মাগো, আমরা কাঁদিনা; বৃষ্টি ঝড়াই।
ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরে ঝাঁক ঝাঁক বুলেট হয়ে।
মাথার উপর তপ্ত আকাশটা বারুদের রংয়ে মোড়া।
কাঁধে লাগে রক্তচোষার লোলুপ থাবার ঝাপটা।
ঝর ঝর ঝরে শ্রান্তির ঘাম, তবু মাগো;
আমরা ক্লান্ত নই, চোখ পোড়ে আগুনে।
সেই গনগনে আগুনের পানে আমি চেয়ে থাকি-
অশ্রুভেজা ভীরুতার আবেগী জল নিয়ে নয়,
অক্ষম ঘৃনার বিলাসিতা নিয়ে নয়;
দাবানলের মত প্রতিবাদী অজস্র বজ্রপাত নিয়ে স্থির দৃষ্টিতে।
আমি মিশতে চাই আমরায়, আমরা সার বেধে জাগিয়ে তুলি-
এক একটা আমি।
নামহীন, পরিচয়হীন, জীর্ণ ক্লেদে ভরা যুগযুগান্তরের মিথ্যে গৌরবহীন-
মানুষ!!
নানা পথ, নানা মত। পথে-মতে সংঘাত!
মানুষের পাজর পুড়িয়ে করে অগ্নিস্নান।
দিনে দিনে আরো পুষ্ট হয়, হিংস্র হয়।
ঝেড়ে ফেলে লজ্জার শেষ আবরনটুকু, মানুষ সাজে।
আমরা নিজ হাতে ছিন্ন করেছি বহুরঙ্গা সেই প্রতারণা;
অনুমিত কামে, পরিমিত সংযমে পূর্ণ সেই সংস্কৃতি।
সে দানবেরই হোক, হোক দেবতার,
হোক সৃষ্টিকর্তার, হোক পিতৃদেবের।
আমাদের নির্ভুল আচড়ে অসহায় উড়েছে,
পরলৌকিক দেশপ্রেমের ঝান্ডা!!
ভালতো মা আমিও বাসিনি তোমায়,
ভালতো মাগো, বাসতে পারিনি তোমায়।
তবু ওরা ভাল আছে, ভালবেসেই ভাল আছে-
কিতাবের ছায়ায় নিভৃতে গড়ে গেছে সুরক্ষিত পাপের প্রাসাদ।
সেই মহলের ঝরনায় সুর হয় সুললিত কাব্য, যাবতীয় মিথ্যে মিথে ভরা।
অসহ্য প্রতারনায় মিথ্যের বাগানে অজস্র ফুল ফোটে রোজ!
প্রবঞ্চিত বিশ্বাসীর অশ্রু হয় জল, রক্ত হয় সার।
আমরা কালি চিনি নি মা, কালিতে লিখতে শিখি নি মা;
বুকের রক্তে ভিজেছে সস্তা প্যাপিরাস,
মস্তিষ্ক ভেদ করা বুলেট বসিয়েছি জ্যোতিচিহ্নের মত!
মাগো তোমায় বলতে আসিনি আজও।
তোমায় যে মা বলতে পারিনি কোনদিন।
পিশাচের বিষ নিঃশ্বাসে পৃথিবীটা রিক্ত হচ্ছে প্রতিদিন।
যদি মা অস্ত্র ধরি, আমি খুনী!
যদি মা আগুন জ্বালি, আমি সন্ত্রাসী!
যদি মা সত্য বলি, আমি মুর্তাদ!
দেখো মা, একদিন তোমার ঈশ্বরকে সংগে নিয়েই যুদ্ধে যাব!
জ্বালাব আগুন মহাকাল জুড়ে!
আমাদের প্রেম গেছে, দেশ গেছে, গেছে মা-বোন।
আমাদের ভাই গেছে, বন্ধু গেছে, ফেরেনি বাবাও!
আমাদের অন্ন গেছে, ক্ষুধা গেছে, গেছে একান্ত সম্বল!
হাতের তেলোয় পিছলে গেছে সম্ভ্রম, শ্রদ্ধা, সম্মান!
অতঃপর মুখোমুখি হোক যাবতীয় মিথ্যে প্রার্থনা সভা,
বাজুক প্রলয়ের শিঙ্গা!
যদি মা ওদের পুঁতি-রক্তে হাত ভিজিয়ে ফিরতে পারি,
দু’মুঠো ভাত দিও মেখে আমার পাতে।
না হয় এই যে চলেছি মা, আর হচ্ছে না দেখা তোমার সাথে!!
মন্তব্য করুন