শেষ পর্যন্ত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কমল ।কান্ট্রি ম্যনেজারের রুম থেকে বেরিয়ে তার মনে হল এই একটি পথই খোলা আছে। টানা তিন বছর প্রেম করার পর পারুলের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। প্রেম করার সময় থেকেই সে সিগারেট খেত। সেই সময় অনেক ধরনের আবেগের ব্যপার ছিলো। সে ভাবতো পারুল যদি তাকে ছেড়ে দিতে বলে, তাহলে সে দেখিয়ে দিতে পারবে পারুলের কথার গুরুত্ব তার কাছে কত খানি।
তার অন্যান্য বন্ধুর গার্ল ফ্রেন্ডরা যেমন ন্যাগিং টাইপের ছিলো পারুল সেরকম ছিলো না। অনেকটা কাঠখোট্টা ধরণের ছিলো সে। ‘খাবেন খান ক্ষতি তো আর আমার হচ্ছে না’।তাদের প্রেমটা শুর হয়েছিলো টেলিফোনে।বন্ধুরা তখনও ইউনিভার্সিটি শেষ করেনি। সে আগেই একটা চাকরি পেয়ে গিয়েছিলো।খুব যে দরকার ছিলো তা নয়। অনার্স পাশ করে বেশ কয়েকটি জায়গায় সিভি ফেলেছিলো।ঢাকা শহরে তার তেমন কোন আত্মীয় নেই।হলের লাইফ আর ভালো লাগছিলো না। ভেবেছিলো দেখিই না কী হয়। অনেকদিন কোন খোঁজ খবর ছিলো না।এমএ পরীক্ষা প্রায় ঘাড়ের উপর চলে এসেছে। এমন সময় ডাক এলো।
ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মনে হল, আসলাম সাহেব তাকে ইন্টারভিউয়ের জন্যে ডাকেননি। গল্প করার জন্যে ডেকেছেন। তার মুখের অর্ধেকটা ঢাকা পড়েছে ঢাউস একটা ডেস্কটপ মনিটরের আড়ালে। বললেন, ‘ইয়াংম্যান তোমার তো কোন এক্সপেরিয়েন্স নেই’। কমল সাহস করে বলে ফেললো, আপনারা তো এক্সপেরিয়েন্স চাননি। আসলাম সাহেব কম্পিউটারে কাজ করতে করতেই ইন্টারভিঊ নিচ্ছিলেন। জবাবটা তিনি শুনেছেন কী শোনেন নি বোঝা গেলনা। বেশ কিছুক্ষণ পর মনিটরটা একপাশে সরিয়ে দিয়ে বললেন,
– ‘ভালো বলেছ আমরা অভিজ্ঞতার কথা লিখিনি ঠিকই, তবে যারা দরখাস্ত করেছে, তাদের প্রায় সবারই নানান ধরণের এক্সপিরিয়েন্স আছে। তুমি ছাড়া।
কমলের পরীক্ষা সামনে, তার মনে হল শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই।সে বলল,
– আমি কি তাহলে চলে যাবো?
টেবিলের ওপার থেকে দরাজ গলায় হেসে উঠলেন আসলাম সাহেব। এরপর যে সব প্রশ্ন হল, তাকে ইন্টারভিউ বলা যায় কীনা কমল জানে না।পরীক্ষার পড়া না পড়ে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে কেন? বাবা মা তার কাছে কী আশা করে? ঘন্টা খানেক পর কমলের চাকরি হয়ে গেল।
আসলাম সাহেব বললেন, ‘আমি আসলে মানুষের জন্যে কিছু করতে চাচ্ছি।অনেকদিন বিদেশে হিউম্যনিটেরিয়েন অর্গানাইজেশনে কাজ করতে করতে মনে হয়েছে দেশে গিয়ে কিছু করা দরকার। বঊ বাচ্চারা দেশে আসতে রাজি হলনা। ভেবেছিলাম একাই কাজ করে যাবো। বাংলাদেশে কাজ করা সহজ কথা না।গত দেড় বছর গিয়েছে কোম্পানির কাগজ পত্র ঠিক করতে। অভিজ্ঞতার কথা এই জন্যে লিখিনি। বিশ্বের কোন অভিজ্ঞতাই এখানে যথেষ্ট নয়। তোমার জন্যে আরেকটা বাড়তি চ্যলেঞ্জ হচ্ছে তোমার মাস্টার্স পরীক্ষা’।প্রথম দিকে তড়বড়িয়ে কথা বললেও কমল এখন তোতলাতে থাকলো।
