অনেক দিন পরে সত্যিকারের সাপ্তাহিক ছুটি কাটালাম, একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন ছুটি। সময় কাটানোই অনেকটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে নিলাম মুভির ভিতরে। সেই মুভিগুলো নিয়ে হালকা আলাপ নিয়েই এই পোস্ট, কোন রিভিউ নয় স্রেফ দর্শক প্রতিক্রিয়া। আর হ্যাঁ, সম্পূর্ণ স্পয়লার মুক্ত।
দি জাপানিজ ওয়াইফ (The Japanese wife)
পরিচালক অর্পনা সেন এটিকে বলেছেন আধুনিক রূপকথা। সুন্দরবনের এক গ্রামের কাহিনি, সাথে জাপানের কোন এক শহরে। গল্পের নায়ক স্নেহময় চ্যাটার্জী (রাহুল বোস) সে গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলায় বাবা মা হারিয়ে সে বড় হয়েছে মাসির কাছে, তার সাথেই এখনো থাকে সে। ছাত্র অবস্থায় জাপানের মিয়াগি নামের এক মেয়ের সাথে পেন ফ্রেন্ডশিপ হয় এবং তাদের চিঠি দেয়ানেয়া চলতে থাকে। পড়ালেখা শেষ করে স্নেহময় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয় স্থানীয় স্কুলে। এর মাঝে মাসীর ছোটবেলার বান্ধবী তার মেয়ে সন্ধ্যাকে (রাইমা সেন) নিয়ে স্নেহময়দের বাড়িতে বেড়াতে আসে, উদ্দেশ্য সন্ধ্যার সাথে তার বিয়ের আয়োজন। এ সময় স্নেহময় তার মাসিকে জানায় সে বিয়ে করেছে ফেলেছে, তার জাপানী পেনফ্রেন্ড মিয়াগিকে। মিয়াগি একটি আংটি পাঠায় স্নেহময়কে আর স্নেহময় পাঠায় শাখা আর সিঁদুর। তাদের লং ডিসটেন্স দাম্পত্য জীবন চলতে থাকে ১৫ বছর ধরে। এর মাঝে সদ্য বিধবা সন্ধ্যা তার কিশোর ছেলেকে নিয়ে আশ্রয় নেয় স্নেহময়দের বাড়িতে। বাকিটুকু আর না বলি।
এ মুভিটা দেখা মূলত রাহুল বোসের জন্য। প্রথম কোন মুভি দেখেছিলাম মনে নেই তবে প্রথম থেকেই আমি ওর ফ্যান, আর কোন মুভিতেই হতাশ করেনি। জাপানিজ ওয়াইফ ও এর ব্যতিক্রম হয়নি, বরাবরেও মতই দারুন করেছে। তবে সামগ্রিকভাবে পুরো মুভি অতটা ভাল লাগেনি। কাহিনিতে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে, কখনোই সেভাবে সিনেমার গভীরের যেতে দেয়নি, ইমোশনালিও সেভাবে টাচ করেনি, তবে সময় কেটে গিয়েছে। সব মিলিয়ে মোটামোটি লেগেছে।
দি অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যুরো (The Adjustment Bureau)
ডেভিড নরিস (ম্যাট ডেমন) মার্কিন সিনেট নির্বাচনে পুরো সময় এগিয়ে থেকেও শেষ মুহুর্তের এক স্ক্যান্ডালের কারনে শোচনীয় ভাবে হেরে যায়। আর সেদিনই আকস্মিক ভাবে দেখা হয় এলিস সেলাস (এমিলি ব্লান্ট) এর সাথে। কিছুদিন পরে আবারো তাদের দেখা হয় তাদের এক বাসে, সেখানে এলিসের কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে নেয় ডেভিড। কিন্তু এর মাঝে হাজির হয় দি অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যুরোর এজেন্টরা। যাদের কাজ হচ্ছে সবকিছু যাতে ‘ভাগ্য লেখা’ হিসেবে যাতে হয় তা নিশ্চিত করা। তারা সাধারনত মানুষের আড়ালে থাকলেও ঘটনাক্রমে ডেভিডের মুখোমুখি হয়ে যায় এবং তাকে জানানো তাদের প্লান বা ভাগ্য লিখন অনুযায়ী এলিসের সাথে কোনভাবেই তার সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব নয়। এভাবেই কাহিনি এগোতে থাকে, দৈবক্রমে ডেভিড আর এলিসের মাঝে আবারো দেখা হয়। এরপরে ডেভিড একদিকে ভাগ্য লেখা, তা বদলাতে গেলে সম্ভাব্য ভয়ঙ্কর পরিনতি আর সব সময় ছায়ার মত লেগে থাকা অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যুরোর এজেন্টরা। সবকিছু মিলিয়ে ভাল গতিতেই কাহিনি এগিয়ে যায় পরিনতির দিকে।
