প্রথমত- যেসবের সাথে অন্যদের স্বার্থ জড়িত। কোন কোন ক্ষেত্রে ঐ স্বার্থটা অন্যদের প্রাপ্য অধিকার, কোন ক্ষেত্রে হয়ত নয়। এখানে আবার স্বার্থ বললে শুধু অর্থনৈতিক দিককে বিবেচনা করার এবং অন্যান্য দিকগুলোর বাদ পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। সেজন্য বলছি, অন্যদের অর্থনৈতিক স্বার্থ তো আছেই যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর সাথে অন্যদের আরও কিছু স্বার্থ আছে। যেগুলোর বেশীর ভাগই আমাদের বিভিন্ন পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্কের দ্বারা আরোপিত। আর সহজভাবে বললে আচরণগুলোর দ্বিতীয় ভাগ হল বাকীগুলো- যেসবের সাথে অন্যদের কোন স্বার্থ জড়িত নয়। আমি অবশ্য এখানে যে শুধু ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকেই বিবেচনা করছি, তা না। আমরা সামাজিক ভাবে সবার মধ্যেও পারষ্পরিক অনেক কাজ করি, যেগুলোর সাথে অন্যদের স্বার্থ জড়িত নেই। সেগুলোকেও এই দ্বিতীয় ভাগেই ধরছি।

আর এই উভয় ধরণের কাজ বা আচরণ আমাদের যে বোধ থেকে আসে, তাকে আমি বলব ‘নৈতিকতা’। যার প্রভাব প্রথম ভাগের উপর স্পষ্ট, দ্বিতীয় ভাগের উপর প্রচ্ছন্ন। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন- আমি কিন্তু নৈতিকতাকে প্রথম পর্বে বলা আদর্শ বা মূল্যবোধের সাথে মেলাইনি। কারণ আমার মতে ব্যক্তির আদর্শ এসেছে ব্যক্তিধর্মের বিভিন্ন উপাদান থেকে। আর নৈতিকতা এসেছে মানুষের মধ্যে স্বভাবজাত ভাল-মন্দ উপলব্ধি করার যে ক্ষমতা, যাকে আমরা ‘বিবেক’ বলি, সেখান থেকে। তবে অবশ্যই, ব্যক্তিধর্মের উপাদানগুলোর প্রভাব এই নৈতিকতার উপরেও পড়ে। কিভাবে? আসুন দেখা যাক।

আগে যেমন বলেছিলাম- আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর চর্চা করতে হয়, নৈতিকতার বেলায়ও তাই। চর্চা ছাড়া নৈতিকতাও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আর নৈতিকতা দুর্বল হলে আকাঙ্ক্ষা, প্রয়োজন, সুযোগ- এসবের মিলিত ফলাফলে ব্যক্তির সততার নীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু নৈতিকতা চর্চার একটা বড় সমস্যা হল, এটা সরাসরি করা যায় না। তাহলে ব্যাপারটা কেমন জানি স্বাদহীন পানসে হয়ে যায়। অন্যদিকে আদর্শের চর্চা কিন্তু সরাসরিও করা যায়। সম্ভবত এর কারণ এই যে, সাধারণত আদর্শের সাথে একটা লক্ষ্য জড়িত থাকে। কিন্তু নৈতিকতার সাথে তেমন কোন লক্ষ্য জড়িত থাকে না। এজন্য নৈতিকতার চর্চা করাতে একটা মোড়কের প্রয়োজন হয়। যেটার আড়ালে নৈতিকতার চর্চা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সাহিত্যের মোড়কে নৈতিকতার চর্চা। যেমন ঈশপের গল্পগুলোতে করা হয়েছে। তবে আমার মতে সাহিত্যের একটা সমস্যা হল, এটা সবার কাছে পৌঁছাতে পারে না এবং যাদের কাছে পৌঁছায়, তাদের সবার কাছেও সমান আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। যাই হোক, ব্যক্তিধর্মের যে উপাদানগুলোর কথা আমি বলেছি, সেগুলোও নৈতিকতার চর্চার জন্য একটা মোড়কের কাজ করে। এবং ক্ষেত্রেবিশেষে অন্যান্য মোড়কের চেয়ে এর কার্যকারিতাও বেশি। কারণ, সে নৈতিকতার সাথে একটা লক্ষ্যকেও জুড়ে দেয়। এতে নৈতিকতা অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, আবেদনও সৃষ্টি করতে পারে এবং ধরেও রাখতে পারে।

