মা!

সালটা ঠিক মনে নাই।

আমি তখন ক্যাডেট কলেজে। আন্ত হাউস উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কে-কি বক্তৃতা দিলো মনে নাই। তবে একটা দৃশ্য এখনো ভুলতে পারিনা। শেরে-বাংলা হাউজ এর Saif আসলো বক্তৃতা দিতে, ওর জন্য নির্ধারিত টপিকঃ “আমার মা”।

প্রস্তুতি সময় শেষে সে মঞ্চে এসে তার বক্তৃতা শুরু করলো। ২০-কি ২৫ সেকেন্ড পরে সে থেমে গেল, আর বলার কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা। যতদূর মনে পড়ে, সেইটা ওর প্রথম মঞ্চ প্রতিযোগিতা, আর ছেলেটা মাত্র সেভেন-কি এইটে পড়ে।

যদি স্মৃতি আমার সাথে প্রতারণা না করে থাকে, যতখানি মনে পড়ে মাত্র ২০-২৫ সেকেন্ডে সে যে কথা বললো তারও একটা অংশ জুড়ে ছিল একটা বাক্য, আমি নিশ্চিত আমাদের সবাইকে “মা” নিয়ে রচনা লিখতে দিলে বা বলতে দিলে আমরা প্রথম কয়েক বাক্যের মধ্যে সেই বাক্যটা আমাদের সবার রচনায় বা কথায় থাকবে। সেটা হলোঃ

” জ্বর হলে , মা আমার মাথায় পানি ঢেলে দেন, সারারাত আমার পাশে জেগে থাকেন “।

অন্তত আমার ক্ষেত্রে এই ঘটনা এখনো সত্য। বাকিদের কথা জানিনা।

ছোট থেকে এখন পর্যন্ত আমি বাসার বাহিরে কোথাও গেলে, আম্মুর একটা প্রশ্ন করবেনই। সেইটা হইলোঃ কি খাওয়া-দাওয়া করলা?? প্রশ্নটা খেয়াল করেন, “খাইসো নাকি?” প্রশ্ন এইটা না, মায়েরা সবসময় জানতে চান, কি দিয়ে খাইলাম। এখন আর বিরক্ত হইনা, কারণ, এখন বুঝি কেন তিনি এই প্রশ্ন করতেন।

আম্মু আমার কাছে একটা আশ্রয়স্থল। চরম দুঃসময় এর কথা জীবনে এখন পর্যন্ত যদি বলি, তাইলে পরীক্ষায় কিছু খারাপ রেজাল্ট ছাড়া তেমন দুঃসময় এখন পর্যন্ত আসে নাই। তবে এখন পর্যন্ত যখনই রেজাল্ট নিয়ে খারাপ কোন সংবাদ আম্মুকে জানাইসি, আম্মুর উত্তর একটাইঃ “ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। ব্যাপার না বাবা, পরের বার ভালো করবা। ” এই হইলো আমার আম্মু।

পৃথিবীর সব “মা”-ই তার সন্তানের কাছে শ্রেষ্ঠ মা, আমার কাছেও তাই। পৃথিবীর সব মা-কে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

মা দিবস কে আমরা শুধু ফেসবুক স্ট্যাটাস, প্রোফাইল পিক আর কাভার পিক আপ্লোড এর মধ্যে সীমাবদ্ধ যেন না রাখি। মহান আল্লাহ’তালার কাছে আমরা হাত তুলে তাদের জন্যে দোয়া টুকু করি। পবিত্র কোরান শরীফের একটি আয়াত যেন ভুলে না যাইঃ

“তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।

তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা বনী-ইসরাইল, আয়াত ২৩ ও ২৪)

১,৩২৭ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “মা!”

  1. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    "শেরে-বাংলা হাউজ এর Saif আসলো বক্তৃতা দিতে" - এটুকু পড়ে একটু 'কনফিউজড' হয়ে গেলাম। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় নাট্যকার রবিউল ইসলাম আমার সাথে শেরে-বাংলা হলে থাকতো এমন কি এর আগে তার একটা প্রকাশিত নাটকে আমার নাম ব্যবহার করেছিল। কিন্তু আমিতো 'ক্যাডেট কলেজ ব্লগ' দেখছিলাম। আর তা ছাড়া 'মা' তো আমার লেখা। অনেকদিন হয়ে গেছে এর পর আর লেখা হয়নি। শেরে-বাংলা হলে আমি অনেক নির্ধারিত বক্তৃতা দিয়েছি এমনকি পরপর তিন বছর শেরে-বাংলা হলে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় 'চ্যাম্পিয়ন' ছিলাম আমি।

    ঘড়িতে দেখলাম প্রায় মধ্য রাত। ঘুম ঘুম ভাব। এবার বুঝলাম এত মিল থাকা সত্যেও কি করে যেন আমি ৪৫ বছর আগের ঘটনার সাথে মিশিয়ে ফেলেছি। লেখাটা ভাল হয়েছে। মায়ের উপরে লেখা কখনো খারাপ হয় না। কিন্তু এতদিন পার হয়ে গেল কবে? ... (সম্পাদিত)

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।