আমাদের ক্যাডেট লাইফ এ (১৯৮৬-৯২) আমরা প্রিন্সিপাল পেয়েছি ৩ জন। তিন জনই সিভিলিয়ান। ক্যাডেট জীবনের শুরুতে আমরা ক্লাস সেভেন এ পেয়েছি মোফাজ্জল করিম স্যারকে। তিনি ছিলেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রকল্প পরিচালক এবং অধ্যক্ষ। আমাদের সমকালীন বরিশাল ক্যাডেটের সবচেয়ে জাঁদরেল প্রিন্সিপাল ছিলেন মোফাজ্জল স্যার। তাঁর ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খাওয়ার মত অবস্থা। সম্ভবত তিনি ছিলেন ক্যাডেট কলেজের প্রবীন শিক্ষকদের একজন। ফৌজদারহাট ক্যাডেটের শিক্ষক থাকাকালীন নাসিম (সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিম) ছিলেন তাঁর ছাত্র। তাই ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা পর্ষদেও তাঁর ছিল যথেষ্ট প্রভাব। প্রিন্সিপাল প্যারেড এ টার্ন আউট ইন্সপেকশানের সময় কোনও ক্যাডেটের সু-পলিশ পছন্দ না হলে তিনি পা দিয়ে মাড়িয়ে দিয়ে বলতেন-“কিচ্ছু হয়নি, মুখ দেখা যাচ্ছেনা”! তিনি চাইতেন সু’র টোতে তাঁর চেহারা আয়নার মত ভেসে উঠবে। মোফাজ্জল স্যারকে আমরা কেবল ৩ মাস পেয়েছিলাম। ভাগ্যিস ৩ মাস! ক্যাডেটদের একাডেমিক রেজাল্ট এর চেয়ে ডিসিপ্লিনটাই ছিল মোফাজ্জল স্যারের কাছে মুখ্য। কথা-বার্তায় স্যারকে সৌম্য-শান্ত মনে হলেও অ্যাডমিনিষ্ট্রেটর হিসেবে ছিলেন হিমালয়ের মতই ইস্পাত কঠিন এবং অবিচল। মোফাজ্জল স্যারকে আবার দেখলাম ২০০৬ সালের রি-ইউনিয়নে, বয়সে আরও প্রবীণ, বিরল কেশ আর শিশুসুলভ কোমলতা তাঁর চেহারায়। আমাদের ক্যাডেট জীবনের শৈশবেই মোফাজ্জল স্যার বদলি হয়ে চলে গেলেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে, তাঁর জায়গায় এলেন মির্জাপুর থেকে আব্দুর রব স্যার। স্যার ছিলেন আগাগোড়া ভাল মানুষ, একজন পারফেক্ট জেন্টলম্যান। ক্যাডেটদের জন্যে তাঁর মূলমন্ত্র ছিল “Study…study and study”. অল্প সময়ের মধ্যেই কলেজ লাইব্রেরী অনেক নতুন নতুন বইয়ে ভরে ঊঠলো। পাবলিক পরীক্ষাগুলোর মেধাতালিকায় বরিশাল ক্যাডেট কলেজের নাম একই বোর্ডের (তখন বরিশাল বোর্ড ছিলনা, দুইটা ক্যাডেটই যশোর বোর্ডের আন্ডারে ছিল) ঝিনাইদহ ক্যাডেটের সমান কাতারে চলে আসলো। যে কোনও কারনেই হোক (আমাদের জ্ঞানে সম্ভবত প্রশাসক হিসেবে তিনি ততোটা কঠোর ছিলেননা বলেই) তাঁকে Force Retirement এ পাঠানো হলো। আমার মনে আছে তাঁর ফেয়ারওয়েল এর দিন সামরিক কায়দায় হাতে ঠেলে আমরা তাঁকে বহনকারী গাড়ি কলেজ গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিলাম। রব স্যারের সাথে আরেকবার দেখা হয়েছিল ন্যাশনাল ব্যাংক পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে, আমাদের উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট এর পরে তাঁর সাথে আমরা কয়েকজন দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন। তিনি তখন ক্যাডেট কলেজের চাকরী ছেড়ে ঐ কলেজে অধ্যক্ষ। রব স্যার চলে যাবার পর আমাদের প্রিন্সিপাল হয়ে এলেন মাস্উদ হাসান স্যার (যতদূর মনে পড়ে এর আগে তিনি ঝিনাইদাহ্র ভাইস-প্রিন্সিপাল ছিলেন)। মাস্উদ হাসান স্যারের মধ্যে দুইটা গুনই ছিল। উনি লেখা-পড়ায় যেমন উৎসাহ দিতেন, তেমনি প্রশাসক হিসেবেও ছিলেন দক্ষ। তবে এবার শুরু হলো নতুন অত্যাচার। মাস্উদ স্যারের সাবজেক্ট ছিল ভূগোল। সপ্তাহে