১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। কত আলোচনা, সভা, বিশেষ দিনগুলো সুন্দরভাবে পালন করা সহ কত কবিতা-গান তৈরী করা, সেগুলো উপস্হাপন করা, নাটক-সিনামা তৈরি করা, তার জন্য কত নিত্য নতুন পোশাকের ধরন, কালার নির্বাচন, শরীরের বিভিন্ন স্হানে পতাকা ও বাংলার বিভিন্ন চিন্হসহকারে বহুরকম ট্যাটো আকা, বইমেলা, বিজয়মেলা, পিঠামেলা এবং সৃত্নিচারণসহ অনেক কিছু করে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য কত চেষ্টা করা। কিন্তু এখন আমার কথা হল, আমাদের এই ঐতিহ্য পালন করলেও আমরা কি সঠিকভাবে মর্যাদা দিয়ে একে মূল্যায়ন করি? সঠিক দেশপ্রেম আমরা কতজন মনে মনে ধারণ করি? আমাদের বাংলাদেশ, বিশ্বের একমাত্র দেশ যে দেশ নিজেদের সন্মান, নিজেদের ভাষা, নিজেদের জাতিকে বিশ্বের কাছে স্বীকৃত করতে কত বড় বড় বিসর্জন দিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন যেসব পরিবারগুলো। হারিয়েছেন বাবা-মা, স্বামী, সন্তানসহ অনেক প্রিয় মুখগুলো, এমন কি কোন কোন নারী নিজেদের সম্ভ্রম, যা কিনা অপূরণীয়ই রয়ে যাবে, সে সকল প্রাণগুলোর কাছে। তাদের পরিবারগুলো আস্তে আস্তে একদিন ফুরিয়ে যাবে, শেষ যে বংশধরগুলো থাকবে, সময়ের সাথে সাথে তারাও একদিন ম্লান হয়ে যাবে। অনেকেই হারিয়ে গেছেন,সেই অস্তিত্বকে ধরে রাখতে সংগ্রাম করে সবাই সফলতাকেই দেখতে চান। বিজয় দিবসে যে বিজয়কে আমরা অর্জন করেছি তার যথাযথ মূল্য কতটুকু রাখতে পেরেছি? আমরা বাংলাদেশী মানুশেরা শত্রুমুক্ত হতে কিন্তু আজো পারি নাই। শত্রুরা কিন্তু আজো পুরোপুরি বিদায় নেয় নাই। তারা আমাদের সাথে কোথাও না কোথাও মিশে আছে। আমরা এখনো তো আমাদের শত্রুদের মোকাবেলা করছি। তাদের অনেকেই আমাদের আসেপাশে ঘুরাঘুরি করছে। আমি পারসোনালি বলি, ১৯৭১ এ আমার বাবার বয়স ছিল ১১-১৩ বছর। তখনকার অভিজ্ঞার গল্প অনেকবার শুনতে শুনতে মনের ভিতরে অদ্ভুত রকমের কি যেন একটা তৈরি হচ্ছিল। আমার স্কুলে class four এ পড়ার সময় মাই ওন কান্ট্রি নিয়ে লিখেছিলাম। খুব বাহবা পেয়েছিলাম, তারপরে নাইনে উঠে দেশকে নিয়ে গুছিয়ে কিছু কথা স্কুল ম্যাগাজিনে দিয়েছিলাম। তখন স্কুলের গুরুজনেরা সবাই বলেছিল অন্যদেশে থেকেও তোমার ভিতর এবয়েসেই এত দেশপ্রেম কিভাবে জন্ম নিলো? তুমি তোমাদের দেশের জন্য অবশ্যই কিছু একটা কবরা। দেশের ভালমন্দ সর্বক্ষেত্রে নিজেকে বিলিয়ে দিবা। তখন থেকেই ফীল করতাম আমি বাংলাদেশকে অনেক ভালোবাসি। কি করলে দেশ সেবা করা যায়? কিছুই মাথায় আসে নাই। যখন গ্রাজুয়েশনের জন্য বিভিন্ন সাবজেক্ট নিয়ে ভাবছিলাম, তখন আমার মা বলল এভিয়েশন কর। এটা করেও দেশ সেবা হয়। কিন্তু মনে মনে ইচ্ছা ছিল অন্য কিছু করার। ঠিক করলাম, বাংলাদেশ আর্মিতে পরীক্ষা দিবো। দেশে যুদ্ধ লাগলে যুদ্ধ করে দেশকে রক্ষা করবো। অল্প বয়েসের একরকম ইমোশন আরকি। যাই হোক, একসময় এফেয়ার করে বসলাম। ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করে ফেললাম। তানভীরকে যখন আমার সব কিছু বললাম ও ভীষণ খুশি হল আর বলল যে, তুমি আমাকে সব কাজে উৎসাহ দিয়ে যেও আমি যেন ঠিক মত দায়িত্ব সহকারে অফিসের কাজগুলো গুছাতে পারি। আমাকে এভাবে সাহায্য করাটার মধ্য দিয়েও তো তুমি দেশ সেবা করতে পারো। চুয়াডাঙ্গা থাকতে ও স্মাগলার আর স্মাগলিং এর জিনিস ধরতে যেত, তখন ওকে অনেক থ্রেট করা হতো। খুব ভয় পেতাম ঠিকই কিন্তু ও যখন বাহবা পেত নিজে অনেক গর্ববোধ করতাম। ঈদের আগের রাতগুলো অনেক বেশী আতংকে থাকতে হতো, কারণ বি এস এফ ফায়ারিং করতো। ও জানার সাথে সাথে ছুটে যেত আর বলত রণা দোয়া করো যেন কোন ভুল না হয় আমাকে দিয়ে। যখন