এ সময়ে সুনামগঞ্জ ভ্রমন

সুনামগঞ্জ কে এ সময়কার অন্যতম বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট বললে কম বলা হবে না।  অত্যন্ত সুন্দর এই জেলার টাংগুয়ার  হাওর এর কথা প্রায় সবাই জানি। এখনকার দিনে আমরা কম বেশি প্রায় সবাই অবসরে ঘুরতে যেতে চাই, না গেলেও জেনে রাখি ভবিষ্যৎ এর জন্য বাকেট লিস্ট।  এ কারনেই আজকের পোস্টটি দিচ্ছি।

আমার ঘোরাঘুরির শখ দিন দিন স্বভাবে পরিণত হচ্ছে। যদিও শত ব্যস্ততার কারণে বর্ষার সময় সিলেট এলাকা ঘুরার কোনভাবেই অবসর বের করতে পারলাম না। ২০১৮ চলে যাচ্ছে, তবুও সুনামগঞ্জ না গিয়ে কিভাবে থাকি। গত সপ্তাহে তাই কোন চিন্তা না করেই ২ জন মিলে রউনা দিলাম সুনামগঞ্জের উদ্দেস্যে। ভ্রমণ বিষয়ক হেল্প গ্রুপে পোস্ট দিয়ে জেনে নিলাম বর্তমান পরিস্থিতি। যদিও কংক্রিট কোন উত্তর পাই নি, এটাও একদিক দিয়ে ভাল। ভ্রমণ টা থ্রিলিং হবে।

বৃহস্পতিবার রাতের বাসে রওনা দিলাম সুনামগঞ্জ। টিকেট পেতে ঝামেলা হয়েছিল। জানিয়ে রাখি, সুনামগঞ্জের বাস মহাখালি এবং সায়েদাবাদ দুই জায়গা থেকেই ছাড়ে, তবে মহাখালি থেকে এনা পরিবহন আর শ্যামলি সায়দাবাদ। টিকেট আগেই কেটে রাখা ভাল, কারন উইকেন্ডে খুব ভিড় হয়; টিকেট আগে না কাটলে নাও পাওয়া যেতে পারে। রাত ১১ টার বাস সকাল ৭ টায় পৌছাল। শেষ সিটের ঝাকিতে কোমরের অবস্থা খারাপ বলা যায়। তবে ফ্রেশ সকাল দেখে ব্যথার কথা ভুলে গেলাম।

সুনামগঞ্জ-এ দেখার স্থান গুগল ট্র্যাভেল প্ল্যান সফটওয়্যার দিয়ে ঠিক করে নিলাম । বাস থেকে নামলাম শহরের আগেই, সুরমা ব্রিজের মোড়ে। কারণ এখান থেকেই যানবাহন নিতে হবে, তা না হলে শহরে নামলে আবার ফিরে আসতে হবে। অনেক বাইকার, লেগুনা আর সিএনজি দেখা যাচ্ছে। তাহিরপুর পর্যন্ত সিএনজি এর ভাড়া ৫০০ টাকা, লেগুনা ১২০০-১৫০০টাকা। আমরা অইদিকে গেলাম না, মানুষ মাত্র ২ জন। আরাম করে বাইক ভাড়া নিলাম, তবে গতানুগতি ভাবে তাহিরপুর যাচ্ছি না। মোটরসাইকেল ভাই ই বলে দিল, ওনার প্যাকেজ। এখান থেকে যাদুকাটা নদী হয়ে বারিক্কা টিলা, শিমুল বাগান , নীলাদ্রি লেক- ট্যাকেরঘাট। মাত্র ৩০০ টাকায় রাজি হয়ে গেল। আমদের জার্নি শুরু হলো।

নিচের ছবিগুলো আমার তোলা। ছবি দেখেই বোঝা যায় কতই না সুন্দর  আমাদের দেশ।

েখন ফুল নেই যদিও

শিমুল বাগান থেকে দেখা । দূরেই ভারত এর পাহাড়। মেঘালয়।

ট্যাকেরঘাট যাওয়ার সবুজ রাস্তা। বর্ষায় ভরা পানি, এখন সবুজে ভরা।

সবুজ নীল আর পাহাড়

নীলাদ্রি লেক

্সত্যিই অনেক নীল

লেকের পাড়

আমরা এরপর ফেরার  সময় তাহিরপুর হয়ে ব্যাক করলাম। বাইক ওয়ালা ভাই কে ৫৫০ টাকা দিলাম; ভালই ছিল তার ব্যবহার। মোবাইল নাম্বার নিয়ে এসেছি, চাইলে কন্টাক্ট করে যেতে পারেন। উনি এই রাস্তায় বাইক চালান ৮ বছর যাবত। নাম শাহিন ভাই, ০১৯৩৬৩৯৮৭৮১

যদিও আমাদের ইচ্ছা ছিল সুসং দূরগাপুর যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল । এখন নাকি তেমন ভাল না রাস্তা, তাই আর গেলাম না। নোকা চলাচল বন্ধ, যাওয়া যেত তা না হলে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে রাত কাটানোর ইচ্ছা নাই। এখন লঞ্চে থাকাটা বোকামি, পানিই নাই তেমন। নোকা বা লঞ্চে রাত কাটানোর জন্য সব চেয়ে ভালো সময় হলো জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। সে সময় হাওর থাকে একদম ভরা, মেঘলা দিন আর ভয়ংকর সৌন্দর্য।

আমরা প্রায় বিকেল ৪ টার মধ্যেই সব দেখে ব্যাক করলাম আবার সুরমা ব্রিজে। এরপর সুরমা নদীতে সূর্যাস্ত। এর পর মিউজামে যাওয়ার পালা। এছাড়া করার কিছুও নাই, অনেক সময় বাকি, ফিরতি বাসের।। ভেবেছিলাম গতানুগতিক এটা সেট দিয়ে ভরা থাকবে যাদুঘর, কিন্তু আমি এত ভাল ভাল আর পুরনো সব কালেকশন দেখে সত্যি অবাক । কেউ সুনামগঞ্জ গেলে অবশ্যই মিউজিয়াম দেখে ফিরবেন। হাসন রাজার স্মৃতিবিজরীত  বাড়িতে গিয়েছিলাম, তেমন কিছু নাই।

ব্যাকপ্যাকার

৮০ টাকায় ছিপ নৌকা ভাড়া করে এই ছবি তুলেছিলাম

 

আমরা রাত ১১ টার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই এবং আলহামদুলিল্লাহ, নিরাপদেই ফিরে আসি।

তো আমার এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য হলো যদি আমরা শীতের সময় বা এর একটু আগে আগে যাই, আমরা হাওরে না থেকেও আরো অনেক কিছুই করতে পারবো। 

এই একদিনের ট্যুরের একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও (দেখতে নিচের নীল লেখায় ক্লিক করুন) ২ মিনিটে ট্যাকেরঘাট, সুনামগঞ্জ : নীলাদ্রি লেক, বারিক্কা টিলা, শিমুলবাগান, তাহিরপুর

আজ এ পর্যন্তই। এরপর সুসং দূর্গাপুরযাওয়ার ইচ্ছা আছে। দোয়া করবেন। আর ডিসেম্বর এ যাব সেইন্টমারটিন ইনশাল্লাহ।

 

১টি মন্তব্য “এ সময়ে সুনামগঞ্জ ভ্রমন”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।