ভর দুপুরে রিকসায় কোথাও যাচ্ছিলাম। প্রচন্ড রোদে এমনিতেই খুব খারাপ লাগছিল,তার উপর ভাড়া নিয়ে যখন অহেতুক কিছু বাড়তি কথা হলো তখন মেজাজ নবমে না চড়ার আর কোন যুক্তিসংগত কারন ছিলনা। ফিরতি পথ ধরার সময় খেয়াল করলাম রিক্সার পেছনে বড় করে লেখা, বাস্তবতা বড়ই কঠিন। অনেক দিন পর নীজের মনেই হেসে উঠলাম,মেজাজ এর মিটার রিডিংটাও ধপ করে তলানিতে পড়ল। সৃষ্টিকর্তা বোধহয় এইভাবেই মানুষকে জীবনের অর্থ মনে করিয়ে দেন,দুর্ভাগ্য যে কম সময়ই আমরা তা বুঝতে পারি।
অনেকদিন পর সিসিবিতে আসলাম। আর তারও অনেক অনেক দিন পর কিছু লিখতে ইচ্ছে হল। ব্যস্ততা একটা কারন, আরও কোন কারন আছে কিনা সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি। একটু ভেঙ্গে বলি, সেদিন এক নবাগত অফিসারের সাথে কথা বলছিলাম। কথায় কথায় যখন জানলাম ১৯৯৫ সালে সে খুব ছোট ছিল কারন তার জন্ম ১৯৯২ এ, তখন অবাক হয়ে তার দিকে তাকানোর বদলে একবার নীজের দিকেই তাকালাম। ১৯৯৫ এ আমরা কলেজে জয়েন করি। জেনারেশন গ্যাপ কথাটা কি আমাদের জন্যও প্রযোজ্য হতে শুরু করল নাকি? মনে পড়ল আমার প্রথম সিওর কথা, তাকে যখন বলেছিলাম আমার জন্ম তারিখ, তিনি সবাইকে ডেকে হাসতে হাসতে বলছিলেন আমার জন্মের আগে তিনি কমিশন পেয়েছেন। আমি আমার প্রথম সিওর কথা অবশ্য কখনো মনে করতে চাই না। ভয়ে, সারের না, নীজের। কর্নেল এনায়েত সারের ডেডবডি টাই প্রথম ভেসে আসে, ২৫ ফেব্রুয়ারি তে। আমি অবশ্য এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছিনা।
আমার খুব প্রিয় একজন লেখক এরিক মারিয়া রেমার্ক, এর আগে একটা ব্লগে এ নিয়ে লিখেছিলাম। বিশেষ করে অল কোয়াইট ইন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, দি রোড ব্যাক, থ্রি কমরেডস, জন্ম মৃত্যু ভালবাসা বই গুলোর আমার ভিতরে কতটা প্রভাব ফেলেছে সেইটা সম্ভবত বাইরে থেকে কেউই বুঝতে পারবেনা। সম্ভবত সবচেয়ে নিকট জনও না। ব্লগের কমেন্টস গুলো থেকে তখন দি ব্ল্যাক ওবেলিস্ক পড়ার উতসাহ পাই। তারও প্রায় পাঁচ বছর পর, এই একটু আগে দি ব্ল্যাক ওবেলিস্ক শেষ করলাম। রেমার্ক কে নিয়ে নতুন কিছু বলা পুরানো কথারই পুনরাবৃত্তি। আমার কাছে রেমার্কের একেকটা বই টাইম মেশিনের মতো, একদম ঐ সময়ে নিয়ে যায়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের উত্থান এবং জার্মানদের আবার এমন একটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পটভূমিটা ইতিহাসের পাতায় পড়েছিলাম, এবার মনে হলো নীজ চোখে দেখে আসলাম। ইতিহাসের এই অংশটার প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণের পেছনে অবশ্যই এই বই গুলোর বড় অবদান আছে।
তবে দি ব্ল্যাক ওবেলিস্কটা তুলনামুলকভাবে অনেক সফট, কারন হঠাত করেই কয়েকদিন আগে রেমার্কের আরেকটা বই দি স্পার্ক অফ লাইফ পড়লাম। বাংলা নামটা সম্ভবত শ্রমশিবির। বাকরুদ্ধ হওয়ার মত বই। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের বেচে থাকার কি প্রবল আকুতি, আবার সেই একই মানুষের নির্মমতার কি বিচিত্র পদ্ধতি। রেমার্কের চেয়ে আর কেউ মনে হয় এতো জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলতে পারতো না। সব মিলিয়ে রহস্যময় জার্মানদের আরো রহস্যময় লাগে। কিছুদিন আগে নেটে একটা সাইটে পড়ছিলাম, ২য় বিশ্বযুদ্ধের অনেক রহস্যের একটি হলো, কেন জার্মান সেনারা বার্লিন পতনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত লাস্ট ম্যান লাস্ট বুলেট ফাইট দিয়ে গেল। যদিও তার অনেক আগ থেকেই তাদের পতন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সত্যি বলতে সেনাবাহিনীতে আছি জন্যই আমি আরো ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারি, ব্যাপারটা কতটা বিস্ময়কর। ধাঁধা আরেকটা থেকে যায়, ক্রেডিটটা কার, জার্মানদের নীল রক্তের নাকি এডলফ হিটলারের রহস্যময় নেতৃত্বের?
কিছুকিছু ভাললাগার জিনিস প্রিয় কিছু মানুষদের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা করে। এরিক মারিয়া রেমার্ক আমার জন্য তেমনি একটা অনুভুতি, আর এই ব্লগ হলো সেই শেয়ার করার প্রিয় মানুষজন। তাই আসলে ভালমন্দ বাছবিচার না করেই যা মনে আসলো লিখে ফেললাম, এই ভরসায় যে এই ব্লগের একেক প্রডাক্ট একেকরকম হলেও কারখানা যে একই।
::salute::
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
অনেকদিন পরে স্যার, লেখা ভাল লাগলো। 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:thumbup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:thumbup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রেমার্কের ঐগুলা তো ১ম বিশ্বযুদ্ধের। হঠাৎ ২য় টার কাহিনী আনলা!
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
স্পার্ক অফ লাইফ বইটা ২য় বিশ্বযুদ্ধের উপর লেখা
পড়ি নাই 🙁
পড়ে ফেলা উচিত। বইগুলো কোথায় পাওয়া যেতে পারে ভাই?
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য