খেলাধূলার প্রতি আমার আগ্রহ/আকর্ষন সম্পর্কে বলতে গেলে যতোই বলা হবে মনে হয় কম বলা হবে। এমন কোন খেলা নেই যা আমাকে আকর্ষন করে না, ব্যতিক্রম মনে হয় শুধু গলফ। তাও একবার আর কিছু না পেয়ে সারা রাত জেগে ইউএস মাস্টার্স দেখেছিলাম, আর শেষ দিন হওয়ায় বেশ প্রতিদ্বন্দিতা ছিল, ভালই লেগেছিল। এতো কিছুর পরেও সাইক্লিং এর মতো একটা ইভেন্টের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মাবে এটা আমি নিজেও কখনো ভাবেনি। এই ঘটনা ঘটে কোন টুর্ণামেন্ট দেখে নয়, একজন সাইক্লিস্ট সম্পর্কে জেনে, ল্যান্স আর্মস্ট্রং। ক্রীড়াব্যক্তিত্ত্বদের ভিতরে আর্মস্ট্রংই আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। অবসর ভেঙ্গে এবারের ট্যুর ডি ফ্রান্স এ আবার ফিরে এসেছে আমস্ট্রং। এই উপলক্ষ্যে আমার এই স্পোর্টিং আইডলের কথা সবার সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা হলো।
১৯৭১ সালে আমেরিকায় জন্মগ্রহন করা আর্মস্ট্রং এর ক্যারিয়ার অবশ্য শুরু হয়ে ছিল ট্রায়াথলন দিয়ে। সাইক্লিং এ এমেচার হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯১ সালে, ইউএস এমেচার চ্যাম্পিয়নশীপ জয় লাভের মাধ্যমে। পরের বছর অলিম্পিক রোড রেসে ১৪তম হওয়ার পরে প্রোফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু আমস্ট্রং এর। এরপর থেকে সাইক্লিং এ তার সাফল্যের কথা বলতে গেলে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত অনেক জয়ের কথা উল্লেখ করা যায়, তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ৯৯ থেকে ০৫ পর্যন্ত টানা সাতবার সাইক্লিং এর সবচেয়ে সম্মানিত আয়োজন ট্যুর দ্যা ফ্রান্স এ জয়লাভ। আর্মস্ট্রং এর ক্যারিয়ারের সাফল্যের বিস্তারিত পাওয়া যাবে এখানে
তবে এ সমস্ত সাফল্যের কারনে আমস্ট্রং আমাকে প্রভাবিত করেনি, করেছে ব্যক্তি জীবনে তার সাফল্য। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর আমস্ট্রং এর nonseminomatous testicular cancer ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে ক্যান্সার তার এবডোমেন ও ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় টেস্টিক্যাল অপারেশন আর শক্তিশালী কেমোথেরাপির মাধ্যমে তার বাঁচার সম্ভাবনা ৮০%-৯০% বলে চিকিৎসকেরা ঘোষনা দেয়। কিন্তু এক পর্যায়ে তার ব্রেনেও ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় তার সুস্থ হবার সম্ভাবনা ৪০% নেমে আসে। এ অবস্থায় চিকিৎসা চলতে থাকে। বিভিন্ন ধরনের কেমোথেরাপি এবং সার্জারির পরে বিষ্ময়কর ভাবে ৯৬ এর ডিসেম্বরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে আমস্ট্রং। সেরে ওঠার পরে তার ডাক্তারেরা তাকে জানায় যে তার সুস্থ হবার সম্ভাবনা সত্যিকারভাবে ছিল মাত্র ৩%।
