এক
এই মাত্র রীহানকে খাইয়ে ঘুম পাড়ালো শর্মিলী। ছেলেটা ঘুমাচ্ছে কত সুন্দর করে। রীহানের বাবার সাথে কি আশ্চর্য ঘুমানোর স্টাইলের মিল! “ব্যাপারটা নিশ্চয় জিনগত”- ভাবে শর্মিলী। হঠাৎ করেই ছেলের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে শর্মিলীর চোখে পানি চলে আসলো।
আহারে ছেলেটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে, আর কিছুদিন পর পাঁচে পা দিবে। স্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে। ছেলে পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, নতুন বন্ধু হবে। এখন যেভাবে সারাদিন ব্যস্ত রাখে তখন কি সে তার মা’কে এতো মিস করবে? আনমনে ভাবে সে। বুকটা কেমন জানি হু হু করে উঠলো তার।
তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ফেলে শর্মিলী । আরিফের আসার সময় হয়ে গেছে ।টেবিলে খাবার বাড়তে হবে…
————————————————————————————————————————————————————–
দুই
বিছানায় হেলান দিয়ে অফিস থেকে নিয়ে আসা পেপার পড়ছিলেন মাহমুদ সাহেব। এমন সময় কাঠের দরজায় নক।
-কে?
-আমি।
-আমি কে?
-আমি সালমান শাহ।
“এটা আবার কে!” – আস্তে করে বলে উঠে গিয়ে দরজা খুললেন মাহমুদ সাহেব, দেখেন বাড়ীওয়ালাদের কাজের ছেলেটা।এক হাতে একটা প্লেট আরেক হাতে একটা বাটি, ঢাকনা দিয়ে ঢাকা।
“খালাম্মা পাঠাইসে” -বললো ছেলেটা।
মনে মনে অভিভূত হলেন মাহমুদ সাহেব। এক মাস হলো ঢাকা থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া বদলী হয়ে এসেছেন। মফস্বলের মানুষদের এসব আন্তরিকতা ঢাকা শহরে বিরল। তার নিজেরই পৈত্রিক সুত্রে একটা বাড়ী আছে ঢাকায়। সে বাসায় কয়েকটা ফ্যামিলি ভাড়া থাকে। তাদের সাথে ভাড়া নেয়া ছাড়া তো আর তেমন কথাই হয় না! “নাহ, এখন থেকে ভাড়াটিয়াদের সাথে সামাজিক হতে হবে”-সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
“তা সালমান শাহ, তোমার এই নাম কে রাখসে?”-ছেলেটাকে প্রশ্ন করেন।
-“মামা, আমার আম্মা।”
“সালমান শাহ কে ছিল জানিস?”
-“জ্বি চিনি, যেই বছর নায়ক সালমান শাহ মরসিলেন ঐ বছরই আমার জন্ম। আম্মা আসিলো তার বই এর বড় ভক্ত। অনেক কানসিলেন। তার দুই মাস পর আমি হই। আমার নাম রাখেন সালমান শাহ।”
মাহমুদ সাহেবের ওই সময়ের কথা মনে পড়ে যায়। আসলেই কথা সত্য। নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুতে দেশে একটা আলোড়ন পড়ে গিয়েছিলো। কয়েক মাস তার মৃত্যুকে ঘিরে চলেছিলো নানা গুজব । প্রায়ই পেপারে প্রিয় নায়কের মৃত্যুর জন্য ভক্তদের আত্মহত্যার কাহিনী আসতো। তিনি নিজেও বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন। তখন পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাঝে মাঝেই প্রেমিকাকে নিয়ে বলাকায় সালমান শাহ’র সিনেমা দেখতে যেতেন। সিনেমা শেষে তারা নীলক্ষেতে তেহারী খেতেন। আহা, কত সুন্দর দিন গুলো ছিলো। মনে আছে সালমান শাহ’র মৃত্যুর দুইদিন পর গিয়েছিলেন রোকেয়া হলের গেটে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে,প্ল্যান ছিলো তাকে নিয়ে ঘুরবেন রিকশায় । প্রেমিকা আসার পর দেখেন তার চোখ ফুলা। কারণ হিসেবে বলেছিলো প্রিয় নায়কের মৃত্যু, দুইদিন ধরেই নাকি কেঁদেছিলো সে। এমনই একজন নায়ক ছিলো আমাদের সালমান শাহ।
“মামা যাইগা, প্ল্যাইটটা পরে নিয়া যা্মু “-বলে বিদায় নিলো সালমান শাহ।
*******************************************************************
(দুই-তিন মিনিটের খন্ডদৃশ্য গুলো যথাক্রমে এমজিসিসি’র শর্মিলী আনোয়ার আপা ও বিসিসি’র মাহমুদ হাসান ভাই কে নিয়ে লেখা)
:clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂
ভাল্লাগছে ভাই।
সালমান শাহ আসলেই একজন অসাধারণ নায়ক ছিলেন। উনি থাকলে এখনকার শাকিব, অনন্ত কেউই সিনেমা নিয়ে ফাইজলামি করতে পারতো না। :boss:
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
ধন্যবাদ 🙂
:clap: :clap: :clap:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
🙂
দারুন :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
🙂 ধন্যবাদ ভাই।