এসব উপাদানগুলো অনেক ক্ষেত্রে নৈতিকতাকে আরও এক ভাবে সাহায্য করে থাকে। সেটা হল নৈতিকতাকে সুসংজ্ঞায়িত এবং সুনির্দিষ্ট করা। অনেকটা রাষ্ট্রীয় আইন যেটা করে থাকে। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির বিবেক পুরোপুরি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। অনেক অপরাধীও দেখা যায় নিজের বিবেকের কাছে ঠিক আছে। যেমন- রবিন হুডের কথা ধরুন। ব্যক্তিধর্মের উপাদানগুলো এসময় বিভিন্নভাবে মানুষকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে নির্দেশনা(Guidance) দেয়। নৈতিকতার উপরে আমি এখনে বিভিন্ন উপাদানের প্রধানত দুটি প্রভাবের কথা বললাম। তবে এই ক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানগুলোর তুলনায়, প্রচলিত ধর্মগুলোর কার্যকারিতা আলাদাভাবে লক্ষ্য করার মত।

শেষে নৈতিকতাভিত্তিক জীবনাচরণের যে অংশের কথা আমি এই পর্বে বলছি, তার আরও একটি গুরুত্বের কথা তুলে ধরি। সেটা হল তুলনার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হওয়া। ব্যক্তি হিসেবে একেক জনের ব্যক্তিধর্ম একেক রকম হতে পারে। কিন্তু এই নৈতিকতার বেলায় সবার মনোভাব কাছাকাছি। একে অপরের কাছ থেকে প্রত্যাশাও অনেকটা একই রকম। সুতরাং এই জীবনাচরণের মধ্যে এই নৈতিকতার অংশটুকুই মূলত বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে তুলনার মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে। আর যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে তার ব্যক্তিধর্মের কোন একটি উপাদানের/মতাদর্শের প্রাধান্য বিশেষভাবে প্রকাশ পায়, তখন সেটা ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির তুলনা থেকে হয়ে ওঠে এক মতাদর্শের সাথে অন্য মতাদর্শের তুলনা। যার মাধ্যমে কোন একটি মতাদর্শ অবচেতনভাবেই অন্যদের মধ্যে জায়গা করে নেয়।

আমার ব্যক্তিধর্মের বিশ্লেষণ এখানেই শেষ। এখন অন্য দুটি পর্যবেক্ষণ বলেই এই লেখার ইতি টানব। সেটা হল, আমার হিসেবে সাধারণভাবে আমাদের ব্যক্তিধর্মের মধ্যে যে উপাদানটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে আছে, তা হল রাষ্ট্রভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। অবশ্য গ্রামের দিকে গেলে সেটা সংকুচিত হয়ে আঞ্চলিক বা পারিবারিক পর্যায়েও যেতে পারে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে প্রচলিত ধর্মগুলো। এরপর ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন মতবাদ। তবে আমার মতে, ব্যক্তিধর্মের উপাদান হিসেবে জাতীয়তাবাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। জাতীয়তাবাদের মধ্যে আচার-অনুষ্ঠান থাকলেও আদর্শ এবং লক্ষ্যের সমন্বয়ে যে মানসিকতার কথা আমি বলেছি সেটা কিন্তু অনেকটাই অস্পষ্ট। আমাদের কিছু একটা করার আবেগ জাতীয়তাবাদ দেয়, কিন্তু ঠিক কি করতে হবে তার কোন দিক-নির্দেশনা সে দেয় না। সাথে সাথে নৈতিকতার চর্চাতেও খুব বেশী অবদান রাখতে পারে না। কেননা নৈতিকতা একটা সার্বজনীন বিষয়, কোন বিশেষ জাতির সাথে এর সম্পর্ক থাকাটা ঠিক গ্রহণযোগ্য নয়। “আমি বাঙালি বলে সত্য কথা বলব”- এটা কেমন যেন শোনায়। সেজন্য দেখায় যায় যাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রভাব প্রবল, তারাও এই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে অন্য কোন মতবাদ বা আদর্শের চর্চা করা শুরু করেন।

আরেকটি ব্যাপার হল, একই মতাদর্শ বা উপাদানের চর্চাকারী ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবেই কাছাকাছি আসেন। এতে করে তাদের মধ্যে একটা স্বজাত্যবোধও গড়ে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায় যে ঐ গোষ্ঠীর মধ্যে মূল আদর্শের চর্চা কমে গিয়ে গোষ্ঠীভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। শেষে মূল আদর্শ চাপা পড়ে যায় বা কিছু আনুষ্ঠানিকতা আর বুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। আর ঐ সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদই প্রবল হয়ে ওঠে। যেটা থেকে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ঘটে (স্বজাত্যবোধ, জাতীয়তাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা দ্রষ্টব্য)। যেমনটা ঘটেছে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে। খুঁজলে আরও অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে।