জীবনের এই কঠিনতম সময়ের মাঝেও আমস্ট্রং আবার সাইক্লিং এ ফিরে আসার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিল, মনে হয় না সে অবস্থায় কেউ তাকে বিশ্বাষ করেছিল, অন্তত তার টিম কফিডিস করেনি। তার চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। বেশ কিছুদিন তাকে নতুন দলে যোগ দেবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত নতুন গঠিত ইউএস পোস্টাল টিমে সে অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৯৯৮ সালের মধ্যেই আমস্ট্রং পুরানো ফর্মে ফিরে আসতে শুরু করে, যার সূচনা হয় ওয়ার্ল্ড রোড রেস চ্যাম্পিয়নশিপে ৪র্থ স্থান অর্জনের মাধ্যমে। ঐ বছর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করলেও আমস্ট্রং এর প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন হয় ১৯৯৯ সালের ট্যুর ডি ফ্রান্স জয়লাভের মধ্য দিয়ে। এরপর ২০০৫ সালে অবসর গ্রহনের আগ পর্যন্ত টানা সাত বার ট্যুর ডি ফ্রান্স জয় করে আমস্ট্রং, যা এখন পর্যন্ত বিশ্ব রেকর্ড।
ল্যান্স আমস্ট্রংকেও বিভিন্ন সময়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে ডোপিং বিতর্কের। তার অলৌকিক সাফল্যগাথার পিছনে অনেকেই ডোপিং এর অবদানের কথা বলেছেন, যদিও কোন ডোপ টেস্টেই এখন পর্যন্ত তা ধরা পড়েনি। তাকে বলা হয়ে থাকে “the most tested athlete in the world”
নিজের জীবনে ক্যান্সারকে পরাজিত করে অন্যান্য ক্যান্সার রোগীদের সাহায্য করার জন্য ১৯৯৭ সালে গড়ে তোলে ল্যান্স আমস্ট্রং ফাউন্ডেশন, বর্তমানে LIVE STRONG নামে পরিচিত এই ফাউন্ডেশন ক্যান্সার আক্রান্তদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।
২০০৮ এর সেপ্টেম্বরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমস্ট্রং অবসর ভেঙ্গে আবার পেশাদারী সাইক্লিং এ ফিরে আসার ঘোষনা করে। যার ফলশ্রুতিতে গতকাল শুরু হওয়া ট্যুর ডি ফ্রান্সে অংশগ্রহন করছে সে। বয়স, তিন বছরের বিরতি, অন্যান্যদের ফর্ম প্রভৃতি বিবেচনা করে কেউই তাকে ফেভারিট মানবে না, কিন্তু ল্যান্স আমস্ট্রং বলে কথা, যাকে দিয়ে সবই সম্ভব।
( ল্যান্স আমস্ট্রং সম্পর্কে আমি প্রথম জানতে পারি ২০০২ সালে এক ডকুমেন্টরি দেখে যা প্রচন্ড ভাবে আলোড়িত করে আমাকে। পরে অনেক খুঁজেও ডকুমেন্টরিটা পাইনি। আমার বর্ণনায় আমি হয়তো পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে পারিনি তাকে, সে আমার কাছে আসলেই একজন সুপার হিরো)
১ম চেয়ার 😀 😀 😀 😀 😛
আমিও আপনার হিরো। আমিও সাইকেল চালাইতে জানি। টানা ষাট কিমি সাইকেল চালানোর রেকর্ড আছে 😀
অই সাইকেলটা কি মোটর সাইকেল??? ;;) ;;)
@ রায়হান... ৬০ কিমি সাইকেল চালানোর কি দরকার পড়ছিল?