আসলাম সাহেব বললেন, ‘তুমি যদি জয়েন কর তোমাকে অনেক কিছু শিখতে হবে। আপাতত অফিসেই থাকতে পারবা, একটা এক্সট্রা রুম আছে। এখানে টেলিফোনও আছে, সময় অসময়ে দরকার হলে, তোমায় হাতের কাছে পাবো’।
হলে ফিরে যাবার পর বন্ধুদের কেউ কেউ তাকে ঈর্ষা করতে লাগলো। অন্যরা বলল, দোস্ত জয়েন করে ফেল, আমাদের আড্ডার একটা জায়গা বাড়বে।
দিন সাতেকের মধ্যে হল ছেড়ে অফিসে উঠলো কমল, অফিসের পর তার ফোনটা চলে গেলো বন্ধুদের দখলে।আসলাম সাহেব ক’দিন পর বউ বাচ্চাদের কাছে ফেরত গেলেন অন্য একজনকে কান্ট্রি ম্যনেজার নিয়োগ দিয়ে। কমলের আর মাস্টার্স দেওয়া হলনা। এখানেই সে রয়ে গেল। বন্ধুদের দেখাদেখি টেলিফোনে ফাজলামি করতে করতে প্রেমটা হয়ে গেল পারুলের সাথে।
বিয়ের তিনমাসের মাথায় পারুলের আচরণ বদলে গেল।
প্রথম আঘাতটা এলো সিগারেটের উপরদিয়ে। ঘরে সিগারেট খেলে, পারুলের দমবন্ধ হয়ে আসে। সিগারেটের গন্ধে মাথা ধরে যায়। কমল বোকার মত বলে বসল, ‘তুমি মানা করলেই ছেড়ে দেবো। বিয়ের আগে যখন সে চাইতো পারুল মানা করুক, তখন পারুল দার্শনিকের মত আচরণ করতো।‘আপনি খেলে আপনার ক্ষতি’ এখন তার ভাষা বদলে গেলো, ‘সিগারেটতো অবশ্যই ছাড়বা। এতদিন সিগারেটের পেছনে যে পয়সা খরচ করেছো, তাদিয়ে অনায়াসে একটা বাইক কিনে ফেলতে পারতা। শেলী ওর হাসবেন্ডের পেছনে বসে বাইকে ঘুরে, দেখতেও কত ভালো লাগে’। কমল বলল, ‘ঠিক আছে এক সপ্তা’র মধ্যে ছেড়ে দেবো’। বলতে গিয়ে তাঁর বুক ভেঙ্গে এল। সিগারেটের সাথে তাঁর সম্পর্ক অনেকদিনের। ঈদে, উতসবে তার বিলাসিতা ছিলো সিগারেটকে ঘিরেই। গোল্ডলিফের চকচকে প্যাকেট খুলে প্রথম টানটা দেওয়াতেই ছিল তার আনন্দ। বিয়ের পর প্রথম ঈদটা গেল তার সিগারেট ছাড়া। পরদিন বন্ধুদের সাথে বেরিয়েছিল। সিগারেট ছাড়ার কথা শুনে বন্ধুরা বলল, ‘তুইও শেষ পর্যন্ত। ভেড়ুয়া হয়ে গেলি’! তাদের চাপাচাপিতে সিগারেট খেয়ে বাসায় ফিরেই দরজার মুখে বউএর কবলে পড়লো কমল।‘তোমার মুখে সিগারেটের গন্ধ কেন?’ দ্রুত বাথরুমে ঢুকে দাঁত ব্রাশ করে ফেলল সে। সারা রাত বউ এর সাথে কথা হলনা।
অন্যদিন নাস্তা না করে পারুল তাকে বাইরে বের হতে দেয়না। এদিন বিছানা ছেড়ে উঠলোই না। অফিসে গিয়ে কাজে মন বসলো না। সে মনে মনে ঠিক করলো আজ লাঞ্চের পরই সে শেষ সিগারেটটি খাবে। অফিসের পিয়নকে বলে দিলো ‘কাল থেকে সিগারেট আনতে বললেও আনবা না বুঝছো?’
বাসায় যাবার পরে দেখলো পারুলের চেহারা আগের মতই হাসি খুশি। সে বলল, তোমাকে এবারের মত ছেড়েদিলাম। এর পর কিন্তু আর খাবা না ঠিক আছে? বঊএর আচরনে মুগ্ধ হ্য়ে গেলো কমল। বলল ‘আর খাবো না’।
– ঠিক আছে আমার মাথা ছুঁয়ে বল
– কী বাচ্চাদের মত কর
– আমি তো বাচ্চাই। পরের মেয়েকে নিয়ে এসেছো তার কথা শুনবা না?
