বলা নেই কওয়া নেই অল্প দিনের নোটিশে দুম করে বিয়ে করে ফেল্লাম এক ক্যাডেট রে। সে প্রথমে আমারে যেই বাড়িতে নিয়া তুল্লো- সেই বাড়িওয়ালা খালাম্মার – ভয়াবহ ক্যাডেট প্রীতি। তার এক পোলা একটু আউলা টাইপের কিন্তু জিনিয়াস সেও একজন ক্যাডেট। বড় মেয়ের জামাই মাশাল্লা সেও একজন ক্যাডেট।
আমি দোতালায় থাকি। নীচে খালাম্মা। তার পাশের ঘরটা খালি। দেখি কয়টা ভাঙ্গাচোরা ফার্ণিচার, আলমীরা, গাদা গাদা কাগজ। কাহিনী বুঝলাম না। সন্ধ্যা বেলা প্রায় প্রায়ই দুম দুম দ্রিব দ্রিব শব্দ আসে উপরের তালা থেকে। কারা নাকি টেবিল টেনিস খেলে। বর দেখি প্রায় সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে না। তাকে উদ্ধার করতে হয়, হয় উপরের তালা থেকে নয় একতলার সেই খালি ঘর থেকে।
মুখ ভোঁতা করে বলি, খালাম্মাকে — খালাম্মা এরা কারা? খালাম্মা আকাশ থেকে পড়লেন, ও আল্লা তুমি জাননা। এরা তো সব ক্যাডেট। ওমুক ক্যাডেট এর পুরানা যারা আছে এই খানে আইসা বাসা বানছে। (খালাম্মা অন্য কাউরে ভরসা পায়না। তাই তার ভাড়াটিয়া মানেই——মানে ওটা ওল্ড—ক্যাডেট এ্যাসোসিয়েশনের অফিস।
একদিন বররে ধরলাম আজ তোমারে অন্য কোথাও যাইতে দিমু না। তুমি আমারে কোথাও বেড়াইতে নিয়া চলো- সে মহা উৎসাহী। হ্যাঁ চলো চলো— এক্কেরে নিয়া তুল্লো তিন তলায়। অমুক ভাই তমুক ভাই এই যে আমার বউ। জী ভাবি স্লামালাইকুম এর ঠেলায় জীবন জেরবার। সিনিয়র রা জুনিয়ররে হুকুম করে, এই অমুক ভাবি রে একটা চেয়ার দাও— সামরিক কায়দায় অন্যরা চেয়ার নিয়ে ছুটাছুটি করে।
সেই শুরু এরপর আমিও ভিড়ে গেলাম ওদের দলে। আমার জীবন হয়ে গেল ক্যাডেটময়। উপ্রে নীচে এক দঙ্গল ক্যাডেট এর মধ্যে আমি একমাত্র মহিলা ক্যাডেট ( আমার বরের ব্যাচে একটা চাল্লু কথা আছিল, অসুন্দর মাইয়াদের হেরা ক্যাডেট নামে ডাকতো। আমি হইলাম গিয়া ঐ দলের ক্যাডেট।)
তা যতই অসুন্দর হই না কেন? আমার মুখখান ওদের দেখতেই হত। যেদিন ওদের প্রোগ্রাম বা সপ্তায় সপ্তায় মিটিং থাকতো, সেদিন আমার বাড়ির দরজা কে আটকায়? ভাবি, চেয়ার লাগবে, চামচ লাগবে, ফ্রীজের ঠান্ডা পানি লাগবে— মিনিটে মিনিটে আমার বাড়ির ভেতর এর তার আনাগোনা।
সিঁড়ির মুখে, অলি গলিতে শুধু ক্যাডেট আর ক্যাডেট।
আমার বরের ব্যাচের ওদের জানে জিগার দোস্ত ছিল প্রায় ১৮ জন (সংখ্যাটা ঐ ভাবে গুনিনি। মানে চান্স পাইনি। তবে কাছাকাছিই হবে।)এরা সব কাজেই মানিক১৮ এর মত ঘুরে বেড়াতো। এদের ছিল ভর্তি দিবস মানে ছন্নছাড়া পেন্সিলের মত দ্বিতীয় জন্মদিবস, ছিল বিদায় দিবস।
