ছন্নছাড়া-র ছন্নচিন্তার সময়লিপি

জাপানে কয়েকদিন পরপর যেন কিসের সব ছুটির দিন থাকে। কিসের ছুটি তা জানার ইচ্ছাটাও জাগে না অনেক সময়। ভাবি ছুটি পাইছি আর কি দরকার বাকিসব জানার। আজও সেরকম একটা ছুটির দিন। এক্সাম এর মাঝে ছুটি পড়ছে ,এতে আরো বেশি খুশি। একবার ক্যালেন্ডার খানার দিকে তাকাইলাম। দেখতে ছুটিটা কিসের। কানজিতে যা লেখা আছে তার মানেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর ইচ্ছে করল না। নিজেকে আগের মতোই বুঝালাম ,“এতো মাথা ঘামায়ে কি হবে,ছুটি পাইছোস মজা নে” ।

বেশিরভাগ ছুটির দিনগুলাতে পাশের একটা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে আসি বসে বসে টাইম পাস করতে। ছোটখাট পার্টটাইম টাইপের বলা যায়। এরকম পার্টটাইম কেউ করে কিনা জানি না। এক বস-এর চেয়ারে বসে থাকি। কালেভদ্রে যদি কখনো ফোনটোন আসে তা রিসিভ করা আর কেউ আসলে তারে একটু হাই হ্যালো করা ছাড়া কোন কাজ নেই। বাকিটা নিজের মতো। সামনে নেট সমেত কম্পিউটার একটা আমার জন্যে। ফেসবুক থেকে সিসিবি, সিসিবি থেকে ফেসবুক, সেখান থেকে আবার ইয়াহু মেসেঞ্জার, কেউ অনলাইন থাকলে তার সাথে কিছুক্ষন সুখ দুঃখের কথা বলেই কেটে যায় ছয় ছয়টা ঘন্টা। এখানে আসার সময় ব্যাগের মধ্যে খুব যতনে কিছু বই আর নোট ঢুকায়ে নিয়ে আসি পড়ব বলে। কিন্তু খুব কম দিনেই ব্যাগ থেকে ওদের বের করেছি। বের করলেও ৩০ মিনিট কখনো পড়েছি কিনা মনে পড়ে না।

আজও নিয়ে আসছি সাথে করে দুইটা বই আর তাদের নোট। কাল আর পরশু দুইটা দুইটা করে পরীক্ষা আছে। একটুও প্রস্তুতি নেই বলে খুব ইচ্ছে ছিল পড়ার। কিন্তু বের করা হয়নি এখনও। মাথাটা একটু ব্যাথা করছে। রাতে ঘুমটা সুবিধার হয়নি। তাই পড়তেও ইচ্ছে করছে না। বারবার একই কাজ রিপিট করে যাচ্ছি। ফেসবুক থেকে সিসিবি,সিসিবি থেকে ফেসবুক,সেখান থেকে আবার ইয়াহু মেসেঞ্জার।

পরশু পরীক্ষা শেষ। তার পরেরদিন ১৪ তারিখ। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ। টাইমিংটা আপাত দৃষ্টিতে খুউবি ভাল। কিন্তু আমার জায়গায় আমি বলে এই ভাল টাইমিং এর আপাতত কোন আলাদা মূল্য নেই। তবে একদম যে নেই তা বললে হয়তোবা মিথ্যেই বলা হবে। তা না হলে তো আর অন্তত এভাবে ছোয়া দিত না। এবারো হয়তো কয়েকটা চেনামুখ বারবার খুচিয়ে খুচিয়ে খেপানোর চেষ্টা করবে। বলবে কেমন কাটল আমার দিনটা। হয়তোবা আগের মতোই মুচকি হেসে বলব,“খারাপ না,প্রতিদিন যেমন যায়!!”। তারপরেও তারা সন্দেহ করবে। সন্দেহে পড়ে যাই আমিও।

মাথা ব্যাথাটা এখনও কমেনি। সকালে আসার সময় লাঞ্চবক্স বানায়ে নিয়ে আসার সময় ছিল না। তড়িঘড়ি করে দুইটা আপেল ব্যাগে ঢুকিয়ে দৌড় দিয়েছিলাম। আশেপাশে কনভেনি বা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর নেই বলে ওটা দিয়েই আজ লাঞ্চ সারতে হবে। আপেলে নাকি অনেক ক্যালোরি। সমস্যা ততোটা হয়তোবা হবে না। সমস্যা না হলেই ভাল। আর সমস্যা হলেই বা কি! ব্যাচেলরের আবার খাদ্যবিলাস কিসের?