শেষ পর্যন্ত, পারুলের মাথায় হাত দিতে হল।
সপ্তাহ খানেক সিগারেট ছুঁয়েও দেখলো না কমল। এর পর দু’দিনের জন্যে ঢাকার বাইরে যেতে হল। কাজের চাপে আর মাথা ছোঁয়ার কথা মনে থাকলো না। বাসায় ঢোকার আগে পানটান খেয়ে গন্ধ ঢাকার চেষ্টা করেছিলো ঠিকই কিন্তু পারুলের কাছে ধরা পড়ে গেল। প্রথমে পারুল হাসি হাসি মুখ করে বলল, আমার মাথার দিব্যিরও কোন দামনেই তোমার কাছে! তারপর হিস্টিরিয়াগ্রস্থ রোগীর মত চিৎকার করতে থাকলো।‘ নেশা খোর! নেশা করে করে নিজের জীবনটা ধ্বংস করে এখন আমার জীবনটা তছনছ করে দিলো!! কমল শুধু একবার বলতে গিয়েছিলো, আস্তে বল, আশে পাশের বাসার লোকজন কী ভাববে? তাতে বউএর বিলাপ আরও বাড়তে থাকল।
পরদিন পাশের বাসার ফয়েজ সাহেবের সাথে লিফটে দেখা হল, তিনি মিট মিটিয়ে হাসতে হাসতে বললেন। ভাইসাব ‘নেশা টেশা বাঙালি বউদের দু’চোখের বিষ, বুইলেন! আমার বন্ধুরা দু’য়েক পেগ মেরে কমলা টমলা খেয়ে বাসায় আসে’।
প্রতিবেশির কাছে এই নসিহত পাবার পর কমল বেশি ভাড়ায় অন্য পাড়ায় গিয়ে উঠলো।
অসমাপ্ত
এটা তো মনে হচ্ছে রম্যধাচের গল্পে রূপ নিতে যাচ্ছে।
অনেক কিছুই কমন পড়ে যাচ্ছে, সেটাই যা সমস্যা।
কাছের কেউ পড়লে ভাববে, আমার কাহিনীই বুঝি লিখেছেন...
😛 😀 😛 😀 😛 😀
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ধন্যবাদ পারভেজ। এটি যদি আর দু'এক জনেরও মনে হয়, তখন বুঝবো লেখাটা ঠিকা ঠাক মত এগোচ্ছে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
নেশাতে পেল! মস্তিষ্কের গোড়ায় ধুম্রদানের নয়, এ হলো 'নেশা'-র নেশা! তাড়াতাড়ি ২ নামান।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
একটু সময় দাও ভাই। সামনে যানজট। আমার আরেকটি লেখা প্রথম পাতায় আমার পথ আগলে রেখেছে। সে ব্যাটা সরলেই দিয়ে দেবো
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
নেশা ২ নামিয়ে দিয়েছি
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
🙂 🙂 🙂 🙂
কথা মিথ্যে বলেননি মনে হয় ভদ্রলোক,
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
এই একটা জিনিস। চাইলেই ছাড়া যায়। তা জিনিসটা আবার ধরে ফেলে। তা চাইলেই ছাড়া যায়। ছাড়া হলো। তবে এতোদিনের সখ্যতা বলে কথা। জিনিসটা আবার ধরে মানুষটাকে। মানুষটাকি আর ধরে ! ছাড়া যায়। তাই ছাড়া হয়। জিনিসটাই তো ধরে তবু আরবার। ছাড়াটাও বেজায় সহজ। চাইলেই ছাড়া যায়। ছাড়া হয়। আমি কি ধরি। ও আমাকে ধরে।
আর গল্পটা ! ধরেছে বটে । ছাড়ছে কই !
ছাড়তে পয়সা লাগেনা। ধরতে আজকাল ১১টাকা। ছাড়া আর ধরা সবই তাই হাতের নাগালে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
জমে উঠছে কাহিনী!
সাথে থেকো। তুমি থাকলে ভরসা পাই
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
প্রথমে শিরোনাম খেয়াল করে শুরু করিনি। পড়তে গিয়ে শেষে যখন মনে হলো হুট করে পর্দা টানা হয়েছে, তখন উপরে গিয়ে দেখি এটা সিরিজ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আসলে অপেক্ষায় রাখতে আমি চাইনা। এত বড় একবারে দিতেও খারাপ লাগে। এদিকে সামনের পাতায় নিজের পুরোনো লেখা থাকায় আগানোও যায়না। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
রকিবের কথা ধরেই শুরু করি। হুট করে পর্দা টানা হলেও একটি স্বাধীন ছোটগল্প হয়ে উঠেছে এটি।
আমার ঠিক রম্য মনে হলোনা। হালকা চালের সমান্তরালে মনে হয় সিরিয়াস প্রসঙ্গ উঠে আসবে।
অপেক্ষায় আছি
নুপুর, সাথে থেকো, ২ নেমেছে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
"প্রথম দিকে তড়বড়িয়ে কথা বললেও কমল এখন তোতলাতে থাকলো" - কি চমৎকার করেই না কমলের তাৎক্ষণিক অবস্থাটা বুঝিয়ে দিলে!
ভালো লাগলো। বরাবরের ন্যায়।
ধন্যবাদ স্যার। আমি আর কোন ভাবে বিষয়টা এক্সপ্রেস করার বুদ্ধি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি সব সময় চেষ্টা করি কম টাইপ করে বেশি প্রকাশ করতে। ( টাইপ করতে ইচ্ছে করেনা)। আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে, একটু একটু পারছি
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
:thumbup: