আত্ম পরিচয়ঃ নারীর ক্ষমতায়ন, নাকি অপব্যাখ্যা?

৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবসকে উপলক্ষ্য করে মনে মনে একটা লেখা আমি প্ল্যান করেছিলাম । কিন্তু অফিসে নানা রকম ব্যস্ততার কারণে শেষ পর্যন্ত আর সময় করে উঠতে পারিনি। অবশেষে সব ব্যস্ততাকে নিস্তার দিয়ে আজকে কিছুটা সময় বের করেছি।

গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে মাথার মধ্যে কিছু ভাবনা কিলবিল করছে। সিসিবি আমার জন্য বেশ কনভেনিয়েন্ট একটা প্লাটফর্ম এসব এলোমেলো ভাবনাকে লাগাম লাগাবার।

শুরু করি গত সপ্তাহে সিএনএন-এ দেখা একটা সংবাদ-ক্লিপ বিশ্লেষন দিয়ে। আমেরিকার ডিউক ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী সম্প্রতি পর্ণগ্রাফী অভিনয়ে নেমেছে। এই ব্যপারটি নিয়ে CNN, BBC  এর মতো সংবাদ মাধ্যমগুলো রীতিমতো হইচই শুরু করেছে। মেয়েটির এমন সিদ্ধান্তের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে সে আমেরিকার ব্যয়বহুল উচ্চ শিক্ষাব্যবস্তাকে দায়ী করছে। CNN উপস্থাপক পিয়ার্স মরগানের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে সে জানায় যে, ডিউক ইউনিভার্সিটিতে  সম্মান কোর্সে পড়াশুনার খরচ বাবদ তাকে প্রতি বছর ৬১ হাজার মার্কিন ডলার টিউশন ফি গুনতে হচ্ছে শিক্ষা-ঋণ নিয়ে। চার বছরে এর পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ২৪৪,০০০ মার্কিন ডলার। এতো বিশাল পরিমানের অর্থ তার মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে জোগানো অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে সে পর্ণগ্রাফীর মত একটি পেশাকে বেছে নিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি পর্ণগ্রাফীতে অভিনয়ের মাধ্যে সে পর্ণস্টার হিসেবে বেশ পরিচিতিও অর্জন করেছে। এখানে একটা বিষয় বলে রাখি, শিক্ষাঋণের বোঝা বহন করছে আমেরিকার একটা বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী। এক জরীপে পাওয়া গেছে আমারিকার প্রতি তিন জনে দুই জন ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে তাদের শিক্ষাব্যয় চালায়। গল্পটার এই পর্যন্ত শুনলে খুব মনের মধ্যে একটা সমবেদনা জাগে। একটা মেয়ে পড়ালেখা চালানোর জন্য, জ্ঞানের আলোয় নিজেকে আলোকিত  করার জন্য বাধ্য হয়ে পর্ণগ্রাফীর মতো একটা পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।

কিন্তু গল্পের দ্বিতীয় অংশটা একটু ভিন্ন। সিএনএন-এর প্রতিনিধি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে পর্ণগ্রাফীর  মতো একটা পেশায় জড়ানোর জন্য তার অনুভূতি সম্পর্কে। মেয়েটির সহজ সাবলীল উত্তর শুনে আমি রীতিমত ভিমরী খেয়েছি- সে মনে করে পর্ণগ্রাফী তাকে empowered করেছে! এই পেশায় এসে সে আজ তার ইউনিভার্সিটি, এমনকি ফ্রেন্ড-সার্কেলে একটা special treatment পায়। সে বিশ্বাস করে যে, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিই জীবনের কোন না কোন সময়ে পর্ণগ্রাফী দেখেছে, কিন্তু সকলের সামনে একে খুব নেতিবাচকভাবে দেখে এবং দেখায়। সে আরো উল্লেখ করে যে, যেসব মেয়েরা পর্ণগ্রাফীকে খারাপ মনে করে, কিংবা একে নৈতিকতার কাঠগড়ায় বিচার করে, তারা সবাই আসলে তাকে মনে মনে হিংসা করে। কারণ, তারা তাদের বয়ফ্রেন্ড বা স্বামীকে হয়তো কখনো হাতেনাতে তার movie দেখতে ধরেছে। মেয়েটি তার আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে বারবার পর্ণগ্রাফীকে একটা শিল্প এবং অন্যান্য শিল্পের সাথে একে তুলনা করেছে; এবং এই শিল্পে জড়িত হয়ে সে নিজের এক নতুন পরিচয় খুজে পেয়েছে বলে দাবী করেছে। সে দৃঢভাবে বিশ্বাস করে যে, পর্ণগ্রাফী তাকে empowered করেছে, তাকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। শুরুতে শিক্ষাব্যয় মেটানোর জন্য বাধ্য হয়ে পর্ণগ্রাফীতে নামলেও এখন সে ব্যাপারটিকে নারীমুক্তির পথ হিসেবে দেখছে।

দ্বিতীয় ঘটনাটি আমেরিকান এপারেল এর একটা বিতর্কিত বিজ্ঞাপণ নিয়ে। কয়েকদিন আগে ইন্টারনেটে একটা ব্লগে আমার চোখ আটকে যায়। লস এঞ্জেলসে এক প্রবাসী বাঙ্গালী মেয়ে আমেরিকান এপারেল এর জিন্সের মডেলিং এ টপলেস ফটোশুট করেছে। মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী মুসলিম পরিবারের এই মেয়ের অর্ধনগ্ন ছবি এখন বড় বড় বিলবোর্ডে, ম্যাগাজিনের কভারে আর ইন্টেরনেটে বিভিন্ন ব্লগে ভীষণভাবে আলোচিত হচ্ছে।

মেয়েটির একটা ইন্টারভিউ এর কিছু অংশ পড়ে আমি স্তম্ভিত! ছোটবেলা থেকে সে ঢাকার একটা রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বড় হয়েছে। এক সময় ঢাকা থেকে মাইগ্রেট করে তারা ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে বসবাস শুরু করেছে। সেখানে হাইস্কুলে থাকাকালীন সময় পর্যন্ত সে তার বাবা-মায়ের কথা মান্য করে চলেছে। কিন্তু হঠাৎ করে তার একদিন মনে হয় এতো ধর্মকর্ম আর সংস্কৃতির নামে সে তার আত্ম-পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে। তাই নিজের আত্ম-পরিচয় সন্ধানে সে আমেরিকান এপারেলের অর্ধনগ্ন এই বিজ্ঞাপণে অংশ নিয়েছে। সে দৃঢভাবে বিশ্বাস করে যে, এই আমেরিকান এপারেলের এই বিজ্ঞাপণ তাকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। সে এখন empowered এবং emancipated; সে এখন সব ধরণের বাঁধা-বিপত্তি ও রক্ষণশীল বিশ্বাস থেকে মুক্ত।

এর আগে আমার কয়েকটি লেখায় আমি নারীবাদ, নারীমুক্তি, নারীর পরিচয়সহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তাই আজকে আর ঐদিকে যাবো না। আজকের আলোচনাতা হবে একটু ভিন্নমুখী। নারীমুক্তি ব্যাপারটি একুশ শতকে খুব হট একটা টপিক। দূর্ভাগ্যবশতঃ এখন পর্যন্ত আমাদের সমাজে ৯০% নারীর মধ্যেই এই ব্যাপারটি নিয়ে কোন সুস্পষ্ট ধারণা নেই। অনেকেই মনে করে যে নারী গতানুগতিক সামাজিক ধারণাকে  অগ্রাহ্য করে নিজস্ব ইচ্ছামাফিক একটা জীবন বেছে নেওয়ার সাহস রাখে, সেই হলো empowered. অনেকেই আবার প্রগ্রেসিভ চিন্তাভাবনাকে সাধুবাদ জানানো, নারীকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করাকে নারীমুক্তি বলে। কেউ কেউ আবার একপা’ এগিয়ে আরেকটু বেশি ভেবে বসে। পরিবার, সমাজ রীতি, প্রচলিত বিশ্বাসগুলোকে যদি বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সবার থেকে আলাদা কিছু করা যায়, তাকেই তারা নারীমুক্তি বা women empowerment এর পথ মনে করে। ডিউক ইউনিভার্সিটির সেই ছাত্রীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি অনেকটা সেরকম। সে মনে করে চিরাচরিত কিংবা প্রচলিত রীতিকে সে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পেড়েছে বলে সবাই তাকে আলাদাভাবে দেখছে, সবার থেকে আলাদা হয়ে সে নিজের আত্ম-পরিচয় পেয়েছে। অতএব, সে empowered, সে মুক্ত। এধরণের মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ আসলে self-identity আর self-isolation এর মধ্যে সব সময় confused থাকে। কুয়োর ব্যাঙ এর মতো একটা ছোট জায়গার একটা ছোট গন্ডির বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা এদের নেই। তাই নারীমুক্তির মতো একটা বিশাল মাত্রার বিষয়কে তারা পর্ণগ্রাফীর মতো একটা সস্তা মাধ্যম দিয়ে জাস্টিফাই করতে চেষ্টা করে। এদের জন্য একমাত্র সমাধান হলো counselling আর গভীর পড়াশোনা করার মাধ্যমে নিজের চিন্তার জগৎকে বিস্তৃত করা।

