নারী নির্যাতন ও নারীবাদঃ আমার এলোমেলো ভাবনা

কয়েক সপ্তাহ আগে এক কনফারেন্সে একটা পেপার উপস্থাপন করার সুযোগ হয়েছিল। বিষয় ছিল Failure of the Legal System: Issues of Domestic Violence in Bangladesh- সহজ বাংলায়, পারিবারিক নির্যাতন এবং বাংলাদেশের আইনী ব্যর্থতা । বিষয়টি একবিংশ শতাব্দীর বহুল আলোচিত একটি বিষয় এবং আমাদের সবারই খুব পরিচিত। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মাটিতে বড় হয়েছে অথচ পারিবারিক পরিমন্ডলে নারী নির্যাতনের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুসকিল। তবে,বিষয়টি যতটাই পরিচিত হোক, এর ভয়াবহতা এবং ব্যাপ্তি আমাদের অনেকেরই অজানা। পেপারটি লিখতে গিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ইতিহাস ঘাটাঘাটি করেছি এবং বলতে গা’শিউরে ওঠে পারিবারিক পরিমন্দলে নারী নির্যাতনে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীর শীর্ষের দিকে। প্রতি তিনজনে দুইজন নারী এদেশে নির্যাতনের শিকার। পরিসংখ্যানটি দেখে প্রথম যে কথাটি মনে হলো, “হায় রে আমার দেশ! বউকে তিনবেলা পেটপুরে খাওয়াতে না-পারলেও সময় মতো তিনবেলা পেটাতে ভুল হয়না!”

আমার আমেরিকান বন্ধু-বান্ধবিরা এর আগে বিভিন্ন সময়ে আমাকে প্রশ্ন করেছে আমার অরিজিন নিয়ে। প্রতিবারই আমি মাথা উচু করে উত্তর দিতাম- আমি বাংলাদেশী, বাংলাদেশে বড় হওয়া একজন নারী। অথচ, পেপারটি তৈরীর করার পুরোটা সময় জুড়ে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছি বাংলাদেশী হিসেবে আসলেই আমি কতটুকু গর্বিত। যে দেশে পথে প্রান্তরে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য মেয়েদের এসিডদগ্ধ হতে হয়, তরকারীতে লবন-হলুদ কম/বেশি হলে স্বামীর হাতে নির্যাতিত হতে হয়, যৌতুকের দায়ে প্রতিদিন শত শত গৃহবধূকে এমনকি মৃত্যুবরণ করতে হয়, সেদেশে জন্ম নিয়ে পরিচয় দেওয়ার মধ্যে আসলে কি গর্ব করার কিছু আছে?

যখন থেকে বানান করে পড়তে শিখেছি, তখন থেকেই খবরের কাগজে প্রতিদিন মেয়েদের এইসব কষ্ট-বেদনার গল্প পড়ে আসছি। আমার ছেলেমানুষী মনে বহুবার এই প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে, মেয়েদের এত কষ্ট, আহাজারী, করুণ পরিণতি- এইসবের জন্য দায়ী কারা? কিসের কারণে নারীদের উপর এইসব নির্যাতন ঘটেই চলেছে? আমার বাবার সাথে ছোটবেলা থেকেই অনেক বন্ধুসূলভ সম্পর্ক। প্রায় সময়েই খবরের কাগজে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হওয়া এইসব মেয়েদের গল্পগুলো পড়ে বাবার সাথে আলাপ করতাম। ব্যাপারগুলোর গভীরতা এবং গুরুত্ব কতখানি, কে বা কারা কতটুকু দায়ী এইসব নির্যাতনের জন্য, ইত্যাদি ইত্যাদি। বাবা সবসময় বলতেন, বড় হয়ে আরো পড়াশোনা করো, দেখো, সমস্যাগুলো খুব সহজেই বুঝতে পারবে।