তো আমার যখন সংসার শুরু তখন এই মানিক ১৮ এর নব্বই ভাগই জীবিত আর কি? কাজেই বুঝতেই পারছেন।
প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা এই সবগুলো ক্যাডেট এর সাথে মেতে উঠতাম প্রচন্ড আড্ডায়। এদের আড্ডায় আমি ছিলাম কমন ক্যাডেট। 😉
আমি সিনিয়র ক্যাডেট দের বেশ ডরাইতাম। এরা এত সিনিয়র ছিলেন যে আর কি বলবো? তো আমার ভাব হইল গিয়া কিছু জুনিয়র বিচ্ছু গো লগে। এই গুলারে বাচ্চা থেকে বাচ্চু বলে ডাকতাম। এই বাচ্চু গুলা প্রায় প্রত্যেক দিন ইউনিভার্সিটি, বুয়েট শেষ করেই চলে আসতো এখানে। তারপর এক ফাঁকে ভাবি চা খাওয়াও বলে ঢুকে পড়তো।
আমিও ওদের আশায় অপেক্ষা করে থাকতাম। ওরা মানেই তো আড্ডা। আর এদের মানে সব ক্যাডেট দের আড্ডায় ঘুরে ফিরে একবার ক্যাডেট কলেজের কথা আসবেই। তাই শুধু ক্যাডেট দেখতে দেখতে না ক্যাডেট কলেজের কথা শুনতে শুনতে এক্কেরে অন্ধ হাফেজ বইনা গেলাম।
এদের আবার নানান রকমের ভাগ আছিল, কেউ কেউ ছিল হাউস মেট, কেউ আবার দুজন একসঙ্গে একই বিছানা শেয়ার করতো। কারও কারও নানান পদবী ছিল। কেউ প্রথম ক্যাডেট ছিল।
আর একটা মজার ব্যাপার হল ক্যাডেট দের চেনার সহজ উপায় হল নাম্বার। যেমন অমুক ব্যাচের ১১৭৪ বল্লেই যে কেউ উদ্ধার করতে পারবে সে কে?
আজকে ইতি টানার আগে, আরেকটু বলি– এক বাচ্চু ছিল, আউলা টাইপের কবি কবি চেহারা। সারাক্ষণ ভাবের জগতে থাকতো। হের লগে ছন্নছাড়া পেন্সিলের আলো আঁধারী চেহারার বেশ মিল পাই।
সেইটা একবার রাত তিনটায় দরজায় নক করলো। আমরা তো পুরা ভ্যাবাচ্যাকা এত রাতে কে? পরে দরজা খুলে দেখি, বাচ্চু কাচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে। সিনেমা দেখে বেশী রাত হয়ে গেছে। হলেও যেতে পারছে না- তিনতলার অফিস ও বন্ধ। এত রাতে কই যাবে?
একদিন এক বন্ধু নিয়ে হাজির—- ভাবি বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে,খিচুড়ি খাব।
আমার আরও কিছু আদরের বাচ্চু ওরা কেউ আর দেশে নেই। একে তো জীবন ক্যাডেটময়, তারপর সংসার শুরু করে ছিলাম যখন, তখন একই বাড়িতে থাকতাম, আমার বরের এক ক্যাডেট বন্ধু, তার ভাগ্নে। আমার দেবর, তার এক বন্ধু, আমার ছোট ভাই, মামাতো ভাই এবং ওদের এক বন্ধু।
সব মিলিয়ে এক্কেবারে চাঁদের হাট। ওদের মধ্যে আমার খেলা খেলা সংসার। আমার তখনও ডায়নীং টেবিল হয়নি। পুরো মেস বাড়ির ইমেজ।
সবাই পাটি বিছিয়ে বসে আর আমি নিয়ে আসি ভাতের হাঁড়ি। বড় আনন্দের ছিল আমার সেই চড়ুইভাতির সংসার।
চলবে——
১...
ভাবি, খিচুরি খাইতাম মন চায় যে...
২...