দ্বিতীয় ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে আমার মনে হয়েছে আমি আমেরিকার কোন টিপিক্যাল টিন-এজারের জীবন লক্ষ্য করছি। বলে রাখা প্রয়োজন, আমেরিকার প্রত্যেকটি ফার্স্ট জেনারেশন ইমিগ্রান্ট পরিবারের সবথেকে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর একটা হলো বাড়ির টিনেজারদেরকে সঠিক পথে, সাবলীল পরিবেশে, দ্বিধ্বাহীন ভাবে বড় করা। আমি নিজে আমার ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসরের সাথে ফ্রেসম্যানদের নিয়ে কাজ করেছি বেশ কিছুদিন। শুনতে অবাক লাগবে, কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমেরিকার প্রত্যেক পরিবারে  সার্চ করলে প্রতি দুইটি পরিবাবের একটিতে এমন দ্বিধ্বাগ্রস্থ, বিপথগামী টিনেজার পাওয়া যাবে। identity, empowerment, authority এইসব concept গুলো মূলতঃ পাশ্চাত্যকেন্দ্রিক। প্রাচ্যের একটা পরিবারে জন্ম নিয়ে পাশ্চাত্যের একটা সমাজের মধ্যে বড় হওয়ার মতো একটা জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে বাবা-মা’দের থেকে বাচ্চারা দূরে সড়ে যায়। বাড়ি আর বাইরে দুটো ভিন্ন আদর্শ ও পরিবেশ তাদেরকে ভীষণমাত্রায় সাংস্কৃতিক দন্দ্বের মধ্যে ফেলে। যার ফল স্বরুপ তারা নৈতিক ব্যাপারগুলোতে  দ্বিধ্বাগ্রস্থ হয়ে যায় এবং বেশিরভাগ সময় ভুল সঙ্গদোষে পড়ে আত্ম-পরিচয়, নারীর ক্ষমতায়ণের মতো ব্যাপারগুলোকে অপব্যবহার করে নিজের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে।

নৃবিজ্ঞানের ছাত্রী হিসেবে যখন ব্যাপারগুলোকে দেখি, তখন একে cultural shock অথবা adolescence adjustment issue-র মধ্যে ফেলে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। কিন্তু একজন নারী হিসেবে ব্যাপারগুলোকে বিচার করতে হলে একটাই সমাধান মাথায় আসে- আর সেটি হলো নারীমুক্তির সঠিক ব্যাখ্যা এবং এর ব্যাপক প্রচার। আর এমনটি করতে সমর্থ হলে নারীমুক্তির মতো একটা গভীর বিষয়ের অপব্যাখ্যার নজীর হতে থাকবে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত।

৬,২৫১ বার দেখা হয়েছে

৬৭ টি মন্তব্য : “আত্ম পরিচয়ঃ নারীর ক্ষমতায়ন, নাকি অপব্যাখ্যা?”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আমার কাছে দুইটা ডকু ছিলো তাতে দেখেছি অস্কারের প্যারালালে তাদেরও পুরষ্কার আছে।
    হাজার হাজার পাবলিক তাতে এটেন্ড করে।
    অনেক বিখ্যাত পর্ণস্টার দের ব্যাক্তিগ্ত জীবন দেখানো হইছে।
    শুধু নারীরাই যে অর্থের জন্য পর্ণ ছবিতে অভিনয় করে তা নয়। ছেলেরাও অভিনয় করে যে পয়সা পায় তাতে তাদের সংসার চলে।

    ব্যাপারটা হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি।
    প্রাচীন ভারতে গণিকাদের উচু চোখে দেখা হতো।
    পাকিস্থানের হীরামন্ডিতে বোধহয় এখনো লোকে গান শুনতে যায়।
    লখ্নৌ নিয়েও একই কথা।
    পিয়ার্স মরগান, সিএনএন ঐখানে দেখে কারণ এইসব দেখাইলে ব্যাবসা হবে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. শাহরিয়ার (০৬-১২)

    সহমত। :clap: :clap:

    কুয়োর ব্যাঙ এর মতো একটা ছোট জায়গার একটা ছোট গন্ডির বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা এদের নেই। তাই নারীমুক্তির মতো একটা বিশাল মাত্রার বিষয়কে তারা পর্ণগ্রাফীর মতো একটা সস্তা মাধ্যম দিয়ে জাস্টিফাই করতে চেষ্টা করে। এদের জন্য একমাত্র সমাধান হলো counselling আর গভীর পড়াশোনা করার মাধ্যমে নিজের চিন্তার জগৎকে বিস্তৃত করা।

    আমার মনে হয় এই empowerment এর অনেকটুকু জায়গা মেয়েরা নিজেরা ভুল জায়গায় খরচ করছে। এবং এই ভুল খরচের মিথ্যা বাহবা দিচ্ছি আমরা ছেলেরা।


    • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

    জবাব দিন
  3. আন্দালিব (৯৬-০২)

    নারীবাদ নিয়ে কোন নারীর চিন্তাভাবনা বরাবরই কৌতূহল জাগায়। যে দুইটা ঘটনা বললেন, সেখানে ওই নারীদ্বয়ের স্ব-ক্ষমতায়নের যুক্তিকে আপনি কিন্তু খণ্ডাতে পারছেন না।
    [কিংবা খণ্ডিয়েছেন, আমার কাছে লেখা পড়ে সেটা ধরা পড়ে নি। ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]

    পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে নারীদের মাঝে আমি অতিশুদ্ধবাদি মতামত বেশি দেখেছি। পর্নকে স্বাভাবিকভাবে অনেকেই নিতে পারেন না। অথচ পর্নোগ্রাফি সম্ভবত খুব অল্প কয়েকটা পেশার একটা যেখানে নারীর বেতন পুরুষের চাইতে বেশি। নারীরা এই পেশায় অনেক বেশি স্বাধীনতা পান, যেটা অন্য অনেক পেশায় পান না। এবং পেশার আভ্যন্তরীন ক্ষমতার রাজনীতিতে তাদের আধিপত্য অনেক বেশি থাকে।

    ইন্টারনেটের কারণে হয়তো দর্শক ও ভোক্তা নারীদের এই ধারণা আস্তে আস্তে বদলাবে। পর্নোগ্রাফিতে এখন অধিকাংশ নারীই আসেন খ্যাতি ও অর্থের কারণে (আমি হলিউডের ইন্ডাস্ট্রির কথা বলছি, অন্য দেশের কথা জানি না)। এই অভিনেত্রীরা যথেষ্ট যশ এবং খ্যাতি পান কিন্তু। একজন নারী নিজের ইচ্ছায় নিজের পেশা বেছে নিতে পারবেন, এটাও কি তার ক্ষমতায়নের মধ্যে পড়ে না?

    দ্বিতীয় যে ঘটনাটা বলেছেন, সেটা একটা কাল্পনিক ঘটনা। অ্যাপারেল হাউজটি এরকম একটি বিজ্ঞাপন বানিয়েছে, নারীটি সেখানে একটি চরিত্র। মডেলটিও বাংলাদেশি নন, একজন মধ্যপ্রাচ্যীয় জাতীয়তার নারী (কোন দেশের ভুলে গেছি)। কাল্পনিক হলেও অভিবাসী বাংলাদেশি নারী-পুরুষদের মধ্যে বাবা-মায়ের সংস্কৃতির বলয়ের বাইরে গিয়ে দাঁড়ানোর ব্যাপারটা বাস্তবেও ঘটে। আমার নিজের আত্মীয়দের মধ্যেও ঘটেছে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে ধরতে গেলে সবকিছুই ধরা যায়, তখন সংসারে শান্তি আর থাকে না। বাবা-মায়ের যেমন বুঝতে হয় যে সন্তানের জাতীয়তা আমেরিকান/পশ্চিমা এবং তাদের জন্য এটাই তাদের মাতৃভূমি(!), তেমনি সন্তানরাও বিবেচক হলে বুঝতে পারে যে দুইটা সংস্কৃতির মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলা ছাড়া তাদের বেশি কিছু করার নেই। তাদের সংকটটা এতো তীব্র, ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানসিক - যে আমি তাদের বিদ্রোহী আচরণের জন্য খুব একটা দোষ দিতে পারি না।

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    থিউরিটাক্যাল পড়াশুনা নেই, ক্ষমতায়ন বলতে আসলে কি বোঝায়?