আরও বসে থাকতে হবে আড়াই ঘন্টা মতো। আশেপাশে কেউ নেই। একটু দূরের পাবলিক প্লেসটাতে আমার বয়সেরই কিছু জাপানিজ ছেলেমেয়ে সেলফ স্টাডি করছে। প্রতিদিনই করে। বেশিরভাগ দিনই দূর থেকে দেখে যাই। ওরাও দেখে, আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়। আমার মনোযোগ আসে না কিছুতেই। আবার সেই ঘুর্ণনচক্র। ফেসবুক থেকে সিসিবি,সিসিবি থেকে ফেসবুক,সেখান থেকে আবার ইয়াহু মেসেঞ্জার।

৪১ টি মন্তব্য : “ছন্নছাড়া-র ছন্নচিন্তার সময়লিপি”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    "জাপানে কয়েকদিন পরপর যেন কিসের সব ছুটির দিন থাকে।"-

    ইস! খুব মিস করি। মাঝে মাঝে মনে হয় সেইসব ছুটি'র দিন গুলো বুঝি একেবারেই হারিয়ে গেছে।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. রহমান (৯২-৯৮)
    আপেলে নাকি অনেক ক্যালোরি

    শরিফ, আমাদের এখানে ডাক্তাররা বলেন আপেল, শসা আর সবুজ শাক সবজিতে নাকি নেগেটিভ ক্যালরি, অর্থাৎ এই ফল বা সবজি গুলোর মধ্যে যে পরিমান ক্যালরি বিদ্যমান, তার চেয়ে বেশি পরিমান ক্যালরি খরচ হয় এসব ডাইজেশন বা হজমের প্রক্রিয়াতে (যাকে আমরা বার্ন প্রসেস বলি)। তাই আমাদের মধ্যে যারা ওভারওয়েট সমস্যায় বেশি ভুগে তাদেরকে ডাক্তাররা বেশি করে এসব খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারন এসব খাবার খেলে ক্ষুধা দূর হয় ঠিকই কিন্তু ওয়েট গেইন করার ভয় থাকে কম।

    আমি ডাক্তার নই। আমাদের সিসিবির ডাক্তারদের এ বিষয়ে মতামত জানতে চাই।

    লেখাটা ভাল লেগেছে। আরো নিয়মিত লিখবা

    জবাব দিন
  3. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    একটু দূরের পাবলিক প্লেসটাতে আমার বয়সেরই কিছু জাপানিজ ...মেয়ে সেলফ স্টাডি করছে।

    ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে...শরীফ পার্টটাইমে গেলেও চোখ জায়গামতই যায় :grr:

    লেখাটা অনেক ভালো হইসে...পড়তে আরাম লাগে...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আমার এতো ভুলোমন ক্যান? চেক কইরা দেখলাম তোমারে স্বাগতম জানােনা হয় নাই। ১০টা :frontroll: শুরু করো। এই কে আছো, সাকেব। দেখো তো কোনো ফাঁকিঝুকি যাতে না দেয়। 😀 😀 😀


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  5. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)
    আমার মনোযোগ আসে না কিছুতেই। আবার সেই ঘুর্ণনচক্র। ফেসবুক থেকে সিসিবি,সিসিবি থেকে ফেসবুক,সেখান থেকে আবার ইয়াহু মেসেঞ্জার।

    সবাই ইদানীং আমার মনের কথা বলছে কেন বুঝলাম না!


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।