ব্লগে স্বাগতম। আরো লেখা চাই কিন্তু।
ভাবি এই লেখা চলতেই হবে।
(লাইফে এই ফেরাস্ট কাউকে ভাবি বললাম 😛 )
তাই ভাবি বুঝতেই পারছেন ব্লগ কিন্তুক দিতেই হবে। 🙂
ai basa ta kothay??? ami kicu din por dhaka asci ... tokon thakar akta jaoyga dorkar
:(( :((
seems to be interesting. are u our vabi...? U didn't you mention the name of the CC .
choto meye ache naki?? 😀
এইভাবে সব ভাবিদের ক্যাডেট বানাইতে হবে। আমিও আমার বিবিকে ক্যাডেট বানানোর চেষ্টায় আছি। সকলের দোয়া প্রার্থী।
বাহলুল ভাই আপনার বাসায় আমার দাওয়াত রইল 😛
ভাবী বাসার ঠিকানাটা জলদি কইয়া ফালান । 🙁 🙁
দুঃখের কথা হইলো আমি জাপানে আর আমার পরিবার বাংলাদেশে।
আন্নেও কি মনবুশো পার্টি? 😀
হু।
ও বলতে ভুলে গেছি। তুমি মনে হয় আমার শ্যালক লাগো। কারন আমার পরিবারের বাড়ি ময়মনসিং। যতদুর মনে পরে, মুহিব্বুল তোমার বাড়িও ময়মনসিং। শ্যালক বললাম জন্য মাইন্ড কইর না। মজা করলাম।
যাউক আমি নাহ!আমার ভইন আপনের হাঁটুর বয়েসি 😀
=))
মেহেদী ভাই, লাইনে দাঁড়ান।ফল ইন ব্রেক করেন কেন মিয়া??আপনেরে সিএইচেম স্টাফ রে দিয়া পাঙ্গা দেওন দরকার 😀
১১৭৪ হইল গিয়া রাহাত ভাইয়ের(গাছ) ক্যাডেট নাম্বার।ফার্স্ট স্টান্ড করছিলেন।আমার ক্যাডেট নাম্বার উনার ৭০০ পরে (১৮৭৪) দেইখা এইটা নিয়া আমি খুব পার্ট নেই।এখন জাপানে আছেন, এই ব্লগের তপু ভাইয়ের সাথে খুব জানাশুনা।
হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ ভাবি-দেখছেন???যা কইছেন সেইটা সত্য 😀
ভাবী, শেষের লাইনটা ভালো লাগল না...কেমন যেন অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে...
আমরা চাই আপনার সংসার যেন সারাজীবন ই চড়ুইভাতি টাইপ থাকে... :party: :party:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
এই লেখাটা সেদিন পড়লাম ফেইসবুকে পাওয়া একটা লিংকে গিয়ে। জটিল্স।
তবে আইডিয়াটা মন্দ না, ক্যাডেটদের স্পাউজরাও মনে হয় ক্যাডেটীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে আলাদা ফোরাম খুলে ফেলতে পারবে। 🙂
www.tareqnurulhasan.com
তাইলে আপনের পরিবার থিকাই সেইটা শুরু করেন B-)
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আমার পরিবার ইতিমধ্যে যাবতীয় ব্লগসাইটের উপর মহা খাপ্পা হয়ে আছে। আমার ২৪ ঘন্টার বিরাট অংশ তাদের দখলে। 😛
তাছাড়া ওরে এইখানে ডাইকা আনা নিরাপদ হবে না, কামরুল আমার কুকীর্তি সব ফাঁস করে দিবে। 😕 :grr:
www.tareqnurulhasan.com
কুকীর্তি থাকলে সেইটা এমনিতেই ফাঁস হবে। তারচে নিজে থিকা স্বীকার করেন। ইহকাল পরকালে অশেষ সওয়াবের ভাগীদার হউন।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
কি কস এইগুলি তারেক? আমি কুকীর্তি সব ফাঁস করতে যামু কোন দুক্কে? কুকীর্তি কি তোর একলার, সবই তো যৌথপ্রচেষ্টা।
আর সব কিছু বইলা দিলেও আমরা যে সাইকেল নিয়া ঘুইরা বেরাইতাম আর মেয়েদের সাথে টাঙ্কি মারতাম এইটা তো মাইরা ফেললেও কমু না।
yes, amio kichudin age porchilam somewherein.. blog e. jotil 1 ta lekha.
