এবারের ঈদ ছিল আমার জন্য ঘুমানোর ঈদ। চাকরীর বিড়ম্বনায় ভোর পাঁচটায় দিন শুরু করে তারপর প্রায় পুরোদিনই ঘুমিয়ে কেটেছে। ঈদের পরের দিন বেশ অপ্রত্যাশিতভাবে ছুটি পেয়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে ছুটলাম বাস কাউন্টারে। উদ্দেশ্য প্রথম যে বাস পাবো সেটা চড়েই ঢাকায় যাত্রা। ভাগ্যে মিললো এমন এক বাস যার সড়ক পথেই উড়িয়ে নিয়ে যাবার বিশেষ সুনাম(?) আছে। শেষবার এই বাসে চড়েছিলাম প্রায় ১০ বছর আগে, সেবারো ঈদের পরের দিন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌছে গিয়েছিল ৪ ঘণ্টারও কম সময়ে! দুরুদুরু বুকে বাসে উঠে বসে ড্রাইভারের দিকে নজর রাখা শুরু করলাম, আমাকে কিছুটা অবাক করে দিয়ে বেশ নিয়ন্ত্রিতভাবেই চালাতে থাকলো সে, আধা ঘন্টা পরে মোটামোটি নিশ্চিত হয়ে কানে হেডফোন গুজে মোবাইলে বই পড়ায় মনযোগ দিলাম। বেশ সন্তুষ্ট মনে কুমিল্লায় যাত্রা বিরতিতে এসে নামলাম। কিন্তু সে সময় বাকি যাত্রীদের বেশিরভাগই দেখি বেশ অসন্তুষ্ট। তারা বাসের গাইড আর ড্রাইভারকে দোষারোপ করছে এই ফাকা রাস্তায় কুমিল্লা পৌছাতে এত সময় নেওয়ার জন্য! সাথে রেফারেন্স হিসেবে কোন কোন বাস আমাদের বাসকে ওভারটেক করেছে তার বিবরন। যাত্রা বিরতি শেষে আবারো চিন্তা শুরু, ড্রাইভার এই অভিযোগে কিভাবে রিএক্ট করে। কিছুক্ষন চলার পর আবার নিশ্চিত হলাম, সে আগের মতই চালাচ্ছে। ঐ যাত্রীদের অভিযোগ অনুযায়ী আস্তে চালিয়েও ৫ ঘন্টায় ঢাকায় পৌছে গেলাম। বছরের পর বছর ধরে আমাদেরকে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি শেখানোর চেষ্টা করেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
সরাসরি কোন অভিশাপ পাবার কোন ঘটনা আমার জীবনে আছে বলে মনে পড়ে না। এবার সে অভিজ্ঞতা হলো। চার বছরের পুরোনো বউকে নিয়ে বসে আছি আমাদের নিয়মিত জায়গা ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে। এক পিচ্চি এসে হাত বাড়ালো টাকা চেয়ে। ওকে চলে যেতে বলায় মুখের উপর বলে বসলো বিয়ে হবে না! হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারলাম না। পরে ভাবলাম এটা ভাল বিজনেস স্ট্রাটেজি। কোন প্রেমিক প্রেমিকাকে এই কথা শুনানোর পরেও টাকা না দিলে প্রেমিকা তার পাশের প্রেমিককে বলে বসতে পারে, “তুমি চাওনা আমাদের বিয়ে হোক?” তখন প্রেমিক মহোদয় টাকা দিতে বাধ্য!