    যে ঘটনা দুটো বললেন, সেটা আমাদের পিড়া দেবার একমাত্র কারন পর্ণগ্রাফী আর নগ্নতার প্রতি আমাদের ট্যাবুর কারনে। একজন মেয়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় একটা উপার্জন মাধ্যম বেছে নিয়েছে, যেটা তাকে সামলম্বী করছে, যেটা তাকে তার জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করছে। আমি যতটুকু বুঝি তাতে এতে ক্ষমতায়নই প্রকাশ পাচ্ছে। জিনিষটা চোখে লাগছে পর্ণগ্রাফি বলে, ন্যুড মডেলিং বলে। আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য অন্য কোন পেশা হলে কিন্তু এ নিয়ে কোন কথাই উঠতো না বরং বাহবা দিতাম। আবার এই গ্রহনযোগ্য জিনিষটাও কিন্তু একেবারে আপেক্ষিক। অনেকের কাছে এয়ার হোস্টেজ গ্রহনযোগ্য না, একটু রক্ষনশীল হলে অভিনয়, মডেলিং গ্রহনযোগ্য না আরো বেশি রক্ষনশীল হলে ঘরের বাইরে গিয়ে পরপুরুষদের সাথে একত্রে অফিস করাও গ্রহনযোগ্য না, আর সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে পরিবারের বাইরের কোন পুরুষের সামনে মুখ দেখানোও গ্রহনযোগ্য না। তাহলে ক্ষমতায়ন এর সিমানাটা নির্ধারিত হবে কোন মাপকাঠিতে?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    যে নারী তার শরীরটা নিজের ভেবে ব্যবহার করছে - এ ভাবনার কতটুকু স্বতোৎসারিত আর কতটুকু ম্যানুফেকচারড সেটা বিবেচনায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।
    নারী তার শরীর মন নিয়ে কি করবেন তা নিয়ে সমাজ ধর্ম ইত্যাদির বুলি কপচানোর দিন বিগত হলে ভালো এটা আমি মনে করি। কিন্তু এ বুলি কপচানোর বিরোধিতা শুধু বিরোধিতার জন্য ঘটলে শংকিত বোধ না করে পারিনা।
    কোন আদর্শিক সীমানা কতটুকু বেঁধে দেয়া যায়,বা আদৌ যায় কিনা জানিনা। তবে শুধু নারী বলে নয়, নারী-পুরুষ-তৃতীয় লিংগ নির্বিশেষে তার পেশায় মানবিক স্বীকৃতি আর সম্মান নিয়ে থাকুন এটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।

    জবাব দিন
  6. কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

    অনেকগুলো মন্তব্য পেয়ে বেশ ভালো লাগল যে, আমার লেখাটি অনেকের মধ্যে ভাবনার উদ্রেক করেছে। তবে মন্তব্যগুলোর মধ্যে সবথেকে উচ্চকিত ধারণাটি- যে, পর্ণগ্রাফীর মাধ্যমে নারীমুক্তির সম্ভাবনা আছে, এপথে নারী মুক্তির চেষ্টা করলে সমস্যা নেই- তা' আমার কাছে পুরোপুরি অগ্রহনযোগ্য। কেন, সেটা বলছি-

    চুরি করা অনৈতিক ও দুস্কর্ম হিসেবে সমাজে স্বীকৃত। এখন কোন ব্যক্তি যদি এই দাবী করে যে, চুরি করার মাধ্যমে সে সংসার চালাতে পারছে, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছে, বউয়ের নানান আবদার মেটাতে পারছে, অতএব চুরিবিদ্যা তাকে এম্পাওয়ারড করেছে- কেউ কি মেনে নিবেন? অবশ্যই এইরকম দাবী অগ্রাহ্য হবে, কেউই এমন দাবীর স্বপক্ষে দাঁড়াবে না। কারণ, চুরি করা মূলতঃ অনৈতিক, এবং একারণেই এটা সর্বদা পরিত্যাজ্য। একইভাবে, পর্ণগ্রাফীও অনৈতিক, পরিত্যাজ্য এবং পরিহার্য। ঠিক এই কারণেই শুধুমাত্র সাধারণ মানুষ নয়, এমনকি একজন পর্ণষ্টারও পাওয়া যাবে না যে কিনা নিজের সন্তানকে পর্ণগ্রাফীতে নামাতে চায়।

    আবার, পর্ণগ্রাফীতে নামার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে অর্থোপার্জন করা এবং নিজের পছন্দমত জীবন বেছে নেওয়াকে কেউ কেউ বলেছেন নারীমুক্তির লক্ষণ। আমার ধারণা, আপনারা পর্ণগ্রাফীর সাথে আর্টফিল্মকে এক করে দেখেছেন। পর্ণগ্রাফী নারীর শরীরকে পুরুষের "অবাধ, অবৈধ, অস্বাভাবিক যৌন আকাঙ্ক্ষার বস্তু" হিসেবে পরিবেশন করে, যেখানে মানবতা থেকে নারীকে পাশবিকতায় নামিয়ে আনা হয়। ফেমিনিষ্টদের থেকে বড় নারীবাদী এখন পর্যন্ত কেউ আছে বলে আমি জানি না। সেই ফেমিনিষ্টরাই পর্ণগ্রাফীর মধ্যে নারীকে পুরুষের ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপনের সমালোচনা করে।

    নূপুর ভাই ঠিকই বলেছেন যে, "নারী তার শরীর মন নিয়ে কি করবেন তা নিয়ে সমাজ ধর্ম ইত্যাদির বুলি কপচানোর দিন বিগত হলে ভালো এটা আমি মনে করি। কিন্তু এ বুলি কপচানোর বিরোধিতা শুধু বিরোধিতার জন্য ঘটলে শংকিত বোধ না করে পারিনা।"- শুধুমাত্র সমাজ বা ধর্ম পর্ণগ্রাফীর বিরোধিতা করেছে বলে সমাজ/ধর্মের বিরোধিতা করতে গিয়ে পর্ণগ্রাফীর পক্ষ নেওয়া আসলে 'বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা' বলেই মনে হচ্ছে। এতে নূপুর ভাইয়ের মতো আমিও শংকিত বোধ করছি। নারীমুক্তির পক্ষ নিতে গিয়ে যেন আমরা নিজেদের অজান্তেই এর বিরুদ্ধে গিয়ে না দাড়াই।

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      আপনার নিশ্চয়ই ভিক্টর হুগোর "লে মিজহাব" পড়া আছে? বলুন তো, জঁ ভালজার রুটি চুরি করা অনৈতিক নাকি নৈতিক? আপনি যে ঋজু এবং ধ্রুব নৈতিকতার অবস্থান বর্ণনা করছেন, সেটি আসলে অবাস্তব। নৈতিকতা সমাজের সাথে সাথে বদলে যায়। তাই নৈতিকতার ভিত্তিতে কোন কিছুকে খারাপ বা ভাল বলাটা ঝুঁকিপূর্ণ।

      চুরির সাথে তুলনা দিলেন, চুরি করলে একজন মানুষের প্রত্যক্ষ ক্ষতি হয়। বর্তমানে সমাজে বা রাষ্ট্রে 'লিভ অ্যান্ড লেট লিভ' নীতিকে সর্বাপেক্ষা উত্তম ধরা হয়। সেই নীতিতে চুরি খারাপ, কারণ তা আরেকজন মানুষের সরাসরি ক্ষতি করে। পর্নোগ্রাফি তো চুরির মতো না।

      পর্নোগ্রাফি যৌনতার ব্যবসা করে, এবং যৌনতার এই চাহিদা বিদ্যমান বলেই এই ব্যবসাও বিদ্যমান। যৌনতা না থাকলে পর্নোগ্রাফির উদ্ভবই হতো না। আপনি যদি মনে করেন, মানুষের সকল যৌনকামনা ও যৌনরিপু অনৈতিক, তাহলেই কেবল পর্নোগ্রাফিকে অনৈতিক বলা যেতে পারে। যেহেতু যৌনতা স্বাভাবিক প্রাণীধর্ম, সেহেতু পর্নোগ্রাফির চাহিদাও স্বাভাবিক। তবে পর্নোগ্রাফির সাথে অর্থের সম্পর্ক আছে। তাই এটা সর্বসাধারণের জন্য নয়। এর ভোক্তাকে পর্নো দেখার জন্য পয়সা দিতে হয়। সুতরাং তা সকলের জন্য উন্মুক্ত - এমন বলা যায় না। একজন ভোক্তা যদি নিজের পয়সায় পর্নো দেখতে চায়, তাহলে সেটা ঠেকানোর আমি বা আপনি কে?