দোস্ত তারেক বাকী আছে কিছু ফাঁস করার...।ভালয় ভালয় নিজ থেকে লিখে ফেলেন.........।
ভাবির লিখাটা Blog এ একটা নতুন মাত্রা যোগ করলো....ধন্যবাদ ভাবি.. 🙂
চরম লেখা...পুরা :gulli: ...আমিও চাঁদের হাটে যোগ দিতে চাই 🙁 ...বাসার ঠিকানাটা যোগ করে দেন ভাবি...
সামিয়া আপু ফাঁকিবাজ হয়ে গেছ।ব্লগে দেখি না কেন? x-(
ক্যাডেট মাত্রই ফাঁকিবাজ ভাই :shy: :shy:
ভাবী একটা মিস হয়ে গেল আপনার লেখাটা দেশে থাকতে পড়লাম না নইলে আমারো তো খিচুড়ী খাইবার মন চায়।
সিসিবিতে এইরকম হাফ ক্যাডেট আরো আসুক। বেশ মজা পাইছি। এই প্রথম কেউ কইল ক্যাডেটদের ক্যাডেটীয় কথায় বিরক্ত হয়না। আমার চারপাশে এইধরণের লোকই তো বেশি থাকা দরকার।
সামিয়া আপু দেখি খালি কমেন্ট করে লেখা কি আসে না নাকি। তোমার সাথে দেখা হইলনা দেশে গিয়ে আফসোস।
মাশরুফ আমি কিন্তু রাহাত ভাইরে কইয়া দিমু তুই জানি তারে কি কইছস।
তপু ভাই,ভাবছিলাম ঈদের ছুটিতে আপনেরে বাসায় আইনা আমার ৪ খালার লগে পরিচয় করায় দিমু, তাইলে ৭ দিনের মইধ্যে পাত্রী এক্কেবারে সিউর শট-উনারা পাখি ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী।কেম্নে কি, গেলেন গিয়া ফাঁকি দিয়া জাপানে,চিঙ্কুগো লগে মাস্তি করতে।বুঝি বুঝি, সবই যৈবনের দুষ।
ঈদের দিনেও সিসিবি আমারে ছাড়েনা।ঈদ মোবারক!
অফ টপিকঃঈদের লগে কলেজের কুন জিনিসটার মিল দেওন যায় কন ছাই দেখি? ;))
আমি তখন সমানে ব্লগ পড়তেছিলাম আর কমেন্ট করতাছি কেউ আমার কমেন্টের উপর কিছু লিখছে কিনা খেয়াল করিনা। অনেক লেখা না পড়া রয়ে গেছে।
ঈদের লগে কলেজের স্পোর্টস ফাইনাল ডে অথবা আর চান রাতের সাথে টার্ম এন্ড রাতের মিল দেওয়া যায়না?
হ্যাঁ!!!!!!!! ;))
ভাবী পরের পর্ব আসবে কবে?? (যদিও আমি পড়ে ফেলসি 😛 )
ভাবী,
আপনার এই লেখাটি আমি সামহোয়্যার ইন ব্লগ এ পড়েছিলাম। অত্যন্ত ভালো লেগেছিলীই ভেবে যে, এরকম একজন এক্স-ননক্যাডেট (কারণ, আপনার ভাষ্যমতে আপনি এখন অলরেডি হাফ ক্যাডেট) কত গর্ব করে তার হাফ ক্যাডেট হয়ে ওঠার কাহিনী বর্ণনা করেছেন। সবার সামনে ক্যাডেটদের অত্যন্ত মূল্যবান কিছু অনুভূতি তুলে ধরেছেন।
সামহোয়্যার ইন ব্লগেও বলেছিলাম...আজও বলছি..."আপনার চাঁদের হাটে যেন কোনদিন জ্যোৎন্সার অভাব না হয়।"
অনেক ভালো লাগলো লেখাটি।
অপেক্ষায় থাকলাম আপনার পরবর্তী লেখার...।
আল্লাহ আপনার সংসারের মঙ্গল করুক।
সা.ইনে পুরোটাই পড়ে ফেলসিলাম আগে [মুহাম্মদ সম্ভবতঃ লিন্কটা দিছিল]
দারুন লেখা। বাকি পর্বগুলাও তাড়াতাড়ি এখানে দিয়ে দেন ভাবী। :clap: :clap:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!