টং এর গায়ে সাঁটানো বাংলা সিনেমার পোষ্টার গিলছিলো হানিপ। পোষ্টার এর প্রধান আকর্ষণ একজন হাফপ্যান্ট পড়া নায়িকা। দেখতে ভালোই, নাম মাহি। এতো সুন্দর একটা মেয়ে কেন হাফপ্যান্ট পড়ে আছে সেটা একটা আশ্চর্যের বিষয়।
সরু রাস্তা দিয়ে বাস যাওয়া আসা করছিলো। হঠাৎ করেই কিছু একটা উড়ে এসে হানিপের শার্টে পড়ে। সাদা থকথকে একটা পদার্থ, হানিপের কাছে “কাইশ” নামে পরিচিত। “শালার পুত”-মুখ দিয়ে গালি বের হয়ে যায়। মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো তার।
উজলীদীঘিরপাড়ের হানিপের গল্প বলছি । “উজলীদীঘির পাড়”- কি সুন্দর নাম !গাছ-গাছালি দিয়ে ঘেরা সবুজ গ্রাম, স্বচ্ছ পানির দীঘি, সবুজ ফসলের মাঠ। গ্রামীন বাড়িঘর।
সেই গ্রামের হানিপ। আসলে নাম তার হানিফ, লোকে হানিপ ডাকে। আঞ্চলিকতার জন্য এমন হয়ে গেছে।
——————————
দুপুরের দিকে দৃশ্যের পরিবর্তন দেখা গেলো। হাসি হাসি মুখে হানিপ বাড়িতে ফিরছে। হাতে একটা বড় রাঁজহাস।
আজকে সদরের কোর্টে গিয়েছিলো একটা কেস এর কাজে।এলাকার জজ মিয়ার সাথে শিশুমিয়ার একটা মামলা। পুরোটাই মিথ্যা মামলা। সব জেনেও হানিপ জজ মিয়ার পক্ষে সাক্ষী দিয়ে এসেছে। জজ মিয়া খুশি হয়ে তাকে একটা রাঁজহাস ধরিয়ে দিলো দুপুরে, সেই হাঁস নিয়ে ঘরে ফিরছে সে।
ঘরের সামনেই কাপড় নাড়ছিলো শেফালী, আমাদের হানিপের স্ত্রী।
“শেফালী, নেও। রাঁজহাসটা জবাই দিয়া রাতের লাইগা রেডী করো। অনেকদিন ধইরাই রাঁজহাস এর মাংস খাইতে ইচ্ছা করতাসিলো, তাই কিনা আনলাম”
শুকনা মুখে হাঁসটা নেয় শেফালী। “শুনো। রাঁজহাস হইলো টু ইন ওয়ান, খাইতে হাঁস এর স্বাদ আছে, আবার খাসীর মতোও একটা স্বাদ আছে”- বউকে একটু জ্ঞান ঝাড়ে হানিপ। বউকে মাঝে মাঝে জ্ঞান ঝেড়ে শান্তি আছে।
গামছা আর সাবান এর কেসটা নিয়ে বের হয়ে যায় হানিপ। পুকুরে যাবে গোসল করতে। তার পথের দিকে চেয়ে পিছন থেকে ফিক করে কেন জানি হেসে দিলো শেফালী। মানুষটা তার সামনে জ্ঞানী ভাব ধরলেও শেফালী জানে হানিপ আসলে বোকাসোকা। সহজ-সরল স্বামী পেয়ে বেশ সুখীই শেফালী।
——————————
“শেফালী রান্না শেষ হইসে?” – রাতে ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন হানিপের।
“হ”- উত্তর দেয় শেফালী।
“আজকে স্পেশাল খাওয়া হবে। গরম পরোটা নিয়া আসলাম নিজাম মামার দোকান থেইক্কা, গরম পরোটা রাঁজহাসের মাংসের ঝোল দিয়া খায়াম” – বলতে বলতে চোখ চকচক করে উঠে হানিপের। “যাও খাবার বাড়ো।”
রাঁজহাসের মাংসের ঝোলে পরোটা ডুবাতে ডুবাতে আবারো জ্ঞান ঝাড়ে হানিপ, “শুনো, রাঁজহাস রাঁন্ধার একটা ভালো তরিকা বলি। প্রথমে ধুইয়া রোদে দিবা, এর পর এক ঘন্টা গরম পানিতে চুবাইইয়া রাখবা,দেখবা টেষ্ট আরো খুলবে”- পুরোটাই বানিয়ে বলে দেয় সে, খাবারের তৃপ্তিতে চোখ বুজে ফেলে। শেফালী শুকনো মুখে শুনে আর মনে মনে হাসে।
খাওয়া দাওয়ার পর শান্তিমতো ঘুমানোর জন্য যখন বিছানায় গেলো, ঠিক তখনই কারেন্টটা চলে গেলো। গ্রাম-গঞ্জের এই একটা অসুবিধা, রাতবিরাতে কারেন্ট চলে যায়, “ধুর” ।হারিকেন নিয়ে ঘরে ঢুকে শেফালী। বউ এর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয় হানিপ। মনে হচ্ছে আলোটা হারিকেন নয়, শেফালীর মুখ দিয়েই বের হচ্ছে। প্রায় প্রতি রাতেই এক দৃশ্য দেখে, কিন্তু মুগ্ধতা যেন কমেনা তার।
বিছানার পাশের জানালাটা খুলে দেয় শেফালী। ঠান্ডা বাতাস আসতে থাকে। “উজলীদীঘিরপাড়” গ্রামের সেই দীঘির পাড় থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে থাকে হানিপের ঘরে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে বাইরে চাঁদের আলো ঝকঝক করছে।
বাইরের সেই নিস্তব্ধ এবং ঝকঝকে রাতের দিকে তাকিয়ে পৃথিবীটা খুব সুখের মনে হতে থাকে হানিপের।
দারুন :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ ভাই 🙂
ইয়েন
এক্সিএন নয়,
ওয়াই য়ি এন প্রকৌশলী
গল্প লেখায় দারুণ কৌশলী ।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
:)) 😀
ধন্যবাদ বড় ভাই,
আপনার ছড়া ভালো পাই। 🙂
:goragori: :party:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂
চমৎকার লাগলো। :clap: :clap: দয়া করে লিখা থামায়ো না। 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
🙂 ধন্যবাদ ভাই। ইচ্ছা আছে চালিয়ে যাওয়ার। দেখা যাক। 😀