বাউলা কে বানাইলো রে


‘পিরীতেরই ঘর বানাইয়া অন্তরের ভিতর’ বাউল গানের এই লাইন দিয়েই লেখাটা শুরু করলাম। সেই কবে ক্যাডেট কলেজে আমাদের তিন ব্যাচ সিনিয়র অনুপ ভাইয়ের গলায় গানটা প্রথম শুনেছিলাম, এখনো বুকের মাঝে নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
অনুপ ভাইয়ের সেই ‘অন্তরের ভিতরে’র টান আমি আজো ভুলতে পারি না। একেবারে সত্যি কথা বাউল গানের মাহাত্ম্য সেদিন প্রথম বুঝেছিলাম যেদিন অনুপ ভাই গাইলেন ‘রেল লাইন বহে সমান্তরাল।’ এখনো মাঝে মাঝে মনে কষ্ট পেলে, আঘাত পেলে নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠি এই গান।


আমি , আমাদের পল্লব চাকমা আর অনুপ ভাই মাগরিবের নামাজের সময় হাউজে থাকতাম। অনুপ ভাইয়ের সুললিত কন্ঠে আনমনে গেয়ে যাওয়া গান, নয়নেরই জল শুকাইয়া বিচ্ছেদের অনল, দুই দিগন্তে রইলাম দুইজন সারাজীবন ভর………… কতোদিন যে লুকিয়ে শুনেছি জুনিয়র ব্লক থেকে । মানুষের কন্ঠ যেএত সুমধুর হতে পারে……!!!


লালনের নেশা মানুষকে পাগল করে দেয় শুনেছি। তার প্রমানও আমি পেয়েছি। একজনকে চিনতাম, বাউল, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স। তার বাবা আর বড় তিন ভাই বিসিএস কর্মকর্তা। সেই লোকের নাম পাগলা বাবুল। আমার সঙ্গে ঢাকায় পরিচয় হয়েছিলো একবার।বাউল গানের নেশায় উনি পাগল হয়েছেন। আকুল করা সুরে পথে পথে গান গেয়ে যান – ‘কবে তুই মুছবি নয়ন ঘুচবে মনের ফাঁদ, পাগলা মনটারে তুই বাঁধ……..।’


সেদিন কাজের ফাঁকে হঠাৎ বিষাদগ্রস্ত হয়ে আনমনে নিজেই পাগলা বাবুলের গলায় শোনা ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়’ গানটি গেয়ে যাচ্ছি। আমার এক ইংরেজ কলিগ গানটির অনুবাদ শুনতে চাইলো। আমি যতটুকু কাছাকাছি পারা যায় অনুবাদ করে শুনানোর পর সে অবাক হয়ে গেলো। কোনো গানের যে এইরকম আবেগ এবং থিম থাকতে পারে সেটা নাকি তার ধারনার বাইরে।


অনেক আগে গিয়েছিলাম লালনের মাজারে। মেলা থেকে একটা একতারা কিনে তারে দুটা টান দিতেই মনে দোলা লেগে গেল। মনে হল যদি বাউল হতাম। যদি গলা ছেড়ে গাইতে পারতাম… করিমানা কাম সারে না মদনে, আমি প্রেম রসিক হব ক্যামনে………

২,৩৩৩ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “বাউলা কে বানাইলো রে”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    চমৎকার সাবলীল লেখা। :hatsoff: সুব্রত :clap: :clap:
    অনুপ ভাইকে চিনতামনা। দিন কয়েক আগে অদ্ভুত ভাবে দেখা এবং পরিচয় হয়েছে। উনার গানের কিছু কাহিনী তখনই শুনলাম। খিজির হায়াতের 'জাগো' মুভিটাতে উনি আর অর্ণব মিউজিকের কাজ করেছেন।
    আবার কখোনো দেখা হলে সামনা সামনি উনার গান শোনার সু্যোগ আদায় করে ছাড়বো 🙂


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
    • সুব্রত (৯৪-০০)

      হ্যা,অনুপ ভাইয়ের গলায় গান না সুনলে মিস করবেন।অনেক বড় মাপের শিল্পী হতে পারেন ইচ্ছে করলেই।আরেকজনের কথা এর সংগে বলতে চাই।তিনি হলেন যে সি সি র মল্লিক ভাই।৯৭,এর প্রথম আই সি সি ক্রিকেট মিটে উনার গান সুনেসিলাম।কুছ না কাহো...গান টা গেয়েছিলেন।খুব ভাল গান করেন।

      জবাব দিন
  2. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    মামা, দেশে আইসা পর।
    দুইজন ভবঘুরে হইয়া যাই।

    কিচ্ছু ভাল্লাগেনা 🙁


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)
    ...তারে দুটা টান দিতেই মনে দোলা লেগে গেল।

    লালনের মাজারে গিয়া খালি তারে টান দিয়াই মনে দোলা লেগে গেল বস? আসল টান দেবার জিনিষে টান দিলে কিনা জানি হইত ;))


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।