আমি সাধারনত সচেতনভাবে সকল দেশি টিভি চ্যানেলের সংবাদ এড়িয়ে চলি। এবার ছুটিতে একদিন সেটা সম্ভব হলো না, অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। ঈদের ছুটিতে খবরের অভাব বলেই কি না জানি না, দেশের খবরের প্রায় পুরোটা জুড়েই দূর্ঘটনা, খুন, অপমৃত্যু আর বিভিন্ন অপরাধের খবর। টানা ছয়টা রিপোর্ট দেখলাম এগুলো নিয়ে। শুধু খবরে না, ঈদের অনুষ্ঠান দেখার সময় প্রায় প্রতিটি চ্যানেলের নিচের নিউজ টিকারেই ঘুরে ফিরে একই সব নেগেটিভ খবর। আমাদের সংবাদপত্রগুলোও সাধারনত ভর্তি থাকে এসবে। আমি এই ধরনের সংবাদ প্রচারের কোন ভাল বা কার্যকরী দিক খুঁজে পাই না। সকলের মাথায় এসব নেগেটিভ খবর ঢুকিয়ে মানষিক অশান্তি তৈরী আর এক প্রকার মানষিক অসুস্থতা সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন কিছু কি হচ্ছে? জ্ঞানী ব্যক্তিরা হয়ত ভাল বলতে পারবেন কিন্তু আমি অন্য কিছু পাই না।
ছুটি শেষ করে আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে বাস ভ্রমন। ঢাকা ছাড়ার কিছুক্ষনের মাঝেই হঠাৎ পিছনে শুনি পিছনে কেউ একজন বেশ উচ্চস্বরে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মোবাইলে কথা বলা শুরু করলো। মেজাজটা বেশ খারাপই হলো, লম্বা একটা ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তার বারোটা বাজাচ্ছে। আমার মত বাকিরাও ওই যাত্রীর ‘সিভিক সেন্সের’ অভাব দেখে বিরক্ত চোখে বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে। নিজে অনেক কষ্টে উঠে গিয়ে তাকে কিছু বলা থেকে থামালাম। চট্টগ্রামের ভাষা কিছুই না জানায় প্রথমে বুঝতে পারিনি কি কথা হচ্ছে, একটু পরে এম্বুলেন্স, হাসপাতাল, এবি পজেটিভ শব্দগুলো শুনে বুঝলাম তার নিকটাত্মীয় কেউ গুরুতর অসুস্থ। এরপর থেকে পুরো জার্নিটাই কেমন একটা অপরাধবোধে ভুগেছি। চট্টগ্রাম পৌছে তাকে জিজ্ঞেষ করে যখন জানতে পারলাম বিপদ মোটামোটি কেটেছে তখন কিছুটা স্বস্তি পেলাম। পুরোন একটা শিক্ষার কথা মনে পড়ে গেল, “Do not judge anyone before you heard their side of the story”
এই আবোল তাবোল বক বক শেষ করছি গান দিয়ে। শাহানা বাজপায়ি আমার খুব প্রিয় একজন শিল্পী। অনেকদিন পর ওর নতুন এলবাম আর গান পেলাম, এলবামের নাম ‘শিকড়’। টাইটেল ট্রাকটা শুনে দেখুন আপাতত, বাকিগুলোও ইউটিউবে পাবেন। অনুরোধ একটাই, গান ভাল লাগলে আর সুযোগ থাকলে এলবামটি কিনে শুনুন।
শুভেচ্ছা!
চার বছরের পুরোনো বউ... 😛
বউকে চির নতুন হিসেবে ট্রিট করবা, সারা জীবন হেসে খেলে কাটবে... 🙂
লেখা আর গান দুটোই চমৎকার!
বউ কি কখনো পুরোনো হয় আপু, ঐটা জাস্ট বিয়ে না হওয়ার অভিশাপের সাথে তুলনা করার জন্য বলা, বউ তো প্রতিদিনই নতুন 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
বাসের আগের ড্রাইভারের গতিতে ব্লগ শুরু করলেন, আর শেষ করলেন। 🙁 আরেকটু লম্বা করেন ভাই 🙂
আপনার ক্ষেত্রে হয়তো জাস্টিফিকেশন ছিল মোবাইলে কথা বলার। কিন্তু আমি প্রায়শই এমন কাউকে খুঁজে পাই, জানু সোনা ছাড়া কথাই থাকে না। আবার কে কয়বার কোথায় গিয়েছে, কে কত বড়লোক এগুলোর শোঅফ। একবার একজনকে লোকাল বাসে পেয়েছিলাম। সে বাসের ৫ টাকার ভাড়া ৩ টাকা দিয়ে ব্যাঙ্ককের টিকেটের বুকিং কবে দিবে সেটা নিয়ে কথা বলছে। মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, হারামজাদা এইটা বাস, তোর বেডরুম না।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
সে বাসের ৫ টাকার ভাড়া ৩ টাকা দিয়ে ব্যাঙ্ককের টিকেটের বুকিং কবে দিবে সেটা নিয়ে কথা বলছে..... 😛
বিনা পয়সায় এমন বিনোদন আর কোথায় পাবে বল? আমাদের এখানে লোকজন শাটল বাসে ওঠেই মুখের ওপর একখানা বই মেলে ধরেন, কানে হেড ফোন লাগানো যথারীতি... জগত সংসার রসাতলে যাক, গান বাজবেই কানে!