মুভিটাকে বলা হয়েছে রোমান্টিক থ্রিলার, আমার কাছে ৮০% রোমান্টিক মনে হয়েছে আর ২০% থ্রিলার। ম্যাট ডেমন আর এমিলি ব্লান্ট দুজনকে আলাদা ভাবে আর একত্রে দুভাবেই দারুন লেগেছে। আর পুরো সময়টাই আকর্ষন ধরে রাখতে পেরেছিল।
গুডফেলাস (Goodfellas)
মুভিটা দেখার জন্য সিদ্ধান্ত নেই মূলত এর রেটিং দেখে, IMDB এর তালিকায় ১৫ নম্বরে থাকা মার্টিন স্করসিসের মাফিয়া পরিবার নিয়ে এই মুভি অনেক আশা নিয়ে দেখা শুরু করেছিলাম। সত্যি ঘটনা নিয়ে তৈরী এই মুভির কাহিনী এগিয়েছে হেনরি হিলের ছোট বেলা হতে মাফিয়াদের সাথে বেড়ে ওঠা, এক সময় তাদেরই একজন হয়ে ওঠা আর তার শেষ পরিনতি, পুরো ৩০ বছরের ঘটনা। সত্যি কথা বলতে যত আগ্রহ নিয়ে দেখা শুরু করেছিলাম তার প্রায় কিছুই পূরন হয়নি। কাহিনি বেশি ধীর আর এক ঘেয়ে মনে হয়েছে সময়ে সময়ে। পুরো সময়ে এগিয়েছে একই গতিতে, তেমন কোন সাসপেন্সই নেই। অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য।
আননোন (Unknown)
লিয়াম নিসন এর আরেকটি থ্রিলার, এখানেও সে খুঁজছে। Taken এ মেয়েকে খোঁজার পরে এবার সে খুঁজছে নিজেকেই।মুভির শুরুতে দেখা যায় ডঃ মার্টিন হ্যারিস (লিয়াম নিসন) তার স্ত্রীকে নিয়ে নিয়ে বার্লিনে আসে এক বায়োটেকনোলজি সম্মেলনে। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে এসে ট্যাক্সি থেকে নেমে সে খেয়াল করে তার ব্রিফকেস যার ভিতরে তাদের পাসপোর্ট ছিল সেটি এয়ারপোর্টে ফেলে এসেছে। হোটেলের দরজা থেকেই সে আবার এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, যাবার পথে একসিডেন্ট, ফলাফল ৪ দিনের কোমা। জ্ঞান ফেরার পর ডঃ মার্টিন হ্যারিস নিজের পরিচয় মনে রাখতে পারলেও অনেক স্মৃতি হারিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সে হোটেলটিকে খুঁজে বের করে, তার স্ত্রীর কাছে পৌছাতেও পারে। কিন্তু সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিল চরম এক ধাক্কা। তার স্ত্রী তাকে চিনতে অস্বীকার করে, আর উপস্থিত হয় আরেকজন ডঃ মার্টিন হ্যারিস (এইডান কুইন)। পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স সব কিছুই প্রমান করতে থাকে কুইন ই আসল ডঃ মার্টিন হ্যারিস। এখান থেকে শুরু হয় লিয়াম নিসনের সত্য উদঘাটনের যুদ্ধ।
মুভির প্রায় পুরো সময় ধরেই টান টান উত্তেজনা ছিল, দারুন কিছু টুইস্টও আছে। আর ফিনিশিংটাও বেশ অপ্রত্যাশিত। সব মিলিয়ে থ্রিলার হিসেবে দারুন লেগেছে Unknown।
দি গার্ল হু প্লেইড উইথ ফায়ার (The girl who played with fire)
মিলেনিয়াম ট্রিলজির ২য় মুভি। ( The girl with a dragoon tattoo ১ম) মিলেনিয়াম এর মিকেল ব্লোমকভিস্ট এর কাছে নতুন এক ফ্রি ল্যান্সার সাংবাদিক ডাগ সেভেন্সন আসে সেক্স ট্রাফিকিং আর আন্ডার এজ সেক্সের সম্পর্কে তথ্য নিয়ে বিশেষ করে এর সাথে কিছু রথি মহারথিদের জড়িত থাকার তথ্য নিয়ে। তার গার্লফ্রেন্ড একই বিষয়ের উপরে বই প্রকাশ করে। কিন্তু লেখা পত্রিকায় প্রকাশের আগেই খুন হয় ডাগ আর তার গার্লফ্রেন্ড। এরপরে খুন হয় লিজবেথ সেলেন্ডারের গার্ডিয়ান বারম্যান। তিন খুনের জন্যই লিজবেথকে সন্দেহ করে পুলিশ। অন্য দিকে মিকেল বিশ্বাস করে লিজবেথ নির্দোষ। তা প্রমানের জন্য সে তদন্ত শুরু করে। অন্য দিকে লিজবেথও নিজের মত করে সত্য উদঘাটনে নেমে পড়ে।