আমি জানিনা আজ কতটুকু বড় হয়েছি, কিংবা আরো কতখানি পড়াশোনা করা লাগবে আমাদের সমাজের মূলে জড়িয়ে থাকা নারী নির্যাতনের মতো এসব সংবেদনশীল বিষয় বোঝার জন্য। কিন্তু আমি আজ এতোটুকু অবশ্যই বুঝি, এতো বিপুল সংখ্যক নারীর এই করুণ পরিণতির দায়ভার আমাদের সবারই আছে কমবেশি।বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজ এবং অশিক্ষিত সমাজ- দুটোকেই আমি সমান ভাবে দায়ী করি।

অশিক্ষিত সমাজ বলতে আমি এমন একটি সমাজ কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে বুঝি যেখানে সূর্যের আলো ঠিকই প্রবেশ করেছে, কিন্তু জ্ঞানের আলো পৌঁছানোর এখনো অনেক বাকি। যেসমাজে নারী কেবলই ভোগ্যপণ্য, যেখানে নারীর জন্ম শুধুমাত্র পুরুষের সেবা এবং মনোরঞ্জনের জন্য যার নিজস্ব কোন অস্তিত্ব এবং আওয়াজ নাই। এই সমাজের মূলে জেকে আছে শ্যাওলা-ধরা স্যাতস্যাতে কিছু কুসংস্কার। যেমন- মেয়েদের জন্ম শুধুমাত্র সন্তান লালন-পালন আর রান্না ঘরে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য। দেশ-সমাজ-রাষ্ট্রের উন্নয়ণে তাদের ভূমিকা হবে গৌণ এবং এটাই সর্বজন কাম্য। অন্যদিকে, শিক্ষিত সমাজের (তথাকথিত) মূলে ছড়িয়ে আছে নারী-পুরুষের সম অধিকার এবং সম অবদানের কথা, যেখানে একজন নারীকে শুরু থেকেই জ্ঞানের আলোতে আলোকিত করার কথা বলা হয়। এ সমাজে মেয়েরা কারো উপরে বোঝা নয়। বরং তাদেরকে ছোট বেলা থেকেই শেখানো হয় কিভাবে সমাজের দশজন পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে তাকে যুদ্ধ করতে হবে এবং সাফল্য পেতে হবে। একজন মানুষ হিসেবে,একজন নারী হিসেবে কিভাবে তাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বকীয়তার প্রমাণ রাখতে হবে।

অশিক্ষিত সমাজের মানুষগুলো যখন পারিবারিক কলহে কিংবা কর্মক্ষেত্রে একজন মেয়ের উপর আগ্রাসী হয় ও নির্যাতন চালায়, আমি তাদের এই কূপমন্ডুকতা এবং কাপুরুষতাকে ব্যাখ্যা করতে পারি। কিন্তু আমাদের সমাজের একটি বিশাল অংশ স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেড়িয়ে এসে নিজেকে শিক্ষিত হিসেবে দাবী করে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে দাঁড়িয়ে নারীর অধিকার আর ক্ষমতায়ণের কথা বলে মানুষের হাততালি কুড়ায়। কিন্ত এমনও বহু দেখেছি, সারাদিন পর রাতে বাড়ি ফিরে এইসব জ্ঞানপাপী মুখোশধারী (তথাকথিত)শিক্ষিত মানুষগুলো তাদের ঘরের বউয়ের উপর অমানবিক শারীরিক ও মানষিক অত্যাচার চালায় ।আমার যত বিবেক-বুদ্ধি এবং যুক্তি সমাজের এসব মুখোশধারী মানুষগুলোর কাছে এসেই হোঁচট খায়। এমন শিক্ষিত মুখোশধারী গিরিগিটির সংখ্যা এই সমাজে অগণিত। কখনো ভালোবাসার নামে, কখনো ক্ষমতার বলে, কখনো বা কেবল পৌরুষত্বের অহংকারে সময়ে অসময়ে, কারনে অকারনে ঘরের মানুষ্টির উপরে হাত তুলতে তারা কিঞ্চিৎ দ্বিধ্বাবোধ করে না। আর আমাদের সমেজের দূর্বল নারীরা কখনো সংসারের নামে, কখনো পারিবারিক সম্মানের খাতিরে, কখনো বা কেবল নারী হওয়ার দূর্বলতাকে অযুহাত দেখিয়ে দিনের পর দিন এইসব অত্যাচার মাথা পেতে নেয়। খুব দুঃখজনক হলেও সত্যি, বহুবার পারিবারিক নির্যাতিনের শিকার এইসব মেয়েদের সাথে কথা বলে এমনেও উত্তর শুনেছি “মেয়ে হয়ে জন্মেছি, সহ্য তো করতেই হবে”।

কি অদ্ভূত আমাদের শিক্ষা, কত গভীর এর শেকড়! একটা মেয়ে তার জন্মকেই এই পৃথিবীর বুকে ঘটা অর্থহীন বিষয় ভেবে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীতে বাস করছি যেখানে নারী মুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ণ এক বিশাল গ্লোবাল এজেন্ডা। এমন যুগে জন্ম নেওয়া হাজার হাজার নারী নিজের জন্মকে মেনে নিয়েছে এক অনাকাংখীত ঘটনা হিসেবে। তাই আমি মনে করি, আমাদের সামাজিক কাঠামো, রাষ্ট্র-ব্যবস্থা, আইনগত সুবিধা, সামাজিকিকরন সবকিছুই নারীদের এই করুণ অবস্থার জন্য সমানভাবে দায়ী।

ইতোমধ্যেই অনেকেই হয়তো আমাকে পুরুষ-বিদ্বষী ভাবতে শুরু করেছেন। কিংবা অনেকেই হয়তো ভাবছেন, আমি নারীবাদী এবং নারীমুক্তি আন্দোলনে অন্ধ বিশ্বাসী। আমি শুধু আমার সাফাইতে এতোটুকু বলতে চাই, আমি পুরুষ বিদ্বেষী নই এবং পুরুষদের সাথে আমার বিশেষ কোনো যুদ্ধও নেই । প্রকৃতপক্ষে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের সমাজে এখনো এমন অনেক পুরুষ আছেন যাদের অক্লান্ত সহযোগিতা এবং অবদানে নারীমুক্তি আন্দোলন আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। তবে নারীবাদ বলতে আমাদের মধ্যে প্রাথমিক যে ধারণাটি আছে তা’র অনেকটাই মিডিয়া-প্রভাবিত। আমি নারীবাদের মতো এতো কঠিন কথা বুঝি না। আমার কাছে নারীবাদ হলো একজন নারী হিসেবে সমাজে অত্যাচারিত নারীদের দূর্দশা অনুভব করতে শেখা, দুঃস্থ-পীড়িত, অত্যাচারিত নারীদের পাশে দাঁড়ানো, রক্তমাংশে গড়া এইসব মানুষগুলোর অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে আলোর সন্ধান দেওয়া। কেবলমাত্র সেদিনই আমার বিদেশী বন্ধুবান্ধবীসহ সকলের কাছে বাংলাদেশী নারী হিসেবে পরিচয় দিতে আমার আর সংকোচ বোধ হবে না।

২,৮২২ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “নারী নির্যাতন ও নারীবাদঃ আমার এলোমেলো ভাবনা”

  1. সন্ধি (১৯৯৯-২০০৫)

    তোর লেখায় দিন দিন অনেক পরিণত ভাব ফুটে উঠছে। দেখে ভাল লাগল 🙂 । হবার কথাই অবশ্য। গবেষক দম্পতি বলে কথা 😛 ।

    আর আমাদের চারপাশের ঘটা ঘটনাগুলো নিয়ে যা বলতে পারি। আমাদের দেশে অনেকাংশে শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। তার ব্যবহারিক প্রয়োগ বাস্তবে দেখা যায় না। সেখানেই শিক্ষা আর স্বশিক্ষার একটা পার্থক্য নজরে আসে। ছোটবেলা থেকেই আমরা পড়ি মিথ্যা বলা পাপ। কিন্তু চারপাশে দেখি মিথ্যারই জয়জয়কার। বইয়ের শিক্ষাটা কেবল গলধঃকরণ করে পরীক্ষার খাতায় ফেলে এসে কিছু নম্বর পাওয়াটাই এখানে সরল সমীকরণ। এর থেকে বের না হতে পারলে এরকম অসংখ্য সমস্যা থেকে যাবে, আমার তাই মনে হয়।

    আর মিডিয়ার কল্যাণে নারীবাদটাকে আমার কাছে খুব ঠুনকো শোনায়। কতিপয় সুবিধাভোগীর স্বার্থোদ্ধারে ব্যবহৃত একটা শব্দ বলেই মনে হয়, এখনকার "ডিজিটাল বাংলাদেশের" মত। তাই সভা সমিতিতে আপন বাগ্মিতার পরিচয় কম দিয়ে নারীবাদের চেতনাকে নিজের জীবনে বেশি প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে হয়ত আমাদের পাওয়ার ভাণ্ডারে কিছু জমা পড়ত। আমার স্বল্পজ্ঞানে যা বুঝি আরকি। 🙂

    জবাব দিন
    • কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

      "কতিপয় সুবিধাভোগীর স্বার্থোদ্ধারে ব্যবহৃত একটা শব্দ বলেই মনে হয়, এখনকার “ডিজিটাল বাংলাদেশের” মত। তাই সভা সমিতিতে আপন বাগ্মিতার পরিচয় কম দিয়ে নারীবাদের চেতনাকে নিজের জীবনে বেশি প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে হয়ত আমাদের পাওয়ার ভাণ্ডারে কিছু জমা পড়ত।"
      খুব পছন্দ হয়েছে লাইনটা... 🙂

      আমি আসলে লেখার চেস্টা করি, অনেক কিছুই লিখতে মন চায়, প্রতিদিন ইউনিভার্সিটির পড়া পড়তে বসে কত যে ইন্টারেস্টিং বিষয়বস্তু আবিস্কার করি...কিন্ত বাংলা টাইপিংটা এখোন ও দখলে আনতে পারি নাই।তাই আর সব কিছু লেখা হয়ে ওঠে না ।চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কতদুর যাওয়া যায়... 🙂

      জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আমেরিকাতেও প্রচুর নারী নির্যাতন হয়। এখানকার এক ডাক্তারের মুখে শুনেছিলাম এই দেশে যেদিন সুপারলীগ খেলা হয় সেদিন সন্ধ্যায় হাসপাতালের এমার্জেন্সী সেকশন শারীরিক নির্যাতিত মহিলাদের দিয়ে ভরে উঠে। কারণ স্বামীদের পছন্দের দল হেরে গেলে বা খেলায় ধরা বাজিতে হেরে গিয়ে মদ খেয়ে বাসায় ফিরে তারা বউ পেটাতে শুরু করে। বাংলাদেশে তো বার্ণ ইউনিট এসিডে পোড়া মেয়েদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ থাকে। ভারতের অবস্থা তো আরও করুন। শুধুমামাত্র যৌতুকের কারণে প্রতিবছর আট হাজার মহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয়। নির্যাতন একটা রিপল ইফেক্টের মতো। এর যেন কোন শেষ নেই।
    ভালো লেখা সুমাইয়া।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

      আপু, আপনার কমেন্ট আমাকে সবসময়ই উৎসাহ দেয়...। 🙂
      আপনি ঠিকই বলেছেন, আমেরিকাতেও অনেক নারীর্যাতনের ঘটনা ঘটে...আর এর আনেকটাই কিন্তু লাইমলাইটের বাইরে থেকে যায়। সেদিন একটা আর্টিকেল এ পড়লাম, আমেরিকাতে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষনের হার সবথেকে বেশী। প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যার থেকে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এর ভিকটিম এর আনুপাতিক হার অনেক বেশী... 🙁

      জবাব দিন
  3. রেজা শাওন (০১-০৭)
    কি অদ্ভূত আমাদের শিক্ষা, কত গভীর এর শেকড়! একটা মেয়ে তার জন্মকেই এই পৃথিবীর বুকে ঘটা অর্থহীন বিষয় ভেবে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

    খুব গভীর একটা কথা বলেছেন আপু। কথাটা ভাবাচ্ছে। লেখার পুরো বিষয়বস্তু তো অবশ্যই।

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আজকেই ফিডব্যাকের একটা গান শেয়ার দিলাম ফেসবুকে।
    বড়ভাই কমেন্টে জানতে চাইলেন, মাকসুদ এখনো বউ পিটায় কিনা?

    ধর্ম যতদিন পুরুষদের সাথে আছে ততদিন পায় কে এদের?
    অবশ্য ওয়াহিদা আপা মদ আর জুয়ার একটা শক্তিশালী প্রসঙ্গ এনেছেন।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো।

    যদিও মূল ধারার আইনী গবেষণা থেকে সরে আসা শুরু করেছি তবে আপু যদি কপিরাইটের ব্যাপার জড়িত না থাকে তাহলে আপনার উপস্থাপিত পেপারের কোন উৎস যদি দিতেন তাহলে খুশি হতাম। বিগত এক বছর আইনজীবি থাকার সুবাদে নারী নির্যাতন মামলার তিক্ত বাস্তবতা খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। ছেড়ে চলে আসলেও জানার ইচ্ছা এখনো দমে যায় নি।

    সরাসরি ইমেইলে পাঠাতে চাইলে এখানে পাঠানঃ

    msarkar@mtu.edu

    অথবা পড়ে দেখবার মত কোন লিঙ্ক দিন কমেন্টে। ধন্যবাদ।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

      মোকাব্বির ভাই,

      লেখাটা ভালো লেগেছে 🙂 শুনে ভালো লাগলো...

      পেপার টার উপর এখোনো অনেক এডিট চলছে ,তাই লেখাটা এখনো অসম্পূর্ণ...!

      যেহেতু আপনি ইন্টারেস্টেড তাই ওই কনফারেন্সের এবসস্ট্রাকটা এখানে শেয়ার করলাম....আসলে আমি মাস্টার্স এর থিসিস করব বিষয়টির উপর ভাবছি...তাই
      যেকোনো ধরনের সাজেশন অথবা কমেন্ট মোস্ট অয়েলকাম... 🙂

      Presenter’s name: Kanij F Sumiya

      Degree major: Masters in Anthropology

      Title: Failure of the Legal System: Issues of domestic violence against women in Bangladesh

      Abstract: Domestic violence is a pervasive problem that touches virtually all spheres in society. Domestic violence against women has been recognized not only as a personal trouble, but also as a social problem with broader implications. This is particularly true about South Asian (i.e., Bangladeshi, Indian and Pakistani) women, especially in a country like Bangladesh where one out of every three women get abused everyday inside her family. From a review of newspaper reports on the types of domestic violence, its causes and consequences in Bangladesh over last ten years, this paper shows that the failure of the legal system in protecting women against violence is one of the major causes in the insidious spread of the problem. It finds that there is no provision for preventive laws against domestic violence, only few protective legal mechanisms with inadequate clauses targeting women’s protection, and a lack of knowledge among people about the exiting legal supports in Bangladesh. Given this background of the situation, this paper will focus on the question of why legal system of Bangladesh is failing to provide effective support too curb the problem of domestic violence against women and how it could be made efficient. Relevant anthropological theories will be used to explain the problem and necessary methodological strategies will be formulated based on the theoretical perspectives. Finally, some policy recommendations will be proposed to improve the situation of the battered women in particular, and of all women in general.