      মজার ব্যাপার হলো, সমাজ বা ধর্ম কিন্তু পর্নোগ্রাফির ভোক্তাকে লক্ষ্য করে কিছু বলে না। কিন্তু কোন নারী স্বেচ্ছায় পর্নোকে পেশা হিসেবে নিলেই হা রে রে রে করে তেড়ে আসে। আমার মতে এটা সামাজিক ভণ্ডামি ও শঠতা। যৌনতার ব্যাপারে রাখঢাক আর ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা এই ভণ্ডামির পেছনে মূল কারণ।

      জবাব দিন
      • কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

        আন্দালিব,
        আপনি পর্ণগ্রাফী যে মানুষের জন্য খারাপ, তা' মানতে চাইছেন না। অথচ, এইটা পর্ণ-অভিনেত্রীদের জন্য যে অমানবিক (নারীদেহকে পুরুষের লালসার পণ্য বানানোর মাধ্যমে), সেটা ফেমিনিষ্টরা সব সময় বলে আসছে। আর পর্ণ-দর্শকদের জন্য এর ক্ষতিকারক দিকগুলো নেটে সার্চ দিলেই পাবেন। এই কারণেই, মূলতঃ ব্যবসা হলেও পর্ণগ্রাফী নিষিদ্ধ, মাদক-ব্যবসার মতো।

        আর বলেছেন যে, সমাজ পর্ণ ভোক্তাকে নিয়ে কিছু বলেনা- এইটা ঠিক নয়। না হলে দেখতে পেতেন অন্যান্য মুভির মতো পর্ণও ঘরে বসে সপরিবারে দেখা হতো। আপনি নিশ্চয়ই বলবেন না যে, সপরিবারে পর্ণ দেখাও সঠিক।

        যৌনতা অবশ্যই রাখঢাকের বিষয়, সকলকে দেখানোর নয়। এজন্যও সমাজ পর্ণগ্রাফীকে বাঁধা দিবে। এইটা যদি মানতে না-চান, তাহলে আর কি করা। আফটারঅল, আমরা ত' মানুষ, পশুপাখী না।

        জবাব দিন
        • আন্দালিব (৯৬-০২)

          চুরির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। আপনার আর্গুমেন্ট ছিল চুরি যেমন অনৈতিক, পর্নোগ্রাফিও অনৈতিক। সেই অবস্থানে থেকে আমার প্রশ্নটির উত্তর দিবেন, দয়া করে?

          দুইবার বলেছেন পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে নারীবাদীদের অবস্থান নিয়ে। আমার জানা মতে নারীবাদীরাও এই বিষয়টা নিয়ে দ্বিধাভক্ত। কেউ কেউ এটাকে নারীদের প্রতি অ্যাবিউজ মনে করেন, আবার কেউ কেউ এটাকে নারীস্বাধীনতার লক্ষণ বলে মনে করেন। এই দুই স্কুল অফ থটের মাঝে তর্কের মীমাংসা হয় নি। তাই আপনি যেমন জোরের সাথে বললেন, সেটা ঠিক নয়।

          জবাব দিন
        • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
          সমাজ পর্ণ ভোক্তাকে নিয়ে কিছু বলেনা- এইটা ঠিক নয়। না হলে দেখতে পেতেন অন্যান্য মুভির মতো পর্ণও ঘরে বসে সপরিবারে দেখা হতো। আপনি নিশ্চয়ই বলবেন না যে, সপরিবারে পর্ণ দেখাও সঠিক।

          বাজে যুক্তি।
          সন্তান দুনিয়াতে কিভাবে আসে এইটা আমার বাচ্চাকে বুঝাইতে গেলে বড়জোড় বলবো তুমি তোমার মায়ের পেটে ছিলে। ছোটজন যখন পেটে ছিলো বড় মেয়ে তখন তার মার শারিরীক পরিবর্তন দেখেছে।

          নিশ্চয়ই তাকে আমি বলবো না যে আমি এবং তার মা মিলে কুস্তি করে তাদের দুনিয়ায় এনেছি।
          এখন এই যে স্বামী-স্ত্রী কুস্তি করা এইটা কি আমাদের সমাজে অন্যায়?
          যদি তা না হয় তবে কেনো আমরা ড্রয়িং রুমে জনসমাগমে করি না!
          অবশ্যা আরব্য রজনীতে শাহেরজাদের ছোটবোন মাঝে মাঝে জেগে থাকতো। তখন শাহের জাদে তার ছোটবোন কে বলতো, তুই ঘুমা, মুখপুড়ী।


          এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

          জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    মনে হয়না এইখানে কেউ আলোচনায় পর্ণ আর আর্ট ফিল্ম এক সারিতে এনেছে>>>>>>>


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  8. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    সাধারণতঃ আমি সুমাইয়ার ব্লগে কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকি, পাছে ব্লগের উত্তাপ ঘরে চলে আসে 🙂 । কিন্তু এবার আর বসে থাকা গেল না, যখন দেখছি আলোচনা বেশ জটিল পর্যা চলে যাচ্ছে। তাছাড়া আজ বাসায় ভালোমন্দ রান্না হওয়ার কথা। কাজেই, সুমাইয়াকে রান্নাঘরে যাওয়ার সুযোগ দিতে আমি প্রক্সিতে আসলাম।-

    @রাজীব,

    যুক্তি বাজে কেন, তোর পছন্দ হয় নাই বলে? তোর কথাতেই কিন্তু এই স্বীকৃতি আছে যে, সমাজ পর্ণকে নিষিদ্ধ/অবাঞ্ছিত করে। মেয়েকে জন্ম-রহস্য জানানোর প্রসঙ্গে তুই বলেছিস

    এখন এই যে স্বামী-স্ত্রী কুস্তি করা এইটা কি আমাদের সমাজে অন্যায়? যদি তা না হয় তবে কেনো আমরা ড্রয়িং রুমে জনসমাগমে করি না!

    সমাজ ঐ কুস্তিকে অন্যায় ত' বলেই না, বরং উৎসাহ+স্বীকৃত দেয় বিয়ে নামক একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। কিন্তু তা'কে অবশ্যই প্রকাশ্যে নয়, বরং রেখেঢেকে। এইজন্যই নিজের ড্রয়িং রুমেও (তথা প্রকাশ্যে) কেউ কুস্তি করে না। করলে সমাজের চোখে তা'কে গর্হিত অপকর্ম বলে। সমাজ এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে। যৌনতাকে ঢেকে রাখার প্রয়োজনেই সমাজ পর্ণকে নিষেধ করে, বাঁধা দেয়। সবার জন্যই, পর্ণষ্টার এবং ভোক্তা উভয়কেই শাস্তি দেয়।

    @আন্দালিব,
    চুরির সাথে পর্ণের মিল এবং সেই থেকে সুমাইয়ার যুক্তির উত্তর আমি দেই, কারণ উপরের মন্তব্যটা করার আগে সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল তা'র যথার্থতা নিয়ে।

    জঁ ভালজার এর উদাহরণ দিয়ে চুরি'র নৈতিক/অনৈতিক বিচারের আগে আমাদের জানতে হবে যে, এই উদাহরণের প্রক্ষিত কি সাধারণ, না ব্যতিক্রম? নিঃসন্দেহে এইটা একটা ব্যতিক্রম উদাহরণ যেখানে একজন দাস তার জীবন বাচানোর অপরিহার্য উপায় হিসেবে চুরি করেছে। কাজেই, এইখানে জীবন বাচানো মুখ্য, সম্পদ রক্ষা নয়। ফলে, এই চুরিকে অপরাধ বলার নৈতিক ভিত্তি নেই। এটা দেখে যেকোন চুরিকে বৈধ বলার কোন উপায় নেই।

    চুরি অবশ্যই অনৈতিক, সকল সমাজে। সমগ্র পৃথিবীতে এমন কোন সমাজে নেই যেখানে চুরি অনৈতিক+পরিত্যাজ্য নয়। এজন্য প্রত্যেক সমাজেই চুরির বিরুদ্ধে নানা প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক+অপ্রাতিষ্ঠানিক আইন আছে। একই ভাবে পর্ণও মূলতঃ অনৈতিক, পৃথিবীর সকল সমাজে। এর কারণও সিম্পল- মানুষের যৌনতা রাখঢাকের বিষয় বলে, মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করার তাগিদ থেকে।

    কেউ কেউ এটাকে নারীদের প্রতি অ্যাবিউজ মনে করেন, আবার কেউ কেউ এটাকে নারীস্বাধীনতার লক্ষণ বলে মনে করেন। এই দুই স্কুল অফ থটের মাঝে তর্কের মীমাংসা হয় নি।

    তোমার উল্লিখিত দ্বিতীয় দলের দু'একটা নাম দিও ত' দেখি পর্ণকে নারীমুক্তির লক্ষণ বলায় তাদের যুক্তির ভিত্তি কি। পর্ণের মধ্য দিয়ে পুরুষের অবাধ যৌনাকাংখার জন্য নারীদেহের কমোডিফিকেশন/অব্জেক্টিফিকেশনের কথাই ত' পড়ে+শুনে এসেছি এতোদিন।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      মাহমুদ ভাই,

      সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমের বক্তারা প্রায় সকলেই নারীবাদের অপর শাখা যা অ্যান্টি-পর্নোগ্রাফিক, তাদের সাথে প্রায় চল্লিশ বছর আগে এই বিষয়ে ব্যাপক তর্কাতর্কি করেছিল। এখনো করে। সত্তুরের দশকের সেই "যুদ্ধ"কে ফেমিনিস্ট সেক্স ওয়ার নাম দেয়া হয়েছিল। আমি সেই পুরনো তর্কের কথাই বলছিলাম। এর পরে আরো বহু বহু আলাপ হয়েছে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সেগুলোকে আমলে না নিয়ে পর্নোকে সরাসরি অনৈতিক/খারাপ বলা যায় না।