৯ টি মন্তব্য : “ধর্ম নিয়ে আমার ভাবনা – শেষ পর্ব”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    প্রথম পর্ব থেকে শেষ পর্ব পর্যন্ত যুক্তির ধারা খুব ভালো লেগেছে। খুব সুন্দর হয়েছে বিমূর্ত বিষয়গুলোর আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা। তবে সবগুলোর সাথে দু'একটা বাস্তব উদাহরণ দিলে পাঠকের জন্য পোষ্টের বক্তব্য উপলব্ধি করা সহজ হতো। যেমন,

    ঐ সমস্ত কাজ যার সাথে অন্যদের স্বার্থ জড়িত। কোন কোন ক্ষেত্রে ঐ স্বার্থটা অন্যদের প্রাপ্য অধিকার, কোন ক্ষেত্রে হয়ত নয়।

    বাস্তব থেকে উদাহরণ না থাকায় বুঝতে কষ্ট হচ্ছে তুমি আসলে কোন কোন কাজকে বুঝিয়েছো।

    এরকম আরো অনেক জায়গা আছে যেখানে বাসত থেকে উদাহরণ দিলে সহজ হতো।

    পাঁচতারা।

    (সম্পাদিত)


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

      ভাইয়া আমি আসলে চাইছিলাম যে, পাঠক একটু কষ্ট করে নিজেই যেন উদাহরণ খুঁজে নেয়। উদাহরণ না দেওয়ার একটা কারণ হল, কিছু উদাহরণ বেশ স্পর্শকাতর। এগুলো যদি উদাহরণ হিসেবে আমি দিই, তাহলে কেউ কেউ আর্টিকেলের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করতে পারেন। কিন্তু নিজেই খুঁজে বের করলে সেটা আর হবে না। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় উদাহরণ দিলে পাঠক ঐ উদাহরণের বাইরে আর চিন্তা করে না। সেজন্য মূল ক্ষেত্রটা সংকীর্ণ হয়ে আসে। যেটা নিজে করলে হবে না। তবে স্বীকার করছি, একারণে কারো কারো জন্য প্রবন্ধটা একটু কঠিন হয়ে যেতে পারে।

      জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
        ভাইয়া আমি আসলে চাইছিলাম যে, পাঠক একটু কষ্ট করে নিজেই যেন উদাহরণ খুঁজে নেয়।

        - আমার ধারণা, সাধারণভাবে যারা কোন বিষয়ে আগ্রহী, তারা শুরুতেই ঐ কষ্টটুকু করতে রাজী না। তাই প্রথমে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করতে হয় পাঠকের আগ্রহ তৈরী+ধরে রাখায়। একবার পাঠক বিষয়ের মধ্যে চলে আসলে নিজে নিজেই অনেক তথ্য খুঁজে নেয়।