একদিন উনি আমাদের এক্সট্রা ক্লাসে ভুগোলের জ্ঞান দেয়া আরম্ভ করলেন। কোনও এক আন্তঃ হাউজ গল্প বলা প্রতিযোগিতায় আমাদের এক ব্যাচ জুনিয়র মাসুদ গল্পকে টানতে টানতে এক পর্যায়ে বললো, “এক চোর ডাব চুরি করতে গেছে, ডাব গাছের কাছেই এক হুজুর ফয্রের আযান দিচ্ছিলেন, তো চোরকে ঠেকাতে হুজুর আযানের মাঝেই বলে উঠলেন- হাইয়ালাস্ সালা…ডাব পাড়ে কোন শালা”। সে যাই হউক, এক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা শেষ হলো। যথারীতি রিভিউ করতে এসে মাস্উদ হাসান স্যার বললেন, “ঐ যে মাসুদ বলে গেল………হাইয়ালাস্ সালা……ডাব পাড়ে কোন কে…এই কথাটা বলা তার মোটেও উচিৎ হয়নি।” যদিও আমরা Passing Out এর আগে জানতে পেরেছিলাম যে উনি কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে বদলি হয়ে যাচ্ছেন; মাস্উদ স্যারকে আমরা ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্তই পেয়েছিলাম। Passing Out এর দিন প্রিন্সিপালের বাসায় Garden Party তে
১৬ টি মন্তব্য : “প্রিন্সিপাল কড়চা”
মন্তব্য করুন
ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষের ভূমিকা বিশাল। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের যেমন হওয়ার কথা তেমনই। বাংলাদেশের সরকারী ভার্সিটিগুলোতে উপাচার্যের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করা হয়। কিন্তু কলেজ পর্যায়ে অধ্যক্ষ হয়ে ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ কলেজটিকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে পারেন।
তবে সবার মধ্যে কলেজকে নিজের আদর্শে গড়ে তোলার চেতনা থাকে না। যাদের মধ্যে থাকে তারাই বস।
Force retirement? দুঃখজনক।
..
মাসউদ হাসান স্যারকে আপনি পেয়েছেন আপনার বার্ধক্যে, আর আমি পেয়েছি আমার শৈশবে। বিদায়ের সময় কুমিল্লায় প্রতিটি মানুষ তাঁর প্রশংসা করেছিলো।
আলম,'৯৭কুমিল্লা
@ Mahmudul Alam
মাস্উদ স্যারকে আমরা ক্লাস নাইন থেকে পেয়েছি। পুনঃশ্চ যদি ধরেও নেই তোমার কথা সত্য, তাহলে আমরা তাকে আমাদের ক্যাডেট জীবনের বার্ধক্যে পেয়েছি, আমার বার্ধক্যে নয়। I am still young Mahmud! 🙂 ain't I? আর তুমিও তাঁকে তোমার ক্যাডেট জীবনের শৈশবে পেয়েছ, ঠিক কি না? তোমার শৈশবে নয় নিশ্চয়ই।
😉
আমি এদের কেউ কেই পাই নাই তাহলে কি এখনও আমার জন্ম হয় নাই 🙁
সাব্বির
(বকক/শেবাহা/২০০১)
@ sabbir
তোমার যদি জন্মই না হইবে, তাহা হইলে তো আমরা এক্ল ক্যাডেটের প্রেতাত্না হইয়া ক্যাডেট কলেজ ব্লগ এ দিব্যি ঘুরিয়া বেড়াইতেছি!! 😉
সহজ কথা নিয়েও মজা। এ শুধু বাংলাতেই সম্ভব।
lolzz
আমরা ৯৫-এ কলেজ এ গিয়া শামসুদ দোহা স্যার কে পাইছি প্রিন্সিপাল হিসাবে। ওনার মত ভাল মানুষ হয় না। যা বলতাম তাতেই রাজী। দুঃখজনক হলো আমরা ওনারে মাত্র এক-দেড় বছর পাইছিলাম। এই বার reunion'08 এ স্যার এর সাথে দেখা হইছে। খুব ভাল লাগছে।
@ মডারেটর
ইদানিং ক্যাডেট কলেজ ব্লগ এ এক্স-ক্যাডেটদের প্রেতাত্না আনাগোনা করিতেছে! তদ্রুপ জন্ম হয়নাই এইরুপ এক্স-ক্যাডেটদেরও দেখা যাইতেছে। যাহারা শিশু এক্স-ক্যাডেট অথবা যাহাদের জন্মই হয়নাই তাহাদের ইহাদের ভয়ে ভীত হইবার কোনও কারন নাই, কারন ক্যাডেট-ক্যাডেট ভাই-ভাই (কখনওবা ভাই-বোন!) তাহা যাই হউক না কেন-প্রেতাত্না, ভ্রুণ অথবা শিশু। 😉
শফি