      নারীদেহের কমোডিফিকেশন/অব্জেক্টিফিকেশন তো ঘটে পুরুষের মগজে। যৌনক্রিয়ায় অংশ নেয়া নারীর তাতে কী? তিনি তার যৌনতার প্রকাশ স্বাধীনভাবে করতে পারছেন, এবং তাকে পেশা হিসেবে নিয়ে যশ ও খ্যাতি, স্বীকৃতিও পাচ্ছেন। সাথে বোনাস যৌনতার স্বেচ্ছাতৃপ্তি। এই দিক দিয়ে আমি তো দেখি পুরুষের মাথায় গেঁড়ে বসে থাকা নারীর অস্তিত্বই নাই। তিনি অবলাও না, তাকে কেউ কমোডিটি হিসেবেও ব্যবহার করছে না। বরং সে নিজের ইচ্ছায় এমন পেশা বেছে নিতে পারছেন, এবং স্বাধীনভাবেই জীবন-যাপন করছেন।

      আর ইন্টারনেটের যুগে পর্নের ভোক্তা কখনই পুরুষ একা নন। প্রচুর সংখ্যক নারী পর্নো দেখেন, নারী ভোক্তার চাহিদানুযায়ী পর্নোও দেদারসে তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। সেখানে কি তবে পুরুষ কমোডিটি হচ্ছে না আপনাদের সংজ্ঞামতে? একজন নারী যখন নগ্ন পুরুষদেহ দেখছেন, তখন এই সম্পর্কে কে পুরুষ, আর কে নারী? কে কাকে অবজেক্ট বানাচ্ছেন?

      ====

      [চুরির প্রসঙ্গটাই পর্নোগ্রাফির সাথে নন-অ্যানালোগাস। তবুও...]

      জঁ ভালজা ছিলেন দারিদ্র্যের শিকার। এই একই অবস্থার শিকার হন অসংখ্য চোর। নৈতিকতার ধ্বজাধারীরা ভরপেট খেয়ে নির্ধারণ করেন জঁ ভালজা দোষী নাকি নির্দোষ (ভাবী, আপনি, আমি, ঐ গল্পের পুলিশ, উপকারী ধর্মযাজকটি... সকলেই)। যার যার অবস্থানে আমরা মনে করছি আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক। কিন্তু জঁ ভালজার অবস্থানে এগুলো মূল্যহীন। তাকে যে খাবার দেয়, তার কাছে কেবল সে-ই প্রাসঙ্গিক। তাই আপনি যে নৈতিক মাপকাঠিতে চুরিকে অনৈতিক মানছেন, জঁ ভালজার কাছে সেটা অনৈতিক নয়।
      [এই বিষয়টা আসলেই একটু অপ্রাসঙ্গিক আলাপ হয়ে যাচ্ছে হয়তো।]

      জবাব দিন
      • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

        কিন্তু মাহমুদ,
        একটি সিচুয়েশন যদি ভাবি এমনঃ
        যেখানে একজন মানুষ কারো কোন প্ররোচনা বা প্রাতরণামূলক কর্মকাণ্ড ছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে শরীর খাটাচ্ছেন অর্থ বা কোন কিছুর বিনিময়ে (যেখানে এর বাজারমূল্য অর্থকরী যথেষ্ট), সেখানে আমরা ব্যাপারটাকে নীতি/আদর্শহীন তো বলতেই পারি। কিন্তু ব্যক্তিটির এহেন আচরণের স্বাধীনতাকেও সমাজের অস্বীকার করা উচিত এটাই তোমার বক্তব্য?
        চুরি বা অন্য কোন তুলনীয় কর্মকাণ্ডের মতো এটা কি নিশ্চিতভাবেই অপরাধমূলক?

        আমার মনে হয়, আন্দালিব বলতে চাইছে - সমাজের আদর্শিক বা নীতিগত অবস্থান ধ্রুব নয়, থাকতে পারেনা। কাজেই নীতির প্রশ্ন তুলে একদাগে যৌনতার বিকিকিনিকে বাতিল করবে এমন সমাজ যেমন থাকবে, এমন সমাজও থাকবে যেখানে যৌনস্বাধীনতার কথা উচ্চারণই নৈতিক বলে গণ্য হবে।

        যেমন, সমলৈংগিক যৌনতা আমাদের দেশে এবং সমাজে শাস্তিযোগ্য অপরাধ -- বহুদেশেই তা নয়।

        আমি শঙ্কাবোধ করি যে কারণে -
        যে কোন শ্রমবাজারের মতই যৌন-ব্যবসাতেও আছে মুনাফালোভীদের ভীড়। এই আমলেও ক্রীতদাস/ক্রীতদাসী বেচাকেনা নির্বিবাদে চলছে। অল্পবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের প্রলুব্দ্ধ করে এনে ফেলা হচ্ছে ভাগাড়ের মতো একটা জায়গায় যেখান থেকে তাদের ফিরে যাবার পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
        এর সঙ্গে নারী (বা মানুষের) ক্ষমতায়নের কোন যোগাযোগ নেই।

        জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      যুক্তি বাজে তাই বাজে যুক্তি বলা।
      এইখানে কেউই বলছে না যে পর্ণোগ্রাফিতে অভিনয় মানে নারী স্বাধীনতা।
      কিন্তু অনেকেই যেটা বলতে চাচ্ছে তা হলো কেউ যদি মনে করে সে পর্ণোগ্রাফিতে অভিনয় করে নারী স্বাধীনতা পাচ্ছে তবে তাই সই।

      এইখানে স্বাধীনতা বা নারী স্বাধীনতা টা অবস্থান ভেদে বিভিন্ন হচ্ছে।

      সেইদিন আমার বৌ হঠাৎ বললো এক হিজাবী গাড়িতে করে বিড়ি খেতে খেতে যাচ্ছিলো।
      আমি বললাম, ও।

      আমি তারে কেমনে বলি, এই দেশে থাকলে মুটামুটি ৫০% এর উপর সম্ভাবনা আছে যে আমার মেয়েরা বিড়ি খাবে।
      নন বাংলাদেশি বিয়ে করবে সেই সম্ভাবনা একেবারে কম নয়।
      এমনকি লেসবিয়ান ও হতে পারে।
      আবার হিজাবী ও হতে পারে।

      এখন উপরের কোনটিতে তাদের ১৮+ হয়ে যাবার পরে কি বাধা দেয়া কি আমার পক্ষে সম্ভব!

      আরে বাবা পর্ণোগ্রাফী ফেলে রাখ, কুস্তির যে বিধিবদ্ধ পজিশন তা হইলো সো কলড মিশনারী পজিশন। তা সেইটা তো মেল ডমিনেশনেরই প্রতীক।

      পুরুষ বলছে, আমি তোমাকে দিচ্ছি।
      নারী বলছে, আমি তোমাকে নিচ্ছি।

      পুরুষ কি স্বাধীনতা, স্বাধীনতা করে চিল্লায়?
      না।
      কারণ তার স্বাধীনতা দরকার নেই।
      সে অলরেডি স্বাধীন।

      নারী স্বাধীনতা চায়/
      ভালো কথা।
      কিন্তু কার কাছে চায়?
      পুরুষের কাছে।

      সো সো কলড নারী স্বাধীনতা সুদূরপরাহত।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  9. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    শতকরা ৯০ ভাগ পর্ণ মুভি মব দ্বারা পরিচালিত হয়। নীচে এর প্রমাণের সাপেক্ষে ইউটিউবের লিংক দিলা। এবার মবের অভিধান প্রাপ্ত সংজ্ঞা দেখিঃ a secret organized group of criminals
    https://www.youtube.com/watch?v=lWaxObCxiwM


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      সেটা তো আড়ালের গল্প। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই আগে থেকে এটা সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে।
      ওপরে রাজীব যেটা বলতে চাইলো সেটা হচ্ছে, এ-পথে মানুষের নেমে পড়াটা হয়তো সিদ্ধান্ত হিসেবে সঠিক হলোনা, কিন্তু 'স্বেচ্ছা'য় যে এটা বেছে নিয়েছে তার প্রতি আমাদের বলার কি আছে বা থাকতে পারে। মানি আর না মানি, এটি তো আইনগতভাবে একটি স্বীকৃত পেশা।