ট্রিলজির ২য় পর্বে এসে লিজবেথের অতীতের অনেক তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। এ পর্বের কাহিনিও যথেষ্ঠ থ্রিলিং, সাসপেন্স ও বজায় ছিল। তবে The girl with a dragoon tattoo এর পরে প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল, সে অনুযায়ী পুরোপুরি পূরন করতে পারেনি। সব মিলিয়ে খারাপ না।
মুভিগুলো ভাল লাগা মন্দ লাগা একান্ত আমার ব্যক্তিগত, অন্য কারো এর উল্টোটাও লাগতে পারে। সেটা জানিয়ে যাবার অনুরোধ থাকল।
শুভেচ্ছা।
অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যুরো ছাড়া বাকী চারটা কমন পড়েছে।
"জাপানি বউ" নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়াও আপনার মতো। এটা হয়তো আরেকটু ভালো হতো পারতো।
গুডফেলাস- এইটা আমার বেশ পছন্দের মুভি। শেষটা যদিও হুট করে শেষ করে দেবার মতো হয়েছে। কিন্তু ফিনিশিংটুকু বাদ দিলে আমার ভাল্লাগছে এইটা।
আননোন- এই সিনেমাটার শুরুটা যতটা উত্তেজনাকর, শেষটা কেন জানি ততটাই অসফল মনে হয়েছে। "টেকেন"- অনেক বেশি নজর কেড়েছিল।
দ্যা গার্ল উইথ ড্রাগন ট্যাটু- কেন জানি দ্বিতীয়টার চেয়ে বেশি পছন্দ হইছে।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
হুম, আননোন ফিনিশিং পর্যন্ত ইন্টেনসিটিটা ধরে রাখতে পারেনি। গুডফেলাস সময় নিয়ে আবার দেখব ভাবছি, দেখার সময় হয়ত ঠিক মুডে ছিলাম না 🙂 ট্রিলজর ১মটাই ভাল লেগেছে বেশি, শেষেরটা আছে আছে, এখনো দেখা হয়নি, দেখি কেমন লাগে।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
দুইটা কমন পড়েছে।
জাপানিজ ওয়াইফ আমিও রাহুল বোসের সিনেমা তাই দেখা শুরু করেছিলাম। কিন্তু গল্প এবং বাকি সবকিছু মিলে ধরে রাখতে পারেনি মুভিটা। রাহুল বোসের সাথে একবার সামনাসামনি দেখা হয়েছিল।
গুডফেলাস আমার খুব ভাল লেগেছিল। আমার স্লো মনে হয়নি। এ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যুরো সংগ্রহে আছে, এখনো দেখা হয়নি।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
গুডফেলাস ভাবছি আবার দেখব।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
জাপানি বউটা দেখছি। ফিডব্যাক আপনার মতই।
কিন্তু কিছু কিছু জায়গা ব্যাপক ইমোশনাল...!! হৃদয় ছুঁয়েছে।
নাহ, আমাকে সেভাবে ছুঁতে পারে নাই 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
প্রশ্ন কমন পড়ে নাই একটাও, পড়াশুনা ছাইড়া দিছি ব্যাপক 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
পড়াশুনা ছাইড়াই ভাল করছেন, দুই দিনের দুনিয়া... টাইম লসের টাইম কই 😀
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
তিনটা কমন পড়লো,
আমার কাছে গুড ফেলাস খুব ভালো লেগেছিল 🙂
আননোন এর থেকে টেকেন বেশি ভালো 😀
ভাই জাপানীজ বই এর লিঙ্ক দেয়া যাবে ?? 😕
ডাইরেক্ট ডাউনলোড লিঙ্ক
টরেন্ট লিঙ্ক
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
একটা মাত্র কমন পড়লো। জাপানি বউ কিন্তু আমার কাছে ভালৈ লাগসিলো।
সিসিবির এই দুর্দিনে আপনার মত কান্ডারি না থাকলে কী যে হইতো 🙂
মুভি ব্লগ দেখলে মুহাম্মদকে মিস করি।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
জাপানি বউ আমার কিন্তু খারাপ লাগে নাই, একটু কম ভাল লাগছে এই আর কি। আপাতত ম্যারেড ব্যাচেলর লাইফ পার করতেছি, তাই ব্লগেই পড়ে থাকি 🙂
সিসিবির সব সেলিব্রেটি ব্লগাররাই ডুব দিছে 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