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
  2. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    খুবই চমৎকারভাবে পোস্ট টা শেষ হলো। আগের দু পর্বে যে জিনিসটার অভাব বোধ করছিলাম অর্থাৎ যার কথা আশা করছিলাম সেই নৈতিকতার কথাটা এলো এই পর্বে। বিভিন্ন বিশ্লেষণ যা আমাদের ব্যাক্তি ধর্মকে পরিস্ফুট করে তার সুন্দর বিশ্লেষণ। তবে আমার নিজস্ব বক্তব্য বলার চেষ্টা করি।
    গাছের যে এনালোজিটা এসেছিলো তা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।এবং তার দ্বারা ফুটে উঠেছে কিভাবে মানসিকতা আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু আমার কাছে উল্টোটাই সঠিক বলে মনে হয় বেশি। অর্থাৎ মানসিকতার বিকাশের দ্বারাই আচরণ বেশি মাত্রায় ফুটে উঠবে। এবং মানসিকতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অবশ্যই প্রবণতা। এই প্রবণতা হতে পারে জীনগত অথবা মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরিবেশের বিভিন্ন ব্যবস্থার ইমপ্যাক্ট। যেমন দারিদ্রের মাঝে হাহাকার নিয়ে বড় হওয়া লোকটির মাঝে মনের অজান্তেই বায়াস তৈরি হবে সমাজতান্ত্রিক মানসিকতার, এবং যখন উপযুক্ত পরিবেশে সে ঐ জিনিসটির সংস্পর্শে আসবে তখন তার বায়াস তাকে চালিত করবে সেই দিকে চর্চা করার। একই অবস্থায় যে সবার বায়াস একই দিকে হবে সেটাও বলা যায় না। যেমন আগের যে অবস্থার কথা বললাম , সে অবস্থার মাঝে বড় হওয়া কোন মানুষ হয়তো ভেজিটেটেড ধর্মীয় প্রক্রিয়া (প্রচলিত ধর্মীয়) বেছে নিবে। তার ফলশ্রুতিতে ক্রিস্টান মিশনারি কিংবা হিন্দু যোগী অথবা মুসলিম তাবলীগ কিংবা পীর ফকিরের মুরীদ জন্ম নিবে। এই খানে মানসিকতা তৈরি হয় কিছুটা প্রবণতার দ্বারা আর কিছুটা পরিবেশগত। তা নিয়ন্ত্রণ করে তার আদর্শ আর লক্ষ্যকে।
    এবার আসি বিনোদনের ব্যাপারটিতে। বিনোদনের ব্যাপারে যেটাকে তুমি ফুল ফলে শোভিত বলেছো এই এনালোজিটা একটু অড লেগেছে। কারণ ফুল ফল সার্বজনীন ভাবে সুন্দর। কিন্তু ব্যাক্তিধর্মে যেটা বিনোদন সেটা মানুষ ভেদে ভিন্ন তো হবেই ক্ষেত্রবিশেষে একজনের বিনোদন আরেকজনের কাছে অপরাধ বলে মনে হবে। এর একটা উদাহরণ হতে পারে কুরবানীর ঈদ , কিংবা হিন্দুদের বলি প্রথা সেটা বিনোদন হিসাবে চর্চাকারীদের পরিগণিত হলেও মানবতাবাদীদের কাছে তা নিষ্ঠুর মনে হবে। আরেকটা ব্যাপার হলো বিনোদনের ব্যাপারটাও কিছু আরোপিত। যেমন আমি দেখেছি একটা মানুষ কোন জিনিস উপভোগ করার আগে দেখে তার ট্যাগ। তারপরে চিন্তা করে এটা ভালো লাগতে হবে না খারাপ লাগতে হবে। এর বাস্তবিক উদাহরণ হলো কাজী নজরুল ইসলামের মুসলিম পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়তা। কাজী নজরুল মুসলিমদের কাছে জনপ্রিয় হতে পারবেন না এমন না বরং জনপ্রিয় হ্তেই পারেন। কিন্তু তার কারণ অবশ্যই হতে হবে তার কাজ অর্থাৎ কবিতার জন্য, তিনি জাতিতে মুসলমান ছিলেন এই জন্য নয়। তাই বিনোদনকে ফল হিসাবে ধরলেও একে আমার কাছে মনে হয়েছে মানসিকতা রূপি গাছটির বিভিন্ন আরণিক প্রত্যঙ্গের বিকাশে নয় বরং এই ফুল অনেকটাই হাউস কম্পিটিশনে বাইরের ফুল ওয়ালা গাছকে হাউস বাগানে মাটি খুড়ে লাগিয়ে দেয়ার মত।
    এবার সবচেয়ে বড় প্রসঙ্গে আসি। সেটা হলো নৈতিকতা। নৈতিকতার সংগা আমার কাছে পরিষ্কার হয়নি। কারণ আমি নিজে মনে করি আমাদের সমস্ত ব্যক্তিগত কাজ ব্যক্তিস্বার্থ দ্বারা চালিত হয়। হ্যা এখানে পরোপকার করার মাঝেও আমি স্বার্থ দেখি। সেটা হলো নিজের আত্ম তুষ্টি।(যেহেতু তুমি স্বার্থের জায়গাটা শুধু অর্থনৈতিক কিংবা আরো বড় করে বললে ভোগ অর্থে ব্যবহার কর নি।নৈতিকতার পিছনে ড্রইভিং ফোর্সটা কী কাজ করে বলে তোমার মনে হয়?? এক্ষেত্রে আমার নিজের বোধ হলো এটা আমরা বয়ে এনেছি আমাদের আদিম গুহামানবের জীনের থেকে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য সামষ্টিক থাকতে হতো। একজনকে দাড়াতে হতো আরেকজনের পাশে।
    আবার নৈতিকতার সংগাতেও ঔচিত্যবোধের ব্যাপার চলে আসে। সেটা কোথা থেকে আসে?? সেটা নির্ভর করে সামাজিক সামষ্টিক মানুষের পরিচালিত সমাজের দ্বারা। টাই একদেশে যা বুলি আরেকদেশে তা গালি ; একইভাবে একদেশে যা নৈতিকতার অবমাননা আরেক দেশে তা খুবই সাধারণ ব্যাপার। এই ব্যাপারেও উদাহরণ মাথায় এসেছিলো তা আপাতত বাদ দিলাম।
    পরিশেষে কিছু কথা বলি। আমার নিজের একাডেমিক নলেজ সামাজিক বিজ্ঞানে শূন্যের কাছাকাছি। যে কথাগুলো বললাম সেগুলো হলো, তোমার পোস্টের কথামতো আমার নিজের কিংবা আমার কাছের মানুষগুলোর জীবন আচরি দেখে। এ ব্যাপারে তোমার মত শোনার প্রত্যাশা রইলো। আর আমার বোঝার ভুল থাকলে সেটা এক্সপ্লেন করার অনুরোধও রইলো।
    চমৎকার এই পোস্টে পাঁচতারা।