      জবাব দিন
      • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

        এক্ষেত্রে নতুন করে কিছু না লিখে আমার আগের ব্লগের লেখা কপি পেষ্ট করে দিলাম।

        শিল্প আর অশ্লীলতার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? যখন একটি মেয়েকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে দর্শক মেয়েটির অনুভূতির সাথে একাত্ম হয়ে যান, মেয়েটিকে একটি মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন তখন সেটি শিল্প। একজন মেরিল স্ট্রিপ যে ভূমিকাতেই অভিনয় করেন না কেন – অভিনয় ক্ষমতার গুণে তিনি আমাদের সে চরিত্রটির প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলেন। আর অশ্লীলতা হচ্ছে এক কথায় পতিতাবৃত্তি। অনেকে আবার পতিতাবৃত্তির পক্ষে সাফাই গাওয়াটাকে আধুনিকতা বলে মনে করেন। আসলে একজন পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে এর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হবে। স্টাইনব্যাক তাঁর ইস্ট অব ইডেনে খুব ছোট্ট পরিসরে এর বর্ণনা করেছেন। এড্যাম আর চার্লস দুই ভাই। চার্লসের অনেক অর্থ-সম্পদ রয়েছে। কিন্তু থাকে খুব সাধারণভাবে। বিয়ে করেনি। সারাদিনে হয়তো দুইবার স্টেক বানিয়ে খায়। আর সপ্তাহে একবার সেক্সের প্রয়োজনে পতিতালয়ে যায়। চালর্সের কাছে তার প্রয়োজন মিটানোটাই মুখ্য। একজন পতিতার মুখও সে হয়তো মনে করতে পারবে না। অর্থাৎ পতিতারা তার কাছে কোন মানুষ হিসেবে পরিগণিত হয়না। এখন পুরো বিষয়টি চার্লসের দিক দিয়ে দেখলে তাকে দোষ দেওয়া যায় না। আমরা যখন পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বিবেচনার কথা বলি তখন আসলে আমরা এই চার্লসের প্রয়োজনীয়তার কথাটাই প্রথমে চিন্তা করি। এর পেছনে যে দাসপ্রথার থেকেও যে নিকৃষ্টতম অন্ধকার জগত রয়েছে সে কথা সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাই। ভুলে যাই যে যারা পতিতাবৃত্তিতে আসছে তারা চার্লস নয়। সদিচ্ছায় তারা এখানে আসেনা। তাদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এই পেশায় আনা হয়। যারা আসে তারা অনন্যোপায়হীন। কারণ একজন পতিতা হয়ে যে কাজটি তাদের করতে হয় তার মানসিক আর শারীরিক চাপ একজন সাধারণ নারীর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। একজন মানুষ মাত্রই অনেকরকম অনুভূতির সমষ্টি। অথচ একজন পতিতাকে তার সব অনুভূতিগুলো শিঁকেয় তুলে শরীর-সর্বস্ব জড়বস্তুতে পরিণত হতে হয়। কোন মানুষ সদিচ্ছায় এমনটি হতে চাইবে না। এইজন্য দেখা যায় পতিতাবৃত্তির সাথে ড্রাগ, খুন, ব্ল্যাকমেইল, চোরাকারবারির মতো অন্যসব অপরাধ জড়িয়ে আছে। তবে হ্যাঁ, একথা ঠিক যে অনেক নারীই নিজ ইচ্ছায় এ পেশায় আসে – তার মানে এই নয় যে পতিতাবৃত্তি তাতে অপরাধ মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানের অধিকাংশ হিন্দি চলচ্চিত্র হচ্ছে পতিতাবৃত্তির ডিজিটাল রূপায়ন। এখানে অর্থ-বৈভবের কাছে আর সব কিছুই নস্যি। তাই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে উচ্চশিক্ষিত নারীরা এ পেশায় এসে স্বেচ্ছায় সেক্স বিক্রি করছে। রেস্টুরেন্টে খাবার বিক্রি হলে চলচ্চিত্রে সেক্স বিক্রি হতে অসুবিধা কোথায়? আমরা অস্বাস্থ্যকর খাবারের যেমন বিরোধিতা করবো, ঠিক তেমনি অস্বাস্থ্যকর সেক্সেরও বিরোধিতা করবো। বাংলাদেশে শুধু হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনের বিরোধিতাই যথেষ্ট নয়, হিন্দি চলচ্চিত্রের অনুকরণে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র বানানোর বিরোধিতাও করা উচিত। আর এই ইন্টারনেটের যুগে ভালো ছবিগুলো চাইলেই ঘরে বসে দেখে ফেলা যায়। আমরা কেন যশরাজের ব্যাংকব্যালেন্স ভরবার নিরব দর্শক থাকবো? আমাদের দেশের চলচ্চিত্রকে ঘিরে হাজার হাজার কর্মসংস্থান গড়ে উঠুক। সেখানে আমাদের সাধারণ জীবনের গল্প অসাধারণভাবে ফুটে উঠুক। আমরা প্রবাসীরা বিদেশে বসে দেশের ছবি দেখতে চাই।"

        পতিতাদের মাসিরা তো স্বেচ্ছাই এই পেশায় থাকে এবং নিজের আয়-উন্নতি বৃদ্ধির জন্য নানান ভাবে মেয়েদের ট্রাফিকিং করে। সুতরাং যা অপরাধ, সমাজের ক্ষতি করে তা স্বেচ্ছায় হোক আর বাধ্য হয়েই হোক কোনভাবেই মেনে নেওয়া যেতে পারে না।
        তবে এই বিজ্ঞানের যুগে আমি চাইব সমাজে চার্লসের প্রয়োজন মেটানোর জন্য রোবট-পতিতা তৈরি করার জন্য। এটার ফলে একজন মানুষকে অনুভূতিহীন বানিয়ে ফেলার বদলে একজন অনুভূতিহীন মানুষ-সদৃশ সংগ খুব একটা খারাপ বিকল্প হবে না।


        “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
        ― Mahatma Gandhi

        জবাব দিন
        • কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

          আপু,

          অনেক ধন্যবাদ বিস্তারিত উদাহরণসহ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যে, পর্ণ কেন অগ্রহনযোগ্য, আর শিল্পের সাথে এর পার্থক্য।

          আমি সব সময়ই আপনার লেখার ফ্যান। এই আশাও ছিল যে, আপনি বুঝতে পারবেন আমার বক্তব্য। আপনার মন্তব্যগুলো দেখে তাই খুব ভালো লাগল। তবে কয়েকজনের কিছু মন্তব্য খুব হতাশ করেছে আমাকে। তাই এই আলোচনায় অংশগ্রহনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।

          জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      শান্তা আপু,

      এক) এই ভিডিওতে যে লোকটা কথা বললো, সে যেভাবে মেয়েটাকে অপমান করলো, সেটা খুবই আপত্তিকর। কেবল গলার জোরে নিজের কথাকে জাস্টিফাই করার ব্যাপক চেষ্টা, কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই।

      দুই) পর্নস্টার মেয়েটির অভিনয়ের সময়কাল দেখলাম '৭০-'৮০ এর দশক। পর্নো ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু এখন অনেক বদলে গেছে। আমি নিজেও এরকম শুনি নাই যে এইটা মব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কোন নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স দিতে পারবেন?

      জবাব দিন
      • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

        আন্দা - তোমার মন্তব্যটা আমি এখন দেখলাম। গুগলে সার্চ দিয়ে তো অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যায়। প্রথমটাই দিলামঃ http://usnews.nbcnews.com/_news/2012/11/21/15326475-mob-goes-to-business-school-7-million-prostitution-ring-busted-authorities-say?lite
        দেখি কোন একটা লেখা, প্রয়োজন মনে করলে, অনুবাদ করে এখানে পোষ্ট করব।


        “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
        ― Mahatma Gandhi

        জবাব দিন
  10. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    হয়তো এতটা আশা করা উচিৎ নয় কারণ এটি ব্লগ, তারপরেও ট্যাগলাইনে "আলোচনা" থাকলে সেই লেখার ভিতরে যুক্তিতর্কের উপস্থাপনা উপযুক্ত রেফারেন্স দ্বারা সমর্থিত হবে এরকম আশা না চাইতেও করে ফেলি। যদিও নিকট অতীতে হারুণ ভাইয়ের একটি লেখায় এরকম আশা করে বিশেষ উপাধি পেয়েছিলাম। উপাধিটি মনে পড়ছে না। লেখাটিও খুঁজে পাচ্ছি না। যাই হোক, যা বলছিলাম, লেখার বিষয় যখন ফেমিনিজম, পর্ণোগ্রাফি, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, নৃতত্ব---যেসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচুর গবেষণা ও লেখা হয়েছে---সেখানে নিজ যুক্তির সমর্থনে অন্যান্য স্কলারদের সমসাময়িক বা বিখ্যাত লেখা টেনে আনলে যেকোন লেখাই শক্ত গাঁথুনি পায়। তবে স্বীকার করি এই ধরনের স্কলারশিপের এ্যাক্সেস হয়তো সবার কাছে নেই। একই সাথে মন্তব্যের ঘরে আলোচনা সেইদিকেই মোড় নিচ্ছে দেখে ভাল লাগছে।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