যষ্মিন দেশে যদাচার কিন্তু গত আড়াই বছরে ব্যাপারটা ভালই রপ্ত করেছি। গাড়িতে বই পড়তে পারি না (শুধু ট্রেনে) তা বাদে গান বাজবেই কানে! 😀 😀 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
বেশি লেখার মাল মশলা থাকে না বলে অনেক কিছুই শেষ পর্যন্ত লেখা হয়নি তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতটুকু মাথায় আসবে তাই লিখে ফেলবো, আর এই অনুব্লগ আন্দোলনের যুগে এইটা তো বিশাল লেখা 😛
বাসে এই মোবাইল পার্টি প্রায় সবসময়ই বিরক্তিকর হয় তবে দু এক সময় ভাল বিনোদনও পাওয়া যায়। 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
গানটা ভাল লাগছে । এ্যালবাম কিন্নালবাম । বাসটা কি এস আলম ?
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।
এস আলম এ চড়ার মত কলিজা হয় নাই স্যার 😛 হানিফেই এই অবস্থা 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
কি বলেন। হানিফের কাছে কেউ কিছু না। বাঙলার ফরমুলা ওয়ান বলতে একমাত্র সার্ভিস হানিফ এন্টারপ্রাইজ। মামা বলেছিল ঢাকা-সিলেট রুটে তাদের মাঝে একটা ইনসাইড জোক আছে। "বাঁচলে সাড়ে চার (ঘন্টায়) নাইলে নাই।"
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ঢাকা সিলেট রোড হলো বাংলার ফর্মুলা ওয়ান ট্রাক, চিটাগং রুটে টেনে পোসাইতে পারে না, রাস্তা সাপোর্ট করে না। বছর দুয়েক আগে কিছুদিন নিয়মিত যাতায়াত করা হয়েছে, তখন উড়ালপঙ্খি ছিল এনা পরিবহন
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
এইটা ঠিক। নরসিংদী থেইকা যেই উড়ালপঙ্খী রাস্তা দেখলেই মনে চায় গ্যাস প্যাডেল ডাবায় দেই! :grr: :grr: :grr:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
কে? স্কাই নাকি?? :-B :-B :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
দুই দিন পরে গেলে আপনাদের সাথেই আসতে পারতাম জুনাদা 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:clap: :clap: :clap:
ভালো লেখা।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধন্যবাদ রাজীব ভাই 😀
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমার দৌড় ৮৫ মাইল।
ছোট্ট গাড়ি।
এর উপরে উঠতে চাই না।
ইউ কে তে ন্যাশনাল স্পিড লিমিট ৭০ মাইল।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
দেশে সবচেয়ে গতিতে চলছি যমুনা ব্রিজের উপরে, আর আফ্রিকায় প্রায়ই উড়তাম, ঢাকা-চিটাগং দূরত্ব পাড়ি দিতাম ৩ ঘন্টার কমে। ভোরে গিয়ে সারাদিন কাজ করে আবার সন্ধ্যায় ফেরত।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমি গাড়ি চালাইতে পারি না। তয় স্নোমোবিল দিয়া টানসি ৯৫মাইল/ঘন্টায়। ফাঁকা লেকে। মজা কাহাকে বলে! :awesome:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
বছরের পর বছর ধরে আমাদেরকে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি শেখানোর চেষ্টা করেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে 🙁 🙁 🙁
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার চেষ্টাই মনে হয় ব্যর্থ হচ্ছে 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভালো আছিল!!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
প্রিন্সিপাল স্যারের ভাল লাগছে 😀
:awesome: :awesome: :awesome:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
হেঃ হেঃ। অভিশাপ ভাল ছিল। নিজেকে ভালবাসিনা বলে এই অবস্থা, কাউকেই আর ভালবাসতে পারি না। বাসের ড্রাইভারদের আর কি দোষ। ঢাকায় পাবলিক বাসে উঠলে প্রথমেই চিন্তা করি আগুন লাগলে কোন দিক দিয়ে ঝাঁপ দেবো। চিন্তা এখানেই থামে না, আগুন লাগলে, পানিতে ডুবলে অথবা এক্সিডেন্ট করলে আলাদা আলাদা পথ চিন্তা করি। ব্যাপারটা সত্য হলেও অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।
নিরাপত্তা জিনিষটা কিভাবে জানি উধাও হয়ে যাচ্ছে 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
দেশের ঈদ না দেখেও বেশ একটা ছবি পেয়ে গেলাম এ সময়ের ।
কষ্ট করে আর দেশে যাওয়া লাগলোনা। 🙁
তোমার এই স্টাইলটা বেশ লাগে আমার।
ধন্যবাদ নূপুর দা 🙂 আমার এবারের ঈদ ছিল একেবারেই ম্যাড়মেড়ে, রঙ্গীন ঈদ করা কেউ লেখাটেখা দিলে আরো ভাল ভাবে পেতে পারতেন 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