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সাইকেল। ঠিক ষাট কিমি না। পঞ্চাশ হবে। টাংগাঈল থেকে রওনা দিসিলাম আমি, মাসুদ, ফিরোজ, নাজমুল ভাই।
নাজমুল ভাই পথিমধ্যে ব্যাক করছিলেন, আমরা গেছিলাম যমুনা সেতু পর্যন্ত। জটিল অভিজ্ঞতা। তারপর ফিরে আসছি আবার। ৩০+ ৩০ 😀
টাংগাইলে যারা থাকে তাদের সবারই মনে হয় এই অভিজ্ঞতা আছে। ক্লাস সিক্সে থাকতে আমরা ছয়জন ফ্রেন্ড মিলে সাইকেলে করে ঘাটাইল থেকে যমুনা সেতু তে গেসিলাম। পকেটে ছিল মাত্র দশ টাকা 😀
যমুনা সেতুতে পৌছায়া ভাবলাম এতদূর আসলাম আর নদীতে গোসল করবোনা। ক্যামনে কি। কিন্তু এক্সট্রা কাপড় তো নিয়া যাইনাই। পরে কি আর করা, সবকিছু খুলে টুলে আল্লাহর নাম নিয়া... :guitar: :guitar:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
তারপরে কি গীটার বাজাইসিলি???ইমোতে তো তাই দেখতাসি।
পাবলিক তোগো সম্পত্তিগুলার দিকে নজর দেইনাই?? 😉
এইখানে দেখি অনেক টাংগাইলা। 😀 আরে মিয়া আমিও ত । টাংগাইলা পোলা আর যমুনা ব্রিজ নিয়া কোন কাহিনী থাকব না তাতো হতে পারেনা। 😛 আমি ব্রিজ (৪.৮+৪.৮=৯.৬ কিলো) হাইটা পার হইছি আবার আসছি(প্রথম দিকে হাটা যেত)।মাঝখানে বৃষ্টিতে ভিজছি আবার রোদে গায়েই শার্ট শুকাইছে। আমার সঙ্গী ছিলেন আমার আব্বা(উনিও কম যান না :salute: ) আর খালাত ভাই।
যমুনা ব্রীজ নিয়ে দেখি অনেকেরই অনেক স্মৃতি ... আমার চাকরি শুরুর আড়াই বছর ছিলাম ওখানে... কত স্মৃতি :dreamy:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
মনে হয় ভবিষ্যতে বাইসাইকেল/মটরসাইকেল এই টাইপ কোন পানিশ্মেন্টের ভিত্রে দিয়া যাবার সম্ভাবনা দেখে প্র্যাকটিস প্যারেড হিসেবে ...
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
:khekz:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কাইয়ূম ভাই কামরুল ভাইয়েরও মনে হয় খাইতে মঞ্চায়। আফসোস 😛
আকাশবাবু.........আদ(add) করা ছপিগুলি ভালো ছিল। :clap: :clap:
থ্যাঙ্কু... ( শুধু কি ছবি গুলোই দেখছ নাকি :-/ )
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আগে শুধু ছপি গুলাই দেক্সি......দেন মন্তব্য করার লাইগা আওয়াজ দিসি্,তারপরে পুরা ব্লগটা পড়লাম।
আকাশ,
ধন্যবাদ তথ্যগুলো শেয়ার করার জন্য...
জীবন কাহিনীটা তো আসলেই বিস্ময়কর...
ধন্যবাদ বস 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
মানুষ ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাইলে সেটা খুব সম্ভব। কারণ একটু চোখ বুলালেই এরকম অসংখ্য অনুপ্রেরণা পাবার মত ঘটনা আমাদের আশেপাশে চোখে পড়বে।
আর্মস্ট্রং কে নিয়ে আগেই জানা ছিল। তারপরও ভালো লাগলো।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ভালো লেগেছে জেনে ভাল লাগল... আমরা সবসময় আমাদের নিজেদের জীবনের সমস্যাগুলোকেই বড় করে দেখি..
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আর্মস্ট্রং দেখি পুরা পাথ্রায় :boss:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
মুসতাকিম...তোর নামটা যতবারি দেহি,খালি বিহারী ক্যাম্পে যাইতে মঞ্চায়।
কেন ভাই 🙁 🙁 🙁
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
ভালো লাগল।
শিরোনামটা সুন্দর দিয়েছো তুমি। বিষয়টাও খুব ভালো। :thumbup:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ধন্যবাদ ফয়েজ ভাই 🙂
শিরোনামটা নিয়েছি আর্মস্ট্রং এর আত্মজীবনীর নাম থেকে... (লেখাতেই জিনিষটা উল্লেখ করা উচিত ছিল )
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ আকাশ, একজন অসাধারণ লড়াকু মানুষের সঙ্গে পরিচয় কিয়ে দেওয়ার জন্য। :hatsoff: আর্মস্ট্রং।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ধন্যবাদ সানা ভাই 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমি পাচাঁইলাম।
ধন্যবাদ এহসান ভাই... আমি নিজেও এই পোস্টটা লিখে একটা অন্য রকম তৃপ্তি পেয়েছি, যা আগের কোন পোস্টে পাইনি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আকাশ ভাইয়া দেরীতে হলেও আমার মন্তব্য দিলাম।
ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। 🙂
এই লোকের জীবন এত ডিটেইলে জানা ছিলনা । শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আকাশ ।
🙂 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