      মোকাব্বির,

      আপনি ঠিকই ধরেছেন যে, এইখানে কোন তত্ত্ব আলোচনা আশা করা উচিত নয়। আমি মনে করি, এইখানে এমন কোন লেখা উচিত নয় যা' রেফারেন্সের কারণে কারো কারো জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, এখানে সবাই রেলিভেন্ট তাত্ত্বিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আসে এটা অনুমান করা অনুচিত। এজন্য আমি ইচ্ছে করেই তাত্ত্বিক রেফারেন্স এড়িয়ে সহজ-সাধারণ ভাবে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        কিন্তু এই ধরনের বিষয়গুলোতে সমসাময়িক আলোচনা নিয়ে আসা উচিৎ। অন্তত ফেমিনিজম ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ভাল কিছু লেখা আছে যেগুলোর সারমর্ম দুইএক লাইনে নিয়ে আসলে ক্ষতি দেখছি না। উপস্থাপনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। ব্যক্তিগত ভাবে আপনার লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে, লেখা একপেশে। স্বপক্ষে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আমি উদাহরণ টেনে আনায় বিশ্বাসী। সমূদ্রের উপরে ভাসমান তেলের মত এদিক সেদিক নড়াচড়া করা এই চমৎকার আলোচনার বিষয়গুলোতে মানায় না। যেই কারণে অবস্থান নেই নাই। যাই হোক। সার্বিক ভাবে আলোচনা চলুক। ভালোই লাগছে পড়তে।


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন
    • কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

      ভেবেছিলাম আগের মন্তব্যটি দিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হবো। হতাশ হলাম ব্যর্থতা দেখে । যাইহোক আপনার নিজের মন্ত্যব্যটি একটু বিশ্লেষন করলে বুঝতে পারবেন আপনি নিজেই কিন্তু নিজেকে ভিষনভাবে কন্ট্রাডিক্ট করছেন। আপনি বলেছেন আমার লেখা আপনার একপেশি মনে হয়েছে অথচ আপনি নিজেও কিন্তু একটা একপেশি ভাবনা থেকে মন্তব্যটি করছেন। আপনি একটা বিষয়কে সমসাময়িক রেফারেন্স দিয়ে , মোটা তাত্তিক আলোচনা দিয়ে জাস্টিফাই করতে বিশ্বাসী, সেটা আপনার ব্যক্তিগত প্রেফারেন্স,কিন্তু আপনার ভাবনার আদলে যখন আরেকজনের ভাবনার মিল খুজে পাচ্ছেন না তখন দাবি করছেন সেটা একপেশি। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলেও যে ব্যাপারটি কতখানি অযোক্তিক সেটা বুঝতে নিশ্চয় আপনার খুব সমস্যা হওয়ার কথা না। ব্লগ একটা পাবলিক ফোরাম , আমার মনে হয়েছে এখানে অহেতুক থিওরিটিক্যাল প্যাচাল আনা অপ্রোয়জনীয়। তাছাড়া এটা আমার স্টাইল ও না। আমি সহজ, সাবলীল ভাষায় বক্ত্যব্য তুলে ধরতে পছন্দ করি। থিওরেটিক্যাল আলোচনার অনেক সুযোগ ব্লগের বাইরে আমরা সবসময়ই করছি।(ক্লাসে, কনফারেন্সে, সেমিনারে) এর আগে মাহমুদের বহু তাত্তিক ,থিওরেটিক্যালপূর্ন, রেফারেন্স ভরা ব্লগ বহু মানুষ দেখেছে এবং পড়েছে। সেইসব ব্লগের রিএকশন এবং কমেন্টের ধরন সম্পর্কেও আমার যথেস্ট ধারনা আছে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে ব্যক্তি জীবনে একটাও সোসিওলোজি, এনথ্রোপলোজির কিংবা ইতিহাসের বই ছুঁইয়েও দেখেনি, এসব বিষয়ে নুন্যতম পড়াশুনা এবং ধারনাটুকু নেই সেও সেও ব্লগে কমেন্টের ধারে বিশিস্ট সমাজবিজ্জানী, নৃবিজ্জানী অথবা ইতিহাসবিদ হয়ে উঠেন। তাই সহজভাবে আবার বলি, "যার বোঝার সে সহজ কথাতেই বুঝবে, রেফারেন্স ছাড়াই বুঝবে, আর যে বুঝতে চায় না , সে কখনই বুঝবে না, এক হাজারটা থিওরি আর রেফারেন্স টানলেও সে বুঝবে না। তাকে বোঝানো কারো পক্ষে সম্ভব ও নয়, " তাই আমি মনে করি এমন মহাপন্ডিতদের বোঝানোর ক্ষমতা কিংবা দায়ভার কোনটায় আমার কিংবা আমাদের কারোরই নয়।

      জবাব দিন
      • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

        সুমাইয়া,
        কোনকিছু বোঝাতে হবেই এমন কোন কথা নেই। আলোচনার প্রথম শর্তটি হচ্ছে প্রসংগ উত্থাপন - সেটি আপনি সম্পন্ন করেছেন। তর্কে-বিতর্কের পালে মাঝেমধ্যে গরম হাওয়া লেগে কথা অন্যদিকে গড়িয়ে যায়। হাল ছাড়বেননা প্লিজ। আপনার অবস্থান, যুক্তি সবার অধিগম্য হবেনা -- সবাইকে তুষ্ট করবেনা। সবার উত্তরে আপনিও প্রীত হবেননা - বলাই বাহুল্য।

        ইতিহাস বা নৃতত্ত্বের বই ছুঁয়ে না দেখা লোকের মধ্যে আমি অন্যতম। হা হা।
        জানিওনা কিছুই। কাজেই অনেক রেফারেন্স দিলেও সেটি ঘেঁটে দেখতাম/বুঝতাম কি না সন্দেহ।

        তবু, এই যে নানান মন্তব্যে নানান আলোকপাত দেখতে পাচ্ছি -- এটি তো আপনি প্রসংগের অবতারণা না করলে পেতামনা। বোঝানোর দায়ভার নেবার আসলেই দরকার নেই - নিজস্ব স্টাইলেই থাকুন। এটুকুই অনেক।

        জবাব দিন
        • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

          আসলে শুরুতে যেটা বলেছিলাম, ব্লগ গুরুগম্ভীর তথ্যপ্রমাণসহ যুক্তি তর্কের জায়গা নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা যেটা বললেন, যেভাবে লিখেছেন সেটা স্বকীয়তা। এর বাইরে যাবেনই বা কেন? মন্তব্যের ঘরে আলোচনা কিন্তু ভাল লাগছে। তবে সবকিছুই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অল্পবিস্তর বুঝতে যাবার বোকামিটা বন্ধ করতে হবে। ভুল বোঝার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। 🙂


          \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
          অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

          জবাব দিন
      • মাহমুদুল (২০০০-০৬)
        আমি হলফ করে বলতে পারি যে ব্যক্তি জীবনে একটাও সোসিওলোজি, এনথ্রোপলোজির কিংবা ইতিহাসের বই ছুঁইয়েও দেখেনি, এসব বিষয়ে নুন্যতম পড়াশুনা এবং ধারনাটুকু নেই সেও সেও ব্লগে কমেন্টের ধারে বিশিস্ট সমাজবিজ্জানী, নৃবিজ্জানী অথবা ইতিহাসবিদ হয়ে উঠেন। তাই সহজভাবে আবার বলি, "যার বোঝার সে সহজ কথাতেই বুঝবে, রেফারেন্স ছাড়াই বুঝবে, আর যে বুঝতে চায় না , সে কখনই বুঝবে না, এক হাজারটা থিওরি আর রেফারেন্স টানলেও সে বুঝবে না। তাকে বোঝানো কারো পক্ষে সম্ভব ও নয়, " তাই আমি মনে করি এমন মহাপন্ডিতদের বোঝানোর ক্ষমতা কিংবা দায়ভার কোনটায় আমার কিংবা আমাদের কারোরই নয়।

        হতাশ হয়েছি।


        মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

        জবাব দিন
  11. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    প্রথমেই আন্দালিবকে ধন্যবাদ সেক্স-পজিটিভ ফেমিনিজমের রেফারেন্স নিয়ে আসার জন্য। ওর কথাতেই এ বিষয়ে জানা হলো। আর আন্দালিবের সাথে কথোপকথনের সূত্রে নূপুর ভাইয়ের বক্তব্যের উত্তরে আমার (সুমাইয়ার, এবং সম্ভবত সোস্যাল সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের অধিকাংশের) অবস্থান বলার চেষ্টা করব।

    নূপুর ভাই বলেছেন

    সমাজের আদর্শিক বা নীতিগত অবস্থান ধ্রুব নয়, থাকতে পারেনা। কাজেই নীতির প্রশ্ন তুলে একদাগে যৌনতার বিকিকিনিকে বাতিল করবে এমন সমাজ যেমন থাকবে, এমন সমাজও থাকবে যেখানে যৌনস্বাধীনতার কথা উচ্চারণই নৈতিক বলে গণ্য হবে।

    আমি ঠিক আপনার মতোই বুঝতে পেরেছিলাম আন্দালিব কি বলতে চেয়েছে। সে বলেছে যে, সমাজকে অবশ্যই ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার স্বাধীনতা দিতে হবে, স্বাধীন ভাবে নিজ নিজ পেশা বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে।