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        আপু ধন্যবাদ এবস্ট্র্যাক্টটা এখানে দেয়ার জন্যে।

        যদি প্রতিরোধমূলক এবং প্রতিকারমূলক আইনের কথায় আসেন তাহলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিরোধমূলক আইন দিয়েও ডমেস্টিক ভায়োলেন্স কমাতে পারার আশা করা উচিত নয়। এনথ্রপোলোজির ছাত্র হিসাবে এটা ভালো বুঝবেন কারণ শুধু আইন দিয়ে কিছু হচ্ছে না। এখানে আপনাকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা (পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক) অনেক কিছুই আমলে নিতে হবে। আপনি যদি বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতারকে ধরেন তাহলে দায় শুধু একার নয়।

        মূলত একটি প্রতিকারমূলক আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই পরিবর্তন আশা করা যায় কারণ Deterrence Theory এর মাধ্যমে একটি প্রতিকারমূলক আইন পরবর্তিতে প্রতিরোধমূলক আইনে রূপান্তরীত হয়। বাস্তবে সরাসরি প্রতিরোধমূলক আইন বলতে কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই (আমার জ্ঞানের স্বল্পতা রয়েছে এখানে)।

        চলতি যে আইন গুলো বাংলাদেশের রয়েছে সেগুলো কতটুকু সফল সেটা নির্ভর করে (আইনের পরিপূর্ণতার পাশাপাশি) আরো অনেক কিছুর উপর। অসংখ্য গৃহ নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে যেগুলো কখনো রিপোর্ট হয় না কারণ ১) পুলিশের হয়রানির কারণে, ২) সামাজিক কলঙ্ক লেপনের ভয়ে, ৩) আদালতের জটিলতার কারণে, ৪) আমার মত দুষ্ট আইনজীবি যারা এই সব অসহায় মানুষদের রক্ত চুষে খেতে চায় তাদের হয়রানির ভয়ে, ৫) সামাজিক নিরাপত্তার ভয়ে ইত্যাদি।

        নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ একটি ভয়াবহ রকমের ত্রুটিপূর্ন আইন। ত্রুটিপূর্ণ কারণ ১) দক্ষ/সৎ বিচারকের অভাব, ২) দক্ষ/সৎ আইনজীবির অভাব, ৩) দক্ষ/সৎ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।

        একই ভাবে পুরুষকে হয়রানি করারও দক্ষ হাতিয়ার এই আইনটি। ব্র্যাকে পড়ার সময় এক ফ্যাকাল্টির একটি রিসার্চের কিছু কাজ করতে সহায়তা করেছিলাম। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যেসব নারী শিশু আইনের অধীনে মামলা সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে সেগুলোর রায় পড়ে দেখেছিলাম। সঠিক সংখ্যা মনে নেই তবে কেইস 'হয়রানিমূলক' কিংবা কেইসের 'বিচার্য বিষয় অনুপস্থিত' এই কারণে প্রায় ১৫-২০% কেইস খারিজ হয়েছে সেই সময়। সব মামলা উচ্চতর আদালত পর্যন্ত গড়ায় না। এরকম নজির নিন্ম আদালতেও প্রচুর ঘটে থাকে।

        ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ আমার সিনিয়রের কোন এক আত্মীয়ের ছোট মেয়ে তার বড় মেয়ের স্বামীর সাথে পালিয়েছে। এক হাতে তালি বাজে না। কিন্তু সেই ভদ্রলোকের দাবী "আমি এতো কিছু বুঝি না। ছেলেকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে।" বোঝানোর চেষ্টা করলাম এতে খারাপ বই ভালো কিছু হবে না। আপাদত একটি সংসার এবং একটি জীবন নষ্ট হচ্ছে এখন মামলা করলে ৩টি জীবন নষ্ট হবে (দুই মেয়ে এবং সেই স্বামী), কিন্তু উনি শুনতে নারাজ।

