প্রিন্ট-মিডিয়া কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ইস্যু কিভাবে হারায় ?? ইস্যু ২ ভাবে হারায় ।
১. কন্ট্রোভারসিয়াল বা ডিমোরালাইজিং কোন ইস্যুর পরপর যখন কোন এন্টারটেইনিং কিংবা গ্লোরিফাইং ইস্যু চলে আসে। পহেলা বৈশাখ ইস্যুর পরপর এখন যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেট সিরিজ চলে আসা। ১৬ বছর পর বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে ওয়ানডে জিতেছে এই ইস্যুতে এখন ফেসবুক গরম, পহেলা বৈশাখ মনে রাখার আর কি দরকার ??
২. রিপিটেশনে ঘটনার গুরুত্ব হ্রাস। এর সবচেয়ে ভাল উদাহরন হতে পারে হরতাল অবরোধে গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারা। প্রথম ২/১টা ইন্সিডেন্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর হৈ চৈ হল, প্রিন্ট মিডিয়ায় বড় করে লিড নিউজ হল। দুদিন পর থেকে গাড়িতে পুড়িয়ে মারা যখন রেগুলার বেসিসে হওয়া শুরু করল, প্রিন্ট মিডিয়াতে সেটা প্রথম পাতা থেকে ধীরে ধীরে ভেতরের ছোট্ট একটা কলামে সেঁধিয়ে যেতে থাকল, এক সময় এতা সিম্পল একটা নিউজ হওয়ারও যোগ্যতা হারাল। একই সাথে ফেসবুকেও সেটা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলল, ফেসবুকের মহাজনরা অন্য ইস্যু নিয়ে বিজি হয়ে গেল।।
সমস্যাটা এখানেই। প্রাকৃতিক ভাবেই আমরা গোল্ড ফিশ মেমরি’ জাতি। ভয়টাও তাই সেখানেই।পহেলা বৈশাখে টিএসসি তে এবার যা হল তা আমরা এখনই ভুলে যাওয়া শুরু করে দিয়েছি। এই ধরনের ইন্সিডেন্ট আজ নতুন না, কিন্তু অন্য সব বারের চেয়ে এবারেরটা আলাদা ছিল এর এগ্রেসিভনেস আর ডোন্ট কেয়ার ভাবের কারনেই। নন্দীর বক্তব্য শুনলাম, সিসিটিভির ফুটেজ তাও দেখলাম। বমি চলে আসল। এই ধরনের অপরাধের কোন শাস্তি এখনো হয় নাই। এবার তো মনে হল এরা রীতিমত ইনডেমনিটি নিয়ে এসেছে। আজ রাস্তার মাঝখানে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আগামিকাল সোহরাওারদির গেট আটকে করবে। এরপরও যখন এদের কিছু হবে না, তখন গাড়িতে করে সবার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাবে। অন্য এক অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে গেছে, আমার পরিচিত কাউকে তো আর নেয় নাই এই ভেবে শান্তিতে আমরা যার যার মত বাড়িতে চলে যাব। পেট্রোল বোমা মারার মত এটারও ইন্সিডেন্ট এর সংখ্যা যত বাড়তে থাকবে, মিডিয়াতে এই ইস্যুতে বরাদ্দ কলামের সংখ্যাও ব্যাস্তানুপাতিক হারে কমতে থাকবে। আমরা ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হয়ে যাব। এখন শুধু সেই সময়ের অপেক্ষা ।।
ভয় আছে আরেক জায়গায়। যতই অপছন্দ করি আর গালাগালি করি না কেন, সব কিছুতেই আমরা ইন্ডিয়ান ট্রেন্ড ফলো করি। কালচার এগ্রেশনের কারনে আমরাও একই ঝুকির সম্মুখীন। বিশ্বজুড়ে ইন্ডিয়ার আজ পরিচিতি ‘রেপিস্ট’দের দেশ হিসেবে। ওদের অবস্থাও একদিনে এমন হয় নাই। প্রথম দিকে আমাদের মতই এমন ইন্সিডেন্ট ঘটত। তাদের যখন কোন শাস্তি হয় নি, তখনই এমন এক্সট্রিম সিচুয়েশনের সৃষ্টি।
আমাদেরই তাই এখন ঠিক করতে হবে আমরাও ‘রেপিস্ট’দের দেশ হিসেবে পরিচিত হতে চাই কিনা। তেমন কোন ইফোরট দিতে হবে না, শুধু চুপচাপ ঘটনাগুলো দেখে বসে থাকলেই চলবে। ডিএম্পি তো অলরেডি স্টেটমেন্ট দিয়েছে পহেলা বৈশাখে কোন নারী নির্যাতনের কোন ঘটনাই ঘটেনি, শাস্তি দিবে কোত্থেকে !!
এই ঘটনাগুলো যারা ঘটায় সেই জানোয়াররা আমাদের আশে পাশেই থাকে, মুখোশ পড়ে চলাফেরা করে। ভিড় দেখলেই এদের মুখোশ খুলে যায়, জানোয়ারটা বের হয়ে আসে। আমরাও আবার জানোয়ার টা কোন গ্রুপের জানোয়ার সেটা নিয়ে ডিবেট করি, বল একেকজনের কোর্টে গড়াগড়ি খেতে থাকে। অপরাধীর শাস্তির চেয়ে অপরাধী কোন গ্রুপ করে সেটা বের করা বেশি জরুরি? এতেই কি অপরাধ জাস্টিফাইড হয়ে গেল ??