ও সফলভাবে আমার সামনে আসত আনন্দে মনটা ভরে যেত। আল্লাহর রহমতে আমার দুইটা ছেলে হবার পর দুইজনই ভাবলাম একদিন তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট ন্যাশনাল টিমে ওরা খেলবে। সেভাবেই গড়ে তুলবো ওদেরকে। সব জায়গায় ওরা প্রতিভার সাক্ষর রাখবে আর বিশ্বের কছে বাংলাদেশের অনেক নাম করাবে। আমাদের সমস্ত চিন্তার মধ্যে থাকত দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু একটা করার। বিএসএফ এর পোগ্রামে গিফ্ট হিসাবে ব্যাটেলিয়নের পক্ষে নিজে পছন্দ করে জামদানী শাড়ী, বাংলাদেশী তাতের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম বাংলাদেশী জিনিসপত্র দিয়ে বাঙ্গালী ঐতিহ্য তাদের কাছে তুলে ধরাটাই আমার কাছে ছিল অনেক বেশি ইমপর্টেন্ট। আমি আমার সেই পুরানো কথাগুলো মনে করি আর ভাবি কিছুটা হলেও তো দেশের জন্য কিছু করেছি। ওর বিডিআর এ পোষ্টিং হওয়ার পর থেকেই অনেকবার চাকরী ছেড়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তারপরেও চাকরী যেন করে তার জন্য ওকে বলতাম-বুঝাতাম, তুমি যদি আজকে জবটা ছেড়ে দাও তাহলে তোমার দেশকে তুমি কি দিতে পারলা? হায়রে আমার দেশপ্রেম, আজকে আমিও তো এই দেশের জন্য আমার প্রাণপ্রিয় হাসবেন্ডকে হারিয়েছি। ও যদি জব লীভ করতো তাহলে কি আমি ২৫ বছরের বিধবা নারী হতাম, আমার মাসুম বাচ্চারা যারা বাবা কি বুঝলো না তারা কি এতিম হতো? বিডিআর পিলখানার এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের কাহিনী তো এই স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষেরাই ঘটালো। তাদের মত সৈনিকেরা ছিল বংলাদেশের সীমান্তের রক্ষক। তাদের এই কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে কি প্রমাণিত হল? বালাদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, মিটিং-মিছিলে, জনসভায় গ্রেনেট ফায়ার, গোলাগুলি। গ্রামে-গঞ্জে বাবার হাতে সন্তান, সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন। নিকট আত্নীয়ের মধ্যে মারামারি, কোপাকুপি।দেশের অসহায় নারীরা স্বামীসহ অনেক বখাটে মানুষের দ্বারা এসিড নিক্ষেপের স্বীকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিপদের স্বীকার হচ্ছেন। শিশুদের পরিচয় নিয়েও অনেকের সন্তানকে মাথা উচু করে বাচার সুযোগ আমদের সমাজ দেয় না। ছোট ছোট বাচ্চারা শিশু শ্রম করছে। নাবালিকা মেয়েরা বাল্য বিবাহে স্বীকার হচ্ছে। অনেকেই শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেনা। মা-বাবা ছাড়া, স্বামী হারা মানুষদের সন্মান সহকারে বাচার সুযোগ সমাজে সঠিকভাবে কতজন পাচ্ছে? এই সমাজকে তৈরী করেছে এই স্বাধীন দেশের মানুষেরাই। তাদের এত বদারেশন দিবস পালন নিয়ে। কিন্তু কতজন আছেন যারা, দেশকে ভালোবেসে ক্ষনিকের স্বদেশী হিসাবে নয়, যথার্থ ভাবে বুকের ভিতর থেকে দেশকে ভালবাসা প্রদর্শন করে প্রতিটা মানুষ একটা করে ভাল কাজকে সমর্থন দিয়ে যান? প্রতিদিন যদি দেশ সেবাকে প্রত্তখ্য-পরোক্ষ যে কোন ভাবে চাওয়া-পাওয়া করার মধ্যে থেকে ধরে ধরে রাখা যায়, তাহলেই স্বাধীনতা-বিজয়ের আসল স্বাধ উপলব্ধি করা যাবে, সাধীন দেশের আসল প্রাপ্তিটা তখনই আসবে। চলুন না আমরা শপথ নেই আর কোন খারাপের মধ্যে নয়, স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে মনের ভিতরের দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তুলি।
২২ টি মন্তব্য : “শপথ”
মন্তব্য করুন
আমাদের একজন প্রিন্সিপাল স্যার বলতেন তোমার যা করা উচিত তা করা এবং যা করা অনুচিত তা না করাই হচ্ছে দেশপ্রেম...দেশের জন্য এর বেশী কিছু করার নেই আমাদের!