    আমার বক্তব্য হলো, সমাজ তার নিজের স্বার্থেই ব্যক্তি স্বাধীনতাকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে, সকল সমাজই। একটা উদাহরণ হচ্ছে "বিয়ে"। এমন কোন বিবাহিত ব্যক্তি নেই যে দাবী করতে যে, বিয়ের পরও তার স্বামী/স্ত্রী ব্যতীত আর কাউকে পাওয়ার ইচ্ছে করেনি। কিন্তু সকলেই সেই ইচ্ছেকে চেপে রাখতে বাধ্য। কারণ, মূলতঃ সমাজ, সমাজের বিধি-নিষেধ আইনকানুন। সমাজ এইটা করে, কারণ অবাধ যৌনাচার ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ কেউ সমস্যাজনক মনে না-করলেও সামাজিক জীবনে এটা নানাবিধ সমস্যার জন্ম দেয়। একারণে পৃথিবীতে এমন একটাও সমাজ নেই যেখানে সমাজ-স্বীকৃত বন্ধনের বাইরে ব্যক্তির যৌনাচার বৈধ। এইটা শুধুমাত্র নৈতিকতার বিষয় নয়, আইনেরও। একই ভাবে, পর্ণগ্রাফীও শুধুমাত্র ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয় নয়, সমাজেরও। আর সমাজ যেহেতু লক্ষ্য করে যে, পর্ণগ্রাফীর প্রভাবে সমাজে নানাবিধ যৌনাচার-সম্পর্কিত সমস্যার উদ্ভব হয়, তাই একে শুধুমাত্র অনৈতিক নয়, বরং বেআইনীও ঘোষণা করে। একই ভাবে আরো অনেকগুলো পেশাই সমাজের চোখে অনৈতিক+অবাঞ্ছিত+বেআইনী; যেমন, মাদক ব্যবসা, চোরাচালানী, ইত্যাদি। ব্যক্তির জন্য লাভজনক হলেও এগুলো সামাজিক সমস্যার সৃষ্ট করে বলে। তাই ব্যক্তি ইচ্ছে করলেই এগুলোতে নামতে পারেনা।

    বাংলায় একটা শব্দ আছে "স্বেচ্ছাচার"। ব্যক্তিস্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারের মধ্যকার বিভাজন-রেখাটার মাত্রা ধ্রুব না-হলেও এর অস্তিত্ব ধ্রুব এবং এই সীমারেখা নির্ধারণে সমাজের ভূমিকাও ধ্রুব। ব্যক্তির সব ধরণের যৌন ইচ্ছেকে সমাজ স্বীকৃতি দিবে, এটা আমি কখনো মনে করিনা। এটা সমাজের অস্তিত্বের জন্যই। এ বিষয়ে সিসিবিতে একটা আলোচনা করেছিলাম রুমানা মঞ্জুরের এবং পুলিশ-হেফাজতের মধ্যে তার সাবেক-স্বামীর অপমৃত্যর প্রেক্ষিতে। আমার ধারণা, সুমাইয়া সমাজের এই ভূমিকার কথা মাথায় রেখেই ওর আর্গুমেন্ট উপস্থাপণ করেছে। কিন্তু মন্তব্যে এসে আলোচনা আরেক দিকে টার্ণ করেছে যে, পর্ণের অনৈতিক হওয়ার ভিত্তি গ্রহনযোগ্য নাকি অগ্রহনযোগ্য।

    সমাজ পর্ণসহ আরো অনেক ধরণের যৌনাচার অনৈতিক/অবাঞ্ছিত/ বেআইনী হিসেবে বিবেচনা করে, যা' ব্যক্তির অবাধ যৌন স্বাধীনতার উপর নানান মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এখন পর্যন্ত এইটাই বাস্তব। একই ভাবে আরো নানাবিধ ক্ষেত্রে সমাজ ব্যক্তি স্বাধীনতায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, এবং করতেই থাকবে। সামাজিক বিজ্ঞানের যেকেউ এইটা বুঝে এবং এই অনুমানের ভিত্তিতে আর্গুমেন্ট দাঁড় করায়।

    সমাজ ব্যক্তির সমষ্টি, আলাদা কিছু নয়। কিন্তু সমষ্টিগত ভাবে থাকতে গেলে সকল ব্যক্তিকেই তার স্বাধীনতার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ত্যাগ করতে হয়। ব্যক্তি সেটা করেও। সমাজের কাছ থেকে সে কিছু ইউটিলিটি লাভ করে বলেই নিজের স্বার্থের কিছু অংশ ত্যাগ করে। এইটা একটা গিভ-এন্ড-টেক এর মতো ব্যাপার। সকলেই বিয়ে-নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাবা-মায়ের পরিবারে বেড়ে ওঠে, নিজে বিয়ে করে পরিবার গঠন করে, সেই পরিবারে সন্তান জন্ম দিয়ে যদি কেউ বলে যে, সমাজ তাকে ইচ্ছেমত যৌন স্বাধীনতা ভোগে বাঁধা দিতে পারেনা, তাকে কিছু বলার নাই। একই কথা প্রযোজ্য পর্ণসহ অন্যান্য কার্যকলাপে যা ব্যক্তিস্বাধীনতার লক্ষণ হলেও অসামাজিক হিসেবে বিবেচিত।

    ব্যক্তি চাইলেই যা' ইচ্ছে তাই করতে পারেনা, সমাজ সেখানে নাক গলায়; আর পর্ণের বেলায় ত' অবশ্যই- এইটাই বটম লাইন। সম্ভবতঃ এই কারণেই আন্দালিবের উল্লিখিত 'সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজম' এখন ডিস্কোর্সের বাইরে গিয়ে প্রায়-ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে, এমনকি এমন একটা সময়ে যখন সেম-সেক্স বিয়েকে পর্যন্ত সমাজ বৈধতা দিচ্ছে!!!


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  12. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    উপরে মব নিয়ে কথা হচ্ছিলো।
    প্রায় সকল ধরণের মুভিতেই কালো টাকার যাতায়াত আছে।
    সো মব আসবেই।

    বাংলাদেশে আজিজ মোহম্মদ ভাই একটা নমুনা মাত্র।

    দিলীপ কুমারকে যাতে সমস্যা ফেস করতে না হয় সেটা দেখতেন তার বড় বা ছোট ভাই, নাসির নামে গুন্ডা/কালো জগতের মানুষ।
    বম্বে মুভিতে দাউদ ইব্রাহীম এর একটা হাত ছিলো এটা সবাই জানে।
    গুলশান কুমার যে মারা গেলো/ হত্যা করা হলো, খেয়াল আছে।

    ফ্রান্ক সিনাত্রার সাথে কালো জগতের লোকদের দোস্তি ছিলো।

    উদাহরণ শেষ হবে না।

    যেখানে নরমাল ধারার ছবিতে এই অবস্থা, সেখানে পর্ণ ছবিতে মব এর কোন হাত থাকবে না এইটা ভাবা কি ঠিক হচ্ছে!

    আলোচনা চলুক।
    আমি ছুটি নিই। :guitar:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  13. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    (আমার এখানে বলা কথাটা পুরোটাই ব্যক্তিগত মতামত। আর আমি কথাগুলো বলছি পর্ণগ্রাফিতে থাকা ছেলেদের সংখ্যাকে উপেক্ষা করে, কেননা আমার ধারনা তাদের সংখ্যা মোট সংখ্যার অনেক অনেক কম।)

    আমার মনে হয় পর্ণগ্রাফিকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাটা পুরষশাসিত সমাজের একটি চাল ছাড়া আর কিছু নয়। মেয়েরা যত খোলাখুলিভাবে (স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়) এই কাজে আসবে অপশন আরো বাড়বে!

    কোন মেয়েকে যদি দেহ বিক্রি করে (পর্ণ~প্রস্টিটিউশন ধরে বলছি) টিউশন খরচ চালাতে হয় এটা তার ক্ষমতায়ন না বরং এটা সেই সমাজের, সেই শিক্ষা-ব্যবস্থার ব্যর্থতা! এবং এটা আরো প্রকাশ করে যে সে যেটার সামর্থ্য নেই তার পেছনে ছুটছে। সমাজ তার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য একে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দানে উঠে পড়ে লেগেছে।

    যেখানে মেধার কোন স্থান নেই, কোন অনুশীলন নেই, কোন ট্রেনিং নেই, কোন শিক্ষা নেই (আছে বলে কেউ কেউ প্যাঁচাতে পারেন, তাদের বলছি-ইউ নো হোয়াট আই মিন!) সেটা পৃথিবীজুড়ে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হতে পারে, কিন্তু কোন মতেই পেশা না।

    যৌনতা মানুষের একান্ত গোপনীয় এবং নিজস্ব ব্যাপার! এটার ব্যাপারে আমাদের চিন্তা-ধারা, জ্ঞান পরিষ্কার থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু একে পেশা হিসেবে মেনে নেয়া, অন্ততঃ আমার পক্ষে সম্ভব নয়।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।