বকক/শেবাহা/১৯৮৬-৯২
মডারেটর রে এর মধ্যে টানার মানেটা কি।আমি ভুতের ওঝা না তো।বরং ওসব এর কথা শুনলে একটু ভয় ভয়ই লাগে 🙁
তারচে ভাল আপনারা ভুত প্রেত আর অনাগত শিশু ভ্রুণ মিলেই সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেন 😉
শামসুদ্দোহা স্যারকে আমরা পাইছি ভাইস-প্রিন্সিপাল হিসাবে। উনি খুবই সজ্জন ছিলেন। ওনার হাঁটার একটা বিশেষ ভঙ্গী ছিল, যা দেখে আমাদের Scooby-Doo র ব্যান্ডেজে জড়ানো Mummy Ghost গুলার কথা মনে পড়ে যেত। ওনার একটা নামও চালু হয়ে গিয়েছিল কলেজে। সেটা না হয় নাইবা বললাম।
শফি
(বকক/শেবাহা/১৯৮৬-৯২)
yes ভাইয়া,
আমরাও ওই নাম এ ডাকতাম। সংখেপে "ডেবু"।
সাব্বির
(বকক/শেবাহা/১৯৯৫-০১)
আমরা পেয়েছিলাম দুইজনকে।
একজন রইস উদ্দিন স্যার আরেক জন রফিকুল ইসলাম।
প্রথম জন সাধাসিধা,নিরীহ গোছের।প্রিন্সিপাল এসেম্বলিতে প্রেষণা প্রদানের পাশাপাশি ধর্মীয় জিনিস নিয়ে বলতেই বেশি পছন্দ করতেন।আর ইয়ারলি বাজেট কত কম খরচ করে বেঁচে যাওয়া টাকা হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে নিজের ইম্প্রেশন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারেও তার জ্ঞান একেবারে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সাথে তুলনীয়।
দ্বিতীয় জন এর নামেই সব পরিচয় পাওয়া যায়।বিশেষত যারা তাকে কলেজে পেয়েছেন তারা খুব ভাল করে জানেন।আর যারা প্রিন্সিপাল কিংবা ভিপি হিসেবে পেয়েছেন তারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে জানেন।তারে নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করতেসেনা।ধন্যবাদ
@Zihad......rois uddin niriho lok?????class seven er viva nite ei beta amader college e aisha shukrobar din college mosque e bairer manushjon(including viva dite asha future cadet der parents) er samne khutba ditese......Cadet college e akta kharap jinish ase H*mo SE*ual tendency.....
can you believe it guys?ami emon lojja khub kom paisilam cadet life e....
রইস ছিলেন এক মহান idiot...উনার সাথে কত যে আজাইরা বিষয় নিয়ে গ্যাঞ্জাম করসি। ১২ এর শেষ escurssion এ আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে আসছিলাম। আই ঘটনা নিয়ে উনি আমাদের parents er কাছে চিঠি
পাঠাইসে আমরা একটুর জন্য college out হই নাই। parents day তে সবার মাথা গরম। পরে parents দের আমরা বুঝাইলাম চাচা একটু বেশি
smart ass হবার চেষ্টা করেছেন। এই silly cause এ কেউ out হয় না।
chot boro vai e ra ghoto na ta aro valo vabe lekhar issa silo..banglai type kora ta bishal pain..ai ghoto nar ashol moja hosse amader escurssion shesh hoyar kotha 3 tai..amra shobai timing kore akshathe keu ageo na poreo na thik 7 ta baje college bus e ashsilam and than college e 9 tai..oidin keu dinner korinai..rois faul ta amader dinner korte dei nai..
rois uddin niriho????????zihad tui ki koili eita?? uni barasal er principal silen amder 11-12 milie...r tokhn ami prep e kagoj nie ballbanano theke suru kore mosque e matha ghure pisone takanor jonne o jorimana khaisi!!!!!ei ros kemne niriho hoi????