        আইনজীবির ফিস্‌ এর কথা বাদ দিলাম আমার সিনিয়ার নিমরাজি হলেন কারণ গ্রামে উনার প্রায়শই যাতায়াত এবং সুনাম রয়েছে। ফিরিয়ে দিলে তাও আবার আত্মীয়, ফল বিশেষ ভালো হবে না। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে লীলা এবং যোগেনের পালিয়ে যাওয়া প্রেম কাহিনী কলমের খোঁচায় হয়ে গেলো অপহরণ মামলা। মামলা দায়েরের ৪ দিনের মাথায় পুলিশ ধরে নিয়ে আসলো ছেলে আর মেয়েকে। ছেলেকে কোর্টে চালান করার আগে পুলিশ লক-আপে রাখলো কারণ এখানে কিছুটা নিলাম ব্যবসা জড়িত। যেই পক্ষ যত বেশী টাকা দিবে পুলিশ তার কথাই সাধারণত শুনে। যেটা হয় দু'পক্ষ থেকেই টাকা নিয়ে শেষে এক পক্ষের দিকেই ঝুঁকে তারা। আসামীকে যত বেশী ধোলাই দিতে চান তত বেশী টাকা ঢালুন ও,সির পকেটে। সিনিয়রের মক্কেল বেশ ভালোই টাকা পয়সা দিয়েছিলেন কারণ প্রথম যেদিন কোর্টে হাজির করা হলো আসামীকে বেচারা ঠিক মত দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না এমন ধোলাই দেয়া হয়েছে বেচারাকে। মামলার শেষ দেখে আসতে পারিনি তার আগে নিজেই চালান হয়ে গেলাম আমেরিকা।

        এরকম আরো নজির ঘটেছে ঘটছে। যাই হোক আপু অনেক কিছু লিখে ফেললাম। বেশীর ভাগ হয়তো অকাজের। তবে এগিয়ে যান। ভালো কিছু সাজেশান রিসার্চে উঠে আসবে এই প্রত্যাশায়। খুব খুশী হবো যদি এই আইনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন। ধন্যবাদ।


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন
        • কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

          মোকাব্বির ভাই

          খুব খুশী হলাম আপনার বিস্লেশনধর্মি কমেন্ট টা পড়ে...। 🙂
          আরো মজা পাইলাম আইনজীবি থাকা অবস্থায় আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা জেনে।
          কাকতালীয় হলেও সত্যি, আমার পেপার টিতে আমি বিশেষ করে "women and child repression act 2003" কে টার্গেট করেছিলাম।
          আমেরিকার কোন স্টেট এ আছেন? একবার সময় করে ঘুরে যান ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে...খুব খুশি হবো...।

          জবাব দিন
          • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

            আপু আছি অনেক দূরে...মিশিগান। মানে মিশিগানেরও আরো উত্তরে হুটন শহরে। পড়ছি মিশিগান টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। তবে ক্যালিফোর্নিয়াতে আসবো কারণ আর, সি, সি এর এক ছোট ভাই আছে লস এঞ্জেলসে্‌ রাইসুল হক সাদিব। চিনে থাকতে পারেন। ওর কাছে ঘুরে আসার ইচ্ছা আছে। আসলে অবশ্যই জানাবো! 🙂

            পেপারের জন্যে শুভ কামনা এবং সাফল্যের প্রত্যাশা!


            \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
            অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

            জবাব দিন
  6. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    বাংলাদেশের আইনী ব্যর্থতা কথাটায় আপত্তি জানালাম।
    প্রধানমন্ত্রী বলেছেন না, ঘর পাহাড়া দিবেন কিভাবে পুলিশ দিয়ে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  7. শরিফ (০৩-০৯)

    ভাবি খুব সুন্দর লিখেছেন । আপনার আর মাহমুদ ভাই এর লেখা খুব গবেষণাধর্মী। আপনাদের দাম্পত্য জীবনও মনে হয় অনেক গবেষণাধর্মী ।
    তবে আমার মনে হয় এখন নারী নির্যাতনের ব্যাপারে বিভিন্ন জনমত আর প্রতিবাদ গড়ে উঠছে । এই নারীনির্যাতনের বিপক্ষে একটা পদক্ষেপ নেয়া দরকার ।
    সিসিবিতে আরও লেখা দিবেন এই আশা রাখি 🙂

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।