আর আমার মনে হয় জাতি হিসেবে আমরা খুব নির্বোধ।আমাদের আবেগ কমিয়ে জ্ঞানী হওয়া উচিত!এছাড়া এসব লেখা পড়ে আর কিছু করার পথ পাই না!
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
১০০% খাটি কথা...দেশপ্রেমের জন্য সবাইকে বুকে গুলি খেতে হবে...এমন কোনো কথা নেই...সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা যদি হাতের ময়লাটা রাস্তায় না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলি...তবে সেটাও দেশপ্রেম...
আমি কিছু বুঝলাম না। 😮
খুব ই সঠিক বক্তব্য। প্রত্যেকে ব্যাক্তি পর্যায়ে সত এবং আন্তরিক হইলে দেশ প্রেম দেশ প্রেম বলে চিতকার করাও লাগে না আর এত ঘটা করে দিবস পালনের পর দেশের এই অবস্থা ও হয় না ।
:boss: :boss: :boss: :boss:
ভাবি,তোমার লেখাটা পড়ে কখন যে চোখে পানি চলে এল।স্কুল কলেজে থাকার সময় রক্তে রক্তে একটা অনুভূতি কাজ করতো,দেশের জন্য একটা কিছু করার।কত কিছুই না মাথাই আসতো।খুব সৎ ইচ্ছা নিয়েই মেডিকেল এ ভর্তি হই।দেশের জন্য কিছু করবো ভেবে।কিন্তু এখানে এসে দেখি কল্পনা আর বাস্তবে কত তফাত।দলাদলি,ছাত্র রাজনীতির নামে অরাজকতা,ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রদের সারা বছর ক্লাস না করেও পাস করা,আর জনসেবার নামে নিজের পকেট ভারী করা,অসহায় মানুষ গুলো একটু ভালো চিকিৎসার আশায় অমানবিক ভাবে হসপিটালের ফ্লোর গুলোতে শুয়ে থাকা,এই সব এ আসল চিত্র।তাই খুব ভয় হয় ভেবে,এদের সবার চেয়ে আলাদা হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে পারবো তো??
মনের অনুভূতিগুলো চমৎকারভাবে তুলে এনেছো প্রেরনা। তোমার মতো করে সবাই ভাবতে পারলে দেশটা অনেক এগিয়ে যেত। লিখে যাও। শুভকামনা। :hatsoff:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
তোমার নামের বানান ভুল লিখেছি প্রেরণা। দুঃখিত। ভবিষ্যতে আর হবে না।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সমস্যা নাই দুইটাই হবে। আচ্ছা ভাইয়া আমাকে একটা খবর পড়া অথবা রেডিও জকির চাকরী দিবেন। আমার খুবই সমস্যা হচ্ছে মেনটেইন করতে।
:hatsoff:
আমরা অনেকে আমাদের মনের কথাগুলো ব্লতে পারি না............আপনি খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন......... :hatsoff:
🙂
:salute: :hatsoff:
Life is Mad.
:hatsoff:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
:hatsoff: খুব সুন্দর করে লিখেছেন ভাবি :hatsoff:
:salute:
আমি কি অনেক কঠিন কিছু লিখি? 🙁 সবার কমেন্ট এত বেশি আমার অনেক কম। :-B
ভাল লিখেছেন, অনুভূতিটা উঠে এসেছে লেখায় :hatsoff:
আমার বন্ধুয়া বিহনে
:hatsoff:
কেমন আছিস আপু?
কিপটুস ফোন দিলে কি হয়? :hug: :hug: :hug:
ভাবী অনেক স্বপ্ন নিয়ে ক্যাডেট কলেজ পাস করার পর আর্মিতে এসেছিলাম। কষ্ট লাগে আপনার লেখা পড়লে।
আদনান ভাই আমার কথা পড়ে মন খারাপ করবেন না। সঠিক চিন্তায় এগিয়ে গেলে কেউ না কেউ তো এই নোংরা সমাজকে সুন্দর রুপ দিতে পারবে।