সামাজিক ভাবে নৈতিক অক্ষয়য়ের কারনে যখন সোশ্যাল ডিস-অর্ডার দেখা দেয়, তখন হাতে ২টি অপশন থাকে। হয় সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে একশনে গিয়ে গোড়াতেই একে নির্মূল করে দেয়া অথবা একে একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়ে সোশ্যাল লাইফ লিড করার জন্য মেন্টাল প্রিপারেশান নিয়ে নেয়া। আমরা এখন একটা ক্রস রোডে দাঁড়িয়ে। গ্যারান্টি সহকারে বলা যায় এবার যদি অপরাধীদের শাস্তি না হয় এরপর আর এই ইস্যুর আর কোন গুরুত্তই থাকবে না। আমাদেরই ঠিক করতে হবে আমারাও কি জঙ্গলের রাজত্তে ফিরে গিয়ে ইন্ডিয়ার মত ‘রেপিস্ট’ দের কান্ট্রি হিসেবে পরিচিত হব নাকি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে ঘরে ফিরে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করব।
অসম্ভব ভালো লাগলো লিখাটা । নিজে এফেক্টেড না হলে ইদানিং আমরা কোন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসি না । এ থেকে যদিও একদিনে উত্তরণ সম্ভব নয় । কিন্তু সমাজের কর্তাব্যক্তিদের অনেক কিছুই করার আছে । যা করলে আজ হয়তো এই ক্রস রোডে দাঁড়িয়ে অনুতাপ করতে হতো না ।
Coming together is a beginning; keeping together is progress; working together is success..
একটা বার্নিং ইস্যু নিয়েই লেখা এই "ইস্যু যখন ইস্যু"। পেসিমিস্টিক সমাজ প্যাসিভ হতে হতে পারমিসিভ হয়ে গেছে। সবকিছুই এখন সয়ে নেয়া হয়, মেনে নেয়া হয়। আর অক্ষমদের হাতে তো আছেই ক্ষমার মহত্বের আপ্তবাক্য। যে জানোয়ারগুলো এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, তাদের চেয়ে যে কর্মকর্তা "পহেলা বৈশাখে কোন নারী নির্যাতনের কোন ঘটনাই ঘটেনি" এই সাফ কথাটা বলে দিয়েছে, তার চেহারাটা কম জানোয়ারসুলভ মনে হয়নি।
:thumbup:
এই ঘটনাগুলো যারা ঘটায় সেই জানোয়াররা আমাদের আশে পাশেই থাকে, মুখোশ পড়ে চলাফেরা করে। ভিড় দেখলেই এদের মুখোশ খুলে যায়, জানোয়ারটা বের হয়ে আসে।
একদম সত্যি
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
সঠিক! প্রথম জয়ের পরে আমি তো ভেবেছিলাম বৈশাখ ইস্যুটি হারাতে বসল! কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, ব্যাপারটা এখনো পুরোপুরি নিস্তব্ধ হয় নি। তবে ব্যাপারটি যে সামনের অন্য কোন ঘটনার কারণে নিস্তব্ধ হয়ে যাবে না, এমন গ্যারান্টিও দেয়ার কোন উপায় নাই।
(সাগর-রুনি অথবা বিশ্বজিৎ এর ঘটনার পরে আমি যেমন ভেবেছিলাম প্রত্যেকদিন একবার করে পোস্ট দিয়ে দিয়ে ঘটনাটাকে জিইয়ে রাখব। কিন্তু তা আর করেছি কোথায়!)
আজ থেকে দুই কি তিন দশক আগে একটা অস্বাভাবিক ঘটনা, মৃত্যু, হত্যা, বা জঘন্য কোনো ঘটনা ঘটলে মানুষ অফিসে কাজ বাদ দিয়ে ওটার আলাপ্রে থেমে থাকতো, স্কুল-কলেজে পড়াশোনা থমকে যেতো । হ্যা । শুধু একটা অমন খবরেই । আজ যে কোনো পত্রিকার কোনো একটি পাতায়ই থাকে অমন এক হালি, আধা ডজন কিংবা তারও বেশী খবর । আমরা শিরোনাম পড়ে পাতা ওল্টাই । খবরগুলো এই কয়েক দশকেই স্পর্শগ্রাহ্যতা হারিয়েছে যেনো ।
কি হলো ! সেই ফুয়াদের গল্পের মতোন কি দু দশক আগের লোক সব লোপাট হলো বা বেড়াতে অন্যত্র চলে গেলো আর শহর জুড়ে, দেশ জুড়ে সব নতুন লোক এসে বসত করেছে ! আসলে আমরা মেনে নিতে নিতে, মানিয়ে নিতে নিতে অসহনীয় বিষয় নিয়েও সহনশীলতার সীমানা পেরিয়ে গেছি ।
পরিবারের একটা মানুষ অসংলগ্ন আচরণ করলে আমরা বিচলিত হই । তাকে নিয়ে মনস্তত্ত্ববিদের কাছে দৌড়াই । আজকে গোটা সমাজ যে অদ্ভুত নির্বিকার নিত্য দিনের অমন ডজন ডজন সংবাদে - এটা কি গোটা সমাজের এক রকম অসংলগ্ন আচরণ নয় ! আজ তবে সমাজটাকে কোন মনস্তত্ত্ববিদের কাছে লোকে নেবে ! আর সেই লোকটিই বা কে !
তাহলে কি ক্রমশঃ উন্মত্ততায় বিলীন হবে সভ্যতা ! নাকি তাকে শিকলে বেঁধে ফেলে রাখা হবে পরিত্যাক্ত খোয়াড় ঘরে !
তোমার এই মন্তব্যের গভীরতায় কিছুক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে রইলাম, লুৎফুল। খুবই চিন্তার কথা, অনুভবের গভীরে প্রবেশ করে সবকিছু ওলট পালট করে দিতে চায়। সহজেই বোঝা যায়, এসব নিয়ে তুমি কতটা ভেবেছো, কতটা বিচলিত।