    জবাব দিন
  3. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    আগেই বলেছিলাম আপনার আর মাহমুদ ভাইয়ের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকব। এবং ছিলামও। আমারও সমাজবিজ্ঞানে তাত্ত্বিক জ্ঞানের দৌড় ঐ এস.এস.সি. পর্যন্তই।সেজন্য লেখার আগে বিষয়টি নিয়ে অনেএএক দিন ধরে চিন্তা করেছি। ধীরে ধীরে কাঠামোটা দাঁড় করিয়েছি। এটা নিয়ে কেউ যদি একটু বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য করে এবং উৎসাহ দেয়, তাহলে একটা ভাল লাগা কাজ করে। যদিও আমি পোস্টটাকে খুব বেশি আকর্ষনীয় করতে পারিনি। তবে এমন কিছু মন্তব্য পেলে সেটা নিয়ে আমার খুব বেশি দুঃখ থাকবে না। আপাতত একটু বাসা বদলের ঝামেলার মধ্যে আছি। পরে সময় করে আলাদাভাবে আপনার মন্তব্যের পয়েন্টগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

    জবাব দিন
  4. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    "গাছের যে এনালোজিটা এসেছিলো তা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।এবং তার দ্বারা ফুটে উঠেছে কিভাবে মানসিকতা আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু আমার কাছে উল্টোটাই সঠিক বলে মনে হয় বেশি। অর্থাৎ মানসিকতার বিকাশের দ্বারাই আচরণ বেশি মাত্রায় ফুটে উঠবে।"

    ভাইয়া আমি কিন্তু ঐখানেই মানসিকতা এবং জীবনাচরণের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার একটা চক্রের কথা বলেছিলাম। আর এই চক্রে মানসিকতা কিভাবে আমাদের জীবনাচরণ(বিশেষভাবে আচার-আনুষ্ঠান) এর দ্বারা প্রভাবিত হয়, সেটার উদাহরণটাই গাছের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছি। সুতরাং আপনি যা বলেছেন তার সাথে আমি একমত।

    জবাব দিন
  5. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    প্রবণতার ব্যাপারটা আপনি ভাল ধরেছেন। আমি অবশ্য মানসিকতা কিভাবে তৈরী হয় সেটা বলিনি বা হয়ত এটা নিয়ে তেমন চিন্তাও করিনি। প্রবণতা ব্যাপরটা এর মধ্যেই পড়বে। এক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে ঐ জীনগত প্রভাবটাও খেয়াল রাখতে হবে। যেমন আমাদের মস্তিষ্কের কোন বিশেষ অংশ বড় হলে আমরা বেশী ঝুঁকি নিই বা কোন বিশেষ হরমোন বেশী নিঃসরিত হলে আমাদের স্বভাবের বিশেষ কোন দিক জোরাল হয়ে ওঠে। এগুলো সবার জন্য সমান না। আর সমান না সবার পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও।

    জবাব দিন
  6. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    আমি কিন্তু বিনোদন নিয়ে বিশদ আলোচনা করতে চাইনি বা করিনি। বিনোদনের ব্যাপারটা এনেছিলাম আদর্শ বা মূল্যবোধ ছাড়াই বিশেষ কোন ধর্ম/মতাদর্শের আচার-আনুষ্ঠান কিভাবে টিকে থাকে সেটা উত্তর খুঁজতে যেয়ে। আর বিনোদনকে আমি আসলে ব্যক্তির নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখতে চেয়েছি। অন্যেরা কি বলল বা ভাবল তা নিয়ে ব্যক্তি খুব কমই মাথা ঘামায়।

    আর নৈতিকতার ব্যাপারটা নিয়ে পরে লিখছি। তবে ভাইয়া শেষ পোস্টটা যদি আবার একটু পড়েন, তাহলে মনে হয় আমার মতামতটা ভালভাবে বুঝতে পারবেন।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।